নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণঃ বেঁচে আছি আজও

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

( সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা ভিত্তিক এই স্মৃতিচারণামূলক লেখাটি ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ দিন গুলোর কথা স্মরণ করার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস। নতুন প্রজন্ম জানুক, কেমন ছিল সেই দিনগুলি। ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম ১৬ বছরের কিশোর। পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ দিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আরও ৪৪ বছর আমি বেঁচে আছি। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনায় আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। )

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ। রাজশাহী শহরে কারফিউ চলছে। বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যে ৭ টা পর্যন্ত মাইকে ঘোষণা দিয়ে তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যার যা কাজ কাম বা কেনাকাটা সেরে নিয়ে আবার নিজ নিজ বাড়ি ঘরে দরজা জানালা আটকে বন্দী হয়ে যেতে হবে। সন্ধ্যে ৭ টার পর রাস্তায় বা ঘরের বাইরে কাউকে দেখা গেলে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। আগের তিন দিন শহরের অনেক লোককে তারা মেরে ফেলেছে। অনেক বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে অবাঙালীরা পাড়ায় পাড়ায় দলবদ্ধভাবে ছুরি, চাকু ও রামদা’ হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়ে তারাও হত্যা ও লুটতরাজ শুরু করেছে। শহরে চরম আতংক। তখনো ঢালাওভাবে গ্রামে গঞ্জে বা ভারতে পালিয়ে যাওয়া শুরু হয়নি। তবে পালিয়ে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই।

আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই এক বোন। বড়ভাই বি এ পাশ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। আমি তখন রাজশাহী সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। অন্যান্য ভাই বোনরা ক্রমানুসারে বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে। কারফিউ শিথিল হলে আব্বা বড়ভাইকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটার জন্য বাজারে গেলেন। ঘর থেকে না বেরনোর জন্য আমাদের ওপর ছিল কড়া নির্দেশ।
কেনাকাটা সেরে আব্বা এবং বড়ভাই সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ফিরে এলেন। কারফিউ শুরু হতে তখনো দেড় ঘণ্টা বাঁকি। বড়ভাই বাজারের ব্যাগ নামিয়ে রেখে বললেন, ‘আমি একটু আসছি।’
আব্বা এবং মা সমস্বরে ‘যাস না বাবা, যাস না’ বলতে বলতেই বড়ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাওয়া। বড়ভাইয়ের সিগারেট খাওয়ার নেশা ছিল। বাড়িতে সেটা হচ্ছিলো না বলে সম্ভবতঃ ঐ কাজে তার বেরিয়ে যাওয়া।
কিন্তু সাড়ে ছয়টা বেজে যাওয়ার পরেও বড়ভাই ফিরে না আসায় মা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। আব্বার কপালে চিন্তার ভাঁজ। আমরা ভাই বোনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। মায়ের দেখাদেখি ছোট দুটি ভাইও কাঁদতে শুরু করে দিল। এ অবস্থায় সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে আমি আর থাকতে পারলাম না। সকলের নিষেধ সত্ত্বেও বড়ভাইকে খুঁজতে আমি বেরিয়ে পড়লাম।

বাড়ির আশেপাশে তাকে খুঁজে না পেয়ে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো আমাদের মহল্লার শেষ প্রান্তে বড়ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মতি ভাইয়ের বাসায় একবার খুঁজে দেখা যেতে পারে। সে বাড়ির ছাদে বসে বড়ভাইয়ের বন্ধুরা সবাই আড্ডা দেয়। তাস, দাবা খেলে। আড্ডা দেওয়া অনেকটা নেশার মতো। একবার বসলে সময় জ্ঞান থাকে না। কিন্তু আমার একবারও মনে হলো না যে এই পরিস্থিতিতে সেখানে তাদের আড্ডা বসার কথা নয়। আমি মতি ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক পা হেঁটে গেলে প্রধান সড়ক। ঐ সড়ক দিয়ে গেলে মতি ভাইয়ের বাড়ি খুব কাছে। কিন্তু সাতটা বেজে গেছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর টহল যান গুলো ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমে পড়েছে। সশস্ত্র সৈন্য বোঝাই গাড়ি গুলো রক্ত হিম করা আওয়াজ তুলে ছড়িয়ে পড়ছে সারা শহরে। এ অবস্থায় রাস্তা দিয়ে যাওয়া চরম বিপজ্জনক। মহল্লার অলি গলি দিয়েও মতি ভাইয়ের বাসায় যাওয়া যায়। কিছুটা ঘোরা পথ হলেও আমি গলি পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সে পথে যেতে হলেও প্রধান সড়কের আড়াআড়ি ত্রিশ ফুটের মতো রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। আমি সতর্ক চোখে দুই দিক দেখে নিয়ে তীরের মতো রাস্তা পাড়ি দিয়ে গলিপথে ঢুকে পড়লাম। তারপর নির্জন চিপা অলি গলি দিয়ে হন হন করে হেঁটে রওনা হলাম মতি ভাইয়ের বাড়ির দিকে। গলির দু’পাশে বাড়িঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ। কোথাও কেউ নেই। গলিপথের স্ট্রীট লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে। এক বাড়ির নিচ তলার জানালা সামান্য ফাঁক করে কে যেন চাপা স্বরে সতর্ক করলো আমাকে, ‘এই হেনা, কারফিউয়ের মধ্যে তুমি কোথায় যাচ্ছ? বাড়ি যাও, বাড়ি যাও।’
আমার মাথায় তখন জেদ চেপেছে। মতি ভাইয়ের বাসায় যেতেই হবে। সেখানে আমার বড়ভাই আছেন। থাকলেও যে তিনি মতি ভাইয়ের পরিবারের সাথে নিরাপদে আছেন, সে কথা একবারও আমার মনে আসছে না। রক্তের টান বোধহয় একেই বলে।

কিন্তু মতি ভাইয়ের বাসায় পৌঁছে আমি হতাশ হলাম। দশ বারো বার দরজার শিকল ঝাঁকিয়েও বাসার ভেতর থেকে কারো সাড়া শব্দ পেলাম না। ‘বড়ভাই, আমি হেনা’ বলে কয়েকবার চিৎকার করার পরেও কেউ সাড়া দিল না। মনে হলো বাসায় কেউ নেই। প্রধান সড়কে আর্মির গাড়ি চলাচলের ভীতিকর আওয়াজ বেড়ে গেছে। এই প্রথম নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শংকিত হলাম। আর দেরি না করে বাড়ি ফিরতে হবে। একই গলিপথে বাড়ির উদ্দেশ্যে আমি দ্রুত হাঁটা দিলাম।
গলির শেষ মাথায় এসে আমার মনে হলো, প্রধান সড়কের ত্রিশ ফুট রাস্তা পার হবার আগে একবার রাস্তাটা দেখে নেয়া দরকার। গলি থেকে মাথা বের করে রাস্তার বাম দিকে কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু ডান দিকে তাকাতেই মাত্র দশ পনের ফুট দূরে দেখলাম পাকিস্তানী সৈন্যদের একটা কনভয় যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন সৈন্য হাঁটাহাঁটি করছে, অন্যেরা গাড়িতে বসে আছে। আমি গলি থেকে মাথা বের করার সাথে সাথে ওরা স্ট্রীট লাইটের আলোয় আমাকে দেখে ফেলেছে।
‘ওয়ে শুয়ার কা বাচ্চা, রোক্ কে, রোক্ কে!’
কয়েকজন সৈন্য আমাকে ধরার জন্য ছুটে এলো। আমি এক মুহূর্ত দেরি না করে উল্টো পথে আবার গলির ভেতর দৌড় দিলাম। ওরাও গলির ভেতর ঢুকে পড়েছে এবং আমাকে ধরার জন্য দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে রাইফেলের নিশানা তাক করছে আমার দিকে। আমি প্রাণপণে ছুটে চলেছি। ওদের সাথে আমার দূরত্ব ক্রমেই কমে আসছে।

এভাবে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে আমার কেন জানি মনে হলো, ওদের সাথে দৌড়ে আমি পারবো না। ওরা প্রশিক্ষিত সৈন্য। আমার চেয়ে ওদের গতি বেশি। তাছাড়া ওরা যে কোন সময় গুলি ছুঁড়তে পারে। দূরত্ব আরও কমে গেলে ওদের গুলির নিশানা ব্যর্থ হবে না। আমাকে বাঁচতে হলে অন্য কিছু করতে হবে।
গলির বাম দিকে ‘শাহী জামে মসজিদ’ নামে একটা মাঝারী আয়তনের দোতলা মসজিদ ছিল। আতংকে দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আমি চট্ করে ঢুকে পড়লাম সেই মসজিদের ভেতর। মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লিরা চলে গেলে ইমাম সাহেব মসজিদের ভেতর একা একা বসে প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তেলাওয়াত করেন। মহল্লার প্রায় সবাই এই মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে। সেই সূত্রে ইমাম সাহেব আমাকে চিনতেন। তিনি প্রায়ই আমাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য খুব বিনয়ের সাথে অনুরোধ করতেন। চট্টগ্রামের মানুষ। সাথে পরিবার পরিজন না থাকায় তিনি মসজিদ সংলগ্ন হুজরাখানায় একাই থাকতেন এবং নিজে রান্না করে খেতেন। ষাটোর্ধ ছোটখাটো নির্বিরোধী মানুষ। কখনো উচ্চস্বরে তাকে কথা বলতে শুনিনি।

আমি যখন মসজিদে ঢুকে পড়ি, তখন ইমাম সাহেব কোরআন তেলাওয়াত শেষে হুজরাখানায় যাওয়ার জন্য মসজিদের বারান্দায় এসে আমার সামনে পড়ে গেলেন। আমি কোন কথা না বলে ছোঁ মেরে তাঁর মাথা থেকে টুপি খুলে নিয়ে নিজের মাথায় পরে নিলাম। তারপর শার্টের গুটানো হাতা খুলে ফেলে (তখনকার দিনে ফুলহাতা শার্টের হাতা গুটিয়ে পরা একটা ফ্যাশনের মতো ছিল) এক দৌড়ে মসজিদের ভেতর মুসল্লিদের নামাজ পড়ার জায়গায় চলে গেলাম। একেবারে মিম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিঃশব্দে নামাজ পড়ার অভিনয় শুরু করে দিলাম। এত বছর পরেও আমি জানিনা যে তখন ওসব বুদ্ধি কিভাবে আমার মাথায় এসেছিল?
ইমাম সাহেব ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব। ঠিক এই সময় বুটের খটাখট আওয়াজ আমার কানে এলো। আর্মিরা ঢুকে পড়েছে মসজিদে। তাদের আর একটা দল গলিপথে চলে গেছে সামনে। আমার বুকের ভেতর ধক ধক করতে লাগলো। আমি ঘোরের মধ্যে চোখ বুজে নামাজ পড়ার মতো করে রুকু সেজদা করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন সুরা কালমা আমার মনে পড়ছে না। আর্মিদের উচ্চস্বরে কথাবার্তা কানে এলো। ইমাম সাহেবকে ধমকাচ্ছে একজন সৈন্য। বলছে, ‘এ বুঢঢা, ইধার এক লাড়কা আয়া, তু দেখা?’
ইমাম সাহেব ঝটপট উত্তর দিলেন, ‘লাড়কা? জি নেহি। কোয়ি লাড়কা তো নেহি আয়া।’
‘এ বুঢঢা! ঝুটা মাত বোল্।’
‘ঝুটা নেহি সাব। আপলোগ তালাশ করকে দেখিয়ে।’
মনে হলো আমার হৃৎপিণ্ডটা বুকের ভেতর থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে। সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে মসজিদের বারান্দায়। একজন মুসল্লি মসজিদের ভেতর নামাজ পড়ছে, সেটা ওরা পেছন থেকে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। এখন যদি ওরা ইমাম সাহেবের কথায় তল্লাশি করে তো আমি নির্ঘাত ধরা পড়ে যাবো। কিন্তু আশ্চর্য! ওরা কেউ মসজিদের ভেতরে ঢুকে আমার কাছে এলো না। কয়েকজন সৈন্য খটাখট বুটের আওয়াজ তুলে মসজিদের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে গেল। তারা দোতলাসহ মসজিদের মিনার, ছাদ ও অন্যান্য স্থান তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। অন্যেরা নিচতলার হুজরাখানা, ওজুখানা ও কুয়ার চারপাশ টর্চ জ্বেলে দেখতে লাগলো। মসজিদের জানালা দিয়ে টর্চের আলো দু’একবার আমার গায়েও এসে পড়লো। কিন্তু তারপরেও ওরা কেউ আমার কাছে এলো না। প্রায় আধা ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করার পর মসজিদের বারান্দায় জড়ো হয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করলো। তারপর একজন ধমকের সুরে ইমাম সাহেবকে বললো, ‘তু কৌন হ্যায়?’
‘জি, ম্যায় মসজিদ কা ইমাম হুঁ।’
আর একজন সৈন্য বললো, ‘এ বুঢঢা, উও লাড়কা ইধার কোয়ি আশপাশ হি হ্যায়। কম উমর, তেরে য্যায়সা লম্বি। শুয়ার কা বাচ্চা বহত তকলিফ দিয়া হামে। উও কাভি ইধার আয়ে তো হামলোগ কো খবর দে না। হামলোগ বড়ে রাস্তে পর হ্যায়। সামঝা?’
‘জি সাব, সামাঝ লিয়া। খবর কর দুঙ্গা।’
এরপর সৈন্যরা যে কখন চলে গেছে, আমি টের পাইনি। ঘোরের মধ্যে একটানা আমি রুকু সেজদা করে চলেছি। হঠাৎ কানের কাছে ইমাম সাহেবের কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম।
‘হয়েছে। থামো।’
আমি নামাজ পড়া বন্ধ করে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। পেছনে তাকিয়ে দেখি, সৈন্যরা কেউ নেই। ইমাম সাহেব বললেন, ‘কি হয়েছিল?’
আমি ঢোক গিলে চাপা স্বরে সব ঘটনা খুলে বললাম তাঁকে। শুনে তিনি গম্ভীর মুখে কিছু চিন্তা করলেন। তারপর বললেন, ‘তুমি উকিল সাহেবের ছেলে না? হাফেজিয়া মাদ্রাসার পেছনে তোমাদের বাড়ি?’ আমি বললাম, ‘জি।’
‘শোন।’ ইমাম সাহেব আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওজুখানায় যাওয়ার দরকার নাই। মসজিদের যে কোন দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে তায়াম্মুম করে নাও। তারপর দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো। এশার নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমি একটু পরে আজান দেব। হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা কারফিউর মধ্যেও নামাজ পড়তে আসে। আর্মিরা ওদের দেখলে কিছু বলেনা। নামাজ শেষে তুমি ওদের সাথে মিশে মাদ্রাসায় চলে যাবে। আমি ওদের বলে দেব। তারপর মাদ্রাসার পাঁচিল টপকে বাসায় চলে যেতে পারবেনা?’
‘জি, পারবো।’

এশার আজানের পর মাদ্রাসার ছাত্ররা নামাজ পড়তে এলো। ইমাম সাহেবের নির্দেশ অনুযায়ী আমি নামাজ শেষে ওদের সাথে মাদ্রাসায় চলে গেলাম। পাঁচিল আর টপকাতে হলো না। পাঁচিলের একটা ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বের হয়ে ডোবার পাড় ধরে হেঁটে আমাদের বাড়ির পেছন দিকে লাকড়ি রাখার ঘরের বন্ধ দরজায় নক করলাম। কয়েকবার নক করার পর ভেতর থেকে আব্বার গলা শোনা গেল, ‘কে?’
বড়ভাইকে খুঁজতে বেরবার পনের বিশ মিনিট পর তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু আমার জন্য টেনশনে সবাই অস্থির। আমাকে ফিরে পেয়ে যেন বাড়িতে ঈদের আমেজ ফিরে এলো। মা এবং ভাই বোনরা সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। আব্বা আড়ালে চোখ মুছে মাকে বললেন, ‘ভাত দাও।’

‘শাহী জামে মসজিদের’ ইমাম সাহেব ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একটানা চল্লিশ বছর ইমামতি করার পর চট্টগ্রামে তাঁর দেশের বাড়িতে ফিরে গিয়ে ইন্তেকাল করেন। আমার দুর্ভাগ্য যে, তাঁর নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে বা তাঁর কবরে এক মুঠো মাটি দিতে পারিনি। তবে সৌভাগ্য এই যে, আমার জীবনের সবচেয়ে সংকটময় দিনে তাঁর মতো একজন মানুষরূপী ফেরেশতাকে আল্লাহ আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে বেহেশতে নসিব করুন।
*********************************************************************************************
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: মনে হয় এ পযর্ন্ত পড়া আপনার সবগুলো লেখার মাঝে সেরা লেখাটি আজ পড়লাম। আল্লাহ ইমাম সাহেবকে জান্নাতবাসি করুন। আমিন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সাইফুল্লাহ শামীম।
আমার লেখা উপন্যাস 'স্বপ্ন বাসর' (২০১১ সালে প্রকাশিত) পড়লে আমার মনে হয় আপনার আরও ভালো লাগবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের চার মাসের ঘটনা নিয়ে গ্রামীন জীবনের পটভূমিকায় লেখা আমার আত্মজৈবনিক উপন্যাস। অবশ্য উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস নয়। এটি একটি লাভ স্টোরি। আমি নিজে মনে করি, এই উপন্যাসটি এ পর্যন্ত আমার সেরা লেখা। স্বপ্ন বাসর উপন্যাসের আগে পরে কোন লেখাই আমার নিজের কাছে উপন্যাসটির চেয়ে উচ্চমানের মনে হয়নি।

ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: বেঁচে থাকার জন্য অভিনন্দন আর বাঁচার গল্পটা বলার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা। এমন সবার অভিজ্ঞতার গল্পগুলো যদি শুনতে পারতাম! আপনি ভাগ্যগুণে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাঙালী। ঁতাদের কথা মনে হয় যাঁরা এমন কোনো গল্প বলায় সুযোগ না পেয়ে হারিয়ে গেল। অসংখ্য ধন্যবাদ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। ১৯৭১ সালে বহু মানুষের জীবনের এমন বহু অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানিনা। হয়তো কালের গর্ভে সেসব ঘটনা হারিয়েই গেছে।
ধন্যবাদ সোজোন বাদিয়া। ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪

রিপি বলেছেন: গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনেই আমি পুরো ঘটনাটা দেখছি.... কি জীবন্ত ভাবে তুলে ধরেছেন... সত্যি মিথ্যা সবকিছুই এতো সুন্দর করে লিখেন যে আবার ভয় পেলাম....। হা হা হা :-B

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রিপি। এটা ১০০% সত্য ঘটনা। আমি সাধারণত সত্য ও বাস্তব পটভূমিকার ভিত্তিতে লিখে থাকি। পুরোপুরি কাল্পনিক গল্প আমি খুব কম লিখেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।

ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০১

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: আমি চেষ্টা করবো বইটি সংগ্রহ করতে।তথ্যটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই বই এখন বাজারে পাওয়া যায় না। ১ম মুদ্রণ শেষ হয়ে গেছে। আমার শারিরীক অসুস্থতার কারণে ২য় মুদ্রণ শুরু করতে পারছি না। আমি নিজেই এই উপন্যাসের প্রকাশক।
তবে আমাদের কয়েকজন ব্লগার বন্ধুর কাছে উপন্যাসটি আছে। ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৯

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: এই ব্লগের কারও সাথেই আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা নেই, তাই ২য় মুদ্রনের অপেক্ষায় থাকলাম।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭

দিল মোহাম্মদ মামুন বলেছেন: আপনার লিখাটা পড়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম, ধন্যবাদ আপনাকে লিখাটা প্রকাশ করার জন্য।
অনেক ভাল লাগলো।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দিল মোহাম্মদ মামুন। আশা করি, আমার আগের ও পরের লেখাগুলিও পড়বেন।
ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনি অনেক ভাগ্যবান। বেঁচে গেছেন।
কী দিন ছিল! বাড়ির বাইরে গেলে কেউ ফিরবে কিনা তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না।
আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল, একটা থ্রিলার পড়ছি। চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন সব। আসলে মানুষের জীবনটা কোন থ্রিলারের চেয়ে কম নয়। আপনি ভাগ্যবান যে বাঙালির এমন চরম একটা সময় প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন, বাঙালির সেরা অর্জন নিজের চোখে দেখেছেন।
পোস্টটি প্রিয়তে নিলাম।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। হাঁ, সেই সময়টা আসলে বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যায় না। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীরাই সময়টা অনুভব করতে পারে। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এক টুকরো আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। জানিনা কতটা সফল হয়েছি।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৫

আরাফআহনাফ বলেছেন: আল্লাহ ইমাম সাহেবকে বেহেশতে নসিব করুন। আমীন, আমীন।

একটানে শেষ করলাম লেখাটা আর শেষ করেই নিলাম একটা বড় শ্বাস।
আহা জীবন।

ভালো থাকবেন নিরন্তর। শুভ রাত্রী।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আরাফাহনাফ। ইমাম সাহেবের জন্য আপনার দোয়া আল্লাহ নিশ্চয় কবুল করবেন।
একটা কথা। এই লেখাটা কোন গল্প নয়। লেখার প্রতিটি অক্ষর সত্য ঘটনা ভিত্তিক। তাই একটানা এত বড় লেখাও পড়ে শেষ করেছেন। কাল্পনিক গল্প এত পাঠকপ্রিয়তা পায় না।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

৯| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩১

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আপনার গল্প পড়ে সত্যিই শ্বাসরুদ্ধ কর অবস্থায় পড়েছিলাম.........ইমাম সাহেব বেহেস্তবাসী হোক এই কামনা করছি।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ইমাম সাহেবের জন্য আপনার দোয়া আল্লাহ যেন কবুল করেন। আমীন।

অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

১০| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ওয়াও! পিসি খুলেই চা? ধন্যবাদ সাদা মনের মানুষ।

১১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: লাল চা পছন্দ না হইলে কইয়েন :)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: : দুধ চা পছন্দের। তবে আপাতত এটাও চলবে। ফটু মাস্টারের দেওয়া চা বলে কথা! না করি ক্যামনে?

১২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কয়েক লক্ষ ধন্যবাদ। এইমাত্র বৈকালিক নাস্তা খেয়ে উঠলাম।

১৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: নেন দুধ চা দিয়া গেলাম :-B

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই রকম মাঝে মাঝে দিবেন, যেন পয়সা দিয়া কিন্যা খাইতে না হয়।

১৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: কোন একদিন আপনার সাথে দেকা হলে সত্যিই আমি আপনাকে দুধ চা খাওয়াবো, খুব ইচ্ছে আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হোক

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই তো আর কিছুদিন পর আমের মৌসুম। চলে আসুন রাজশাহীতে। গরীবের আতিথ্য নিয়ে ফিরে যাবার সময় এক নম্বর ফরমালিন মুক্ত আম নিয়ে যাবেন। সেই সুযোগে চা খাওয়া যাবে। পরের বছর আমিও নরসিংদীতে পৌঁছে যাব ইনশাআল্লাহ। তখনো দুধ চা খেতে কোন বাধা নেই। কী বলেন?

১৫| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: নরসিংদীর বিখ্যাত সাগর কলা কি খাবেন না?

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ ভাই, একটা দারুণ জিনিষের কথা বলেছেন। নরসিংদীর সাগর কলা তো বাংলাদেশের সেরা। খামু না মানে? কী কন?

১৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৪

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এইরকম কলা না খাইলে হয় না?

১৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মাফ কইরা দ্যান ভাই।

১৮| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই কলাটা আমার খুব পছন্দ হইছে। সারাদিন চইড়া সি বিচে ঘুইরা বেড়াইলাম, তারপর সন্ধ্যার সময় নাস্তা হিসাবে খাইয়া কক্সবাজার শহরের পাকা রাস্তায় ফালায়া দিয়া আইলাম, যাতে কেউ না কেউ কলার খোসায় পা পিছলাইয়া পড়ে।

১৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী ভয়াবহ ঘটনা! অাপনার অাত্মজৈবনিক লেখাগুলো দুর্দান্ত হয় ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রূপক বিধৌত সাধু।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

২০| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০

প্রামানিক বলেছেন: এই লেখাটা আমার চোখ ফাঁকি দিল কেমনে। এত সুন্দর লেখা অথচ আমি পড়ি নাই।

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এরকম তো হতেই পারে প্রামানিক ভাই। এটা কোন ব্যাপার না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.