নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণঃ বেঁচে আছি আজও

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

( সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা ভিত্তিক এই স্মৃতিচারণামূলক লেখাটি ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ দিন গুলোর কথা স্মরণ করার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। নতুন প্রজন্ম জানুক, কেমন ছিল সেই দিনগুলি। ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম ১৬ বছরের কিশোর। পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আরও ৪৩ বছর আমি বেঁচে আছি। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনায় আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। )

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ। রাজশাহী শহরে কারফিউ চলছে। বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যে ৭ টা পর্যন্ত মাইকে ঘোষণা দিয়ে তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যার যা কাজ কাম বা কেনাকাটা সেরে নিয়ে আবার নিজ নিজ বাড়ি ঘরে দরজা জানালা আটকে বন্দী হয়ে যেতে হবে। সন্ধ্যে ৭ টার পর রাস্তায় বা ঘরের বাইরে কাউকে দেখা গেলে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। আগের তিন দিন শহরের অনেক লোককে তারা মেরে ফেলেছে। অনেক বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে অবাঙালীরা পাড়ায় পাড়ায় দলবদ্ধভাবে ছুরি, চাকু ও রামদা’ হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়ে তারাও হত্যা ও লুটতরাজ শুরু করেছে। শহরে চরম আতংক। তখনো ঢালাওভাবে গ্রামে গঞ্জে বা ভারতে পালিয়ে যাওয়া শুরু হয়নি। তবে পালিয়ে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই।

আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই এক বোন। বড়ভাই বি এ পাশ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। আমি তখন রাজশাহী সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। অন্যান্য ভাই বোনরা ক্রমানুসারে বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে। কারফিউ শিথিল হলে আব্বা বড়ভাইকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটার জন্য বাজারে গেলেন। ঘর থেকে না বেরনোর জন্য আমাদের ওপর ছিল কড়া নির্দেশ।

কেনাকাটা সেরে আব্বা এবং বড়ভাই সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ফিরে এলেন। কারফিউ শুরু হতে তখনো দেড় ঘণ্টা বাঁকি। বড়ভাই বাজারের ব্যাগ নামিয়ে রেখে বললেন, ‘আমি একটু আসছি।’

আব্বা এবং মা সমস্বরে ‘যাস না বাবা, যাস না’ বলতে বলতেই বড়ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাওয়া। বড়ভাইয়ের সিগারেট খাওয়ার নেশা ছিল। বাড়িতে সেটা হচ্ছিলো না বলে সম্ভবতঃ ঐ কাজে তার বেরিয়ে যাওয়া।

কিন্তু সাড়ে ছয়টা বেজে যাওয়ার পরেও বড়ভাই ফিরে না আসায় মা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। আব্বার কপালে চিন্তার ভাঁজ। আমরা ভাই বোনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। মায়ের দেখাদেখি ছোট দুটি ভাইও কাঁদতে শুরু করে দিল। এ অবস্থায় সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে আমি আর থাকতে পারলাম না। সকলের নিষেধ সত্ত্বেও বড়ভাইকে খুঁজতে আমি বেরিয়ে পড়লাম।

বাড়ির আশেপাশে তাকে খুঁজে না পেয়ে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো আমাদের মহল্লার শেষ প্রান্তে বড়ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মতি ভাইয়ের বাসায় একবার খুঁজে দেখা যেতে পারে। সে বাড়ির ছাদে বসে বড়ভাইয়ের বন্ধুরা সবাই আড্ডা দেয়। তাস, দাবা খেলে। আড্ডা দেওয়া অনেকটা নেশার মতো। একবার বসলে সময় জ্ঞান থাকে না। কিন্তু আমার একবারও মনে হলো না যে এই পরিস্থিতিতে সেখানে তাদের আড্ডা বসার কথা নয়। আমি মতি ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক পা হেঁটে গেলে প্রধান সড়ক। ঐ সড়ক দিয়ে গেলে মতি ভাইয়ের বাড়ি খুব কাছে। কিন্তু সাতটা বেজে গেছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর টহল যান গুলো ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমে পড়েছে। সশস্ত্র সৈন্য বোঝাই গাড়ি গুলো রক্ত হিম করা আওয়াজ তুলে ছড়িয়ে পড়ছে সারা শহরে। এ অবস্থায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া চরম বিপজ্জনক। মহল্লার অলি গলি দিয়েও মতি ভাইয়ের বাসায় যাওয়া যায়। কিছুটা ঘোরা পথ হলেও আমি গলি পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সে পথে যেতে হলেও প্রধান সড়কের আড়াআড়ি ত্রিশ ফুটের মতো রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। আমি সতর্ক চোখে দুই দিক দেখে নিয়ে তীরের মতো রাস্তা পাড়ি দিয়ে গলিপথে ঢুকে পড়লাম। তারপর নির্জন চিপা অলি গলি দিয়ে হন হন করে হেঁটে রওনা হলাম মতি ভাইয়ের বাড়ির দিকে। গলির দু’পাশে বাড়িঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। কোথাও কেউ নেই। গলিপথের স্ট্রীট লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে। এক বাড়ির নিচ তলার জানালা সামান্য ফাঁক করে কে যেন চাপা স্বরে সতর্ক করলো আমাকে, ‘এই হেনা, কারফিউয়ের মধ্যে তুমি কোথায় যাচ্ছ? বাড়ি যাও, বাড়ি যাও।’

আমার মাথায় তখন জেদ চেপেছে। মতি ভাইয়ের বাসায় যেতেই হবে। সেখানে আমার বড়ভাই আছেন। থাকলেও যে তিনি মতি ভাইয়ের পরিবারের সাথে নিরাপদে আছেন, সে কথা একবারও আমার মনে আসছে না। রক্তের টান বোধহয় একেই বলে।

কিন্তু মতি ভাইয়ের বাসায় পৌঁছে আমি হতাশ হলাম। দশ বারো বার দরজার শিকল ঝাঁকিয়েও বাসার ভেতর থেকে কারো সাড়া শব্দ পেলাম না। ‘বড়ভাই, আমি হেনা’ বলে কয়েকবার চিৎকার করার পরেও কেউ সাড়া দিল না। মনে হলো বাসায় কেউ নেই। প্রধান সড়কে আর্মির গাড়ি চলাচলের ভীতিকর আওয়াজ বেড়ে গেছে। এই প্রথম নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শংকিত হলাম। আর দেরি না করে বাড়ি ফিরতে হবে। একই গলিপথে বাড়ির উদ্দেশ্যে আমি দ্রুত হাঁটা দিলাম।

গলির শেষ মাথায় এসে আমার মনে হলো, প্রধান সড়কের ত্রিশ ফুট রাস্তা পার হবার আগে একবার রাস্তাটা দেখে নেয়া দরকার। গলি থেকে মাথা বের করে রাস্তার বাম দিকে কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু ডান দিকে তাকাতেই মাত্র দশ পনের ফুট দূরে দেখলাম পাকিস্তানী সৈন্যদের একটা কনভয় যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন সৈন্য হাঁটাহাঁটি করছে, অন্যেরা গাড়িতে বসে আছে। আমি গলি থেকে মাথা বের করার সাথে সাথে ওরা স্ট্রীট লাইটের আলোয় আমাকে দেখে ফেলেছে।

‘ওয়ে শুয়ার কা বাচ্চা, রোক্ কে, রোক্ কে!’

কয়েকজন সৈন্য আমাকে ধরার জন্য ছুটে এলো। আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে উল্টো পথে আবার গলির ভেতর দৌড় দিলাম। ওরাও গলির ভেতর ঢুকে পড়েছে এবং আমাকে ধরার জন্য দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে রাইফেলের নিশানা তাক করছে আমার দিকে। আমি প্রাণপণে ছুটে চলেছি। ওদের সাথে আমার দূরত্ব ক্রমেই কমে আসছে।



এভাবে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে আমার কেন জানি মনে হলো, ওদের সাথে দৌড়ে আমি পারবো না। ওরা প্রশিক্ষিত সৈন্য। আমার চেয়ে ওদের গতি বেশি। তাছাড়া ওরা যে কোন সময় গুলি ছুঁড়তে পারে। দূরত্ব আরও কমে গেলে ওদের গুলির নিশানা ব্যর্থ হবে না। আমাকে বাঁচতে হলে অন্য কিছু করতে হবে।

গলির বাম দিকে ‘শাহী জামে মসজিদ’ নামে একটা মাঝারী আয়তনের দোতলা মসজিদ ছিল। আতংকে দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আমি চট্ করে ঢুকে পড়লাম সেই মসজিদের ভেতর। মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লিরা চলে গেলে ইমাম সাহেব মসজিদের ভেতর একা একা বসে প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন। মহল্লার প্রায় সবাই এই মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে। সেই সূত্রে ইমাম সাহেব আমাকে চিনতেন। তিনি প্রায়ই আমাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য খুব বিনয়ের সাথে অনুরোধ করতেন। চট্টগ্রামের মানুষ। সাথে পরিবার পরিজন না থাকায় তিনি মসজিদ সংলগ্ন হুজরাখানায় একাই থাকতেন এবং নিজে রান্না করে খেতেন। ষাটোর্ধ ছোটখাটো নির্বিরোধী মানুষ। কখনো উচ্চস্বরে তাকে কথা বলতে শুনিনি।

আমি যখন মসজিদে ঢুকে পড়ি, তখন ইমাম সাহেব কোরআন তেলাওয়াত শেষে হুজরাখানায় যাওয়ার জন্য মসজিদের বারান্দায় এসে আমার সামনে পড়ে গেলেন। আমি কোন কথা না বলে ছোঁ মেরে তাঁর মাথা থেকে টুপি খুলে নিয়ে নিজের মাথায় পরে নিলাম। তারপর শার্টের গুটানো হাতা খুলে ফেলে (তখনকার দিনে ফুলহাতা শার্টের হাতা গুটিয়ে পরা একটা ফ্যাশনের মতো ছিল) এক দৌড়ে মসজিদের ভেতর মুসল্লিদের নামাজ পড়ার জায়গায় চলে গেলাম। একেবারে মিম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিঃশব্দে নামাজ পড়ার অভিনয় শুরু করে দিলাম। এত বছর পরেও আমি জানিনা যে তখন ওসব বুদ্ধি কিভাবে আমার মাথায় এসেছিল?

ইমাম সাহেব ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব। ঠিক এই সময় বুটের খটাখট আওয়াজ আমার কানে এলো। আর্মিরা ঢুকে পড়েছে মসজিদে। তাদের আর একটা দল গলিপথে চলে গেছে সামনে। আমার বুকের ভেতর ধক ধক করতে লাগলো। আমি ঘোরের মধ্যে চোখ বুজে নামাজ পড়ার মতো করে রুকু সেজদা করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন সুরা কালমা আমার মনে পড়ছে না। আর্মিদের উচ্চস্বরে কথাবার্তা কানে এলো। ইমাম সাহেবকে ধমকাচ্ছে একজন সৈন্য। বলছে, ‘এ বুঢঢা, ইধার এক লাড়কা আয়া, তু দেখা?’

ইমাম সাহেব ঝটপট উত্তর দিলেন, ‘লাড়কা? জি নেহি। কোয়ি লাড়কা তো নেহি আয়া।’

‘এ বুঢঢা! ঝুটা মাত বোল্।’

‘ঝুটা নেহি সাব। আপলোগ তালাশ করকে দেখিয়ে।’

মনে হলো আমার হৃৎপিণ্ডটা বুকের ভেতর থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে। সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে মসজিদের বারান্দায়। একজন মুসল্লি মসজিদের ভেতর নামাজ পড়ছে, সেটা ওরা পেছন থেকে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। এখন যদি ওরা ইমাম সাহেবের কথায় তল্লাশি করে তো আমি নির্ঘাত ধরা পড়ে যাবো। কিন্তু আশ্চর্য! ওরা কেউ মসজিদের ভেতরে ঢুকে আমার কাছে এলো না। কয়েকজন সৈন্য খটাখট বুটের আওয়াজ তুলে মসজিদের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে গেল। তারা দোতলাসহ মসজিদের মিনার, ছাদ ও অন্যান্য স্থান তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। অন্যেরা নিচতলার হুজরাখানা, ওজুখানা ও কুয়ার চারপাশ টর্চ জ্বেলে দেখতে লাগলো। মসজিদের জানালা দিয়ে টর্চের আলো দু’একবার আমার গায়েও এসে পড়লো। কিন্তু তারপরেও ওরা কেউ আমার কাছে এলো না। প্রায় আধা ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করার পর মসজিদের বারান্দায় জড়ো হয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করলো। তারপর একজন ধমকের সুরে ইমাম সাহেবকে বললো, ‘তু কৌন হ্যায়?’

‘জি, ম্যায় মসজিদ কা ইমাম হুঁ।’

আর একজন সৈন্য বললো, ‘এ বুঢঢা, উও লাড়কা ইধার কোয়ি আশপাশ হি হ্যায়। কম উমর, তেরে য্যায়সা লম্বি। শুয়ার কা বাচ্চা বহত তকলিফ দিয়া হামে। উও কাভি ইধার আয়ে তো হামলোগ কো খবর দে না। হামলোগ বড়ে রাস্তে পর হ্যায়। সামঝা?’

‘জি সাব, সামাঝ লিয়া। খবর কর দুঙ্গা।’

এরপর সৈন্যরা যে কখন চলে গেছে, আমি টের পাইনি। ঘোরের মধ্যে একটানা আমি রুকু সেজদা করে চলেছি। হঠাৎ কানের কাছে ইমাম সাহেবের কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম।

‘হয়েছে। থামো।’

আমি নামাজ পড়া বন্ধ করে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। পেছনে তাকিয়ে দেখি, সৈন্যরা কেউ নেই। ইমাম সাহেব বললেন, ‘কি হয়েছিল?’

আমি ঢোক গিলে চাপা স্বরে সব ঘটনা খুলে বললাম তাঁকে। শুনে তিনি গম্ভীর মুখে কিছু চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, ‘তুমি উকিল সাহেবের ছেলে না? হাফেজিয়া মাদ্রাসার পেছনে তোমাদের বাড়ি?’ আমি বললাম, ‘জি।’

‘শোন।’ ইমাম সাহেব আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওজুখানায় যাওয়ার দরকার নাই। মসজিদের যে কোন দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে তায়াম্মুম করে নাও। তারপর দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো। এশার নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমি একটু পরে আজান দেব। হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা কারফিউর মধ্যেও নামাজ পড়তে আসে। আর্মিরা ওদের দেখলে কিছু বলেনা। নামাজ শেষে তুমি ওদের সাথে মিশে মাদ্রাসায় চলে যাবে। আমি ওদের বলে দেব। তারপর মাদ্রাসার পাঁচিল টপকে বাসায় চলে যেতে পারবেনা?’

‘জি, পারবো।’

এশার আজানের পর মাদ্রাসার ছাত্ররা নামাজ পড়তে এলো। ইমাম সাহেবের নির্দেশ অনুযায়ী আমি নামাজ শেষে ওদের সাথে মাদ্রাসায় চলে গেলাম। পাঁচিল আর টপকাতে হলো না। পাঁচিলের একটা ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বের হয়ে ডোবার পাড় ধরে হেঁটে আমাদের বাড়ির পেছন দিকে লাকড়ি রাখার ঘরের বন্ধ দরজায় নক করলাম। কয়েকবার নক করার পর ভেতর থেকে আব্বার গলা শোনা গেল, ‘কে?’

বড়ভাইকে খুঁজতে বেরবার পনের বিশ মিনিট পর তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু আমার জন্য টেনশনে সবাই অস্থির। আমাকে ফিরে পেয়ে যেন বাড়িতে ঈদের আমেজ ফিরে এলো। মা এবং ভাই বোনরা সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। আব্বা আড়ালে চোখ মুছে মাকে বললেন, ‘ভাত দাও।’

‘শাহী জামে মসজিদের’ ইমাম সাহেব ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একটানা চল্লিশ বছর ইমামতি করার পর চট্টগ্রামে তাঁর দেশের বাড়িতে ফিরে গিয়ে ইন্তেকাল করেন। আমার দুর্ভাগ্য যে, তাঁর নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে বা তাঁর কবরে এক মুঠো মাটি দিতে পারিনি। তবে সৌভাগ্য এই যে, আমার জীবনের সবচেয়ে সংকটময় দিনে তাঁর মতো একজন মানুষরূপী ফেরেশতাকে আল্লাহ আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে বেহেশতে নসিব করুন।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০০

ঢাকাবাসী বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান বুদ্ধিমান, লেখা ভাল লেগেছে।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই ঢাকাবাসী।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

জাফরুল মবীন বলেছেন: “আমার জীবনের সবচেয়ে সংকটময় দিনে তাঁর মতো একজন মানুষরূপী ফেরেশতাকে আল্লাহ আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে বেহেশতে নসিব করুন।”-হে আল্লাহ তুমি হেনা ভাইয়ের জান হেফাজত করেছো এজন্য তোমার শুকরিয়া আদায় করছি।হে আল্লাহ তুমি ইমাম সাহেবকে সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষার সমান সওয়াব লিখে দাও এবং উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব কর-আমীন।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন আপনার দোয়া কবুল করবেন। "........যে একজন নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষা করলো, সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করলো।"- আল কুরআন।
ইমাম সাহেবকে আমি এখনো স্বপ্নে দেখি। মনে হয় তিনি বোধহয় আল্লাহর নির্দেশে আজও আমার ধ্যানে জ্ঞানে সর্বদা বিরাজমান। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হতে লাগলে এই মহান মানুষটির হাসি মাখা মৃদু শাসনসুলভ চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তখন শত অসুবিধার মধ্যেও আমি ওয়াক্তের নামাজ ওয়াক্তেই আদায় করার চেষ্টা করি।

ধন্যবাদ, ভাই জাফরুল মবীন।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩২

মুদ্‌দাকির বলেছেন: পুরা ৯ মাসের দিনপঞ্জী জানতে চাই, আমরাতো জানি না, দেখি নাই, কথা দিলাম সাথেই থাকব, ইনশাল্লাহ।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই মুদদাকির। আপনার ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করবো।

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪২

বনমানুষহনুমান বলেছেন: সহমত

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই বনমানুষহনুমান। চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৮

মামুন রশিদ বলেছেন: সত্যিই ভাগ্যবান ।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই মামুন রশিদ।

৬| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুর্দান্ত এক কাহিনী শোনালেন। রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই হাসান মাহবুব। এই কাহিনীর প্রতিটা অক্ষর সত্য।

৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

শুন্য পুরন কর বলেছেন: সবই আল্লা্হর ইচ্ছা, আল্লাহ আপনার সহায় ছিলেন, ইমাম সাহেব ওনার সাহায্যকারী। ভাল থাকবেন।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন। আর ইমাম সাহেব ফেরেশতার কাজ করেছেন। সেটাও নিশ্চয় আল্লাহর নির্দেশে।

ধন্যবাদ, শুন্য পুরন কর।

৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: রুদ্ধশ্বাসে পড়ে গেলাম। মনে হচ্ছিলো ঘটনার সাথেই যেন ছিলাম।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই আজমান আন্দালিব।

৯| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫৫

আরজু মুন জারিন বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি চারণের গল্পটি শুনলাম হেনা ভাই। আল্লাহ পাকের কাছে শোকর আপনি বেচে ফিরে এসেছেন পৃথিবীতে। ইমাম সাহেবকে অনেক শ্রদ্ধা। সত্যি ঘটনাটিকে চমত্কার গল্পের রূপ দিয়েছেন । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।সাথে অনেক অনেক শ্রদ্ধা সালাম আপনার জন্য। ভাল থাকবেন সবসময়।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ইমাম সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনি পুন্যের কাজ করেছেন।

লেখাটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, বোন আরজু মুন জারিন।

১০| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৩৪

খাটাস বলেছেন: খুব কম কাহিনি ই খাটাস কে শিহরিত করে। যারা ঐ সময়ের মানুষ তাদের দেখলেই কেন যেন আমার অন্য রকম ভালবাসা আসে।
আল্লাহ বাচাইছে সত্যি। মুদদাকির ভাই এর সাথে একমত।
অনেক কৃতজ্ঞতা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য একাকার করে দেয়ার জন্য হেনা ভাই।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৪৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রিয় খাটাস। আমার লেখা আত্মজৈবনিক উপন্যাস "স্বপ্ন বাসর'-এ ১৯৭১ সালের বিভীষিকাময় দিন গুলোর কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে, যদিও ওটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস নয়। ২০১১ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটির ১ম মুদ্রণ শেষ হয়ে গেছে। ২য় মুদ্রণের প্রক্রিয়া চলছে। মুদদাকির ভাই ও আপনার ইচ্ছা পূরণের জন্য ব্লগে সেই সময়ের ঘটনা ভিত্তিক আরও কিছু লেখা দেবার চেষ্টা করবো।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

১১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৩

ডি মুন বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ পড়লাম। কিছু বলার নেই।

প্রিয়তে নিয়ে গেলাম। সেই সময়টাকে অনুভব করার জন্য মাঝে মাঝে পড়া যাবে।

ভালো থাকবেন আবুহেনা ভাই।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয়তে নেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

পার্থ তালুকদার বলেছেন: অনেক ভাগ্যবান আপনি ।
আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই পার্থ তালুকদার।
শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন আজীবন।

১৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। শিহরিত হলাম।

মুদদাকিরের সাথে সহমত।

শুভেচ্ছা রইল, প্রিয় লেখক।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রোফেসর শঙ্কু। শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.