নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাকা চৌধুরীর যত অপরাধ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৫

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বিরোধিতাকারী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। সাকার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৩টি অভিযোগ দাখিল করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে নয়টি প্রমাণিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিতর্কিত ভূমিকার পাশাপাশি অসংখ্য ঘটনার পেছনে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সাকা চৌধুরী বিভিন্ন রাজনৈতিক কটূক্তির জন্য আলোচিত-সমালোচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি যেমন কটূক্তি করেছেন, তেমনি নিজ দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে মন্তব্যের কারণে সমালোচিত হয়েছেন। ‘কুকুরে লেজ নয়, লেজে কুকুর নাড়ে’ মন্তব্য করেও ব্যাপক আলোচিত হন সাকা। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘কিসের আন্তর্জাতিক! এটা আমি বুঝলাম না। এটা কি চিটাগাংয়ের বাইরে বলে আন্তর্জাতিক?’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল সকালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে জগৎমল্লপাড়ার কিরণবিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙিনায় ৩২ নর-নারীকে জড়ো করেন। পরে তাদের ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। ৫ এপ্রিল রাতে নগরীর শহীদ মতিলাল চৌধুরীর রামজয় মহাজন লেনের বাসভবন থেকে মতিলাল চৌধুরী, অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে, পরিতোষকে পাকিস্তানি সেনার সহায়তায় অপহরণ করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার অনুসারীরা। পরে ওই ছয় ব্যক্তির আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১৩ এপ্রিল সকালে রাউজানের গহিরা গ্রামের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ায় শতাধিক ব্যক্তিকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। একই দিন আয়ুর্বেদী প্রতিষ্ঠান কুণ্ডেশ্বরীর প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেন তিনি। ১৩ এপ্রিল দুপুরে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে হামলা চালান সাকা চৌধুরী। এ হামলায় তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হন। একই দিন বিকালে রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ক্ষীতিশ মহাজনের বাড়িতে সাকার সহায়তায় কয়েকজন হিন্দু নর-নারীকে একত্র করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ১৪ এপ্রিল দুপুরে সাকার নির্দেশে পাকিস্তানি সেনারা রাউজান পৌরসভার সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় রাউজানের পথেরহাটে আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ হানিফকে গুলি করে হত্যা করেন সাকা চৌধুরী। একই দিন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় নোয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইজহারুল হকের বাড়ি। ওই দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি আবদুর রব ও ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ২০ এপ্রিল বৃহত্তর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরীকে হত্যা করেন সাকা। ২০ এপ্রিল সকালে সাকার নির্দেশে তাদের অনুসারী এবং পাকিস্তানি সেনারা বোয়ালখালী থানার হিন্দু-অধ্যুষিত শাকপুরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে হিন্দুদের হত্যা করে। ৫ মে সকালে সাকার উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা রাউজান থানার জ্যোতিমল্ল গ্রামে গুলি করে বিজয়কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতিভূষণ চৌধুরী ও হিরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে। ১৫ মে সন্ধ্যায় সাকার নির্দেশে শান্তি কমিটির সদস্য আলী আহম্মদ পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ঘাসিমাঝির পার এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং পাঁচ নারীকে ধর্ষণ করে। ২০ মে বিকালে সাকার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা রাউজান থানার পথেরহাটের কর্তার দীঘিরপাড়ে হানিফকে অপহরণের পর হত্যা করে। ৭ জুন জামাল খান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন গুডসহিলের নির‌্যাতন সেলে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বোয়ালখালী থানার কদুরখিল গ্রামে যাওয়ার সময় মুন্সিরহাটের শান্তি দেবকে ধরে নিয়ে আসেন সাকা। তাকে থানার উত্তর পাশে বণিকপাড়ায় গুলি করে হত্যা করেন তিনি। ৫ জুলাই সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের শারীরিক নির‌্যাতন করা হয়। জুলাইয়ের শেষের দিকে রাজাকার বাহিনীর আকলাচ মিয়াকে ধরে গুডসহিলে নিয়ে নির‌্যাতন করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৪ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর মালিকানাধীন জাহাজ এমভি কিউসিটিল থেকে তৎকালীন বাজারমূল্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার স্বর্ণের বার উদ্ধার করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০০১ সালের ২৯ মে বিকালে সাকা চৌধুরীর পৈতৃক মালিকানাধীন গুডসহিলের বাসার সামনে থেকে তার অনুগত ক্যাডারদের হাতে নিহত হয় ছাত্রদল ক্যাডার শহীদুল আলম নিটোল। এ হত্যাকাণ্ডের পর তিনি একটি জিপে করে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাবার ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ মুসলিম লীগের রাজনীতির মাধ্যমে সাকা চৌধুরীর রাজনীতির হাতেখড়ি হয়। পরে জাতীয় পার্টি, এনডিপি রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বর্তমানে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অন্যতম সাকা চৌধুরী। স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে বিগত ওআইসির মহাসচিব পদের নির্বাচনে তার পরাজয় হয় বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.