নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যঙ্গাত্মক রাজনীতির অবসান

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১১

ফাঁসির রায় কার্যকর দেশের মানুষের আইনি জয়, আর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির পরাজয়। একই সঙ্গে দেশে ব্যাঙ্গাত্মক রাজনীতিরও যবনিকাপাত। যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর শেষ পরিণতি তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রামের বহুল বিতর্কিত সন্তান সাকা চৌধুরী তার রাজনৈতিক আঁতুড়ঘর থেকেই অঘটনঘটনপটীয়সী। বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ঔরসে জš§ নেওয়া সাকা কখনো এনডিপি, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র হয়ে সর্বশেষ বিএনপি সমর্থিত সংসদ সদস্য হন। টানা ছয়বারের এই সংসদ সদস্যের দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে যেমন, তেমনি গতকাল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টিও তার ‘রাজনৈতিক পরাজয়’ বলে মনে করছেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. অনুপম সেন। মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাকার প্রথম পরাজয় ঘটেছিল।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, ‘প্রাণভিক্ষার আবেদনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘকালের দম্ভোক্তি করা এই যুদ্ধাপরাধী তার অপরাধই স্বীকার করে নিয়েছেন।’ বিশ্লেষকদের মতে, শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেননি সাকা চৌধুরী, স্বাধীন বাংলাদেশেও তার বাহিনীর প্রতাপ ছিল দোর্দণ্ড। চট্টগ্রামের তিন উপজেলা রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ির ৪৬টি ইউনিয়ন জুড়েই সাকা বাহিনীর উৎপাত-উপদ্রব আর বিভীষিকায় সনাতনীদের স্বস্তি ছিল না। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোর পূর্বাপর সময়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ আর ভোটডাকাতিতে যেমন, তেমনি তার অনুগতদের নানা উপবাহিনীর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি আর খুনের ঘটনায় বারবার ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হয়ে ওঠে এই তিন উপজেলা। যেন ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে যেমন নূতন চন্দ্র সিংহ, তেমনি পরবর্তী পাঁচ দশকে বাবর, মুজিবসহ সাকার বাহিনীর হাতে অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মী ও নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার না করে উল্টো দম্ভ ভরে নিজের ‘বীরত্ব’ প্রকাশের চেষ্টা করেন এই নেতা। নিজের পৈতৃক ভিটে রাউজান হলেও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অনুগত ‘মোড়ল’ জাতের বয়োজ্যেষ্ঠদের সহায়তায় রাঙ্গুনিয়া থেকে চার দফা এমপি হওয়া এই নেতা একবার ফটিকছড়ি থেকেও নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ ২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রায় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের কাছে। এর আগে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাকালে হন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কালে হন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। সে সময় ওআইসির মহাসচিব পদে নির্বাচনেও হেরে যান তিনি। চট্টগ্রাম শহরে তার গুডসহিলের নিজ বাড়ির সামনেই ছাত্রদল নেতা নিটোল হত্যায় জড়িত হিসেবেও অভিযুক্ত হন এই নেতা। সে সময় তার বাড়িটি থেকে অবৈধ অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতারও হন তিনি। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘কিউসি’ গ্রুপের জাহাজে করে স্বর্ণের চোরাচালান খালাসেও এক দফা আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েই শুধু নয়, নিজ দল বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইঙ্গিত করেও ব্যঙ্গ বক্তব্য রাখা এই নেতা একবার নির্বাচনে পাঁচটি আসনে মনোনয়ন না দিলে দল ত্যাগেরও হুঁশিয়ারি দেন। খোদ তার দলের চেয়ারপারসনকে পাশে রেখেই চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে এক বক্তৃতায় তিনি যুদ্ধাপরাধে তার বিচারের দাবিকে ব্যঙ্গ করে বক্তব্য দেন বিএনপির একটি সমাবেশে। সর্বশেষ গ্রেফতারের আগে গুডসহিলে সংবাদ সম্মেলন করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখেন তিনি। সে সময় তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যও কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশনা দেন। কিন্তু সাকা চৌধুরীর গ্রেফতারের পর যেমন, তেমন ফাঁসির রায় হওয়ার পরও জ্বলে ওঠেনি চট্টগ্রাম। উপরন্তু তার গ্রেফতারের পর থেকে পুরো চট্টগ্রাম দূরে থাক, তার আলোচ্য তিন নির্বাচনী আসনেও বিএনপি কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়াও জানায়নি। ‘ফাঁসির রায় এবং প্রাণভিক্ষায় আবেদনের মধ্য দিয়ে সাকা চৌধুরীর দীর্ঘ প্রতিক্রিয়ার রাজনৈতিক যে অধ্যায়, তারই অবসান ঘটল’ বলে মনে করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। তিনি মনে করেন, ‘আদর্শের নামে যে গণহত্যা, বাঙালির মুক্তি-আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে শুধু নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে যে তৎপরতা তারই মৃত্যু ঘটল।’ ড. সেন বলেন, ‘একাত্তরে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটলেও প্রতিক্রিয়ার পতাকা উড্ডীন রাখেন সাকা।

এরপর কখনোই তিনি (সাকা) অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাননি। বরং বারবার নিজেকে ও নিজের বাবাকে “রাজাকার” বলে পরিচয় দিয়ে গেছেন দম্ভ করেই। অথচ তার মতো এত দম্ভ মুজাহিদও করেননি। ফাঁসির রায়ের পর এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে তার যে রাজনীতি, এরই সমাপ্তি ঘটল।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দাম্ভিকতার পরাজয় হবেই। দেশ ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্য দিয়ে যে হাসি সাকা হেসেছেন, তা তার রাজনৈতিক পক্ষেরও অনেক মানুষ গ্রহণ করেননি বলে আমার বিশ্বাস। এই দম্ভোক্তি ভরা হাসির যবনিকার মধ্য দিয়ে একটি অশুভ রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।’

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৬

সজিব হাওলাদার বলেছেন: প্রানভিক্ষা চাওয়ার নাটকের অবসান হওয়া উচিত।

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫২

কারাবন্দি বলেছেন: সরকার এবং মিডিয়া নাটক মন্চস্থে পারদর্শী

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

সাফি আব্দুল্লাহ বলেছেন: চমৎকার এবং ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.