নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যরচনাঃ হেঁচকি

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইদানিং মানুষজন খুব রেগে আছে। এমনকি আমিও। আমজনতার এই রাগ প্রকাশের দু’একটা নমুনা বলি।

আমার দুই ভাড়াটিয়া গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত বাড়তি হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে এ মাসে রীতিমতো বিদ্রোহ করে বসলো। তাদের কথা হল, এভাবে বিদ্যুৎ বিল বাড়াতে থাকলে এ বাসায় থাকা যাবে না। এটা কেমন কথা যে, তিনশো টাকার বিল ছয়শো টাকা হয়ে গেল? আমি বললাম, ‘পিডিবি দাম বাড়িয়ে দিলে আমি কি করবো, বাবা?’
এক ভাড়াটিয়া লেখার অযোগ্য ভাষায় পিডিবিকে গালি দিয়ে চলে গেল। আর একজন সামনের মাসে বাসা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমিই সেই বদমাশ পিডিবি। ঢাকায় ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালার হাতে পায়ে তৈলমর্দন করে, আর আমাদের এই মফঃস্বল শহরে ও কাজটি বাড়িওয়ালাদের করতে হয়। অতএব আমি কোন উচ্চ বাচ্য না করে চলে এলাম।

বাইশ বছর পর এবারের ঈদে স্ত্রী পুত্রসহ শ্বশুরবাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছি। আমার অতি বৃদ্ধ শ্বশুর মোবাইল ফোনে আমার মতো বৃদ্ধ জামাতাকে পটিয়ে রাজী করিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য, "আব্বা আর ক’দিনই বা আছে'-এই জাতীয় মিনমিনে বাক্যবানে আমার স্ত্রী আমাকে ঘায়েল করতে পার্শ্ব চরিত্রে ভালো ভূমিকা রেখেছেন। যাই হোক, বাসে উঠে মাথাপিছু চল্লিশ টাকা হারে একশো ষাট টাকা ভাড়া কনডাকটারের হাতে তুলে দিলে সে ভুরু কুঁচকে বললো, ‘আরো চল্লিশ টাকা।’ আমি মৃদু আপত্তি করে বললাম, ‘ভাড়া বেশি চাইছ কেন?’ যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে বিরামহীন ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে কনডাকটারের মেজাজ খাট্টা হয়ে আছে। সে এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যে, ভাড়া নিয়ে আর একটা কথা বললে সে আমাকে সিট থেকে তুলে পা মাথা ভাঁজ করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবে। আমি বেশি কিছু বলতে সাহস পেলাম না। তবে আরো চল্লিশ টাকা দণ্ড দিয়ে আমিও ভুরু কুঁচকে কনডাকটারের দিকে এমনভাবে তাকালাম যেন ও ব্যাটাও একটা পিডিবি।

এবারের রমজান মাসে মানুষের মেজাজ খুব তিরিক্ষি ছিল। একে তো গরমের দিনে লম্বা সময় ধরে না খেয়ে থাকা। তার ওপর বাজারে আগুন। পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। সাত চড়েও আওয়াজ করেন না, এমন শান্ত শিষ্ট মানুষ সোবহান সাহেবকেও দশ রোজার দিন বিকেল বেলা দেখলাম ফুটপাথে এক কলা বিক্রেতার সাথে হাতাহাতি করতে। সোবহান সাহেব হাই স্কুলের শিক্ষক। ক্লাসে পড়ানোর বাইরে তার মুখে কথাবার্তা প্রায় নেই বললেই চলে। পাজি ছাত্ররা আড়ালে তাঁকে "সোবহান আল্লাহ' বলে ডাকে। সোবহান সাহেব তা’ বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু কোন ছাত্রকে তিনি কোনদিন বকাঝকা করেছেন, এমনটি শোনা যায়নি। সেই তাঁর মতো লোকও কলা বিক্রেতার জামা ধরে টান মেরে বোতাম ছিঁড়ে দিলেন।

আমি সাধারনতঃ বাজার হাট প্রায় করি না বললেই চলে। আমার মিসেস ও ছোট ছেলেটি আমার হয়ে এই ঝক্কি সামাল দেয়। রোজার মাঝামাঝি একদিন তাদের দু’জনের কিছু অসুবিধা থাকায় আমাকে বাজারে যেতে হল। একটা এক কেজি ওজনের রুই মাছ কেনার পর হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম, মাছওয়ালার একটা মাছেও কোন মাছি বসছে না। অথচ মাছ ও মাছির সখ্যতা চিরকালের। পত্রিকায় পড়েছি, মাছে ফরমালিন দিলে এই সখ্যতা আর থাকেনা। সর্বনাশ! এই মাছ খেলে তো কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে! আমি ব্যাগের ভেতর থেকে মাছটা বের করে বিক্রেতাকে ফেরত দিয়ে বললাম, ‘মাছ নেব না।’
ব্যস্, শুরু হয়ে গেল মহা গোলমাল। মাছওয়ালা বউনির সময় আমাকে টাকা ফেরত দেবে না। আর আমিও দুশো আশি টাকার মায়া ছেড়ে যাবো না। সব মাছওয়ালা এক হয়ে গেল। তাদের কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গী মারমুখী। এদিকে কয়েকজন ক্রেতা আমার চার পাশে ভিড় করে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখালেও কেনার পরে আবার মাছ ফেরত দিচ্ছি কেন এই প্রশ্নে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুললো। আমি ‘ফরমালিন’ শব্দটা জিবের ডগায় এনেও আবার পেটের ভেতর চালান করে দিলাম। মাছওয়ালাদের যে রুদ্রমূর্তি, তাতে ফরমালিনের কথা বললে এই বুড়ো বয়সে ধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্ততঃ জামার বোতাম গুলো খোয়ানোর সম্ভাবনা একশো ভাগ। শেষে অনেক ধস্তাধস্তির পর মাছওয়ালা আমাকে দুশো টাকা ফেরত দিল। বউনির সময় বাঁকি আশি টাকা সে আর ফেরত দেবে না। আমার ভীষণ রাগ হল। কিন্তু এ বয়সে রাগ করা ছাড়া আর কিই বা করার আছে, বলুন? পাকা চুলের গেরো বড্ড কঠিন, হাত পা শক্ত করে বেঁধে রাখে।

এই রোজার মাসেই একদিন ওষুধ কিনতে গেছি। প্রতি মাসে আমার ওষুধের যে বাজেট থাকে, এ মাসে তাতে আর কুলালো না। সব ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। বুঝতে পারছি, ওষুধের দাম দিতে গিয়ে আমি রেগে যাচ্ছি। ফার্মেসীতে অনেক খদ্দের। তারা যাতে শুনতে না পায়, সে জন্য সেলসম্যানকে ডেকে ফিস ফিস করে বললাম, ‘প্রেসক্রিপশনের বাইরে একটা ওষুধ দেওয়া যাবে?’
অনেকে ফার্মেসীতে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট কিনতে আসে। সাধারনতঃ বুড়ো হাবড়ারাই এসব ট্যাবলেট কেনে। অভিজ্ঞতা থাকায় সেলসম্যান ছেলেটি মুচকি হেসে ফিস ফিস করে করে বললো, ‘কি ওষুধ, চাচা?’
আমি বললাম, ‘রাগ কমাবার কোন ভালো ওষুধ পাওয়া যাবে?’
ছেলেটি আমার ওপর রেগে গেল। বললো, ‘চাচা, বুড়ো হয়ে গেছেন, তবু ফাজলামো করার অভ্যাস গেল না? রাগ কমাবার ওষুধ হয়? যান, ফুটেন। যত্ত সব হেঁচকি!’
**********************************************************************************************************
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
আফসোস। খুব খারাপ অবস্থা দেশের।ক্যাম্নে যে কি হবে ||

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ইমরোজ কবির মুন।
শুভেচ্ছা রইল।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১

প্রামানিক বলেছেন: ছেলেটি আমার ওপর রেগে গেল। বললো, ‘চাচা, বুড়ো হয়ে গেছেন, তবু ফাজলামো করার অভ্যাস গেল না? রাগ কমাবার ওষুধ হয়? যান, ফুটেন। যত্ত সব হেঁচকি!’

দারুণ লাগল আপনার গল্প। ধন্যবাদ হেনা ভােই।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নিশ্চয় আগে পড়েছেন। পুনরায় পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।
শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:



জাতির সম্পদ, মানুষের চাহিদা, মানুষের আয়, মানুষের সংখ্যা, পরিকল্পিত উৎপাদন , এগুলো সম্ন্ময় করার ক্ষমটা মুহিত, ড: আতিয়ার ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেই।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৭

দিগন্ত জর্জ বলেছেন: চরম বিনোদন, সেই সাথে চরম বাস্তব কথা তুলে ধরেছেন। জিনিসের দাম শুধু বাড়েই, দুঃখে যে একটা বিড়ি খাবো, সেই উপায়ও নেই। এটার দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ এই বছরের বাজেটে বিড়ি সিগারেটের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দুঃখে বিড়ি সিগারেটও খাওয়ার উপায় নেই। হাঃ হাঃ হাঃ।

ধন্যবাদ ভাই দিগন্ত জর্জ। শুভেচ্ছা রইল।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: X( X((

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই।
শুভেচ্ছা রইল।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৬

আরাফআহনাফ বলেছেন: বরাবরের মতই সুন্দর আর রম্য।

ভালো থাকবেন আপনি।

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আরাফআহনাফ।
শুভেচ্ছা রইল।

৭| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪৭

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: হা হা । ভাল লেগেছে দূর্ভোগের রম্য ।

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কথাকথিকেথিকথন।
শুভকামনা রইল।

৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১

এরশাদ বাদশা দ্যা ওয়ারিয়র বলেছেন: দারুন তো!!!!

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লেগেছে? শ্রম সার্থক মনে করছি।

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪

এরশাদ বাদশা বলেছেন: দারুন লেখেন আপনি...

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই এরশাদ বাদশা।
শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.