নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রনির জগতে স্বাগতম

আমি আহসান রনি। লিখতে খুবই ভালবসি। আমার চিন্তাভাবনা এখানে খুঁজে পাবেন।

আহসান রনি

আমি আহসান রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছি। আমি দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করছি ফিচার রিপোর্টার হিসেবে।

আহসান রনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধন্যবাদ প্রতিটি স্বাধীন সকালের জন্য

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৭



সকাল জিনিসটা সকলের কাছেই প্রিয়। সকালে মনের মধ্যে একটা শান্তি শান্তি ভাব কাজ করে। একটা বিখ্যাত উক্তি আছে, Morning shows the day. সকালই আসলে আমাদের সারা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। দিনভেদে সময়টি একেক জনের জন্য একেক রকম। সকলে রাতে ঘুমায় একটি সুন্দর সকালের প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু এমন যদি হয় আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন এই কথা ভেবে যে, রাতে ঘুমের মধ্যে আপনাকে মেরে ফেলা হয়নি। আপনি সুস্থভাবে জেগে উঠেছেন এটাই আপনার জন্য শান্তনা!! এমন যদি হয় আপনি সকালে উঠে শুনলেন আপনার পাশের বাড়ির মেয়েটিকে গতকাল রাতে একদল মানুষ তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে রেখেছে নদীর পাড়ে, আর তা কুকুর কুরে কুরে খাচ্ছে!! এমন যদি হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি শুনলেন আপনার অতি প্রিয় বন্ধুটি আর বেঁচে নেই। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অথবা সকালে আপনার ঘুম ভাঙলো মানুষের কান্নার আওয়াজে। আপনার বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে কিছু মানুষ। আর ফিরবে কিনা কোন ঠিক নেই। ভাবতেই সবার কাছে অসহ্য মনে হবে। সকলে বলে উঠবেন এমন সকাল কেউ কোনদিন প্রত্যাশা করে না এবং এমন সকাল কোন শত্রুরও হোক এটা পর্যন্ত চায় না। কিন্তু যদি বলি এমনটিই হয়েছিল। মানুষ জেনেশুনে তাঁদের সকালকে এমন উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলেন। তাঁরা জেনে শুনে মৃত্যু নিজের দাওয়ায় আমন্ত্রন দিয়ে এনেছিলেন; শুধুমাত্র একটি আশায়। আর সে আশার নাম স্বাধীনতা। এমন একটি সকালের প্রত্যাশায় যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সকলে নিশ্চিন্ত মনে হাই তুলবে। এমন একটি সকালের আশায় যে সকালে সকলে শান্তি মতো তাদের কর্মক্ষেত্রে যাবে এবং দিন শেষে কাজ করে বাড়ি ফিরবে ও বাড়ির সবাই মিলে রাতের খাবার খাবে; গল্প করবে। শুধু্মাত্র একটি স্বাধীন সকাল নিয়ে আসার প্রত্যয়ে জীবন দিয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষ, ইজ্জত হারিয়েছেন ২ লক্ষ নারী। রক্ত দিয়েছেন আরো লাখো মানুষ। লাখো মানুষ হারিয়েছেন তাঁদের স্বজন। কিন্তু সবকিছু তাঁরা মেনে নিয়েছেন এই সুন্দর একটি সকালের প্রত্যাশায়। পরবর্তী প্রজন্মকে একটি চিন্তাহীন সকাল উপহার দিতে তাঁরা জীবন বাজি রাখতে দ্বিধা করেননি। মা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সকালের কথা ভেবে নিজের সন্তানকে ঠেলে দিয়েছেন মৃত্যুর মুখে, বাবা তাঁর ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলেছেন: একটি স্বাধীন সকাল না নিয়ে ফিরবি না। বোন তার ভাইকে বলেছে: ভাই! পরবর্তী প্রজন্মের বোনেদের জন্য একটি নিরাপদ সকাল নিয়ে আসিস। ছেলেটি পরিবারের সকলের আশা পূরণ করতে নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি। লড়াই করেছে জীবনের শেষ নি:শ্বাস টিকে থাকা পর্যন্ত। শত্রুকে নির্মমভাবে শেষ করে দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি সে। প্রত্যাশা শুধুমাত্র একটি স্বাধীন সকালের। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া; দেশের প্রতিটি অঞ্চলের কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়স্ক, বৃদ্ধ কেউই বাদ যায়নি এই সুন্দর সকালে নিয়ে আসার জন্য এগিয়ে যেতে। তাঁদের মনে মধ্যে স্বাধীন সকালের স্বপ্ন এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিলো যে যখন তাঁর হৃদয় ভেদ করে গুলিখানা পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে তবুও সে সামনের শত্রুদের শেষ করে দিতে গুলি চালাতে ভোলেনি। তাঁরা সকলে স্বপ্নটি এতো মনে প্রাণে দেখেছিলেন যে গুলি যখন তাঁর মাথা ভেদ করে খুলি সারা জায়গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে তখনও তাঁর মুখে হাসির রেখা মিটে যায়নি। অবশেষে সকলে প্রত্যাশার সেই সকাল পেয়েছে এবং সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিষ্ময়। জন্ম হয়েছে এক স্বাধীন দেশের। স্বাধীন দেশের স্বাধীন সকালের সেই স্বপ্ন তাঁদের পূর্ণ হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সেই স্বাধীন সকাল পেয়েছি আমরা। এই স্বাধীন সকালের স্বপ্ন দেখে অনেকে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ৩০ লক্ষ বাড়ি ফেরেনি, অনেকে ফিরেছেন। যারা ফেরেননি, আর যারা ফিরেছেন তাঁদের প্রতি আমাদের ঋণ কি শোধ হবার মতো? আমরা প্রতিদিন সকালে যে শান্তি মতো ঘুম থেকে উঠছি তা শুধু তাঁদের ত্যাগের কল্যানে। তাঁদের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাঁদের প্রতি মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, ধন্যবাদ! প্রতিটি স্বাধীন সকালের জন্য।



১৫।১২।২০১৪

আহসান রনি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.