নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রনির জগতে স্বাগতম

আমি আহসান রনি। লিখতে খুবই ভালবসি। আমার চিন্তাভাবনা এখানে খুঁজে পাবেন।

আহসান রনি

আমি আহসান রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছি। আমি দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করছি ফিচার রিপোর্টার হিসেবে।

আহসান রনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশে বইমেলা-২০১৫ পর্যালোচনা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

চলছিল হরতাল, আবার এর সাথে শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ, কিন্তু অমর একুশে বইমেলাতে মানুষের ঢলে কোন পরিবর্তন ছিল না। অনেকে শুধু হয়তো বই দেখার জন্য অথবা নিজের চেহারা টিভি পর্দায় দেখানোর জন্য অথবা বিখ্যাত কোন লেখকের দেখা পাওয়ার আশায় গিয়েছিলেন বইমেলাতে। তবে এটি না বললেই নয় এবারের বইমেলায় মানুষের ভিড়ের কমতি ছিল না। বইমেলা বলতেই লেখকদের মিলনমেলা। আমরা যারা কিছু লেখালেখি করার চেষ্টা করি, তাদের জন্য বইমেলা এক মিলনমেলার নাম, বিভিন্ন নতুন লেখকদের সাথে পরিচিত হবার নাম। যদিও নিজের কোন বই বের হয়নি, কিন্তু পরিচিত নানা জনের বই বের হওয়া দেখে বা বই বের হবার কথা শুনে ভালোই লেগেছে। বইমেলায় হাটতে হাটতে হঠাৎ যখন সামনে ইমদাদুল হক মিলন স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল তখন মজা পেয়েছিলাম। তার সাথে কথা বললাম, তার নতুন বই কিনে তার অটোগ্রাফ নিলাম, তার সাথে ছবি তুললাম। এ যেন এক আলাদা অনুভূতি। বইমেলায় ঘুরতে ঘরতে হঠাৎ একজায়গায় ভীড় দেখে গিয়ে দেখি জাফর ইকবাল স্যার। আমি ছোট বেলা থেকে গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগ পরবর্তীতে সাংবাদিকতা করার কারণে জাফর ইকবাল স্যারের দেখা পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এ কথা সত্যি যে আমি জাফর ইকবাল স্যারকে সরাসরি দেখলাম এবারের বইমেলাতে। এরকম বিখ্যাত লেখকদের সাথে দেখা হওয়া ছিল বইমেলার নিয়মিত ঘটনা। বইমেলার মাঝামাঝি সময়ে লেখকদের ভীড় ছিল অনেক বেশি। আমার পরিচিত কয়েকজনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন দেখলাম, তাদের বই কিনলাম, অটোগ্রাফ নিলাম; তারাও খুশি হলো আবার আমার বই কেনাও হলো! শোনা গেছে এবারের বইমেলায় সাড়ে তিন হাজারের মতো বই বের হয়েছে। যা বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি ভাল সংবাদ। আরেক খবর চমৎকৃত করেছে সবাইকে, সেটি হলো এবারের বইমেলায় তরুণ লেখকদের বই ছিল বেশি। কিছু কিছু সম্পাদনা বই বের হয়েছে যেখানে নবীন লেখকদের একটি করে লেখা ছাপানো হয়েছে। এই উদ্যোগটি খুব ভাল ছিল। নতুন লেখকরা এতে আরো বেশি লেখার উৎসাহ পাবে। হুমায়ুন আহমেদ চলে যাওয়ার পর বইমেলায় তাকে সবাই খুব মিস করে। দেখা যায় বিভিন্ন প্রকাশনীতে ঠিকই তার পুরনো বই-ই বেশি বিক্রি হয়। কিছু প্রকাশক হুমায়ুন আহমেদকে বা তার বই বেচেই তাদের প্রকাশনীকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। বইমেলায় তরুণদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা বই না কিনলেও বই দেখতে যে বইমেলায় এসেছে এটিই একটা ভাল দিক। অনেকে বলেছেন এবারের বইমেলায় নাকি দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি, ক্রেতার সংখ্যা কম। এটিকে অনেকে নেতিবাচক ভাবে নিলেও আমি এটিকে ইতিবাচক ভাবেই নিতে চাই। বই কিনুক আর না কিনুক তরুণ প্রজন্ম যে বইয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে বইমেলাতে এসেছে এটিই তো অনেক। অনেকে নতুন লেখকদের লেখার দূর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি তাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, তরুণ লেখকদের প্রথম একটি দুইটি বইতেই যদি আপনি তাদের লেখা বিশ্বমানের চান তাহলে আপনি কি ধরনের সমালোচক? অনেক তরুণ লেখকের লেখা যে ভাল ছিল তা তারা স্বীকার করতে চান না। মানের কথা বলতে গিয়ে যদি আপনি হুমায়ুন আহমেদের প্রথম দিকের উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার বা নন্দিত নরকের উদাহরণ দেন তাহলে আপনাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে সবাই কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ হয় না। অনেকে ভেবেছেন তরুণরা অর্থ আয়ের জন্য বই বের করেছেন। কিন্তু কয়েকজন তরুণ লেখকদের সাথে কথা বলে জেনেছি, তাদের কোন অর্থ দেয়া তো দূরের কথা কিছু কিছু প্রকাশক তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বা ৫০-১০০ বই কিনে নিতে বাধ্য করেছেন। তবুও তরুণরা নিজেদের লেখা সকলের কাছে পৌছে দিতে নিজের বই প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। কিছু কিছু বইয়ের নাম নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল। কিন্তু সেগুলো সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অশ্লীল নাম দিয়ে বই আমরা আগে প্রচুর দেখেছি। এবারের বইমেলার বইয়ের নাম অশ্লীল ছিল না, কিন্তু কিছু কিছু বইয়ের নাম একটু অদ্ভুত ছিল। এবারের বইমেলায় নাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার স্বীকার হওয়া বইটির নাম, নিচের ঠোট কামড়ে ধরে কাদতে নেই। লেখক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আমাদের বন্ধু; তার কাছে নামের কারণ জানতে চাইলে সে অনেক ভাল যুক্তি দিয়েছে এবং ফেসবুকের মজা লস পেজে তার বইয়ের নামে ট্রল প্রকাশ হওয়ার পর সে এর প্রতিবাদ জানিয়ে কেন বইয়ের নাম এমন হলো তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। বইমেলার শেষে দেখা গেছে সমালোচনা সহ্য করে তার বই-ই প্রচুর বিক্রি হয়েছে। বলা হয়, নেতিবাচক হোক আর ইতিবাচক হোক মার্কেটিং-ই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ; যার প্রমাণ এই বইটি। প্রকাশক সমিতি নিজেরা যেখানে কিছু বলেনি সেখানে অন্যদের এই বিষয়ে কথা বলা ঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনীকে মৌলবাদী বই প্রকাশের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা অনেক সমালোচনার স্বীকার হয়েছে। সৃজনশীল একটি প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা ঠিক কি না এটি নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন উঠতেই পারে। বই নিষিদ্ধ করা যেতে পারে কিন্তু তাই বলে পুরো প্রকাশনী! অন্য অনেক প্রকাশনীতে পূর্বে নিযিদ্ধ বা ধর্মীয় অনুভূতিকে উষ্কে দেওয়া প্রচুর বই লক্ষ্য করা গেছে, কিন্তু এটি নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা লক্ষ্য করা যায়নি। কত বিখ্যাত লেখক, স্বনামধন্য সাহিত্যিক, দেশের মন্ত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্মকর্তা বইমেলাতে এসেছেন নিজেদের প্রাণের তাগিদে। কিন্তু বাংলা একাডেমির যেন এদিকে কোন খেয়াল ছিল না। বইমেলার গেটে মেটাল ডিটেক্টর রাখা ছাড়া তেমন কোন নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়নি। আমাদের ছোট ভাই রিভু আমাদের সাথে গল্প করে বাইরে বের হবার সময় দেখে তার প্রিয় সাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে। বইমেলার সম্মানিত নিরাপত্তা রক্ষীদের সামনেই সে তার সাইকেলটি তালা মেরে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে কোন সদুত্তর পাইনি, কোন অভিযোগ করারও জায়গা ছিল না। বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে অভিজিৎ রায়ের হত্যার ঘটনায়। একজন মানুষকে পুলিশের সামনে কুপিয়ে মেরে ফেললো আর পুলিশরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো, তা সত্যি দু:খ জনক। ক্যাম্পাসে নিয়মিত মারামারির দোহাই দিয়ে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। বইমেলার আশাপাশে ককটেল ফোটা ছিল নিয়মিত ঘটনা। নিরপত্তারক্ষীদের সামনে ককটেল ফুটিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতিকারী কিন্তু তারা একজনকে আটক করতে পারেনি। তাছাড়া মেলায় ঢোকার জন্য কোন আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। লাইনের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে অত্যাচারের স্বীকার হয়েছে মেয়েরা। কিছু অমানুষ তাদেরকে ঘিরে ধরে তাদের গায়ে হাত দিয়ে মজা নিয়েছে। বেশিরভাগ মেয়ে প্রতিবাদ জানাতেও পারেনি, নীরবে সহ্য করেছে। প্রতিবছর যেহেতু বইমেলা একই জায়গায় হবে, সেহেতু বইমেলায় ঢোকার একটি আধুনিক এবং স্থায়ী পন্থা কি বের করতে পারে না বাংলা একাডেমি? বইমেলা থেকে ঘুরে আসলে পায়ে, জামাকাপড়ে ধুলোবালির এক স্তর পড়ে গিয়েছে। এতো মানুষের কল্যানে ধুলামুক্ত অমর একুশে মেলা দেখতে চাই। আবর্জনা মুক্ত মেলা দেখতে চাই। আমাদের অমর একুশে বইমেলা আমাদের গর্ব তাই এই বইমেলায় আমরা যেকোন ধরনের নেতিবাচক বিষয় দেখতে চাই না। এই মেলা হবে আমাদের গর্বের মেলা, এই প্রত্যাশা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: বইয়ের সংখ্যা জানতে পারলাম ।

শুভেচ্ছা আপনাকে লেখক

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩

সুফিয়া বলেছেন: ভাল লাগল। ধনবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪৯

আলাপচারী বলেছেন: ভালো বলেছেন।

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন। সহমত।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭

আহসান রনি বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.