নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহজ কথার জটিল অর্থ!!!!

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯



সহজ কথার জটিল অর্থ!!!
এক বয়স্ক হুজুর, গম্ভীর প্রভোস্ট তাঁর এক হাউস টিউটর শিক্ষককে নিয়ে ছাত্রদের রুম বরাদ্দের ভাইভা নিচ্ছেন। দুই ছাত্র বলল, "স্যার, আমদের সিট কি হবে?" প্রভোস্ট বললেন, "হবে।" তখন ছাত্র বলল, "তাহলে স্যার আমাদের দু'জনকে একই রুমে দেন। আমরা দীর্ঘদিন একসাথে সহবাস (বসবাস) করতেছি।" আহাম্মক কারে কয়???!!!!!!

জুবেরী ভবন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থাকার ডর্মেটরী। এখানেই শিক্ষকদের ক্লাব ও বাইরে থেকে আসা অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি রুমগুলোতে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষকরা থাকেন। এক রুমের বাসা। রুমের পিছনের বারান্দায় রান্নার ব্যবস্থা। মূলত ব্যাচেলর শিক্ষকদের থাকার জন্য এটি বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে বিবাহিত শিক্ষকরাও কেউ কেউ এখানে থাকেন। জায়গা ও রুম কম হবার কারণে শিক্ষকরা সাধারণত বিয়ে করার পর রুম ছেড়ে দিয়ে বড় বাসায় ওঠেন। আমার বিয়ের পর আমিও অল্প কিছুদিন জুবেরীতে ছিলাম। তখন আশপাশের সব ব্যাচেলর শিক্ষকরা, বিশেষ করে আমার বরের বন্ধুরা আসতো কফি খেতে, গল্প করতে, টিভি দেখতে। কেউ এসে বলতো, "ভাবী, বেশী করে মাংসের তরকারী দেন। নান রুটি কিনে এনেছি। মাংস দিয়ে খাব।" আমি বক্সে ভরে মাংস দিতাম। কেউ বলতো, "এক্সকারশন থেকে ফিরছি। রাত হবে। এসে খাবার পবোনা। আপনার রুমে খাবো। রান্না করে রাখেন।" কেউ রুমে এসে বলতো, "আম কাটেন। খাই।" ছুটির দিনে বা বৃষ্টির দিনে কেউ কেউ বলতো, "সব্জি খিচুড়ি আর ভূনা গরুর মাংস করেন। দুপুরে খেতে আসবো।" আমি করতাম। ওরা কাজের বুয়ার হাতের রান্না পছন্দ করতো না, বাধ্য হয়ে খেত।

ভর্তি পরীক্ষার ডিউটি দিচ্ছি। তাদের বেশ ক'জনের সাথে একসাথে দেখা। নতুন জয়েন করা এক শিক্ষকের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবার সময় আমার সেসব প্রতিবেশীদের একজন বলল, "ইনি আমাদের আলপনা ভাবী। জুবেরীতে আমরা একসাথে থাকতাম।" ৮/১০ জন হাহা করে হেসে উঠলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একজন বলল, "ভাই, এইবার বুঝলাম, কেন আপনি এত ভাবী ভাবী করেন।" ওরা চলে যাবার পর আমি প্রথম জনকে ধমক দিয়ে বললাম, "তুমি মানসম্মান সব খাবা। ওরা কি ভাবলো? এই কথা আমার বর শুনলে কি ভাববে বুঝতে পারছ?" সে থতমত খেয়ে বলল, "ভাবী, অতকিছু ভেবে বলি নাই। এমনি সহজভাবে বলেছি।"

আমার পাশের রুমের এক ব্যাচেলরের সঙ্গে বোনের বিয়ের কথা হচ্ছে আরেক শিক্ষকের। সে পাত্র সম্পর্কে আমার বরের কাছে তথ্য নিচ্ছে। আমার বর বলল, "ও ভাল ছেলে। আলপনার বন্ধু। আলপনার পাশেই থাকে!" আমি আবার হতভম্ব!!! আমার পাশে থাকে??!! আমার পাশের রুমে থাকে!


জুবেরীতে এক স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করছে। বেশ উচ্চস্বরে। দীর্ঘ সময় ধরে। গভীর রাত পর্যন্ত। পরের দিন তাদের রুমে তালা দেয়া দেখে আমি সে রুমের পাশের রুমের এক ব্যাচেলর শিক্ষককে বললাম, "আজ রাতে তোমার ভাল ঘুম হবে।" সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, "কেন ভাবী?" আমি বললাম, "ঐ দ্যাখ, তোমার পাশের রুমে তালা!" সে হাহা করে হেসে উঠলো। আসলেই ঘুম ভাল হবে। কারণ ঝগড়া করে ঘুম নষ্ট করার লোক নাই।

এক ব্যাচেলরের রুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় আমি প্রতিবার দেখি, সারাদিন তার মশারী ঝুলছে। তোলে না। আমার বিরক্ত লাগে। বললেও শোনেনা। তাই একদিন আমি বললাম, "তোমার জন্য পাত্রী দেখছি। তোমার খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করা দরকার।" সে চমকে উঠে বলল, "কেন ভাবী? এত তাড়া কিসের?" আমি বললাম, "নাহলে বিয়ে না করা পর্যন্ত তোমার ঘরের মশারী ঝুলতে থাকবে।" সে বলল, "বেশ। কাল থেকে মশারী তুলবো।"

জুবেরীতে অতিথিদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমগুলোর সামনে ৫/৬ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়েকে একা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশ দিয়ে যাবার সময় এক শিক্ষক প্রশ্ন করলেন, "বাবু তোমার নাম কি?" মেয়েটি গম্ভীর মুখে জবাব দিল, "হুমা।" শিক্ষক আবার প্রশ্ন করলেন, "তোমার ভাল নাম (আকীকার নাম) কি?" এবার মেয়েটি বলল, "হুমা আমার ভাল নাম। পচা নাম নয়। হুমা রহমান। আমার আরেকটি ডাক নাম আছে, পাখি। বাবা আমাকে ঐ নামে ডাকে। ওটাও ভাল নাম, পচা নাম নয়।"

মর‍্যাল অফ দা স্টোরি : মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হল ভাষা বা কথা। কথা বলতে সবাই পারে। তবে সঠিক জায়গায় সঠিক কথা বলতে সবাই পারেনা। আবার কথার অর্থ বুঝে কথাও সবাই বলেনা। অর্থাৎ বলার আগে ভাবেনা, কথাটা যারা শুনছে, তারা কথাটার কি অর্থ করবে বা কথাটাকে কিভাবে নেবে। তাই কোন কথা বলার আগে ভাবুন যে, যা বলছেন, যেভাবে বলছেন, যাকে বলছেন, সে বা তিনি সে কথাটাকে ঠিকভাবে নেবেন কিনা।

ধন্যবাদ বন্ধুরা। খুব খুব ভাল থাকুন।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩০

বনসাই বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: সহজ কথায় অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আপনার লেখাটিও তাই।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ঠিক। গতকাল সেই বিড়ম্বনায় পড়ার পর লেখাটি লিখেছি। ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। পরে মজা পেলাম। আমিও এরকম একটি অস্বস্তিতে পরেছিলাম।





ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তাই? খুব ব্যক্তিগত না হলে বলে ফেলুন। আমরাও শুনি।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯

করুণাধারা বলেছেন: এই গল্পের মরাল খুব ভাল উদাহরণ সহ বুঝিয়েছেন।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তাই? খুব অস্বস্তি নিয়ে লিখেছি। অন্যকে নিয়ে মজা করা সহজ। নিজেকে নিয়ে নয়। যাহোক, ধন্যবাদ।

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আপনি কি লিজা আপার (সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট ) কলিগ নাকি ? মুশফিক ভাইয়ের ওয়াইফের নামটাতো ভুলে গেলাম সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের | কবে থাকতেন জুবেরী হাউসে ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমি লিজা আপার ছাত্রী। আর মুশফিক স্যারের ওয়াইফের নাম কেয়া। ওনারা সবাই আমাকে খুব ভাল চেনেন। আমি জয়েন করেছি আইইআরে। তবে আমি এখানে মনোবিজ্ঞানই পড়াই। জুবেরীতে থাকতাম ২০০১ -এ। ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২১

মলাসইলমুইনা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জানবার জন্য | কেয়া অপার নামটা কেমন করে ভুলে গেলাম আশ্চর্য ! লিজা আপাকি এখনো গান গান? একসময় খুব ভালো গান গাইতেন | কিছু মনে করবেন না আইইআর এলাবোরেশনটা কি ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আমি অনেকদিন ওনার গান শুনিনা। তাই বলতে পারব না। তবে গান ছাড়ার কথা না। আইআর - ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন এন্ড রিসার্চ। নতুন বিভাগ। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। আর কিছু?

৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫

মলাসইলমুইনা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ | আমি রাজশাহী ইউনিভার্সি ছেড়ে আসি নিরানব্বই -এর ডিসেম্বরে | তখনতো আপনাদের ডিপার্টমেন্টটা ছিল না তাই বুঝতে পারিনি | আপনাদের ডিপার্টমেন্টটা কোন ফ্যাকাল্টির আন্ডারে? কোন বিন্ডিংয়ে আপনাদের ডিপার্টমেন্ট?

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: এটা কোন ফ্যাকাল্টির আন্ডারে না। এটা একটা আলাদা ইন্সটিটিউট। আইবিএসের মত। আমাদের ডিপার্টমেন্ট সিরাজী ভবনে ( মুন্নুজান হলের গেটের সামনে নতুন বিল্ডিং)।

৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯

মলাসইলমুইনা বলেছেন: ওকে, থ্যাংকস এ লট | নটে গাছটি মুড়োলো - আমার আর প্রশ্ন নেই | আপনার কাছে এতো কিছু জানতে চাইলাম আর আসল কথাটাই বলা হয়নি | ছোট ছোট কথা, ভাষার ব্যবহার আমাদের যে কত বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে ! সেগুলো নিয়ে আপনার লেখাটা খুবই ভালো লেগেছে | আবারো ধন্যবাদ | ভালো থাকুন |

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনিও ভাল থাকুন। রাজশাহীতে বেড়াতে আসার দাওয়াত রইলো। আবার দেখে যাবেন আপনার রূপবতী সবুজ মতিহারকে। সেইসাথে আমাদেরকেও।

৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:১৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ডাবল মিনিং আসলেই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে। আমরা প্রায়শই এরকম করে থাকি। একবার বিদেশে এক দেশী কলিগকে বলেছিলাম একটা রুম নাও, একসাথে থাকবো...

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৩

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তারপর???

১০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: তারপর আমিই আবার হেসে বললাম, আলাদা খাটে! সেও হাসলো...

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৯

আলপনা তালুকদার বলেছেন: যাক!! সামলে নিয়েছেন!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.