নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমাপ্রেমী । ট্র্যাভেলার । বইপোকা । রন্ধনশিল্পী

আলভী রহমান শোভন

খাই, দাই, ব্লগ লিখি ।

আলভী রহমান শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কক্সবাজার ডায়েরি – ০৩ : রামুর রাংকুট বনাশ্রম এবং রামকুট তীর্থধাম

২৭ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:২২





কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে অবস্থিত রাংকুট বনাশ্রম। এই বৌদ্ধ তীর্থ ভূমি খৃষ্ট পূর্ব ৫ম হতে খৃস্টীয় ষোড়স শতাব্দীর প্রাচীন বাংলার সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক। রাং অর্থ গৌতম বুদ্ধের বক্ষাস্থি এবং কুট অর্থ পর্বত; অর্থাৎ এটি বুদ্ধের বক্ষাস্থির পর্বত।



বুদ্ধত্ব লাভের ৬ বছর পর খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতক বুদ্ধ তাঁর সেবক আনন্দকে নিয়ে আরাকানের রাজা মহাচন্দ সুরিয়ার আমন্ত্রণে বার্মা যাওয়ার পথে এই পর্বতে উপবেশন করার সময় বলেন- “বুদ্ধ ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধ হয়ে ৮০ বছর পরমায়ু লাভ করে পরিনির্বাপিত হবে। তার মধ্যে ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করবে তা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ৮৪ হাজার ধর্ম বানীতে রুপান্তরিত হবে। যার নাম হবে ত্রিপিটক (সূত্র পিটক ২১ হাজার, বিনয় পিটক ২১ হাজার আর অভিধর্ম পিটক ৪২ হাজার; মোট ৮৪ হাজার)। ধর্ম প্রচারের পর বুদ্ধ কুশিনারাতেই পরিনির্বাপিত হবেন এবং এসময় সারিপুত্র ও মৌদগলায়ন এই অগ্রশ্রাবকদ্বয় জীবিত থাকবে না। মহাকাশ্যপ স্থবির বুদ্ধের দাহকার্য সম্পাদন করার পর বুদ্ধের শরীরের সমস্ত ধাতু(অস্থি) নিজে একটি গুহার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবে। খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৪ এ পরিনির্বাণের ২৩৯ বছর পরর এই ধরাধামে এমন একজন মহাপুরুষ জন্ম নিবে যিনি বুদ্ধের প্রচারিত ৮৪ হাজার ধর্মবাণীকে সারা বিশ্বে প্রচারের জন্য ৯৬ কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে ৮৪ হাজারটি ধাতু চৈত্য নির্মাণ করে প্রতিটি চৈত্যে তার শরীরের ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র অংশ প্রতিষ্ঠা করবে। সেই ৮৪ হাজার ধাতুচৈত্যের একটি চৈত্য এই পশ্চিম সমুদ্রের পূর্বতীরে রম্যবতী নগরের পর্বত শীর্ষে স্থাপিত হবে। সেই চৈত্যে তার বক্ষাস্থি প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন ইহার নাম হবে ‘রাংকুট’।” এই বলে বুদ্ধ বার্মায় চলে গিয়েছিলেন।



বুদ্ধের পরিনির্বাণের ২৩৯ বছর পর পৃথিবীতে সেই মহাপুরুষ সম্রাট অশোক জন্ম নিলেন। তিনি মৌদগলিপুত্ততিষ্য স্থবিরের ধর্মের সারবাণী শুনে বুদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন। সম্রাট অশোক বুদ্ধের বাণীগুলো পুন পর্যালোচনার জন্য তৃতীয় বৌদ্ধ মহাসম্মেলন করেন এবং মৌদগলিপুত্তশিষ্য স্থবিরের মাধ্যমে বুদ্ধের দেহের অস্থিগুলো গুহা থেকে বের করে ৯৬ কোটি স্বর্ণামুদ্রা ব্যায় করে ৮৪ হাজারটি ধাতু চৈত্য প্রতিষ্ঠা করেন। সেই ৮৪ হাজার চৈত্যের এই রাংকুট চৈত্যটিও একটি অংশ, যা খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৮ অব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়।







প্রতিষ্ঠার পর অনেক ভিক্ষুগণ এই তীর্থে অবস্থান করেন এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আরাকান সামন্ত রাজা চন্দ্রজ্যোতি বুদ্ধের বক্ষাস্থিটি নিয়ে সাদা পাথরের ৬ ফুট উচু মনোরম বুদ্ধবিম্বের মস্তকে সংযোজিত করে বুদ্ধ বিম্বটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর রাজা চেঁন্দি বুদ্ধ বক্ষাস্থির প্রতি সম্মান ও গৌরব প্রদর্শনার্থে রাংকুট এর পূর্বে “রাং-উ” শব্দটি যোগ করেন। এই “রাং-উ” শব্দটি পরে ভাষান্তর হয়ে ‘রামু’তে রুপান্তরিত হয়। তখন থেকেই এই বৌদ্ধ বিহারের নামকরন হয় রাং-উ রাংকুট। চারদিকে সবুজ গাছ-গাছালি বনের মধ্যে আশ্রয়ণ বলে বনাশ্রম ও বহু তীর্থযাত্রীর পূর্জাহ বলে মহাতীর্থ এবং হাজার বছরের ঐতিহাসিক বিহার বলে মহাবিহার।



কালের পরিক্রমায় এই বৌদ্ধ বিহারটি বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে মাটির তলে তলিয়ে গিয়েছিল। ১৯২৯ সালের এক শুভক্ষণে বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু জগতচন্দ্র মহাস্থবির এই পাহাড়ে এসে মাটির ভেতর থেকে ভঙ্গপ্রায় বুদ্ধ বিম্বটি উদ্ধার করেন। এর পর ১৯৬৬ সালে প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের এসে রাংকুট বিহারটির অভূত- পূর্ব সংস্কার করে, এই বিহারের মৃত প্রাণকে তাজা করে।





মহাবিহারের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উপাসনারত বুদ্ধের মূর্তি। ফটকের ডানপাশে রয়েছে উপাসনারত ৩৫টি বুদ্ধ মূর্তি আর বামপাশে রয়েছে ৫০টি।



মূল ফটক থেকে কিছুটা সামনে এগোতেই চোখে পড়বে ১৪শ বছরের পুরনো বটবৃক্ষ । চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাং-এর ভারত ও বাংলাদেশে বুদ্ধের অবস্থানস্থল আবিষ্কারের সময়ে রোপিত হয় এই বৃক্ষটি।



এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে রয়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ত্রিপিটক হাতে সম্রাট অশোক মহারাজার ২৩ ফুট উচু ভাস্কর্য।







রামকুট তীর্থধাম - রামচন্দ্র ১৪ বছরের জন্য একবার বনবাসী হয়ে বন-বনান্তরে ঘুরতে ঘুরতে পঞ্চবটী বনে একটি কুটির স্থাপন করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই কুটিরই হচ্ছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রামকোট তীর্থধাম। জনশ্রুতি আছে, এখানে সীতার মরিচ বাটার পাটা আছে। হিন্দুশাস্ত্র মতে, সব তীর্থ ভ্রমণের পর রামুর রামকোট তীর্থধামে সংরক্ষিত শিব দর্শনেই সব পুণ্যের পূর্ণতা লাভ হয়।





আগের পর্বগুলো - কক্সবাজার ডায়েরি – ০১ : মনমাতানো হিমছড়ি

কক্সবাজার ডায়েরি – ০২ : মহেশখালীর হাতছানি

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:০৯

আখেনাটেন বলেছেন: বাহ, জানা ও দেখা হল অনেক কিছু।

২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:১৬

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: আমিও জানতাম না এত কিছু। কক্সবাজার ঘুরতে যাবার সুবাদে এবং নেটে টুকটাক ঘেটে বের করলাম এত কিছু। ধন্যবাদ আপনাকে ব্লগ পোস্ট থেকে ঘুরে যাবার জন্য। :)

২| ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ২:৩৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: দেখলাম সব, আপনার চোখেই।। ছবি এবং বর্ননা সত্যিই ভাল লেগেছে।।

২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:২৬

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ আপুনি আমার ব্লগে ঘুরে যাবার জন্য। :)

৩| ২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:৪১

বিজ্ঞানবাক্স বলেছেন: ধন্যবাদ

২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:২৭

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: :)

৪| ৩০ শে মে, ২০১৭ রাত ২:৫৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: একটু ভুল, আমি ভাই/ভাইয়া।।

৩০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ওহ ! দুঃখিত ভাইয়ু। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.