নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি চালায় কে?

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০১

ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত বাম রাজনৈতিক দলের সদস্য, পরবর্তী সময় পরিবহন শ্রমিক নেতা। সেখান থেকে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার আগে বিএনপিতে যোগ দেন। তখনো আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন না। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে আলোচনায় আসা এই ব্যক্তি এখন বিএনপির ‘প্রধান নীতিনির্ধারক’। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস। পুরো নাম অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

বিএনপি নেতারাই বলেন, দলে এখন সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তি তিনি। দলের কমিটি গঠন, কাকে কোথায় নিয়োগ দেবেন, গুলশান কার্যালয় কীভাবে চলবেÑ সবই তার নির্দেশে হয়। দলের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত কী হবে, কোনো নির্বাচনে থাকবে কি থাকবে নাÑ তাতেও তার মতামত গুরুত্ব পায় সবচেয়ে বেশি। অনেকেই বলেন, শুধু গুরুত্ব পায় বললে ভুল হবে, সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এ কারণে স্বভাবতই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন, দল চালায় কে? খালেদা জিয়া, নাকি শিমুল বিশ্বাস। খালেদা জিয়া যদি দল চালাবেন তাহলে তাকে ঘিরে দলে এত বড় বলয় কেন? সব সিদ্ধান্তের জন্য তার কাছে জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও কেন দ্বারস্থ হতে হবে? খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে কেন তার মোবাইলে ফোন দিতে হবে স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সান্ত¦Íনা জানানোর জন্য গুলশান কার্যালয়ে গেলে দেখা করা থেকে বঞ্চিত করেন শিমুল বিশ্বাস। ওই মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে বা বিএনপি নেতাদের না জানিয়েই তিনি দরজা বন্ধ করে রাখেন। তিনি নিজেও খালেদা জিয়ার পাশে গিয়ে বসে থাকেন। পরে প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে তাকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখেন শিমুল বিশ্বাস। সেই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। বিএনপি নেতারাও এই শিষ্টাচারবহির্ভূত ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করেছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বললেও তারা কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা অভিন্ন ভাষায় বলেন, কথা বললে পদ থাকবে নাকি? তবে যা কিছু শোনা যাচ্ছে তাকে ঘিরে তা অনেকটাই সত্য।

এ ব্যাপারে শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কথা বলব না। এক সময় আসেন, কথা বলব।’

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে তিনি বলেন, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। তদন্তে নেতারা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের শাস্তি দিতে হবে।

জানা গেছে, ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের পর নির্বাহী কমিটি গঠনে শিমুল বিশ্বাসের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঘোষিত ৪১ নেতার মধ্যে বেশিরভাগ তার আশীর্বাদপুষ্ট। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিজের লোককে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ত্যাগী অনেক নেতা পদবঞ্চিত হয়েছেন।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া যেদিন মুক্তি পান সেদিন তার গাড়ির সামনের আসনে বসে পড়েন শিমুল বিশ্বাস। তারপর থেকে সেই আসন আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। প্রাথমিকভাবে তার কোনো পদ ছিল না। পরবর্তী সময় চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিনে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রথম থেকে দলে আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া না হয়ে ধীরে ধীরে দলে অবস্থান তৈরি করেন। দলে একটি নিজ বলয় তৈরি করেন তিনি, কিন্তু বিশেষ সহকারীর পদ পাওয়ার পর ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। দলের অধিকাংশের ধারণা, তিনি একটি বিশেষ সংস্থার লোক। বিএনপিতে থেকে বিএনপির ক্ষতি করছেন তিনি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সামনে তাকে ‘গালিগালাজ’ করেন নেতাকর্মীরা। এমনকি তাকে মারতেও উদ্যত হন। তাকে বাদ দিতে স্লোগানও দেওয়া হয়। কিন্তু ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর অজানা আতঙ্কে পিছু হটেন অনেকে। এরপর কয়েকবার তাকে সরানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।

জানা গেছে, গত বছরের ১ জানুয়ারি সরকারের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পর খালেদা জিয়া লন্ডনে গেলে অনেকটা নিরুদ্দেশ হয়ে যান শিমুল বিশ্বাস। ওই সময় দলের নেতারা কেউ তার দেখা না পেলেও শোনা যায়, আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রীর বাসায় শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসায় থাকতে শুরু করেন। এখনো তিনি ওই বাসায় থাকছেন।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা দাগনভূঁইয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. সাইফুল বলেন, আমরা ডজনখানেক মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর তিনি (শিমুল বিশ্বাস) ম্যাডামের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাহলে আমরা কী করব। আমরাও কী ম্যাডামের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা কিংবা যেখানেই যান ওয়ারেন্টের আসামি হয়েও তার সঙ্গে সব জায়গায় গাড়ির সামনের আসনে থাকেন শিমুল বিশ্বাস। বিষয়টি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে কথা উঠলে আপাতত তাকে সঙ্গে না রাখার পরামর্শ দেন নেতারা কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষিত ৪১ নেতার মনোনয়ন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সেখানে অধিকাংশই তার আশীর্বাদপুষ্ট নেতা কিংবা অনুসারী। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই নিয়োগ দিয়েছেন। একটি বিভাগ কয়েকটি জেলা মিলে গঠিত হলেও দেখা গেছে, এক জেলা থেকেই সাংগঠনিক সম্পাদক ও দুই সহসাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলাগুলোর মধ্যে পদ এমনভাবে বণ্টন করা হয়, যাতে ভারসাম্য থাকে কিন্তু নিজের পছন্দের লোককে নিয়োগ দিতে গিয়ে তা করা হয়নি।

জানা গেছে, গুলশান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যাদের এ কার্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার আগে তেমন কিছুই ছিল না। তারা কয়েকজন মিলে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর নেপথ্যে রয়েছেন শিমুল বিশ্বাস। সাভার ও গাজীপুরে তাদের দুটি প্রজেক্ট আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণও নিয়েছেন এমনও শোনা যায়। বর্তমানে তাদের কোম্পানিতে লগ্নি একশ কোটি টাকার বেশিÑ এমনটি গুলশান কার্যালয়ে বলাবলি হচ্ছে।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের কয়েকজন অফিস সহকারী ও সিএসএফ কর্মকর্তা মিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ রমা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, অ্যাকটিভ ট্রেডিং, রমা প্যাকেজিং অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড, রমা অটো রাইস মিলস লিমিটেড। এ সম্পর্কিত প্রাপ্ত দলিল আমাদের সময়ের কাছে আছে। জানা গেছে, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যে রয়েছেন শিমুল বিশ্বাস।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৬

বিজন রয় বলেছেন: খালেদা জিয়া অার তারেক জিয়া।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

আহমেদ রশীদ বলেছেন: তাহলে বিজন রয়ের নাম আসে কিভাবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.