নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘বাংলাদেশ মডেল’ এবার অন্য দেশে

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৩

রানা প্লাজার মতো ধস বাংলাদেশের কোনো পোশাক কারখানায় আবারও ঘটতে পারে—এ কথা কোনো দেশ বা কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এখন আর বলতে পারবে না। বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ অন্য দেশের চেয়ে খারাপ—এ কথা বলারও সুযোগ নেই। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গত তিন বছরে তারা পরিদর্শন করে পেয়েছে, বন্ধ করার মতো ছিল মাত্র ৩৭টি কারখানা। ইউরোপীয় ও আমেরিকার ক্রেতারা কর্মপরিবেশ নিয়ে বিস্তর শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ একে একে সেগুলো পূরণ করেছে অথবা পূরণ করার পথে আছে। এখন ঘরোয়া বৈঠকে তারাই স্বীকার করছে, পোশাক খাতের কর্মপরিবেশে বাংলাদেশ এখন প্রতিযোগীদের চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আছে অনেক ভালো অবস্থানে। গত ডিসেম্বরের মধ্যভাগে ঢাকায় এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন সহযোগিতা সংস্থা, ক্রেতা জোট, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন। অ্যাকর্ড নামে পরিচিত ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অন বাংলাদেশ ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি কার্যক্রমের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ ওই বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। কর্মপরিবেশে এখন বাংলাদেশই সেরা। ওই বৈঠকে উপস্থিত পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈঠকের পর আমি জানতে চাইলাম তোমরা এ কথা প্রকাশ্যে বলছ না কেন।’ ফারুক হাসান বলেন, পোশাক কারখানা সংস্কারে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ক্রেতা দেশ ও জোট বাংলাদেশ মডেলকে সফল মেনে নিয়ে তারা এখন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, পাকিস্তানসহ অন্য দেশেও এটি চালু করার চিন্তা করছে। প্রাথমিকভাবে তারা এক হাজার কারখানায় বাংলাদেশের মতো পরিদর্শন ও নীরিক্ষা চালাতে চায়। অবশ্য মডেল অভিধা পেতে বাংলাদেশকে অনেক কিছু করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে রানা প্লাজা ধসের পরই শুরু হয়েছিল দুর্দিন। চূড়ান্ত সমালোচনা, কার্যাদেশ না দেওয়ার হুমকি, এ দেশের শ্রমিকদের ক্রীতদাসের সঙ্গে তুলনায় পোশাক খাতের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এরপর সরকার গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। মালিকরাও সবকিছু থামিয়ে রাখার চেষ্টা বাদ দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। ২০১৩ সালের ১৩ মে গঠিত হয় অ্যাকর্ড। ৮ জুলাই ইউরোপীয় কমিশন, আইএলওর সঙ্গে ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ ঘোষণা করা হয়, যদিও তাজরীনে আগুনের পরই এ চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১০ জুলাই গঠিত হয় উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি। ওই দুই জোট ও আইএলওর অধীনে বাংলাদেশের তিন হাজার ৬৬০টি পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৩৬টি কারখানা। এখন ক্রেতা জোটের পরামর্শ মতো কারখানার সংস্কার করা হচ্ছে। তাতে গড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। এমন পরিস্থিতিতে কাল ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টে’র বৈঠক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে বিব্রত করবে এমন কোনো অভিযোগ হাজির করতে পারবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন—দাবি সরকার ও বিজিএমইএর। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওরা অসন্তুষ্ট হবে এমন কিছু আর এখন নেই। আমরা সবই করেছি এবং করছি। তবে নতুন করে কোনো কিছু তুললে সেটা অন্য কথা। বৈঠক নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আমরা শেষ করেছি।’ তিনি জানান, বৈঠকে তারা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে বাংলাদেশ আগেই বলেছে এটা করা সম্ভব নয়। সেখানে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় অন্য সবকিছু করা হবে। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও মনে করেন, ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে পড়তে হবে না। তিনি বলেন, ‘তারা যা চেয়েছে আমরা করেছি। ২০১৮ সালের মধ্যে কারখানার সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের অধীনের কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ ৭০-৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।’ রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা ঢাকা ছেড়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করে এর জনবল বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ। অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্টিং কমেছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন অনেক বেড়েছে। শ্রম আইন সংশোধন হয়েছে, প্রথমবারের মতো বিধিমালাও হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। এত সব কিছু করার ফলও পাচ্ছে বাংলাদেশ। দাম কমার পরও ইউরোপ ও আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি বেশ ভালো গতিতে বাড়ছে। অবশ্য দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দার কারণে ২০১৪-১৫ অর্থবছরটি ভালো যায়নি। ওই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। তবে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি আয় বেশ ভালো হারে বেড়েছে। এ সময় ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৭.৩৪ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে ১৫.১৮ শতাংশ। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ৬০ শতাংশ যায়। সেখানে পোশাকের দাম ২০ শতাংশ কমেছে। এর পরও ১০ শতাংশ রপ্তানি বেশি হওয়ার মানে হলো বাংলাদেশ খুব ভালো করছে। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার পরে বাংলাদেশের যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে। জি-৭ দেশগুলোর সম্মেলনে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো ক্রেতা এখন বাংলাদেশে আসতে দ্বিধা করছেন বলে আমার জানা নেই।’ সব মিলিয়ে তুলা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম কমায় বড় দরপতনের পরও গত ছয় মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯.২৪ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানি ছিল ২১.৫২ বিলিয়ন ডলার। গেল অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২৪.৪৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে তা ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফারুক হাসান বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ডিজনি বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল। তখন আরো অনেকে বাংলাদেশ ছাড়ার চিন্তা করেছিল। কিন্তু এখন ডিজনিও বাংলাদেশে এজেন্টের মাধ্যমে কার্যাদেশ দিচ্ছে। ন্যায্যমূল্য দাবি : ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টে’র বৈঠক উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পোশাকের ন্যায্যমূল্য দাবি করেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের কাছে একান্ত অনুরোধ, গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশ হিসেবে এ দেশের শিল্পকে টেকসই করার জন্য দায়িত্বশীলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করুন। আমাদের ন্যায্যমূল্য দিন।’ এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘একেক ক্রেতার পণ্যের দাম একেক রকম। তারা দরটি নিয়ে দরকষাকষি না করে কারখানাকে বললেই হয়, আমি তোমাকে এই দাম দিচ্ছি। এতে ন্যায্য দাম নিশ্চিত হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সমন্বিত চেষ্টায় কারখানায় উন্নত নিরাপদ পরিবেশ গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ পোশাক তৈরির দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এতে বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. ফারুক হাসান, মোহাম্মদ নাসির ও বিকেএমইএর সহসভাপতি মনসুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.