নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসরচনাঃ বাবর আলীর ১/১১

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৯

এবারের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের ওয়ার্ডে আনুমানিক ৫৫/৫৬ বছর বয়সী একজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছিলেন, যিনি হেরে গিয়ে ডবল হ্যাট্রিক করেছেন। এর আগে পাঁচ বার দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবারই বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। এর মধ্যে দু’বার ছিল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সম্ভবতঃ জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর থেকেই তিনি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। পেশায় তিনি একজন গ্রোসারি শপের মালিক। ধরা যাক, তার নাম বাবর আলী (আসল নাম বলে তাকে আর বেইজ্জত করতে চাচ্ছি না। তিনি জানতে পারলে আমার নিজেরও বেইজ্জত হবার সম্ভাবনা আছে)।

একটা মানুষ এতবার দাঁড়িয়ে একবারও জিততে পারলেন না, এটা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে হয়নি। টাকা ও পেশীশক্তি থাকলে নির্বাচনে জেতা কোন ব্যাপার না-প্রচলিত এই ধারণা বাবর আলীর ক্ষেত্রে কেন বার বার ব্যর্থ হচ্ছে, জানার খুব কৌতূহল হলো। কারণ এই দুটি বস্তু তার পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে। ভদ্রলোক যেহেতু আমাদের মহল্লার বাসিন্দা নন, তাই তার সম্পর্কে আমার বেশি কিছু জানা ছিলনা। খোঁজ খবর করতে গিয়ে কিছু চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেল। তথ্য গুলো এরকমঃ

১) ভদ্রলোকের মরহুম পিতা অনেকদিন আগে এই এলাকার একজন জোতদার শ্রেনীর মানুষ ছিলেন। তখন এই এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ছিল না। প্রচুর জমি জমার মালিক হলেও বাবর আলীর পিতা তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনবারই পরাজিত হয়েছেন।

২) পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বাবর আলীরা তিন ভাই ধুমসে বিক্রি বাট্টা করে জুয়া খেলে আর মদ খেয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। বাবর আলীর ভাগের জমিগুলো আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে পড়ায় জমিগুলোর দাম রাতারাতি বেড়ে যায়। ফলে প্রায় শেষ হয়ে আসা দশ বারো বিঘা জমিও এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।

৩) বাবর আলীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে একেক জন একেক কথা বলে। কেউ বলে ম্যাট্রিক পাশ, কেউ বলে বাংলায় ‘ম্যাট্রিক’ লিখতে বললে তিনি কলম ভেঙ্গে ফেলবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি নিজে কিছু বলেন না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে তিনি কী লেখেন কেউ জানেনা। তবে ভদ্রলোক কথাবার্তায় খুব চৌকশ। বাট, সো, হোয়াই ইত্যাদি ইংরেজি শব্দ তিনি আকছার ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া তার একটি প্রিয় ইংরেজি বাক্য আছে, ড্রিঙ্কস ফেস্টিভ্যাল। সে কথায় পরে আসছি।

৪) “বাবর এ্যান্ড সন্স” (যদিও তার কোন পুত্র নাই, চারটিই কন্যা) নামে তার গ্রোসারি শপটি মুলতঃ আড্ডাখানা। বাবর আলী এই দোকানে বসে যত না ব্যবসা করেন, তার চেয়ে বেশি মহল্লার কিছু সুযোগ সন্ধানী লোকেদের সাথে বসে চা, পান ও সিগারেট সহযোগে আড্ডা দেন। দু’জন কর্মচারী দোকান চালায়। দোকানের পেছনে একটা ঘর আছে। সন্ধ্যের পর সেই ঘরে বসে গভীর রাত পর্যন্ত মদ খাওয়া হয়। বাবর আলীর ভাষায়, ড্রিঙ্কস ফেস্টিভ্যাল।

৫) চার কন্যার তিনটিকে তিনি অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ে দিয়ে ফেলেছেন। শেষ কন্যাটি ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় এক ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে তুফান মিয়ার সাথে পালিয়ে গেছে। তুফান মিয়ার আগের পক্ষের স্ত্রী ও একটি সন্তান আছে। তাদের ফেলে রেখে সে বাবর আলীর মেয়েকে নিয়ে পলাতক। বাবর আলী থানায় জিডি করলেও পুলিশ এখনো তাদের ধরতে পারেনি। তবে তারা তুফান মিয়ার বাবা ট্রাক ড্রাইভার ইরফান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান দিয়ে দিয়েছে।

৬) পঞ্চমবার নির্বাচনে হেরে যাবার পর বাবর আলীর স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা যান। ফলে তার স্ত্রীর সংখ্যা তিনটি থেকে কমে দু’টিতে নেমে আসে। এতদিন সেই শূন্যস্থান পূরণের চিন্তা ভাবনা বাবর আলীর ছিল না। তবে এবার নির্বাচনের প্রচারে নেমে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত এলাকায় এক ষোড়শী মেয়েকে দেখার পর থেকে তার মন একটু নরম হয়েছে। মেয়েটি গরীব ঘরের হলেও দেখতে সুশ্রী। বিস্তর টাকা পয়সা থাকায় মেয়েটিকে নিজের ঘরে তুলে আনা বাবর আলীর জন্য তেমন কঠিন কাজ নয়। তিনি আপাততঃ সেই চিন্তা ভাবনার মধ্যে আছেন এবং টুকটাক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ইতিমধ্যে বাবর আলীর লোক মেয়েটির বাড়িতে এক টুকরি ফজলী আম দিয়ে এসেছে।

৭) ষষ্ঠবার বাবর আলী হারলেন কেন, তার পোস্ট মর্টেম তিনি নিজেই করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, মীর জাফর আলী খানের বংশের বাতি এখনো জ্বলছে। অর্থাৎ বাবর আলীর লোকেরা বেইমানী করেছে। এর আগেও বার বার লোক বদল করে বেইমানী ঠেকানো যায়নি। বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের জন্য বাবর আলী ভোট প্রতি একশো টাকা করে বরাদ্দ করলেও সে টাকা তাদের হাতে পৌঁছায়নি। প্রচারের কাজে নিয়োজিত তার নিজের লোকজনই সেই টাকা মেরে দিয়েছে।

৮) ভোটে হেরে যাবার আর একটা বড় কারণ হলো, ভোটারদের দোয়া না পাওয়া। ওয়ার্ডের যেসব ভোটারকে নগদ টাকা দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বাবর আলী প্রত্যেকের নম্বরে দু’শো টাকা করে ফ্লেক্সি পাঠিয়েছেন এবং এসএমএস করে দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল থেকে দেখা গেছে এই কৌশলে দোয়া চেয়ে তেমন লাভ হয়নি। উল্টো রিটার্নিং অফিসারের কাছে জবাবদিহি করতে গিয়ে বাবর আলী পেরেশান।

‘ফ্লেক্সি করে টাকা কে পাঠিয়েছে, আমি কী জানি?’

‘আপনি দোয়া চেয়ে এসএমএস পাঠাননি?’

‘হাঁ, পাঠিয়েছি। তাতে কী হয়েছে? ডিজিটাল বাংলাদেশে আমি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়েছি। এতে দোষের কী হলো?’

৯) পরাজয়ের আর একটা কারণ হলো, বাবর আলীর চেহারা। বাংলা ছায়াছবির ভিলেন ডিপজলের চেহারার সাথে তার চেহারার খুব মিল। অনেকটা যমজ ভাইয়ের মতো মনে হয়। চেহারার এই সাদৃশ্য নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। তিনি যে খারাপ লোক নন, সেটা তার চেহারা দেখে কেউ বিশ্বাস করেনি। বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্ত ঘরের বউ বেটিরা বিটিভিতে বাংলা ছায়াছবি দেখে ডিপজলকে খুব ভালোভাবেই চেনে। তারা কেউ বাবর আলীকে ভোট দেয়নি।

১০) বাবর আলী নিজের চেহারা সম্পর্কে সচেতন থাকায় তার পোস্টার ও লিফলেটে নানা এ্যাঙ্গেলের নিরীহ ভঙ্গীর ছবি ছাপিয়ে বিলি করেছেন। ছবিতে তার পরনে সাদা পাঞ্জাবী, চোখে সুরমা ও মাথায় কিস্তি টুপী। কিন্তু এতে তেমন কাজ হয়েছে বলে মনে হয়না।

১১) বাবর আলীর প্রতীক ছিল মোরগ। লোকজন নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে যাওয়ার সময় তার একজন চামচার হাতে সব সময় একটা তাজা মোরগ থাকতো। সে প্রার্থীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মোরগটি ভোটারের সামনে উঁচু করে তুলে ধরতো। সন্ধ্যের পর মোরগটি জবাই করে বাবর আলীর মদের আসরে উৎসর্গ করা হতো। পরদিন সকালে আবার একটি নতুন মোরগ কেনা হতো। নির্বাচনে হেরে যাবার পর এ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে। বোতলের নাপাক পানির সাথে ভোটের মার্কা জবাই করে খেয়ে ফেলা ঠিক কাজ হয়নি। তা’ না হলে এভাবে কেউ হারে?



একজন বাবর আলীর এই এগারোটি তথ্য জানার পর আমার মনে হয়েছে, নির্বাচনে তার জেতার কোন কারণ ছিল না। আপনাদের কী মনে হয়?

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৭

এ্যরন বলেছেন: চরম

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, এ্যরন।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

সুমন কর বলেছেন: বিশ্লেষণমূলক লেখা বলা চলে। মোটামুটি লাগল !

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই সুমন কর।

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

+++

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই কাণ্ডারি অথর্ব।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

সোহানী বলেছেন: দারুন গবেষনাধর্মী লিখা....++++++++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, সোহানী।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। পয়েন্ট করে লেখায় আলাদা স্বাদ পাইছি।

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই হাসান মাহবুব।

৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

আজমান আন্দালিব বলেছেন: হাহাহা...মজাদার...

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই আজমান আন্দালিব।

৭| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

লেখোয়াড় বলেছেন:
ভাল লাগল।+++++++++++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, লেখোয়াড়।

৮| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: মাইল্ড রম্য স্টাইলে লেখা।

শুভেচ্ছা রইলো।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই ইসহাক খান।

৯| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১৩

জাফরুল মবীন বলেছেন: “বোতলের নাপাক পানির সাথে ভোটের মার্কা জবাই করে খেয়ে ফেলা ঠিক কাজ হয়নি”-তার হারের পিছনে এই কারণটাকেই বেশী যুক্তিযুক্ত মনে হলো =p~ =p~ =p~

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। ধন্যবাদ, ভাই জাফরুল মবীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.