নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমিও বুড়ো হবে

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৫




তুমিও বুড়ো হবে

"কোটিপতি বাবার দাফনেও অনীহা সন্তানদের" - এই খবরটি মিডিয়াতে খুব আলোড়ন তুলেছে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ গরীব। তারা বৃদ্ধ বাবামাকে না দেখলে তবু কিছুটা মানা যায় ( যদিও কোন সন্তানেরই বৃদ্ধ বাবামার দেখাশোনা না করাটা অনুচিত। এটি অমার্জনীয় অপরাধ), কিন্তু ধনী বাবামার ধনী সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবামাকে তাঁদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিলে সেটি মানুষের বিবেককে নাড়া দেবারই কথা। হয়েছেও তাই। সবাই ছিঃ ছিঃ করছে, এমন কুলাঙ্গার ছেলেদেরকে গালিগালাজ করছে। আমি নিজেও দাবী করেছি এই কুলাঙ্গার তিন ছেলেকে পুলিশ ধরুক, তাদের শাস্তি হোক। আরো চেয়েছি সাংবাদিকরা তাদের ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিক যাতে তারা সামাজিকভাবে ধিকৃত হয় এবং এরকম আরো কুসন্তানেরা সতর্ক হয়। যে বৃদ্ধ বাবামা তাদের জন্ম দিয়েছেন, প্রতিপালন করেছেন, তাঁদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ না করে।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল, কেন তিন তিনজন ছেলে থাকতেও কোন একজন ছেলের কাছেই বাবার আশ্রয় হলোনা? যে বাবা রাতদিন খেটে ছেলেদের জন্য কোটি টাকার সম্পদ করেছেন, তাঁকেই কেন ছেলেরা বাড়ী থেকে বের করে দিল? বাবামা মারা গেলে সব সন্তানই কেঁদে বুক ভাসায়, শেষবার দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। যথাযথভাবে দাফন করে, মৃত বাবামার জন্য দোয়া করে, দান করে। অথচ তিন ছেলের কেউই বাবার মৃত মুখ দেখতে এলোনা, দাফনে শরীক হলোনা। কেন? কি কারণ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা জরুরী ছিল। কি এমন কারণ ছিল যার কারণে ছেলেরা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে, এমনকি তাঁকে শেষবার দেখতেও আসেনি?

খবরটা পড়ার পর আমার হুমায়ূন আহমেদের লাশ দেশে আসার পর তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তানদের কান্নাজড়িত মুখগুলো মনে পড়ে গেছিল। বাবা মাকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেছেন, এই অভিমানে দীর্ঘদিন বাবার সাথে মনোমালিন্য ছিল সন্তানদের। কিন্তু বাবা মারা যাবার পর সব ভুলে ঠিকই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সবাই। এটিই হবার কথা। কোন কারণে মনোমালিন্য হতেই পারে। কিন্তু বাবামা বা সন্তান মারা গেলে আর রাগ থাকার কথা না। কিন্তু এই কোটিপতি বাবার বেলায় তা হয়নি। বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনেও ছেলে কষ্ট পায়নি। বরং সে জরুরী মিটিং এ আছে, তাই লাশটা আন্জুমানে মফিদুলকে দিতে বলেছে।

আমার অভিজ্ঞতা থেকেে আমি অনুমান করার চেষ্টা করেছি, কেন সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবামার দেখাশোনা করেনা, অবহেলা করে বা বাড়ী থেকে বের করে দেয়?

১। বাবামা কখনও স্বেচ্ছায়, কখনও ছেলেমেয়ের চাপে তাদের সম্পদ ছেলেমেয়ের নামে লিখে দেন। সম্পদ পাবার পর কুলাঙ্গার, অমানুষ সন্তানদের কাছে ঐ বাবামার আর কদর থাকেনা। ফলে তাঁরা নির্যাতিত হন।

২। দরিদ্র সন্তানেরা বাবামার দেখাশোনার ব্যয়ভার নিতে চায়না বলে।

৩। বাবামা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার নেবার সামর্থ্য না থাকার কারণে।

৪। একাধিক সন্তান থাকলে একজন আরেকজনের উপর বাবামার দায় চাপাতে চায়। ফলে বাবামা অবহেলিত, নির্যাতিত হন।

৫। ছেলেমেয়েদের মধ্য সম্পদ বণ্টনে বাবামা বৈষম্য করলে অনেক সন্তান রাগ করে বাবামার দায়িত্বে অবহেলা করে।

৬। বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবামার দেখাশোনা করা কষ্টকর বলে।

৭। ছেলের বউরা বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর দেখাশোনা করতে চায়না বলে।

আমির খানের একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক অনুষ্ঠান "সত্যমেব জয়তে" - তে দেখেছিলাম, ভারতের কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বৃদ্ধ, অসুস্থ বাবামাকে ( যারা আর সুস্থ হবেন না) তাদের সন্তানেরা বিষের ইনজেকশন দিয়ে খুন করছে। অনেক সন্তান বাবামার অর্থ, সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

কোটিপতি সেই মৃত বাবার বেলায়ও ছেলেরা তাঁর সম্পদ লিখে নিয়ে তাঁকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে। তাই সব বাবামার উচিত, কোন অবস্থাতেই তাঁর সম্পদ ছেলেমেয়েদের নামে লিখে না দেয়া। কারণ আপনি জানেন না সম্পদ না থাকলে আপনার সন্তানেরা আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করবে। তাছাড়া আপনার বেঁচে থাকার জন্য আপনার অর্জিত সম্পদই সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ টাকা ছাড়া আপনি আপনার কোন প্রয়োজনই মেটাতে পারবেন না। আর আপনার মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী আপনার সম্পদ আপনার সন্তানদের এমনিতেই পাওয়ার কথা।

তবে যাঁদের ছেলে সন্তান নেই, তাঁরা ফৌতি হবার ভয়ে মৃত্যুর আগেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তাঁদের সম্পদ মেয়েদের নামে লিখে দেন। "মেয়ের বাবামা হওয়া কি অপরাধ?" - এই শিরোনামে একটি লেখাতে আমি এই অসুবিধার কথা বিস্তারিত লিখেছিলাম। আমার লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল, সমস্যাটির সমাধানের জন্য বর্তমান উত্তরাধিকার আইনের (শরীয়া মেনেই) কিছুটা সংস্কার করা যাতে জীবনসত্ত্ব দান বা অসিয়ত ( ইসলামে অসিয়ত মানা ফরজ। কিন্তু আমাদের আইনে অসিয়তের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই) মোতাবেক মেয়েদের বাবামারা তাঁদের সম্পদ তাঁদের মেয়েদের নামে লিখে দিতে পারেন। এতে -

১। বেঁচে থাকা অবস্থায় বাবামা তাঁদের কষ্টার্জিত সম্পদের উপর অধিকার হারাবেন না ( মেয়েরা সম্পদ পেয়ে তাঁদেরকে অবহেলা করতে বা বাড়ী থেকে বের করে দিতে পারবেনা)। এবং

২। বাবামার মৃত্যুর পর তাঁদের সম্পদ ফৌতি হবেনা। মেয়েরা তাঁদের
বাবামার সম্পদের উপর অধিকার পাবে বা অন্য কেউ এসে তাদের সম্পদে ভাগ বসাতে পারবেনা।

আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বৃদ্ধ বাবামার সাথে দূর্ব্যবহার নতুন কিছু নয়। প্রায়ই শোনা যায়, দেখা যায়, ছেলের বৌ বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে নির্যাতন করছে, মারছে, ছেলেরা বৃদ্ধ বাবামাকে ভাত দিচ্ছে না, বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে, আলাদা হচ্ছে, সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে, কাজ করতে বা ভিক্ষা করতে বাধ্য করছে, মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মার খাচ্ছেন বাবামা, কেউ কেউ খুন হচ্ছেন, ছেলে ও ছেলের বৌ বৃদ্ধ মাকে গোয়ালঘরে ফেলে রাখছে। সেখানে শেয়াল মায়ের পায়ে কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে।

ছেলের বৌরা শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে বা করে, (তার আর্থ-সামাজিক কারণ আছে), কিন্তু ছেলেরা কেন আপন বাবামাকে নির্যাতন করে বা তাঁদের দেখাশোনা করেনা???

আমাদের দেশে সবচেয়ে বৈরী সম্পর্ক হয় শ্বাশুড়ী-বৌয়ের। তার কারণও আছে। মা সীমাহীন কষ্ট করে তিল তিল করে ছেলেকে মানুষ করেন। ছেলেকে অসম্ভব ভাল বাসেন। ছেলের কাছে প্রত্যাশাও বেশী। কারণ ধর্মমতে বাবা-মার দেখাশোনার দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়ের হলেও ছেলেদের দায় বেশী বলে সমাজ মনে করে। বউরা চায়না ছেলে সে দায়িত্ব পালন করুক। করতে গেলে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা কম পড়বে বা সঞ্চয় কম হবে। তাই শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের পিছনে টাকা খরচ করা বৌরা পছন্দ করেনা, অপচয় মনে করে। তাই বৌরা সংসারের কর্তৃত্ব চায়। অন্যদিকে শ্বাশুড়ী কষ্ট করে একটু একটু করে নিজের সংসার সাজান, ছেলেমেয়েদের মানুষ করেন। তাই শ্বাশুড়ী ও সংসারের কর্তৃত্ব বউদের হাতে ছাড়তে চান না। ফলে দু'জনের মধ্যে সংঘাত বাধে, সম্পর্ক খারাপ হয়।

আবার সারাজীবন মা ছেলের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বিপত্তি ঘটে তখন, যখন বিয়ের পরে ছেলের কাছে স্ত্রী মায়ের চেয়ে বেশী প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজনে। তাছাড়া বেশীরভাগ স্ত্রী বিয়ের পর স্বামীকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে চায়, স্বামীকে তার আত্মীয়দের কাছ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে প্রাইভেসী চাওয়ার কারণে। ফলে শ্বাশুড়ী ও অন্য আত্মীয়দের সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ হয়।

বউরা মনে করে স্বামীর কাছে যেহেতু সে অত্যাবশ্যক, তাই স্বামীর আর কারো প্রয়োজন নেই। স্বামী ও স্বামীর আয় হলেই যেহেতু তার সব প্রয়োজন মিটে যায়, তাই বৌরা স্বামীর অন্য রিলেটিভদের 'আগাছা' মনে করে। দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

বাবামার দূর্গতি হয় তখন, যখন ছেলেরা বাবামাকে ফেলে বউদেরকে বেশী প্রাধান্য দেয়। এসব কুপুত্ররা বাবামার সাথে অমানবিক আচরণ করে। তার দেখাদেখি বউরাও করে।

মানুষের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করে। বউকে শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ( বিশেষ করে শ্বাশুড়ী) নানা কারণে নানাভাবে সারাজীবন নির্যাতন করে। তাই বউরাও বৃদ্ধ বয়সে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে নির্যাতন করে বা তাদের সাথে ভাল আচরণ করেনা।

আমাদের দেশে বিছানায় পড়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষগুলোর দেখাশোনা করা কষ্টকর। পালা করে ছেলেমেয়ে বা মূলত ছেলের বৌরা তাঁদের দেখাশোনা করে। আমার এক পরিচিত আপা (যার বাবা দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থেকে থেকে পিঠে ঘা হয়ে গেছিল) কে বলতে শুনেছি, "এত কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আব্বার মরে যাওয়া ভাল।" এসব মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো কষ্টকর। ( বিদেশে ট্রলিতে করে খুব সহজে এখান থেকে সেখানে নেয়া যায়। সারাক্ষণ শুইয়ে না রেখে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখা ও হয়)।

অনেকে এসব মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করে। বিশেষ করে যাঁরা বিছানায় টয়লেট করেন, তাঁদের সাথে। এঁদের প্রস্রাব-পায়খানা পরিস্কার করা কষ্টকর। দূর্গন্ধের কারণে এঁদের কাছে কেউ যেতে বা থাকতে চায়না। বৃদ্ধ মানুষদের বুদ্ধি কমে যাবার কারণে অনেকে এমন কিছু আচরণ করেন যা বাড়ীর লোকজন পছন্দ করেনা। যেমন, এক বাবা টয়লেট থেকে এসে হাত না ধুয়েই খেতে বসেন, নোংরা, কাদা, ধুলা মাখা জামাকাপড় পড়েই বিছানায় বসেন। একজন সারাক্ষণ বিশ্রী ভাষায় আপন মনে গালাগালি করেন। একজন সবকিছু ভুলে যান। ভাত খেয়ে একটু পরেই বলেন, বউ খেতে দেয়নি। গোসল করানো হলেও লোকের কাছে অভিযোগ করেন, বউমা তিনদিন ধরে গোসল করায়নি। একজন সারাক্ষণ সারাবাড়ি কফ, থুথু ফেলেন। ইত্যাদি।

বৌদের সাথে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর রক্তের টান না থাকা, বৈরী সম্পর্ক থাকা বা আন্তরিকতা না থাকার কারণে বউরা শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে থাকতে বা তাদের দেখাশোনা করতে চায়না। এর হাজার হাজার ব্যতিক্রম ও আছে। আমি এক ছেলে বউয়ের কথা জানি। তারা ফজরের নামাজ পড়েই তাড়াতাড়ি শাশুড়ীর বিছানার পেশাব পায়খানা ও শাশুড়ীকে পরিস্কার করে তাঁকে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একদিনের জন্যও তাঁরা বৃদ্ধার অযত্ন করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে গিয়ে দেখলাম, তাঁকে ডাইপার পরিয়ে রাখা হয়। কারণ তিনি পেশাব পায়খানার কথা বলতে পারেন না। ফলে বাড়ী, বিছানা নোংরা, দূর্গন্ধময় করে ফেলেন। ডাইপার থাকলে তিনি নিজেও ভাল থাকেন। তাঁকে সারারাত ভেজা বিছানায় থাকতে হয়না।

এক বউমাকে দেখলাম শ্বাশুড়ীর জন্য আলাদা ওয়াশিং মেশিন কিনে দিয়েছে। শ্বাশুড়ীর যাবতীয় নোংরা কাপড় মেশিনেই ধোয়া ও শুকানো হয়ে যাচ্ছে। কাজের মেয়েরা ঘেন্না না করে সেজন্য হাতের গ্লাভস ও দূর্গন্ধ না লাগে সেজন্য নাকের মাস্ক কিনে দিয়েছেন।

বিদেশে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনার জন্য সরকারী হোম আছে। সেখানে বয়স্কদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, দেখাশোনার জন্য লোক আছে। তাঁদের পরিস্কার রাখার নানা ব্যবস্থা ও আছে। ফলে অসুস্থ বা বিছানাগত হলেও ধনী বা গরীব, কোন মানুষদেরই দূর্ভোগ পোহাতে হয়না। চিকিৎসা সুবিধা, কাজের নিশ্চয়তা ও পেনশনের ব্যবস্থা আছে। ফলে কোন মানুষকেই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েদের উপর নির্ভর করতে হয়না। তাই ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধ বয়সে না দেখলেও কোন ক্ষতি নেই।

এর বিপরীতে আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলোতে অবসর নিতে চাইলেও সংসারের চাকা সচল রাখার তাগিদ বয়স্ক মানুষগুলোকে কাজ করতে বাধ্য করে। এই মানুষগুলোর অবস্থা ভয়াবহ।

দরিদ্র পরিবারের অসুস্থতা বা বয়সের কারণে বিছানাগত বয়স্ক মানুষগুলোর দূর্গতি চোখে দেখার মত না। তাঁদের পেশাব, পায়খানা, বমি, কফ, ঘা পরিস্কার করার কষ্টটা ও কম নয়। একা একজন মানুষের পক্ষে এঁদেরকে নড়াচড়া করানোও সহজ নয়। দরিদ্র পরিবারগুলোতে রোগীর খাবার ও চিকিৎসা খরচ যোগানোই যেখানে অসাধ্য, সেখানে অন্য কোন সুবিধা আশা করা বাতুলতা।

শেষকথা : আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা যাতে কোন অসুবিধায় না পড়ে, সেজন্য রাতদিন পরিশ্রম করে সম্পদ করি, তাদের লেখাপড়া শেখাই। কোটিপতি বাবার তিন ছেলেও নিশ্চয় শিক্ষিত। কিন্তু বাবা তাদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারেননি। দিলে এমন হবার কথা নয়। সন্তানের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ার চেয়েও বেশী জরুরী তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, তাদের সাথে সময় কাটানো, একসাথে বেড়াতে যাওয়া, একসাথে খাওয়া, সন্তানের সুখ-দুখে, অসুখে তাদের পাশে থাকা, সন্তানের সাথে গল্প করা, তার বন্ধু হওয়া। তাহলে তার সাথে আপনার আত্মার টান তৈরী হবে। সে আপনাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারবেনা।

ঐ বাবা তাঁর সন্তানদের সাথে এসব করেছেন কিনা এবং কি কারণে ছেলেরা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে - এদুটো প্রশ্নের জবাব কোন সাংবাদিক বন্ধু বের করতে পারলে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের অনেক উপকার হতো। তেমন কেউ কি আছেন?

বাবামা তাঁদের বাবামা, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের সাথে যেমন আচরণ করেন, তাঁদের সন্তানরাও তাঁদের দেখেই নিজের বাবামাদের সাথেও অবধারিতভাবে একই আচরণ করবে। তাই আমরা কি করছি বা আমাদের দেখে আমাদের সন্তানরা কি শিখছে সেটা অনুধাবন করার সময় এসেছে। কেননা ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতেই হবে, একদিন আমরাও বুড়োবুড়ি হব।

(এই লেখাও বড় হয়ে গেল! মেয়েরা কম কথা বলতে পারেনা। আমিও মেয়ে!!!!)

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


"কিন্তু ধনী বাবামার ধনী সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবামাকে তাঁদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিলে সেটি মানুষের বিবেককে নাড়া দেবারই কথা। "

-বাংলাদেশের ধনীদের মাঝে ৯০% অসৎ উপায়ে সম্পদের মালিক হয়েছে; পরিবারের লোকজন অসততার মাঝে বড় হয়েছে, মুল্যবোধ গড়ে উঠেনি।

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩২

মোঃ মঈনুদ্দিন বলেছেন: বাংলাদেশের ধনীদের মাঝে ৯০% অসৎ উপায়ে সম্পদের মালিক হয়েছে; পরিবারের লোকজন অসততার মাঝে বড় হয়েছে, মুল্যবোধ গড়ে উঠেনি।

আমিও জনাব চাঁদ্গাজি সাহেবের সাথে এই বক্তব্যের ব্যাপারে একমত।
সত্যিই মৌলিক-মানবিক মূল্যবোধ এবং সদাচার, শিষ্টাচার আর স্নেহ-মায়া মমতায় বেড়ে উঠা শিশু বাবা-মাকে এরকম অমর্যাদা করবে না।।

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমিও তাই মনে করি। সমস্যা বাবামার প্রতিপালনেই। ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
আপনি সঠিক দিকটি লেখায় তুলে এনেছেন সে জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমরা নৈতিকতা ভুলে যাচ্ছি। সামাজিক দ্বায়িত্ব ভুলে সবাই ভোগ বিলাসে মত্ত। এর কারণ কি?


একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের উপকারে আসবে।

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: এর কারণ ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক অবস্থা ও সত্যিকারের আইনের শাসনের অভাব। ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: যারা অসৎভাবে অর্থ উপার্জন করে তাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায় ।

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: এটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। ধন্যবাদ।

৫| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০৮

কানিজ রিনা বলেছেন: এমনকি অন্যায় থাকতে পারে তিন ছেলের
একটাও বাবার দাফন করতে অপারকতা
দেখাল। আমারও অনেক কৌতহল ছেলেরা
মুখ খুললে মৃত ব্যক্তি কলঙ্কিত হবে। তার
থেকে এটা নিয়ে না ঘাটাই ভাল।
এই বাবাটা জান্নাত বাসি হোক এই কামনা।

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:২০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: নাও হতে পারে। হয়তো ছেলেদেরই দোষ। আমরা তো জানিনা। তবে জানা দরকার ছিল। তাতে অনেকে উপকৃত হতো। ধন্যবাদ।

৬| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


আইনের শাসন দিয়ে কি নৈতিকতারর বিষয় অবহেলায় শাস্তিদান করা যায়? যদি না যায় তবে এই নৈতিকতা সমাজে কিভাবে গঠন করা যেতে পারে?

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ছোটবেলা থেকে শিশুদের কঠোরভাবে অন্যায় না করা বা অন্যায় সহ্য না করা শেখাতে হবে। পরিবারের লোকেদের সৎ হতে হবে। কারণ শিশুরা তাদেরই অনুসরণ করে। সমাজে, রাষ্ট্রেও ন্যায়বিচার থাকতে হবে। তাহলে সবাই নীতি, নৈতিকতা শিখবে। ধন্যবাদ।

৭| ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:



পারিবারিক ভাবেই কি বয়স্কদদের দেখাশোনা সম্ভব নয়, সরকারী হোমের ( সোজা কথায় বৃদ্ধাশ্রম) দরকার বাংলাদেশে কতটুকু জরুরী?

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমি বৃদ্ধাশ্রমের বিপক্ষে। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের উচিত বাবামাকে বাড়ীতেই রেখে সেবা করা। কারণ সব মানুষ নিজের পরিচিত জায়গা ও আপনজনদের কাছেই সবচেয়ে ভাল থাকেন। আর জীবনের শেষ সময়টাতে তাঁরা আপনজনকে মিস করেন সবচেয়ে বেশী। ধন্যবাদ।

৮| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: মাঝে মাঝে এসব ঘটনা আমাদের সচেতন হতে সাহায্য করে। আর এ থেকে পুরো পরিবারেরও শেখার আছে। যেমন - পিতাকে তার সন্তানদের মানুষ করতে হবে , তেমন সন্তানকেও মানুষ হতে হবে...

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:১৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

৯| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৬

আহা রুবন বলেছেন: আপনার লেখাটি অনেক কিছু ভাবনার উদ্রেক করে। আমার ধারণা ইদানীং যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে ছোট যাওয়ায় সবাই যেন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। যৌথ পরিবারের মূল শিক্ষাটাই ছিল অন্যের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করা, ভাগাভাগি করে নেয়া, মানিয়ে নেয়া।

একজনের কথা জানি, যে মহিলা বিপত্নিক শ্বশুরকে আলু দিয়ে ডিমের তরকারি রান্না করে দিয়েছিল, কিন্তু ডিমের খোসাসহ! সে আবার প্রইমারি স্কুলের শিক্ষিকা!! কী বলবেন এদের?! দেখতে মানুষের মত হলেই আমাদের ভেতরের অনেকেই মানুষ হতে পারিনি।

মনে দাগ কাটার মত লেখা। আপাকে অনেক ধন্যবাদ।

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:২৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক। কিছু অসুবিধা হলেও যৌথ পরিবার ব্যবস্থাই ভাল ছিল। বাস্তবতার কারণে তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। মানুষ বেশী ব্যস্ত থাকার কারণে সন্তানদের সাথে তাদের অন্তরঙ্গতা কমছে। ফলে নানা সমস্যা হচ্ছে। জ্বি, এমন অনেক অমানুষ নারী, পুরুষ আছে

একজন প্রাক্তন ভিসি আজ আমার এ লেখাটার প্রশংসা করেছেন, শেয়ার করেছেন দেখে খুব আনন্দ হচ্ছিল। আপনার মন্তব্য পড়ে আরো ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

১০| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৫১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: জীবনটা তো দেয়ানেয়া । তা প্রেম হোক, শ্রদ্ধা হোক, অধিকার হোক, কিংবা কর্তব্য হোক ।

কিন্তু অকৃতজ্ঞরা শুধু নেয়, কিছু দেয় না !

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৪

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

১১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১০

প্রোলার্ড বলেছেন: ৭। ছেলের বউরা বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর দেখাশোনা করতে চায়না বলে।

০ এটাই মূল কারণ । বৃদ্ধ বাবা মায়ের ওল্ড হোমে গমনের কারণও এটা।

যেসব বাবা মায়েরা সন্তানদের আয়া বুয়ার কাছে মানুষ করায় , কাজ আর সমাজসেবা করে বেড়ায় - বৃদ্ধাবস্থায় তাদের তো এরকম ফলাফলই প্রাপ্য।

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

১২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয় । বিয়ে করা বউটিও যদি মানুষ হয় তবে তো কথাই নেই।

খারাপ অর্জন মানুষকে বিপথগামী করবে। সেটিই স্বাভাবিক। সবাই সৎ হলে কোন সমস্যা থাকবে না।

সুন্দর পোস্ট ।

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৩৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিক। ধন্যবাদ।

১৩| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৫৭

রক বেনন বলেছেন: তখনই বুঝা যায় যখন মানুষটি চোখের সামনে আর থাকেনা।

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:০৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: সবসময় বোঝা যায়না। গেলে তিন ছেলের মৃত বাবাকে দেখতে আসার কথা। ধন্যবাদ।

১৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

কাউয়ার জাত বলেছেন: একদিন ছোট ভাইকে মোবাইল ব্যবহারের জন্য বকা দিলাম। সেও উল্টা গরম সুরে কথা বলল।
আমি কষ্ট পেলাম এবং বললাম, এতটুকুর জন্য তোমার বড়ভাইয়ের সাথে ক্ষিপ্ত হওয়াটা উচিত হয়নি।

সেদিন আমার একটা অনুভূতি হল। আমার ভাইয়ের প্রতি আমার কোন অবদান-অনুগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও বয়সের কারণে আমি তার নিকট থেকে সম্মান দাবী করছি। সে সামান্য জোরে কথা বলাতেই ভীষণ মন খারাপ করছি। এক্ষেত্রে কে ভুল কে সঠিক সেটাও বিবেচনায় আনতে চাচ্ছিনা।

তাহলে আমাদের জীবন গড়তে গিয়ে যাদের জীবন ক্ষয় হলে গেল তাদের সাথে খারাপ আচরণ করলে তারা কতখানি কষ্ট পান। আর এটা কত বড় ঘৃণ্য একটি অপরাধ।

এজন্যই রাসূল (সা) বলেছেন, প্রত্যেক অপরাধের শাস্তি আল্লাহ কেয়ামাত পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। কিন্তু মা-বাবার সাথে অসদাচরণকারীকে দুনিয়াতেই শায়েস্তা করেন।

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তাই যেন হয়। এই তিন কুসন্তানের শাস্তি হোক দুনিয়াতেই। বাবামার কদর তারাই বোঝে যাদের বাবামা নেই। ওরা দূর্ভাগা। ওরা বুঝলো না ওরা কি সম্পদ হারালো! ধন্যবাদ।

১৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: সব কিছূ যদি ম্যাটারিয়ালিস্টিক কনস্পেট থেকে দেখা যায় তাহলে বলতে হবে বৃদ্ধ/কোটিপতি/পিতা-মাতার দাফন/যত্ন নেয়া প্রফিটেবল বা লজিক্যাল নয়।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তা কি দেখা উচিত?

১৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১১

আবু মুছা আল আজাদ বলেছেন: পূর্বের মন্তব্য------------
অবশ্যই উচিৎ/কাম্য/প্রত্যাশীত নয় এমন কি কোন মানবীয়/সাংসদীয় আইন করে বলে যে বৃদ্ধদের যত্ন বা দাফন করা যাবে না তবু তা কাম্য//উচিত নয়।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.