নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ভাষায় নিজের নাম: আজ ১ ফেব্রুয়ারি

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৫

নিজের নাম আর স্বাক্ষর মায়ের ভাষায় কেন লিখবো? কেন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
এক কথায় - মাথা উঁচু করে দাড়াতে চাই, তাই মায়ের ভাষায় নাম লিখতে হবে, মায়ের ভাষায় স্বাক্ষর দিতে হবে। ভাষার সাথে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর সম্পর্ক খুবই নিবিড়।
সহজ কথায় (Full Version)-
বেশিদিন আগের কথা নয়। অভ্র তখন পুরোপুরি চালু হয়ে গেছে। অনেকেই আমরা তখন বাংলায় লিখছি ফেসবুকে। আর অনেকেই তখন ‘বাংলিশ’ নামে জঘন্য এক মিশ্র ভাষায় স্টাটাস লিখতেন। সেইসব উদ্ভট বাংলিশ ওয়ালাদের চাবুক মারতে পরবর্তীতে তুমুল জনপ্রিয় ‘মুরাদ টাকলা’র আবির্ভাব।

অনেককেই বলতাম, “ভাই/আপা – হয় ইংরেজিতে লিখেন অথবা বাংলায় লিখেন কিন্তু বাংলা ভাষার বারোটা বাজিয়ে ‘খচ্চর’ ভাষায় লিখবেন না।” বাংলিশের বাংলা করেছিলাম ‘খচ্চর’ ভাষা।

সেই খচ্চর ভাষা এখন অবশ্য উধাও হয়েছে। তবে যেসব আক্রমণ হতো তার দু একটা নমুনা দিচ্ছি:
“এই বাংলা বাংলা কইরাই বাঙালি পিছনে পইরা রইলো। ইংরেজি হইলো আন্তর্জাতিক ভাষা। ফেসবুক হইলো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে বাংলা বাংলা কইরনে না!ইংরজি জানলে আজ দেশ কোথায় থাকতো জানেন ?”
আমি তো জানি ইংরেজির চেয়ে আরবি জানলে লাভ হইতো বেশি! ৭০ লাখ মধ্যপ্রাচ্যে থাকে আর তাদের টাকায় দেশ চলে। তাদের তো ইংরেজির চেয়ে আরবি বেশি দরকার ছিলো!! যারা ভালো ইংরেজি জানে তারা তো দেশে থাকতে চায় না। দেশের ঘটিবাটি বিক্রি কইরা হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর বিদেশে লইয়া যায়! আর ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া হাজার হাজার পোলামান বিদেশে পড়তে যায় আর দেশের শত শত কোটি ডলার তাদের পড়ার খরচ হিসাবে বিদেশে চলে যায়। এগুলা আর দেশে আসে না। আপনের কথা তো বুঝলাম না ভাই/আপা, ইংরেজি দেশের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতো বা রাখবে??

এইবার আসি, আরো একটি আক্রমণের কথায় (ভুল ইংরেজিতে)।
“ভাই নিজে ইংরেজি জানেন না , তাই বাংলা বাংলা কইরা চিল্লান। সবাইরে লেজ কাটা শিয়াল বানাইতে চান কেনো?” (দেশের সবচেয়ে দামী আর সবচেয়ে নামী দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ডিগ্রী নিলাম যেখানে বাংলা ছিলো না, তারপরও এতবড় অপমান!!)
আরো কত যে আক্রমণ । তবে আশার কথা হলো আমার যে বন্ধুরা বেশি বেশি আক্রমণ করতো তারা এখন আমার চেয়ে অনেক ভালো বাংলায় লিখেন। স্বার্থকথা সেখানেই।

এখন চালাচ্ছি নতুন এক ক্যাম্পেইন , “মায়ের ভাষায় নিজের নাম”।
প্রচুর মানুষ বাংলায় নাম লিখছেন , কিন্তু যারা লিখছেন না তাদের কিছু কথা শুনি :
"ভাই আমার অনেক ‘ বিদেশি বন্ধু আছে, সেজন্য নামটা বাংলায় লিখতে পারবো না। "
কিন্তু কয়েক বছর যাবত আপনি তো বাংলায় লিখছেন । নিশ্চয় আপনার বিদেশি বন্ধুরা আপনার স্টাটাস পড়তে চায়। তো ইংরেজিতে লেখা উচিত না আপনার? তারাতো আপনার বাংলা স্টাটাস পড়তে পারে না !
তা আপনার লাইক বা কমেন্টে এইসব বিদেশি বন্ধুদের তো কখনো পাইলাম না!
আপনি যাতে বুঝতে পারেন আপনার বিদেশি বন্ধুরা নিশ্চয় সেভাবে লিখেন না!আপনি তো খুবই যত্নশীল বিদেশি বন্ধুদের জন্য। বাংলায় স্টাটাস লিখে তো তাদের কষ্ট দিচ্ছেন!!
আরেকজন আবার সুন্দর কথা বললো, আরে ভাই, বিদেশি বন্ধুদের সাথে তো চ্যাট করি! যাইহোক সব বাঙালি এখন বিদেশি বন্ধুদের সাথ ব্যাপক চ্যাট করেন , এইটা ভালো (আল্লায় জানে কয়জনের কয়জন বিদেশি বন্ধু আছে এবং বিদেশি বন্ধুরা এদের সাথ খালি ফেসবুকে চ্যাট করেন!!)
তো বললাম ভাই/আপা ঠিকআছে, আপনার এত্ত এত্ত বিদেশী বন্ধুরা যাতে আফনেরে খুইজা পায়, ALTERNTATIVE NAME এ ইংরেজি লিখেন, তাইলেই তো হয়!

আরে ভাই আপনি বুঝবেন না!! কইলাম , নিজের নাম আর স্বাক্ষর বাংলায় লিখতে বাঙালি শরম পায় বইলাই এখনো দাসত্ব ছাড়তে পারলো না, নিজের ভাষার মর্যাদা যে জানে না, সেই মানুষ দেশের মর্যাদা কী দিবে?
দেশ, মাতৃভাষা নিয়ে লম্বা লম্বা স্টাটাস দিয়া এদের ফেসবুকের ওয়াল আবার ছাইয়া ছাইয়া অবস্থা!

বাঙালি নিজের নাম আর সাক্ষর নিজের ভাষায় দিতে শরম পায় কেনো ?
সেইটা বুঝতে হইলে সাম্প্রতিক এক গুজবের কথা বলতে হবে। কিছু বেকুব লোকজন গুজব ছড়াইলো, “জুকার মামু ফেসবুকে বাংলা নাম নিষিদ্ধ কইরা দিছে। যারা বাংলা নাম নিয়া চিল্লাচিল্লি করতো হেগুলা জব্বর ধরা খাইছে, সব নাম পাল্টাইয়া ফেলতেছে।” (বাংলায় যারা নাম লিখে তারা ধরা খাইলে আপনে এত খুশী কেনো!)

সাঈদিরে চান্দে দেখার গুজবকেও এই গুজব ছাড়াইয়া গেলো , ফলাফল দুই গ্রুপে দুই ধরনের -
১. যারা বাংলায় নাম লিখে শান্তি পাচ্ছিলো না, উসখুশ করছিলো (কারণটা পরে বলতেছি), এগুলা হইলো রাজাকার বাঙালি, রাজাকাররা এই চান্স কোনমতেই মিস করলো না। বিদ্যুৎগতিতে নাম ইংরেজি করে ফেললো। গুজবটা থামাতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আবার ভুয়া একটা স্টাটাস মেরে দিলো, “জুকার মামু ইংরেজিতে নাম লিখতে বাধ্য করলো!!”নিজের তো লেজ কাটছেই আবার অন্যদের লেজ কাটানোর উস্কানিও দিচ্ছে!
২. দুই নম্বর গ্রুপের অবস্থা আসলেই কাহিল, এরা হলো কইলজা দুর্বল গ্রুপ । যুদ্ধের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা জোশে মুক্তিযুদ্ধে গেছে, কিন্তু অনেকেই প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলো। সেই ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধার মতো। ৭১ টিভি কয়দিন আগে যারে নিয়া অনেক ধরা খাইলো। সে ভয় পেয়ে ক্রাক প্লাটুনের সব পরিকল্পনা ফাঁস করে আর আজাদ সহ কমপক্ষে ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পরে এবং নৃশংস নির্যাতনে মারা যায় ।

এইসব কইলজা দুর্বল বিখ্যাত ফেবু সেলিব্রিটিরাও এই গুজবে প্যান্ট/পায়জামা ভিজিয়ে ফেলে এবং তারাও নাম পাল্টে ইংরেজি করে। এবং একটা ভুয়া স্টাটাস মেরে দেয়, “জুকার মামু বাংলায় নাম রাখতে দিলো না!”
এই কইলজা দুর্বলরা অবশ্য প্রায় সবাই এখন আবার বাংলায় ফিরে এসেছে। কিন্তু রাজাকার বাঙালিগুলা আর ফিরে আসে নাই।
কেন এই ইংরেজিপ্রীতি! কারণটা ১ নাম্বার গ্রুপ থেকেই বোঝা যায়। এরা কেন নাম বদলানোর একটা সুযোগ খুঁজছিলো?

মূল বিজনেস ‘লাইক’ , মূল রহস্য ‘লাইক’! এরা ভাবছে বাংলা নাম থাকার কারণে তাদের লাইক বাড়তেছে না!
আর যারা শুরু থেকে বাংলা নাম লিখতেই চায় না, তারাও ওই একই কারণ।
লাইক কমে যাওয়ার ভয়ে এরা মায়ের ভাষায় নাম লিখে না। অথচ ধারনাটি ভীষণ ভুল।
আরে আমার ভাষা কি এতই ফেলনা যে নিজের নাম আর সাক্ষর নিজের ভাষায় লিখতে লজ্জা করবে?
অথচ এ দুটি যখন আপনি করবেন, তখন দেখবেন আপনার আত্মমর্যাদাও বেড়ে যাবে , নিজের কাছে। নিজের নাম আর সাক্ষর মায়ের ভাষায় লিখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকুন – দেখবেন মনটা ভালো হয়ে যাবে।
দাসত্বের শৃংখল এখনো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে বলেই কিছু বাঙালি মনে করে বাংলায় নাম লিখলে আর বাংলায় সাক্ষর করলে তাদের প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে!

আমরা পিছিয়ে আছে ইংরেজি না জানার কারণে নয়, বাংলাকে মর্যাদা না দেয়ার কারণে। এগিয়ে যেতে আত্মমর্যাদাবোধ থাকা লাগে, নিজের নাম যে জাতি নিজের ভাষায় লিখতে চায় না, সে জাতি আগাবে কীভাবে?

আসুন আর মায়ের ভাষাকে অপমান নয়। মায়ের ভাষায় লিখি নিজের নাম। ফেসবুকে বাংলার জয় হোক।

আমরা মাথা উঁচু করে দাড়াতে চাই। পৃথিবীর যে রাষ্ট্র উন্নতি করেছে মায়ের ভাষায় করেছে । ফেসবুকে নিজের নাম বাংলায় লিখে একবার তাকিয়ে দেখুন। মনটা ভালো হয়ে যাবে। এটা আমাদের আত্মমর্যাদার বিষয়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮

রাইসুল ইসলাম রাণা বলেছেন: শুধু ফেসবুকে নয়। যেখানে যেখানে সম্ভব আমরা বাংলায় লিখবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.