নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যরচনাঃ ক্যামেরা ফেস

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫০

খুব ছোট বেলায় আমাদের শহরে স্টার স্টুডিও নামে ছবি তোলার একটা দোকান ছিল। সেটা পঞ্চাশের দশকের কথা। সে সময় সম্ভবত সেটিই ছিল এই শহরের একমাত্র ছবি তোলার দোকান। আধা ডজন ভাই বোনের মধ্যে আমাদের পিঠেপিঠি দুই ভাইকে সেই স্টুডিওর একটা অন্ধকার ঘরে বসিয়ে ছবি তোলা হল। একটা টুলে দুই ভাই পাশাপাশি বসে আছি। আমার বয়স চার পাঁচ বছর, ছোট ভাইটির বয়স তিন চার। দুজনের পরনে হাফ প্যান্ট আর রঙিন জামা। আমাদের সামনে লম্বা লম্বা লোহার স্ট্যান্ডের ওপর বসানো বিকট আকৃতির কয়েকটা ইলেকট্রিক বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। আমাদের দুই ভাইয়ের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। আমি ভয় পেয়ে কেঁদে ফেললাম। আমার ছোট ভাইটি আমার চেয়ে শক্ত। সে কিছুক্ষণ চোখ পিট্ পিট্ করে সামলে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বাতি গুলোর দিকে। ক্যামেরাম্যান আমাদের সামনে একটা কাঠের স্ট্যান্ডের ওপর রাখা কালো কাপড়ে ঢাকা বাক্সের মতো বিশাল ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে আমার কান্না থামানোর জন্য ‘চু, চু, বাবু কাঁদেনা, সোনা কাঁদেনা’ এই জাতীয় কথাবার্তা বলছে আর কালো কাপড়ের ভেতর ঘন ঘন মাথা ঢুকিয়ে ও বের করে আমাদের ছবি তোলার কসরত করছে। ক্যামেরাম্যানের দুপাশে দাঁড়িয়ে আমাদের বাবা-মাও চুক চুক করছেন আর বলছেন, ‘ছি, ছি, কাঁদেনা বাবা, কাঁদেনা। ভয় কিসের? তোমাদের ছবি তোলা হচ্ছে তো! সামনে তাকাও বাবা, সামনে তাকাও।’
এভাবে অনেক কায়দা কসরত করার পর ছবি তোলার কাজ শেষ হল।
সেই সাদা কালো ছবি এক সপ্তাহ পর বাসায় এনে দেখা গেল, আমার ছোট ভাইটি চোখ বড় বড় করে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে আছি। আমার চোখের কাজল ধুয়ে মুখের ওপর ছোপ্ ছোপ্ কালো দাগ। বাবা-মা ও অন্য ভাই বোনরা ছবি দেখে খুব খুশি হল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢোকার পরেও আমাদের পারিবারিক এ্যালবামে ছবিটি দেখেছি। এমনকি বিয়ের পরে আমার স্ত্রীও ছবিটি দেখেছেন এবং আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে খুশি হয়ে তিনি আমাকে নানারকম টীকা-টিপ্পনী উপহার দিয়েছেন। ছবিটি এখন আর আছে কি না জানিনা। প্রায় পঞ্চাশ বাহান্ন বছর পর সেটি আর না থাকারই কথা।

একটু বড় হবার পর আমি যখন ক্লাস এইটের ছাত্র তখন স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য একটা গ্রুপ ছবি তোলা হল। ততদিনে অবশ্য বাক্সের মত বড় সড় ক্যামেরার বদলে হাতে বহনযোগ্য ক্যামেরার যুগ এসে গেছে। এই ছবিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা সামনের সারিতে চেয়ারে বসে আছেন আর ছাত্ররা তাঁদের পেছনে তিন চার সারিতে সামান্য বিশৃঙ্খল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন। ম্যাগাজিন হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল, ছবিতে একটি তাল ঢ্যাংগা লম্বা ছেলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার মুখটা দেখা যাচ্ছেনা। শুধু আমার ডানহাত দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরা বই খাতার অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে।
এর ঠিক এক বছর পর উনসত্তরের গন আন্দোলনের সময় আমার একটা ছবি রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিল। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। রাজশাহীতে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পিকেটিং করছে। পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। অন্যান্য ছাত্রদের সাথে সাথে আমিও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়ছি। কোন এক ফটো সাংবাদিক সেই ছবি তুলে ঢাকার ইত্তেফাক পত্রিকায় ছাপিয়ে দিল। ছবি দেখে আমার বাবা এমন বেয়াদব সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে আমার মাকে যথেচ্ছ গালাগাল করলেন এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মা রান্নাঘর থেকে লাকড়ি এনে আমার পা থেকে গর্দান পর্যন্ত (মাথা বাদে) নিপুন ভাবে দুরমুশ করে দিলেন। আমি রাগে রাতের খানা বয়কট করলাম। কিন্তু এতে ফল হল উল্টো। গায়ের ব্যথা আর ক্ষিধের জ্বালায় সারারাত ঘুম হল না। সকালে মা ধমক দিয়ে নাস্তা খেতে বললেন। আমি ‘খাবোনা’ বলে মুখ ভারি করে বসে রইলাম। আর একবার বললেই খাবো- এমন একটা চিন্তা ভাবনার মধ্যে আছি। কিন্তু মা আর কিছু না বলে অন্য কাজে চলে গেলেন। সকালের নাস্তাটাও খাওয়া হলনা। আমার সেই ছোট ভাইটি তখন ক্লাস এইটের ছাত্র। সে বারান্দায় অন্যান্য ভাইবোনদের সাথে মাদুরের ওপর বসে জোরে জোরে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা মুখস্ত করছিল, ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির......।’ আমি ঠাশ্ করে ওর গালে একটা চড় কষিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।

দিনে দিনে ক্যামেরার মান আরও উন্নত হল। কিন্তু আমার ছবির মান খারাপ হতে লাগলো। অল্প বয়সে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে সিগারেট খাওয়া রপ্ত করে দাঁত কালচে করে ফেলেছিলাম। তাছাড়া আমার দাঁতগুলোর মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব থাকায় হাসলে ছবি ভালো আসতো না। এদিকে ক্যামেরাম্যানরা আমার মনের দুঃখ বোঝে না। তারা ছবি তোলার সময় বলে, ‘হাসুন’। কেউ কেউ বলে, ‘না, না, মুচকি হাসি নয়। প্রাণ খুলে হাসুন।’
১৯৭৭ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে তোলা আমার প্রাণখোলা হাসির এমন একটা গ্রুপ ছবিতে আমি ছিলাম সবার ডানে। বন্ধুরা কাঁচি দিয়ে নিখুঁতভাবে আমার ছবিটি কেটে বাদ দিয়ে দোকান থেকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে এনে শেরে বাংলা হলের ডাইনিংয়ে ঝুলিয়ে দিল। পাশে অন্যান্য ব্যাচেরও ছবি ছিল। সবাই হাসছে। অথচ হাসার অপরাধে আমার ছবি কাটা গেল। বন্ধুরা যে এমন শত্রুর মত আচরণ করতে পারে ভাবা যায়না।

সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হল ১৯৮৩ সালে আমার বিয়ের সময়। এ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। মেয়ে দেখে আমার মায়ের পছন্দ হয়েছে। মেয়েপক্ষেরও তিন চারজন এসেছেন ছেলেপক্ষের ঘর বর দেখতে। তাদের সামনে আমি চুপচাপ বসে আছি। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছি, সরকারি চাকরি করি সবই তারা জানেন, তবু প্রশ্ন করতে হয় তাই করা। আমি মাথা নিচু করে লিপ সেপারেশন যথাসম্ভব এড়িয়ে সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছি। মেয়েপক্ষ ভাবলো, ছেলে খুব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কথা কম বলে। যাবার সময় তারা আমার গম্ভীর মুখের একখানা সাদাকালো ছবি নিয়ে গেল অন্যান্য আত্মীয়স্বজনকে দেখাবে বলে (সম্ভবত মেয়ের নিজেরও দেখার ইচ্ছা ছিল)। বিয়ের অনেক পরে জানতে পারলাম, ছবি দেখে আমার স্ত্রী ও তার আত্মীয়স্বজনের ধারনা হয়েছিল যে ছেলে খুব গম্ভীর ও রাগী।
এরপর তো রঙিন ছবির যুগ। বিয়ের পরে আমরা স্বামী স্ত্রী একসাথে অনেক রঙ বেরঙের ছবি তুললাম। বেশিরভাগ ছবিতেই আমার স্ত্রী দাঁত বের করে হাসছেন, কিন্তু আমার মুখে দাঁত লুকানো মুচকি হাসি। পরে অবশ্য এ দৃশ্য বদলে যায়। আমার স্ত্রীর ওপর পাটির দাঁতগুলো সামান্য উঁচু থাকায় তাঁর হাসিতে মুক্তোঝরা ভাবটা তেমন আসছিলনা। ফলে তিনি স্বামীর অনুকরণে মুচকি হাসির আশ্রয় নিলেন। শ্যালক শ্যালিকাদের সাথেও অনেক ছবি তোলা হল। সবাই হাসিখুশি, কিন্তু আমার মুখে হাসি নাই। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ক্যামেরাম্যানের ওপর নাখোশ। একবার শ্বশুরবাড়ির শাক সব্জির বাগানে এরকম একটা গ্রুপ ছবি তোলার সময় ক্যামেরাম্যান ছিলেন আমার চাচাশশুর। তিনি বললেন, ‘মুখে একটু হাসি আনো তো বাবা।’
আমি হাসলাম, তবে দাঁত আড়ালে রেখে।
‘না, না, আর একটু। হাঁ, হাঁ, ঠিক আছে। না, না, অত না।’
হাসি বেশি হয়ে গেলে উঁচু নিচু ফাঁক ফাঁক দাঁতের কারণে চেহারা খারাপ আসছে, আবার একেবারে না হাসলে বা মুচকি হাসলে চাচাশশুরের পছন্দ হচ্ছেনা। শেষ পর্যন্ত নানা রকম কসরত করে মাঝামাঝি অবস্থার একটা ছবি তোলা হল। ছবি দেখে শশুর বাড়ির লোকজন বলল, ‘জামাইয়ের ক্যামেরা ফেস ভালো না।’

বিভিন্ন কাজের জন্য স্টুডিওতে পাসপোর্ট বা স্ট্যাম্প সাইজের ছবি তুলতে গেলে আমার সবচেয়ে বেশি অসুবিধা যেটা হয়, সেটা হল ভাস্কর্যের মতো স্থির হয়ে বসে থাকা। ক্যামেরাম্যান হয়তো বলছে, ‘মুখটা সোজা রাখেন।’
রাখলাম।
‘মাথাটা একটু নিচু করেন।’
করলাম।
‘আহা! বেশি নিচু হয়ে গেল। একটু তোলেন।’
তুললাম।
‘আর একটু, আর একটু .........।’ বলতে বলতে ক্যামেরাম্যান নিজে এসে আমার মাথাটা সাইজ করে দিয়ে একলাফে চলে গেল ক্যামেরার পিছনে।
‘আহা, নড়বেন না। একদম নড়বেন না।’
আমি পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে বসে আছি।
‘ক্যামেরার দিকে তাকান।’
তাকালাম। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যাচ্ছে।
‘রেডি!’
আরে বাবা, আমি তো স্টুডিওতে ঢোকার পর থেকেই রেডি।
‘ক্লিক্!’ শাটার টেপার সাথে সাথে আমার মাথাটা কেঁপে গেল। পরে ছবি হাতে পেয়ে দেখলাম, বাংলা ছায়াছবির ভিলেনদের মতো আমি ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এই ছবিসহ পাসপোর্টের আবেদন করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন নির্ঘাত খুব কড়া হবে।
এরপর তো এল ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ। একদিন স্ত্রীর ছোট বোনের সাথে শখ করে ডিজিটাল ক্যামেরায় একটা ছবি তুললাম। আমার এই শ্যালিকাটি সুন্দরী। চোখ দুটো ভারি সুন্দর। রান্নাঘরের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘পটল চেরা’। শ্যালিকা অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। সাথে নিয়ে ছবি তোলার জন্য একেবারে আদর্শ মেয়ে। কিন্তু ছবি পাওয়ার পর দেখা গেল চশমা পরে থাকায় আমার চোখ দুটো ঠিকই আছে, কিন্তু শ্যালিকার পটল চেরা চোখ দুটোর কালো মনি ভয়াবহ রকমের লাল হয়ে গেছে। তাকে অনেকটা হরর ছবির রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের মতো দেখাচ্ছে। ছবি দেখে শ্যালিকা কেঁদে ফেলল।

ক্যামেরায় ছবি তোলা বিষয়ে আমার জীবনের এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা লিখে এবার শেষ করবো। বুড়ো বয়সে আমি আর আমার মিসেস কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেছি। সাথে আমার ‘পটল চেরা’ চোখের শ্যালিকা ও তার স্বামী এবং আমাদের ছেলেমেয়ে। সমুদ্রে সবাই মিলে হৈ চৈ করতে করতে গোসল করা হচ্ছে। পেশাদার ক্যামেরাম্যানরা ছবি তুলে দেওয়ার জন্য ক্যামেরা হাতে সৈকতে ঘোরাফেরা করছে। তখনও মোবাইল ফোনে ক্যামেরার যুগ আসেনি। কিছু পেশাদার সহিস তাদের ঘোড়ায় চড়ার জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করছে। কুড়ি টাকা দিলে তারা তাদের ঘোড়ায় চড়িয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে কিছুক্ষণ পর্যটককে ঘুড়িয়ে আনবে। এতে যারা জীবনে কখনো অশ্বারোহণ করেনি, তাদের সে অভিজ্ঞতা হবে।
বুড়ো বয়সে আমার ঘোড়ায় চড়ার শখ হল। স্ত্রীকে সে কথা বলতেই, মহা আশ্চর্য, তিনি রাজি হয়ে গেলেন। সমুদ্রের নোনা জলে ভিজে সম্ভবত তাঁর মন নরম হয়ে গেছে। আমার দুই ছেলে এবং শ্যালিকার মেয়েটিও ঘোড়ায় চড়তে চায়। কিন্তু সহিস তার ঘোড়ার পিঠে একজনের বেশি লোক তুলতে রাজি নয়। তাই সিদ্ধান্ত হল পর্যায়ক্রমে একজন একজন করে চড়বে। এদিকে আমি বুড়ো মানুষ। তাগড়া ঘোড়ায় চড়ে ছোটার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলে হাড় গোড় ভেঙে অনাসৃষ্টি হতে পারে। আমার জন্য একটা ছোটখাটো দুর্বল ঘোড়া বাছাই করা হল। ঘোড়ায় চড়ে ছুটন্ত অবস্থায় আমার ছবি তোলা হবে। এ জন্য একজন পেশাদার ক্যামেরাম্যানও ঠিক করা হল।
আমি হাঁচরে পাঁচরে কোন রকমে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলাম। হাড় জিরজিরে দুর্বল ঘোড়াটা আমার ভারে সামান্য নুয়ে পড়লো। সহিসের চাবুক খেয়ে সে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে বটে, তবে দৌড়াতে পারছে না। সহিস তার লাগাম ধরে পাশাপাশি হাঁটছে। সহিসের আপ্রাণ চেষ্টা স্বত্বেও তাকে দৌড়ানো সম্ভব হলনা। আমার অবস্থা হল অনেকটা ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল’র মতো।
এদিকে ক্যামেরাম্যান সিনেমার শুটিং করার মতো অত্যাধুনিক কায়দায় ক্যামেরাকে একাত ওকাত করে অশ্বারোহিত অবস্থায় তার ক্লায়েন্টের ছবি তুলে নিয়েছে। ঘোড়ার সামনে ও দুপাশ থেকে তোলা ছবি গুলো পতেঙ্গার এক স্টুডিও থেকে প্রিন্ট হয়ে আসার পর আমরা সবাই হতবাক। আমি যে প্রাণীটির পিঠে বসে আছি, সেটি ঘোড়া না গাধা তা নিয়ে রেস্ট হাউসে আমাদের মধ্যে তুমুল তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। এই দু’নম্বরি দুনিয়ায় গাধাকে ঘোড়া বলে চালিয়ে দেওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। চিড়িয়াখানায় এক নজর দেখা ছাড়া গাধাকে কে কবে ভালো করে দেখেছে, বলুন! অনেকে তো গাধা নামের প্রাণীটি চোখেই দেখেনি।
আর আশ্চর্য কি জানেন? আমাদের পারিবারিক এ্যালবামে রাখা সেই ছবিগুলো দেখে প্রাণীটি গাধা ছিল না ঘোড়া ছিল তা’ নিয়ে আমাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আজও তর্ক বিতর্ক হয়।

******************************************************************************************
{এই লেখাটি মাসিক উত্তর বার্তা পত্রিকার ঈদুল ফিতর/২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত। ব্লগার বন্ধুরা যারা পড়েননি, তাদের জন্য ব্লগে প্রকাশ করলাম।]
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪

বিপরীত বাক বলেছেন: প্রোফাইল পিকচার টা কিভাবে তুলেছেন?
ঠোটে ঠোট চেপে।!

আপনার প্রাণখোলা হাসির একটা ছবি দেখার প্রত্যাশা য় রইলাম।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। আপনার প্রত্যাশা মোতাবেক একটা ভার্চুয়াল অট্টহাসি দিলাম। আশা করি, হাসি দেখে খুশি হয়েছেন। প্রোফাইল পিকচারটা আমার রিটায়ারের সময় পেনশনের কাগজপত্রের জন্য তোলা। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে তো বটেই।

হাঃ হাঃ হাঃ । ধন্যবাদ বিপরীত বাক।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৮

রিফাত_হাসান বলেছেন: লেখাটি পড়তে পড়তে আমিও কয়েকবার আবু হেনা ভাইয়ের প্রোফাইল পিকচার টা দেখলাম। বিপরীত বাক-ভাইয়ের মত আমারও একই প্রশ্ন। :)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: একই উত্তর। হাঃ হাঃ হাঃ।
ধন্যবাদ ভাই রিফাত হাসান। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

রাশেদ রাহাত বলেছেন: :P :P :P

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাশেদ রাহাত। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: ছবি তোলাটা আসলেই এক মহা বিড়ম্বনা্র নাম। :)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: যা বলেছেন! আপনার কথাটা আমার খুব মনে ধরেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০১

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: আমারও ছবি তোলার ইতিহাস তেমন ভালো নই ।স্কুলে ক্লাস টেনের রেজিষ্টশনের জন্য আমাকে তিনবার ছবি তুলতে হয়েছে তারপরও ঠিক মতো ছবি আসেনি।১ম বার ছবি উঠলো রোগা টাইপের ২য় বারের দাতের কারণে ছবি বিচ্ছিরি হয়ে গিয়েছিলো ।৩য় বারে হলো ভিলেনের মতো ।ছবি তুলতে তুলতে হাপিয়ে গিয়েছিলাম তাই ভিলেনের টাই চালান করে দিলাম ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই দেখেন! ভুক্তভোগী আমি একাই নই। আমার মতো আরও হতভাগা আছে।

ধন্যবাদ শাহাদাত হোসেন।

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: একবার শ্বশুরবাড়ির শাক সব্জির বাগানে এরকম একটা গ্রুপ ছবি তোলার সময় ক্যামেরাম্যান ছিলেন আমার চাচাশশুর। তিনি বললেন, ‘মুখে একটু হাসি আনো তো বাবা।’
আমি হাসলাম, তবে দাঁত আড়ালে রেখে।
‘না, না, আর একটু। হাঁ, হাঁ, ঠিক আছে। না, না, অত না।’
হাসি বেশি হয়ে গেলে উঁচু নিচু ফাঁক ফাঁক দাঁতের কারণে চেহারা খারাপ আসছে, আবার একেবারে না হাসলে বা মুচকি হাসলে চাচাশশুরের পছন্দ হচ্ছেনা। শেষ পর্যন্ত নানা রকম কসরত করে মাঝামাঝি অবস্থার একটা ছবি তোলা হল। ছবি দেখে শশুর বাড়ির লোকজন বলল, ‘জামাইয়ের ক্যামেরা ফেস ভালো না।’
------

হা হা হা ---------

আমি পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে বসে আছি।
‘ক্যামেরার দিকে তাকান।’
তাকালাম। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যাচ্ছে।
‘রেডি!’
আরে বাবা, আমি তো স্টুডিওতে ঢোকার পর থেকেই রেডি।
‘ক্লিক্!’ শাটার টেপার সাথে সাথে আমার মাথাটা কেঁপে গেল। পরে ছবি হাতে পেয়ে দেখলাম, বাংলা ছায়াছবির ভিলেনদের মতো আমি ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এই ছবিসহ পাসপোর্টের আবেদন করলে পুলিশ ভেরিফিকেশন নির্ঘাত খুব কড়া হবে।
----

আপনার এই লেখা পড়ে হাসি আর আটকে রাখতে পারি নাই!!!
আমার পাশের সবাই বলছিল, পড়ে শোনাতে।কিন্তু পারলাম না আমি -------!!!!!! =p~ =p~ =p~

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বোন কামরুন নাহার। যারা পড়ে শোনাতে বলছিল, তারা নিজেরাই পড়ুন না।

অনেক ধন্যবাদ বোন। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: আমার ছবি খুব ভাল আসতো। আমার মা তো আমার ছবি নিয়ে গর্ব করতেন। B-)

এখনো ছবি বেশ ভাল হয়, কোন সমস্যাই না।

আপনার দাঁতখোলা প্রাণচঞ্চল একটা ছবি দেখাবেন? বড় খুশি হইতাম। ;)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই যে দেখেন। =p~

নিশ্চয় খুশি হয়েছেন। ধন্যবাদ গেম চেঞ্জার।

৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

প্রামানিক বলেছেন: আপনার ফটোফেস পড়ে হাসতে হাসতে জান শেষ। ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: বেশ বিড়ম্বনাতেই আছেন ভাই।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার মনের কথাই বলেছেন।
ধন্যবাদ অগ্নি সারথি। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১০| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮

কথাকাহন বলেছেন: সারাদিনের নাগরিক বিরম্বনার পর এমন সুন্দর রম্যরচনা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আশা করি এমন আনন্দ আরো দিবেন

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কথাকাহন। আমার আগের ও পরের লেখাগুলো পড়ার আমন্ত্রন রইল।

ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

১১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: খেয়াল করে দেখলাম, আপনাকে আসলেই বেশ গম্ভীর আর রাগী রাগী লাগে!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তাহলে আমার শশুর বাড়ির লোকেরা ভুল বলেনি। হাঃ হাঃ হাঃ।
ধন্যবাদ ভাই হাসান মাহবুব। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হা হা হা! সেলফ-ডেপ্রিকেশন এর মাধ্যমে চমৎকার রম্য লিখেছেন, হাসলাম পড়ে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রফেসর শঙ্কু।
ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

১৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

সায়েম মুন বলেছেন: বেশ লাগলো রম্যরচনা। শেষের দিকে গাধা/ঘোড়ার বিতর্কে মজা পেয়েছি।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সায়েম মুন।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

১৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৫

আরাফআহনাফ বলেছেন: " আমি মাথা নিচু করে লিপ সেপারেশন যথাসম্ভব এড়িয়ে সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছ "
তো "লিপ সেপারেশন" পরে আর কখন হলো?

পুরাই হাসতে আছি। পারেন ভাই আপনি। ওহ্‌ ।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আরাফআহনাফ। লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.