নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসরচনাঃ হেঁচকি

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইদানিং মানুষজন খুব রেগে আছে। এমনকি আমিও। আমজনতার এই রাগ প্রকাশের দু’একটা নমুনা বলি।

আমার দুই ভাড়াটিয়া গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত বাড়তি হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে এ মাসে রীতিমতো বিদ্রোহ করে বসলো। তাদের কথা হল, এভাবে বিদ্যুৎ বিল বাড়াতে থাকলে এ বাসায় থাকা যাবে না। এটা কেমন কথা যে, তিনশো টাকার বিল ছয়শো টাকা হয়ে গেল? আমি বললাম, ‘পিডিবি দাম বাড়িয়ে দিলে আমি কি করবো, বাবা?’

এক ভাড়াটিয়া লেখার অযোগ্য ভাষায় পিডিবিকে গালি দিয়ে চলে গেল। আর একজন সামনের মাসে বাসা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমিই সেই বদমাশ পিডিবি। ঢাকায় ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালার হাতে পায়ে তৈলমর্দন করে, আর আমাদের এই মফঃস্বল শহরে ও কাজটি বাড়িওয়ালাদের করতে হয়। অতএব আমি কোন উচ্চ বাচ্য না করে চলে এলাম।

বাইশ বছর পর এবারের ঈদে স্ত্রী পুত্রসহ শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। আমার অতি বৃদ্ধ শ্বশুর মোবাইল ফোনে আমার মতো বৃদ্ধ জামাতাকে পটিয়ে রাজী করিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য, "আব্বা আর ক’দিনই বা আছে'-এই জাতীয় মিনমিনে বাক্যবানে আমার স্ত্রী আমাকে ঘায়েল করতে পার্শ্ব চরিত্রে ভালো ভূমিকা রেখেছেন। যাই হোক, বাসে উঠে মাথাপিছু চল্লিশ টাকা হারে একশো ষাট টাকা ভাড়া কনডাকটারের হাতে তুলে দিলে সে ভুরু কুঁচকে বললো, ‘আরো চল্লিশ টাকা।’ আমি মৃদু আপত্তি করে বললাম, ‘ভাড়া বেশি চাইছ কেন?’ যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে বিরামহীন ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে কনডাকটারের মেজাজ খাট্টা হয়ে আছে। সে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যে, ভাড়া নিয়ে আর একটা কথা বললে সে আমাকে সিট থেকে তুলে পা মাথা ভাঁজ করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবে। আমি বেশি কিছু বলতে সাহস পেলাম না। তবে আরো চল্লিশ টাকা দণ্ড দিয়ে আমিও ভুরু কুঁচকে কনডাকটারের দিকে এমনভাবে তাকালাম যেন ও ব্যাটাও একটা পিডিবি।

এবারের রমজান মাসে মানুষের মেজাজ খুব তিরিক্ষি ছিল। একে তো গরমের দিনে লম্বা সময় ধরে না খেয়ে থাকা। তার ওপর বাজারে আগুন। পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। সাত চড়েও আওয়াজ করেন না, এমন শান্ত শিষ্ট মানুষ সোবহান সাহেবকেও দশ রোজার দিন বিকেল বেলা দেখলাম ফুটপাথে এক কলা বিক্রেতার সাথে হাতাহাতি করতে। সোবহান সাহেব হাই স্কুলের শিক্ষক। ক্লাসে পড়ানোর বাইরে তার মুখে কথাবার্তা প্রায় নেই বললেই চলে। পাজি ছাত্ররা আড়ালে তাঁকে "সোবহান আল্লাহ' বলে ডাকে। সোবহান সাহেব তা’ বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু কোন ছাত্রকে তিনি কোনদিন বকাঝকা করেছেন, এমনটি শোনা যায়নি। সেই তাঁর মতো লোকও কলা বিক্রেতার জামা ধরে টান মেরে বোতাম ছিঁড়ে দিলেন।

আমি সাধারনতঃ বাজার হাট প্রায় করি না বললেই চলে। আমার মিসেস ও ছোট ছেলেটি আমার হয়ে এই ঝক্কি সামাল দেয়। রোজার মাঝামাঝি একদিন তাদের দু’জনের কিছু অসুবিধা থাকায় আমাকে বাজারে যেতে হল। একটা এক কেজি ওজনের রুই মাছ কেনার পর হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম, মাছওয়ালার একটা মাছেও কোন মাছি বসছে না। অথচ মাছ ও মাছির সখ্যতা চিরকালের। পত্রিকায় পড়েছি, মাছে ফরমালিন দিলে এই সখ্যতা আর থাকেনা। সর্বনাশ! এই মাছ খেলে তো কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে! আমি ব্যাগের ভেতর থেকে মাছটা বের করে বিক্রেতাকে ফেরত দিয়ে বললাম, ‘মাছ নেব না।’

ব্যস্, শুরু হয়ে গেল মহা গোলমাল। মাছওয়ালা বউনির সময় আমাকে টাকা ফেরত দেবে না। আর আমিও দুশো আশি টাকার মায়া ছেড়ে যাবো না। সব মাছওয়ালা এক হয়ে গেল। তাদের কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গী মারমুখী। এদিকে কয়েকজন ক্রেতা আমার চার পাশে ভিড় করে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখালেও কেনার পরে আবার মাছ ফেরত দিচ্ছি কেন এই প্রশ্নে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুললো। আমি ‘ফরমালিন’ শব্দটা জিবের ডগায় এনেও আবার পেটের ভেতর চালান করে দিলাম। মাছওয়ালাদের যে রুদ্রমূর্তি, তাতে ফরমালিনের কথা বললে এই বুড়ো বয়সে ধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্ততঃ জামার বোতাম গুলো খোয়ানোর সম্ভাবনা একশো ভাগ। শেষে অনেক ধস্তাধস্তির পর মাছওয়ালা আমাকে দুশো টাকা ফেরত দিল। বউনির সময় বাঁকি আশি টাকা সে আর ফেরত দেবে না। আমার ভীষণ রাগ হল। কিন্তু এ বয়সে রাগ করা ছাড়া আর কিই বা করার আছে, বলুন? পাকা চুলের গেরো বড্ড কঠিন, হাত পা শক্ত করে বেঁধে রাখে।

এই রোজার মাসেই একদিন ওষুধ কিনতে গেছি। প্রতি মাসে আমার ওষুধের যে বাজেট থাকে, এ মাসে তাতে আর কুলালো না। সব ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। বুঝতে পারছি, ওষুধের দাম দিতে গিয়ে আমি রেগে যাচ্ছি। ফার্মেসীতে অনেক খদ্দের। তারা যাতে শুনতে না পায়, সে জন্য সেলসম্যানকে ডেকে ফিস ফিস করে বললাম, ‘প্রেসক্রিপশনের বাইরে একটা ওষুধ দেওয়া যাবে?’

অনেকে ফার্মেসীতে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট কিনতে আসে। সাধারনতঃ বুড়ো হাবড়ারাই এসব ট্যাবলেট কেনে। অভিজ্ঞতা থাকায় সেলসম্যান ছেলেটি মুচকি হেসে ফিস ফিস করে করে বললো, ‘কি ওষুধ, চাচা?’

আমি বললাম, ‘রাগ কমাবার কোন ভালো ওষুধ পাওয়া যাবে?’

ছেলেটি আমার ওপর রেগে গেল। বললো, ‘চাচা, বুড়ো হয়ে গেছেন, তবু ফাজলামো করার অভ্যাস গেল না? রাগ কমাবার ওষুধ হয়? যান, ফুটেন। যত্ত সব হেঁচকি!’

**************

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭

মোগল সম্রাট বলেছেন: ভালোই লিখছেন

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, মোগল সম্রাট।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

জাকারিয়া জামান তানভীর বলেছেন: উপাদেয় রমজাননামচা :) :)

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই জাকারিয়া জামান তানভীর।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ইদানিং মানুষগুলো অল্পতেই রেগে যায়।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে।

ধন্যবাদ, ভাই আজমান আন্দালিব।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

সুমন কর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মজা পাত্তয়া যায়। বেশ ভাল লাগল।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই সুমন কর।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


বেশ মজা পেলাম পড়ে।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই কাণ্ডারি অথর্ব।

৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার একটা রস রচনা পড়লুম অনেকদিন পর। খুব ভাল লাগল। বছর পন্চাশ পন্চান্ন আগে পড়া 'বিরুপাক্ষের রচনাবলী'র কথা মনে পড়ল! ধন্যবাদ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বিরুপাক্ষের রচনাবলী একসময় পড়া ছিল। এখন আর মনে করতে পারি না।

ধন্যবাদ, প্রিয় ঢাকাবাসী।

৭| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

খাটাস বলেছেন: মজার মাধ্যমে বাস্তবতার অনুভুতি টা বেশ অন্য রকম লাগল। যারা দাম বাড়ায়, তাদের ওপর আমার ও রাগ হল।
সুন্দর।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, খাটাস। অনেক দিন পর আপনাকে আমার লেখায় পেলাম।

৮| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: মজা পাইলাম :-B :-B

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, মৃদুল শ্রাবন।

৯| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: সরস লেখনীর তারিফ করতে হয়।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার তারিফ পেয়ে খুশি হলাম।

ধন্যবাদ, ভাই হাসান মাহবুব।

১০| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৭

ডি মুন বলেছেন: তবে আরো চল্লিশ টাকা দণ্ড দিয়ে আমিও ভুরু কুঁচকে কনডাকটারের দিকে এমনভাবে তাকালাম যেন ও ব্যাটাও একটা পিডিবি।


হা হা হা

মজা পেলাম। :) :)

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই ডি মুন।

১১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩০

শুন্য পুরন কর বলেছেন: আপনার প্রশংসা করতে পারাও আমার কর্তব্য মনে হয়। আপনি খুব ভাল লেখেন। আপনার বিষয়গুলো সমসাময়িক, আমাদের কথা।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই শুন্য পুরন কর। আমার ব্লগ বাড়িতে আরও ৪৯ টি লেখা রয়েছে। পড়ার আমন্ত্রণ রইল। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

নীল জোসনা বলেছেন: মজার লেখা ...............

ভারাটিয়া সাইজ করার কোনো পদ্ধতি থাকলে জানাবেন । খুব বিপদে আছি । সবাই বলে বাড়ি ওয়ালারা ভারাটিয়াদের চাপে রাখেন ।আসলে কাহিনী উল্টা । ভারাটিয়ারা যে কত ধরনের যন্তনা করে তা কেবল ভুক্ত ভোগীই যানে ।

ভালো থাকবেন ..

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে একমত পোষণ না করে পারছি না। ভাড়াটিয়াদের অত্যাচারে আমার অবস্থাও কাহিল। আমি তো কোন পথ খুঁজে পাই না।

ধন্যবাদ, নীল জোসনা।

১৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ, ভালো লেগেছে ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই মামুন রশিদ।

১৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

রক্ত পলাশী বলেছেন: যেন ও ব্যাটাও একটা পিডিবি। ভাল থাকবেন।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, রক্ত পলাশী।

আমার ব্লগ বাড়িতে আপনাকে স্বাগতম। আশা করি আমার আগের ও পরের লেখাগুলিও পড়বেন। শুভকামনা রইল। ভালো থাকুন।

১৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:০৭

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: হা হা হা হেনা ভাইয়ের হেঁচকি পইড়া নিজেই হেঁচকি খাইলাম!!

কেমন আছেন?

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, বোন নাসরিন। আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? সামুতে আছো দেখে ভালো লাগছে। দুই ভাই বোন একসাথে ব্লগিং করা যাবে।

ভালো থেক। শুভেচ্ছা রইল।

১৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:১১

জাফরুল মবীন বলেছেন: সবকিছুতেই বাড়তি টাকা গুণতে হলেও আমরা কিন্তু হেনা ভাইয়ের কাছ থেকে একদম ফ্রী ও ফরমালিনবিহীন রস পাচ্ছি।এই বাজারে এটাই আমাদের অন্যতম স্বস্তি! :) :) :)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। ধন্যবাদ, ভাই জাফরুল মবীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.