নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলীক মানবী

জীবনপুরের পথিক রে ভাই , কোনো দেশে সাকিন নাই , কোথাও আমার মনের খবর পেলাম না ..

অলীক মানবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আড্ডায় রূপকথা !!

২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:১৫

এই যে শুনছেন? হ্যা আপনাকেই বলছি। সিমেন্টের জঙ্গলে আমার জানালার বাইরে এখন কালো মেঘ , থাই গ্লাস গড়িয়ে পড়ছে শীতল বারিধারা ? শুনেছি আড্ডা নাকি জমে বৃষ্টিতে , তবে হবে নাকি একটা গল্প?আমি আমার গপ্পো নিয়ে রেডি, আপনার ধৈর্য্য আছে তো? তাহলে শুরু করি....


যে গল্পটি বলছি তার প্রেক্ষাপট প্রায় হাজার বছর আগের প্রাচীন ভারত। সেই ভারতের বেনারসে ছিল এক সমৃদ্ধ রাজ্য। রাজা ছিলেন প্রজাবৎসল, তেমনি ন্যায় পরায়ণ। তাই রাজ্যের প্রজারাও সুখে দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু ওই যে বলে না, আলোর পরে অন্ধকার অনিবার্য। তাই হলো বেনারসে। প্রজাবৎসল বেনারস রাজ একদিন চোখ বুজলেন। এই সু্যোগ কি আর ছাড়ে সুযোগসন্ধানী রা! শুন্য সিংহাসনে তাই জোরপূর্বক চড়ে বসলো বেনারস রাজেরই সেনাপতি পরশুরাম। প্রাণভয়ে প্রাসাদ থেকে পালালো ৩ রাজকুমার - রাজকুমার দেব, রাজকুমার শংক ও রাজকুমার আনন্দ। ঠিক করলো আর বেনারসে থাকবে না তারা। তাই দূর্ভেদ্য অরণ্য, দুর্গম পর্বত পেড়িয়ে দক্ষিণ ভারতের রাজস্থানি এক মরুপ্রান্তরে এসে থামলো তারা। নিজেদের নিরাপদ ভেবে স্বস্তিরর নি:শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই অনুভূত হল তীব্র ক্ষুধা । তাই এবার খোজ শুরু হল সরাইখানার ( হোটেল ভাবতে পারেন) । পেয়েও গেল অল্প চেষ্টাতেই। সে রাত টুকুর মত মাথা গোজার মত ঠাই হল তাদের।

রাতে খাওয়ার পর সারাটি রাত জুড়ে খুব গল্প হলো রাজকুমারদের। চলল সকাল অবধি। এক সময় বড় রাজকুমারদেব বলল " গত কয়েক প্রহরে আমাদের বয়স কয়েক বছর বেড়ে গেছে। আচ্ছা বলো তো দেখি, পৃথিবীতে সর্বোত্তম জিনিস কি? " একটু সময় নিলো মেজ রাজকুমার শংক। তারপর বললো, " ক্ষমতা। ওই বেঈমান পরশুরাম আমাদের সেনাপতি হিসেবে যথেষ্ট ক্ষমতাধর ছিল। ওই ক্ষমতার জোরেই তো আমাদের রাজ্য কেড়ে নিলো। " এক মত পোষন করতে পারলো না দেব। বললো, " কি যে বলো না হে! সর্বোত্তম হল অর্থ, বিত্ত, বৈভব। টাকাই তো ক্ষমতার মূল। ওই বিশ্বাসঘাতক টা পয়সার জোরে আমাদের সৈন্যদের হাত করেছিল। তাই তো ওরা ওকে সমর্থন করল। তুমি কি বলো আনন্দ? "
সরাইখানার মালিকের সুন্দরী যুবতী কন্যা শাখী তখন রাজকুমারদের নাস্তা সাজিয়ে রাখছে চৌকির ওপর। সকালের কোমল রোদে ওই স্নিগ্ধ রুপসুধা তখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে পান করছে আনন্দ। তাই বড় ভাইয়ের কথা ঠিক কানে গেলো না তার। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো সে।
: দাদা আমায় কিছু বললেন?
- শোনোনি? মন টা থাকে কোথায় তোমার? বলছি যে পৃথিবীতে তোমার চোখে সর্বোত্তম বস্তুটি কি?
: কি জানি, দাদা।ভেবে দেখিনি তো কখনো....
- তবে শোনো অনুজেরা। আমরা এই খাবার খেয়েই পৃথিবীর সর্বোত্তম বস্তুর সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ব। আমি যাব পূবে, শংক পশ্চিমে আর আমাদের আদরের ছোট ভাই আনন্দের জন্য রইল উত্তর অথবা দক্ষিণ। দশ বছর পর আবার তিন জন বসন্তের প্রথম দিনে মিলিত হবো এখানেই। তখনই সিদ্ধান্ত হবে, যে কার িনর্বাচিত বস্তু সেরা। "
যেমন ভাবা তেমন কাজ। খাওয়া শেষে প্রথম দেব, তারপর শংক রওয়ানা হলো। যতক্ষণ ভাইদের দেখা যায় ততক্ষণই চেয়ে রইল আনন্দ। তারপর বিদায় জানানোর জন্য খুজলো শাখী কে। কিন্তু সে আর বাইরে এলো না। ভগ্নহৃদয় রাজকুমার অত:পর সামনে পা বাড়ালো, ধীরে ধীরে।


এরপর কেটে গেল বহু বসন্ত। পাতা ঝরলো, আবার ফুল ফুটলো। দেখতে দেখতে ১০ বছর অতিক্রান্ত। ইতোমধ্যে সরাইখানাও আগের চেয়ে বিস্তৃত ও সুন্দর হয়েছে। অন্তত পূব থেকে আসা দেবের তাই বোধ হচ্ছে। সে সবার আগে এসেছে আজ। সংগে হাতি ঘোড়ায় সুসজ্জিত এক বিশাল বণিকদের বহর। সেই এদের নেতা। লক্ষ্মী সুপ্রসন্ন ছিলেন তার ওপর, এই দশ বছরে তাই তার উপর এক রকম ধনবৃষ্টি হয়েছে। তাই গায়ে দামী পোষাক পরিচ্ছদ, যদিও সেই সুঠাম স্বাস্থ্য ভেংগে গেছে। এখন তার অপেক্ষা শুধু অনুজদের। কোথায় ওরা?

এমন সময় মরুভূমিতে শোনা গেল তেজীয়ান অনেক গুলো ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ। মরুপ্রান্তর কাপিয়ে এলো মেজ রাজকুমার শংক। সংগে সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত এক বিশাল েসেনাবাহিনী। লোকে বলে, শংকের এই সেনাদল অপরাজেয়। লৌহবর্ম পরিহিত শংকের মুখেও এই গর্ব সুস্পষ্ট, যেমন তার কপালে সুস্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছায়া।
বহুদিন পর মিলিত হয়ে ভাইয়েরা পরষ্পরকে জড়িয়ে ধরলো আবেগে। কিছুক্ষণ পরই ফিরে এলো পুরোনো প্রসংগ। শংক বললো
- দেখেছো দাদা, কি এক খানা সেনাবাহিনী বানিয়েছি ক্ষমতা জোরে!
: এ আর এমন কি! আমি এখন পয়সা ছড়ালেই তোমার সেনারা মুড়িমুড়কির মত বিকোবে!
- থাক দাদা। আচ্ছা বলো তো আনন্দ টা এখনো আসছে না কেন!
: ও তো এসব ব্যাপারে কখনো ভাবেইনি। আচ্ছা আনন্দ টা যদি দারিদ্রতার কারণে সামনে আসতে না চায় তো?


এমন সময় সরাইখানা থেকে সন্দেশ হাতে বেড়িয়ে এলো আনন্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্দেশ গুজে দিলো বড় ভাই দের মুখে। তার পর বললো আজকের দিনটা বড়ই শুভ। আজ তোমাদের ফিরে পেলাম। পাশাপাশি পেলাম আমার প্রথম কন্যা সন্তানকে। আজ আমি বড়ই খুশী। অবাক হয়ে অগ্রজেরা প্রায় এক সাথেই বললো এসবেই মানে কি আনন্দ?
আনন্দ হেসে বললো দাদা তোমরা তো চললে। আমি শাখীর মায়া কাটিয়ে যেতে পারলাম না। এখানেই ঘর বাধলাম ওকে নিয়ে। সংসার করলাম। আজ দুই ছেলে আর সদ্যজাত কন্যা নিয়ে আমি খুব সুখী। হয়তো ক্ষমতা নেই, সম্পদ ও না। কিন্তু খুঁজে পেয়েছি পৃথিবীর সর্বোত্তম জিনিস টা। ভালবাসা আর পরিতৃপ্তি। এ দুটো ছাড়া তোমাদের সম্পদ, ক্ষমতা সবই অর্থহীন। "
..................................................................................
জীবনটা খুব ছোট। আসুন না ঈশ্বরের দানে পূর্ণ সন্তুষ্টি আর আপনজনদের ভালবাসায় কাটাই জীবন টা ক্ষমতা বা সম্পদের পিছু না করে? জগতটা কিন্তু তাহলে আরো অনেক সুন্দর হবে।।



( অনুবাদিত )

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো লাগলো রুপকথার গল্প । বিশেষ করে গল্পের থিম টা তো খুবই চমৎকার ।
আমরা বৃথাই সারাজীবন ধরে অলীক সম্পদের পিছনে ঘুরে বেড়াই অমূল্য ভালবাসাকে দূরে ঠেলে ।

গতবছরই বেনারস থেকে ঘুরে আসলাম :) বেনারসের নাম দেখেই ভেতরে ঢুকে দারুন গল্প টি পেলাম !

শুভেচ্ছা জানবেন ।

৩০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪

অলীক মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া , ভাল থাকবেন .. আর আপনার বেনারস ভ্রমণের কথা শুনে রীতিমত হিংসে হচ্ছে !!!

২| ২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮

মিঠু জাকীর বলেছেন: ভাল লেগেছে

৩| ২৮ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: পিচ্চি বালিকার লেখার হাত বেশ চমতকার। বেশ ভাল্লাগছে। ঝরঝরে লেখা। ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.