নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনপির লড়াই

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৮


সরকারবিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ব্যর্থতা, নেতাকর্মীদের মামলায় জর্জরিত হওয়াসহ প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকলেও বিএনপির আত্মোপলব্ধি হয়নি। দলটির নেতারা যতটা না সরকারের বিরুদ্ধে, এর চেয়ে বেশি বিরুদ্ধে একে অন্যের। বলা হচ্ছে—বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনপির লড়াই চলছে। বস্তুত এক-এগারোর পর সৃষ্ট বিরোধ বিএনপিতে এখনো রয়ে গেছে। দলটির মধ্যে ন্যূনতম কোনো ঐক্য নেই। নেই বর্তমান অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কার্যকর উদ্যোগও। বরং সিন্ডিকেট বা বলয় সৃষ্টি করে নেতারা পদ-পদবি দখল তথা দলের নিয়ন্ত্রণ লাভের চেষ্টা করছেন। এর ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন অপেক্ষাকৃত ‘নিরপেক্ষ’ বলে পরিচিত নেতারা। অসন্তুষ্ট হয়ে অনেকে পরামর্শ দেওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা ও পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় বা ইতিবাচক উদ্যোগ না থাকায় সমর্থক সুধীসমাজের প্রতিনিধিরাও আজকাল আর গুলশান কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে ‘সমর্থকনির্ভর’ দেশের রাজপথের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি সামনের দিকে এগোতে পারছে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২১ হাজার ৬৮০টি মামলা রয়েছে। এসবের মধ্যে খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় ১৫৮ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা চার হাজার ৩৩১। এসব মামলায় দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী হয় কারাগারে, নয়তো গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। মূলত ৫ জানুয়ারি ঘিরে দুই দফা ব্যর্থ আন্দোলনের পর বিএনপির এই বিপর্যয়কর অবস্থা। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় বা চিন্তা নিয়ে দলটির নেতারা যতটা না তত্পর, এর চেয়ে বেশি তত্পর একে অন্যকে ঘায়েল করার প্রশ্নে। এ কারণে এখন দলটির ভেতরে-বাইরে আলোচনা হচ্ছে—বিএনপির আত্মোপলব্ধি হয়নি।

সারা দেশেই স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপি। কিন্তু কেন্দ্রে এ মুহূর্তে দলাদলি চরম আকার ধারণ করেছে মূলত স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের তত্পরতায়। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ, ওই নেতা মূলত মাঠে নেমেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল যাতে দলের মহাসচিব হতে না পারেন সে লক্ষ্যেই ওই নেতা তাঁর দৈনন্দিন কর্মতত্পরতা

চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজে তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য, এক যুগ্ম মহাসচিব ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক এক সম্পাদকসহ কয়েকজন। তবে দলের প্রভাবশালী বেশির ভাগ নেতাই মনে করেন, গ্রুপিং-লবিং করে ওই নেতারা শুধু দলেরই ক্ষতি করছেন। এসব করে তাঁরা নিজেরাও লাভবান হতে পারবেন না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের কিছু নেতাকে প্রকাশ্যে অন্য নেতাদের সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। সভা-সেমিনারসহ অনেক জায়গায়ই এ বিষয়গুলো ওপেন-সিক্রেট। দলের হাইকমান্ডেরও এগুলো অজানা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিএনপির মতো বড় একটি দলে এটি বড় ঘটনা নয়। তাঁর মতে, লবিং-গ্রুপিং করে কেউ বিএনপির শীর্ষ পদে যেতে পারবেন না। এর জন্য সবার আগে দলীয় চেয়ারপারসনের আস্থা, সর্বোপরি দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। এটি না হলে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা যাবে না। তিনি বলেন, দলের মধ্যে কেউ বিভাজন সৃষ্টি করলে এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা হবে।

বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বিএনপিতে অন্য কেউ অপরিহার্য নয়। সুতরাং বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিব্রত না করে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও তা মিটিয়ে ফেলে বিএনপি নেতাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া উচিত।

বিএনপি সমর্থক শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ অবশ্য দলের বিদ্যমান অন্তর্কলহকে বড় করে দেখতে রাজি নন। বিএনপির আত্মোপলব্ধি হয়নি—এমনটিও মানতে নারাজ তিনি। জানতে চাইলে বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপির কিছুটা আত্মোপলব্ধি হয়েছে, যা দলটির নেতাদের যৌক্তিক কথাবার্তায় আজকাল প্রমাণিত। তাঁর দাবি, বিএনপিতে যতটুকু অন্তর্কলহের কথা বলা হচ্ছে সেটি অন্যান্য দলের মতো এত প্রবল নয়। তিনি বলেন, ‘যেমন মহাসচিব পদ নিয়ে দলের কারো কারো হয়তো আগ্রহ আছে। কিন্তু মির্জা ফখরুলের এই মুহূর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী দলে নেই। খালেদা জিয়া তাঁকেই পূর্ণ মহাসচিব করবেন। কেননা তাঁর ইমেজের ধারে-কাছে কেউ নেই। ফলে তাঁকে কেউ ঠেলে ফেলে দিতে পারবেন না।’

দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার দাবি করেন, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। তবে এত বড় পার্টিতে একটু ‘এদিক-ওদিক’ হয়। তিনি বলেন, এতে দলের ক্ষতি হয় না। যারা এসব করছে তাদেরই ক্ষতি হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মনে করেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বা বিভিন্ন ইস্যুতে বহুমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একে দ্বন্দ্ব বলা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

সম্প্রতি এক বক্তৃতায়ও মির্জা ফখরুল এই মুহূর্তে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের ওপর জোর দেন।

দলাদলির মূল ভূমিকায় গয়েশ্বর : বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে সারা দেশেই। কিন্তু কেন্দ্রে এ মুহূর্তে দলাদলি চরম আকার ধারণ করেছে মূলত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কর্মকাণ্ড ঘিরে। মূলত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন যুবদলের সাবেক এই নেতা। যদিও মুখে তিনি বলছেন মহাসচিব হওয়ার আগ্রহ তাঁর নেই, কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ দৈনন্দিন কর্মতত্পরতাই ফখরুলকে ঘিরে। তাঁর উদ্দেশ্য হলো ফখরুলকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে না দেওয়া, দলে ফখরুলের প্রভাব যাতে না বাড়ে সে ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে ফখরুলবিরোধী একটি বলয় সৃষ্টি করেছেন তিনি। অভিযোগ আছে, এ কাজে গয়েশ্বরকে সমর্থন দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের চৌধুরীসহ কয়েকজন। অনেকের মতে, আগে মির্জা আব্বাস এই বলয়ের নেতা থাকলেও এখন গয়েশ্বরই মূল ভূমিকা পালন করছেন। আর আব্বাস আগের চেয়ে অনেকটাই ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দু-একজন কর্মকর্তাকেও হাত করেছেন গয়েশ্বর। সব মিলিয়ে বিএনপিতে এখন তিনিই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে শোনা যায়। গত ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে সভাপতিত্ব করায় গয়েশ্বর আরো ফুরফুরে মেজাজে আছেন। প্রতিনিয়তই দলের মধ্যে তিনি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ফখরুল ও তাঁর অনুসারীদের সমালোচনা করছেন। এদিকে ফখরুলবিরোধী এই বলয়ের তত্পরতার রাজনীতির প্রভাব পড়ছে গোটা দলেই। আর এসব দেখে দলের সিনিয়র অনেক নেতা বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার ও নজরুল ইসলাম খানের মতো নেতারা অন্তর্কলহ থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন। ডাক না পড়লে তাঁরা গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও যাচ্ছেন না। আবার কোনো বিষয়ে মন্তব্যও করছেন না।

নেই ইতিবাচক উদ্যোগ : চরম বিপর্যয়কর এই অবস্থার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ইতিবাচক ও কার্যকর কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেয়নি বিএনপি। এ কারণে দলটির সিনিয়র অনেক নেতার পাশাপাশি সমর্থক সুধীজনরাও ক্ষুব্ধ বলে জানা যায়। তাঁদের মতে, ভালো হোক আর খারাপ হোক; নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের সামনে ইতিবাচক এক ধরনের বার্তা অবশ্যই দিতে হবে। না হলে বিএনপির পাশাপাশি দেশের জনগণ; এমনকি দেশি-বিদেশি শক্তির কাছে ভালো বার্তা যাবে না। নেতাকর্মীরা উৎসাহ পাবে না।

সূত্র মতে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যেসব উপায় বা ইস্যু এই মুহূর্তে আলোচনায় আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কোন্নয়ন, প্রধান শরিক জামায়াতের ২০ দলীয় জোটে থাকা না থাকা এবং মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নেতাদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি। এ ছাড়া দলে গতিশীলতা আনতে মহাসচিব পদে কাউকে নির্বাচিত করাটাও জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির বেশির ভাগ নেতা। তাঁদের মতে, ফখরুলকে মহাসচিব করা কিংবা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে করা—যেটাই হোক এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ এ বিষয়টি ঝুলে থাকার কারণেই কোন্দল ছড়িয়ে পড়ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। লন্ডন থেকে ফিরে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তা হয়নি।

একইভাবে লন্ডন থেকে ফেরার পর খালেদা জিয়া দলে আমূল পরিবর্তন আনবেন বলে সর্বস্তরে আলোচনা ছিল। বিশেষ করে দলের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন এবং জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ফয়সালা করার বিষয় আলোচনায় ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন গিয়ে খালেদা জিয়া দুই মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করেন। এ সময় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যু আলোচনা করেই খালেদা জিয়া ফিরবেন বলে সবার ধারণা ছিল। অথচ ২০ নভেম্বর দেশে ফেরার পর প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত একটি ইস্যুতেও সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ‘সংস্কারপন্থী’ বলে পরিচিত অর্ধশতাধিক সাবেক এমপি ও নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনা যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার দুই দিন আগে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাব্য কতগুলো উপায় বা প্রস্তাব সম্পর্কে ধারণা নেন। তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের কাঠামো বদল ও গুলশান কার্যালয় ঢেলে সাজানোসহ পুরো দল করপোরেট সিস্টেমে কিভাবে চলতে পারে—প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেসব প্রস্তাব দেখানো হয়। খালেদা জিয়া ওগুলো দেখে খুশিও হন। কিন্তু এখনো সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। দলের পক্ষে এ প্রশ্নে ব্যাংককে বসে যোগাযোগ রক্ষা করছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু ওই দেশটির সমর্থন পেতে হলে জামায়াত ছাড়তে হবে—এমন আলোচনা আছে বিএনপির মধ্যে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। জামায়াতের বিষয়টিও অচিরেই নিষ্পত্তি হবে। মুশকিল হলো সরকার বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে জামায়াতের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়। অথচ চাইলে সরকারই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে।

গ্রুপিং শুরু যেখান থেকে : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বস্তুত এক-এগারোর পর সংস্কার প্রশ্নে সৃষ্ট গ্রুপিং বা বিভাজনই ডালপালা মেলে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে বাদ দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দলের মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়ে যান খালেদা জিয়া। এরপর মান্নান ভূঁইয়ারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত খোন্দকার দেলোয়ার দলে স্পষ্টত ‘সংস্কারপন্থীদের’ বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নিজের বলয় সৃষ্টি করতে সংস্কারপন্থীদের তিনি কোণঠাসা করে ফেলেন। এরই অংশ হিসেবে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন মহানগর বিএনপির কমিটি বাতিল করেন তিনি। এ ঘটনার সূত্র ধরেই সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসের মধ্যে প্রচণ্ড বিরোধ শুরু হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আব্বাস, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ডেমরার সালাহ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবীর রিজভীসহ অনেকেই তখন খোন্দকার দেলোয়ারের পক্ষে অবস্থান নেন। যদিও ওই সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আব্বাস-খোকার মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালের জাতীয় কাউন্সিলের সময় তিনি পুরোপুরি দেলোয়ারের সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপর ২০১১ সালের মার্চে দেলোয়ারের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে, যা গয়েশ্বর ও তাঁর সমর্থকরা মেনে নিতে পারেননি। ফখরুল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার পর থেকেই আব্বাস-গয়েশ্বরের সমর্থকরা তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামেন, যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। এ অংশের নেতারা ফখরুলের পাশাপাশি সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুস সালামসহ আরো অনেক নেতার বিরুদ্ধে তত্পরতা চালাচ্ছেন। কারণ তাঁরা আবার মহাসচিব হিসেবে ফখরুলকে সমর্থন করেন। সব মিলিয়ে বিএনপিতে কোন্দল ও রেষারেষি এখন চরমে। অনেকের মতে, এক-এগারোর পর সৃষ্ট বিরোধই এখনো কুরে কুরে খাচ্ছে বিএনপিকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.