নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রসরচনাঃ বাচ্চা ভয়ংকর

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫০

কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে আমার বনিবনা বেশ ভালো। চকোলেট ও আইসক্রিমের প্রতি এই বুড়ো বয়সেও আমার তীব্র আকর্ষণ এর একটা কারণ হতে পারে। আমার নিজের দুটো বাচ্চা এখন আর বাচ্চা নেই। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে দিয়ে চাকরি করছে। তাই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিদের বাচ্চা কাচ্চাই আমার ভরসা।

তো এদের মধ্যে ঢাকা নিবাসী আমার এক শ্যালিকার দুটো বাচ্চার কথা বলি। তারা পাঁচ ও সাত বছরের দুই বোন একদিন তাদের মগবাজারের সরকারি ফ্ল্যাটের দোতলায় সিঁড়ির ল্যান্ডিং-এ বসে খেলা করছিল। আমি ঢাকায় গেলে কখনো কখনো এদের বাসায় থাকি। আমার ভায়রাভাই একজন সরকারি কর্মকর্তা। সেদিন ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। বেলা সাড়ে দশটার দিকে মগবাজার পৌঁছে ফ্ল্যাটের বাইরে ল্যান্ডিং-এ বসে বাচ্চাদের খেলতে দেখে আমি আনন্দের সাথে বললাম, ‘হ্যালো আম্মারা, আপনারা কেমন আছেন?’

ওরা খেলতে খেলতে মাথা না তুলেই বললো, ‘ভালো।’

আমি ওদের পাশে ধপ করে বসে পড়লাম। তারপর সাইড ব্যাগ খুলে চারটা চকোলেট, দুটো চিপস্ আর দুটো ম্যাঙ্গো ফ্রুটি বের করে ওদের হাতে ধরিয়ে দিতেই ওদের সাথে আমার পুরনো বন্ধুত্ব চাঙ্গা হয়ে উঠলো। ওরা দু’বোন আমার চকোলেট প্রীতির কথা জানে। তাই একটা চকোলেট আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, ‘এটা তুমি খাও।’

দেখলাম, ওদের ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। আমি চকোলেট খেতে খেতে বললাম, ‘আপনারা বাইরে বসে খেলছেন কেন? এ সময় না আপনাদের কার্টুন দেখার কথা!’

বড় বোনটি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, ‘আব্বু ছুটির দিনেও বাসায় বসে অফিসের কাজ করে। আমাদেরকে কার্টুন দেখতে দেয় না।’

আমি কলিং বেল টেপার জন্য উঠে দাঁড়ালে ছোট বোনটি মুখভর্তি চকোলেট নিয়ে থড়বড় করে বললো, ‘টলিং (কলিং) বেল টিপো না খালু। আব্বু আম্মু দু’জনেই লেগে (রেগে) যাবে।’

‘কেন, রেগে যাবে কেন?’

বড় বোনটি বললো, ‘অফিসের কাজ করছে যে! আমাদেরকে বলেছে কেউ যেন কলিং বেল না টিপে।’

‘ও, আচ্ছা।’

আধা ঘণ্টা পর অফিসের কাজ শেষ হলো। আমার শ্যালিকা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ‘আম্মুরা এসো’ বলে আমার দিকে চোখ পড়তেই ভুত দেখার মতো চমকে গেল। থতমত খেয়ে কোনমতে বললো, ‘দু দু দুলাভাই, আপনি?’

চাকরি জীবনে আমার এক কলিগের ছয় বছর বয়সী ছেলের কথা বলি। কলিগ ভদ্রলোক ভীষণ রাশভারি স্বভাবের মানুষ। বাসায় বা অফিসে সব সময় গম্ভীর মুখে থাকেন। কথাবার্তা প্রায় বলেন না বললেই চলে। ফলে বাচ্চার সাথে তার কোন বন্ধুত্ব নেই। কিন্তু একদিনের দেখাতেই বাচ্চাটির সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কীভাবে জানেন?

আমার বাসায় একটা ছোট খাটো ম্যারেজ ডে’র অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে অফিস কলিগদের কয়েকজনকে কাপল্ ওয়াইজ দাওয়াত দিয়েছিলাম। রাশভারি ভদ্রলোক বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। কেক কাটাকুটি শেষ হলে ডাইনিং-এ বসে খাওয়া দাওয়ার সময় বাচ্চাটি ‘এটা খাবো না’, ‘ওটা খাবো না’ বলে তার মাকে খুব বিরক্ত করছিল। আমি ফ্রিজ খুলে একটা আইসক্রিম আর একটা চকোলেট এনে ওর হাতে দিলে সে মহাখুশি। জিব দিয়ে আইসক্রিম চাটতে চাটতে সে টুপ করে আমার কোলে বসে পড়লো। আমি ওকে আদর করতে করতে বললাম, ‘তোমাকে কে বেশি আদর করে? আব্বু না আম্মু?’

বাচ্চার সোজা সাপটা জবাব, ‘কেউ না।’

বাচ্চার বাবা মা বিব্রত। আমরাও বাচ্চার চটপটে জবাব শুনে একটু থমকে গেছি। পরিবেশ হালকা করার জন্য অন্য একজন কলিগের স্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘ও, বুঝেছি। তোমার আব্বু আম্মু তোমার ছোট বোনটিকে বেশি আদর করে, তাই না?’

‘না।’ বাচ্চাটি চিৎকার করে বললো, ‘আব্বু শুধু আম্মুকে আদর করে।’

আমার ছয়জন ভাড়াটিয়ার মধ্যে একজনের থ্রি মেম্বার ফ্যামিলী। স্বামী, স্ত্রী ও পাঁচ বছরের একটি ভয়ানক বাচ্চা। বাচ্চাটি প্রায়ই তার মায়ের কষ্ট করে বেঁটে রাখা রান্নার মশলাগুলো তিন তলার জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। আর শুধু মশলা নয়, জানালা বা বারান্দার গ্রিল দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা যাবে এমন প্রায় সব জিনিষই সে ছুঁড়ে ফেলে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজনের গায়ে পড়ে মাঝে মাঝে এ নিয়ে ভীষণ হাউ কাউ হয়।

একদিন বাচ্চাটি তার বাবার মোবাইল ফোন গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ছুঁড়ে নিচে ফেলে দিল। পাকা রাস্তার ওপর পড়ে মোবাইলের দফা রফা। আমার পরিবার গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকে। ওর বাবার হাতে ‘দুম’, ‘দুম’ করে মার খেয়ে বাচ্চার আকাশ পাতাল চিৎকার আমরা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকেই শুনতে পেলাম। আমার ও আমার মিসেসের খুব কষ্ট হলো। বাচ্চাটিকে ওর বাবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার এক আত্মীয়ের পাঠানো প্রায় আধা হাত লম্বা একটা চকোলেট নিয়ে ধুপ ধাপ করে তিন তলায় উঠে ওর বাবার উদ্দেশ্যে রাগতঃ স্বরে বললাম, ‘ছোট বাচ্চা। একটা ভুল না হয় করেই ফেলেছে। তাই বলে এভাবে মারতে হবে?’

বাচ্চাটিকে ওর বাবার কবল থেকে মুক্ত করে আমি কোলে তুলে নিলাম। আদর করে চকোলেটটা ওর হাতে দিয়ে বললাম, ‘তুমি তো ভালো ছেলে। এই কাজ আর কখনো করো না, কেমন?’

ভালো ছেলে চকোলেটটা হাতে নিয়ে লাফিয়ে কোল থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে বারান্দার গ্রিল দিয়ে সেটা বাইরে ফেলে দিল। আমি নিচে গিয়ে দেখি, রাস্তার পাশে স্ল্যাববিহীন নর্দমার নোংরা পানিতে পড়ে চকোলেটটা একবার ডুবছে, আর একবার ভাসছে।

কিছুদিন থেকে আমার বড় ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতির অংশ হিসাবে তার ঘরের পুরনো ফার্নিচার বদলে নতুন ফার্নিচার কেনা হচ্ছে। চার পাল্লার (দরজার) একটা চমৎকার আলমারি কেনা হয়েছে। বাড়ির সবার পছন্দ। মোবাইলের যুগে এই যৎসামান্য খবরও কী আর চাপা থাকে? আত্মীয়স্বজন যে যখন আসছে, সেই দেখে বলছে, ফ্যান্টাসটিক! কিন্তু আমার সম্বন্ধীর (স্ত্রীর বড় ভাইয়ের) আট বছরের ছোট মেয়েটি আলমারি দেখে কী বললো, জানেন?

চার পাল্লা আলমারির দুটো অংশ থাকে। এক অংশে সেলফ, অন্য অংশে হ্যাঙ্গার ও ড্রয়ার। মেয়েটি তার আঙ্গুল দিয়ে দুই অংশ দেখিয়ে বললো, ‘একটা ভাইয়ার জন্য, আর একটা বউয়ের জন্য। বেবীর জন্য কই? বেবীর কাপড় চোপড় রাখতে হবে না?’

***********************************

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

মামুন রশিদ বলেছেন: হাহাহা, প্রথম দুইটা রসে টুইটুম্বুর B-) B-)

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই মামুন রশিদ।

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহা! তবে কোন ডেন্টিস্ট আপনার লেখা পড়লে ক্ষেপে যাবে। ছোটবাচ্চাদের চকলেট দিলে তা দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে। আবার খুশি হবে এই ভেবে যে তাদের পসার বাড়বে!

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: অতএব, শেষ পর্যন্ত তাঁরা খুশিই হবেন। হাঃ হাঃ হাঃ। ধন্যবাদ, ভাই হাসান মাহবুব।

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০০

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হা হা হা। বাচ্চারা আসলেই এমন হয়।
আমার ছেলেটার বয়স এক বছর একমাস হয়েছে মাত্র। কিন্তু এতো দুষ্টুমি করতে পারে! না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। মাঝ খানে এক রাতে ঘুমানোর আগে কোথা থেকে খুঁজে খুঁজে পাউডারের ডিব্বা থেকে সমস্ত ফ্লোরে পাউডার ছড়িয়ে তার মধ্যে সাতার কেটেছে। সাতার কাটে আর হাসে। সে কি হাসি! প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ওঁর কীর্তি কারখানা দেখে আমি আর আমার ওয়াইফ হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাই।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:২৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার বাচ্চার দুষ্টামির কথা শুনে এখনই ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছা করছে। হাঃ হাঃ হাঃ।

ধন্যবাদ, ভাই নাভিদ কায়সার রায়ান।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৪৭

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: হা হা হা। বাচ্চা ভয়ংকর।


কেমন আছেন হেনা ভাই? মাঝে কয়েকদিন ব্লগে আপনাকে অনুপস্থিত দেখলাম। সুস্থ আছেন তো হেনা ভাই?

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মাঝে মাঝে ব্লগ থেকে গায়েব হয়ে যাওয়া আমার একটা স্বভাব বলতে পারেন। এবার অবশ্য পিসির সমস্যা, প্রিন্ট মিডিয়ার কিছু লেখা নিয়ে ব্যস্ততা ইত্যাদির কারণে কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলাম। আজ কালের মধ্যে আবার উধাও হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক।
আমি ভালো আছি ভাই। আপনি কেমন আছেন? শুভেচ্ছা রইল। ধন্যবাদ, ভাই প্রবাসী পাঠক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.