নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিসর্গ

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

একটা পুকুর। পাশে আরেকটা পুকুর। দুই পুকুরের মাঝে ভীষণ মিতালী।

সেবারের গ্রীষ্মে, এক পুকুর মরতে বসল। ভীষণ রৌদ্রতাপে হু হু করে উড়ে গেল যত প্রাণজল। আরেক পুকুরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল মস্ত এক বটবৃক্ষ। সূর্যের যত তাপ-প্রতাপ এই বিটপী'র গায়ে ধাক্কা লেগে ছায়া হয়ে পড়ত পুকুর কায়ায়। মুমূর্ষ পুকুর তখন মৃদু হাসিতে যেটুকু জল অবশিষ্ট আছে সেগুলো দিয়ে গা ধুইয়ে দিত মৎস্য-সন্তানগুলোকে। মৃতপ্রায় পুকুর দেখে যখন ছলাৎ ছলাৎ শব্দে কান্না জূড়ত পাশের পুকুরটা তখন সে বলত, "কী রে সখা, কাঁদিস না তো। গ্রীষ্মের আর আছেই বা ক'দিন বল? দেখ বর্ষা আসছে...জল নিয়ে আর ভাবনা কী?"

প্রকৃতির কী লীলাখেলা, সেবার গাঁয়ে অনাবৃষ্টি হানা দিল। দিনের পর দিন কাটতে লাগল, বৃষ্টি যেন জেদ ধরেছে, নামবেনা আর। প্রাণদীপ্ত পুকুরটারও শুকানো শুরু হল জল। বটবৃক্ষ মুষড়ে পড়েছে, পত্রপল্লব আঁকড়ে ধরেছে বাদামী রঙ্-এর মৃত্যু। নিজের জন্য কাঁদেনা এ পুকুর, নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবেনা। যত চিন্তা ঐ পাশের পুকুরের জন্য- ওর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না বেশ ক'দিন ধরে। আচ্ছা, ও কী মরে গেছে? নিজের যত জল সব কেন জানি অসহ্য লাগা শুরু করল সেদিন থেকে, ইচ্ছা হল যত জল সব দিয়ে মৃত পুকুরটাকে বাঁচাতে। কিন্তু এ জল যে দেওয়া যায় না! মর্ত্যের নিয়ম বড় নিষ্ঠুর, এখানে একের প্রাণ অপরকে দেওয়ার কোন উপায় নেই। তারপর থেকে শুরু হল পুকুরের আর্তনাদ। কী ভয়ানক সেই আর্তনাদ। বন্ধুকে বাঁচানোর আকুতি রূপ নিল নিজের মরণ-বাসনায়। মৃত্যুর জন্য এ ভয়ানক আর্তনাদ মেঘদেবতা দেখেনি আগে। মন তার ভারী হয়ে উঠল। আহাজারী তবু থামেনা পুকুরের। মেঘের মন আর আবেগ রুখতে পারলনা বলে- পুকুরের দুঃখ সংক্রামিত হল দখিন গগন জুড়ে। কাল হয়ে গেল মেঘমালা। তারপর কী ভীষণ কান্না। এ কান্না চলতেই থাকল নিরন্তর। পুকুরে টুপটাপ শব্দ দিয়ে নেমে এল জল। রুমঝুম- ঝুমঝুম বৃষ্টিধারা ঝরে গেল অবিরাম। প্রাণ ফিরে পেল মৃত পুকুর। জল বেড়েই চলল দুই পুকুরের।

তখন অদ্ভুত এক স্বপ্নে সয়লাব হয়ে গেছে ওদের পৃথিবী- এ পানি বাড়তে বাড়তে কী মিলিয়ে দিবে ওদের? কী অবাস্তব, কী সুন্দর স্বপ্ন! কিন্তু স্বপ্ন নয়, বাস্তবতায় বেড়েই চলল পানি। হঠাৎ দুই পুকুর যেন দেখতে পেল একজন আরেকজনকে। ঐ যে কিনার ঘেঁষে উপচে পড়ল জলরাশি। দু'পুকুরের মধ্যখানের ভূমিতট'টা হঠাৎ অদৃশ্য হওয়া শুরু করল- জলে ঢেকে গেল মাটি। লজ্জায় সরে যেতে চাইল পুকুরযুগল। কিন্তু না, অদৃশ্য কিছু একটা ওদেরকে ঠেলে দিচ্ছে পরস্পরের দিকে। চোখ বুজে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। হঠাৎ দুজন'ই শিউরে উঠল এক অন্য ধরনের শীতলতায়। কী অদ্ভুত! কী অলীক! সময় যেন আটকে গেছে কোথাও। সবকিছু কেমন স্তব্ধ হয়ে আছে। এক, দুই,তিন- হঠাৎ ঝাপটা দিয়ে সম্বিত ফিরল পুকুরদ্বয়ের। তখন তারা মগ্ন গভীর আলিঙ্গনে, মিশে যাচ্ছে একে অপরের সাথে। ভীষণভাবে জড়িয়ে, গভীর থেকে গভীরে- কী আকুলতা, কী সুখ! এটাকেই জীবন বলে? বটবৃক্ষ জানেনা, জানানোর মত আরেকটা বটবৃক্ষও দাঁড়িয়ে নেই তার পাশে। তবুও সে সুখী। তার অধর ছুঁয়ে মিশে গেছে দু'টা পুকুর, এক হয়ে গেছে দুটো সত্ত্বা। ওদের আলিঙ্গনের সুখ ছড়িয়ে পড়েছে বটের অধরে। বাদামী রঙ ধুয়ে যাচ্ছে দ্রুত- স্পষ্টতই সবুজ-কোমল পত্রপল্লব গজানোর ইঙ্গিত। নতুন দাঁত গজানোর মত ব্যাথা করছে শরীরের এদিক ওদিক। আহা! সুখে টইটুম্বুর যাপিত জীবনের প্রতিটা রন্ধ্র, যেগুলো দিয়ে মুখ উঁচিয়ে দেখা দিত ছাইপাশ যত দুঃখ।



বিঃদ্রঃ দু'টো পুকুরেরই তাই একসাথে জল শুকিয়ে গেলে চলবেনা। একজনের ঠিকঠাকমত থাকতে হয়- বৃষ্টি নামানোর জন্য, আরেকজনকে বাঁচানোর জন্য.. স্বপ্নসাধনের জন্য। সুখ অনেক সহজবোধ্য হলেও সহজগম্য নয়।।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১৭

বটের ফল বলেছেন: চমৎকার !!!!!!!! অসাধারন !!!!!!! অনেক সুন্দর লিখেছেন। ভালো লেগেছে অনেক বেশি। +++++++++++++++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৩৯

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন:



ডিসকভারী চ্যানেলে অনেক প্রানীর মিলন কাহিনী দেখায়। আর আজ আপনি দেখালেন প্রাকৃতির সঙ্গোম। আপনার কাব্যিক বর্ননায় মোহিত হলাম।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৪৩

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: অজস্র সুখ.............সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

আহমেদ তুষার বলেছেন: গোছানো এবং প্রাণোচ্ছল লেখা।
হ্যাপি ব্লগিং।।।।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৪৭

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: .... উদ্বেলিত হলাম। সুখ-যাপন হোক মর্ত্যপরে...

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: খুব সুন্দর তো গল্পটা। দুইটা পুকুরের গল্প। +++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদে কার্পণ্য করি না :) মঙ্গল কামনায়......

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০১

অনুপম দেবাশীষ রায় বলেছেন: অসাধারণ

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৪

মীর সজিব বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।
প্রকৃতির মিলন আছে, তা মনে হচ্ছে আজ বাস্তবে রূপ নিল।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:০০

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: আনন্দিত হলাম জেনে...

৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: দু'টো পুকুরেরই তাই একসাথে জল শুকিয়ে গেলে চলবেনা। একজনের ঠিকঠাকমত থাকতে হয়- বৃষ্টি নামানোর জন্য, আরেকজনকে বাঁচানোর জন্য.. স্বপ্নসাধনের জন্য। সুখ অনেক সহজবোধ্য হলেও সহজগম্য নয়।।
বিশেষ দ্রষ্টব্যে রূপকের আড়ালের কথাগুলো বলে দিয়েছেন। আমাদের বাস্তব জীবনে যদি পুকুরদ্বয়ের এই উদাহরণ কাজে লাগানো যেতো, তবে আমাদের জীবন অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠতো নিশ্চিত। পরিবার, সমাজ থেকে শুরু রাষ্ট্র সর্বত্র যদি আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, পরোপকারী, নৈতিকতা, মানবতা ইত্যাদি গুণগুলো থাকে, তবে আমরা শতভাগ সুখে না থাকতে পারলেও অন্তত অসুখে থাকবো না নিশ্চিত।
সুন্দর রূপক শোভিত লেখাকে কাব্যময়তার ছোঁয়ায় সুখপাঠ্য করে তুলেছেন। ভালো লাগলো আহমাদ ইবনে আরিফ। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১৩

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: নিরন্তর শুভকামনার প্রত্যুত্তরে কী বলা যায় তা ভেবে দেখা উচিত.... আপাতত, প্রণাম রইল জনাব...

৮| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৭

সুমন কর বলেছেন: নতুন ধরনের লেখা পেলাম। বাক্যবুনন চমৎকার।

৩য় ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২১

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: বুঝে পেলাম... আমার কৃতজ্ঞতাটুকুও বুঝে নিন এবার...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.