নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমাপ্রেমী । ট্র্যাভেলার । বইপোকা । রন্ধনশিল্পী

আলভী রহমান শোভন

খাই, দাই, ব্লগ লিখি ।

আলভী রহমান শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ - মনোয়ারুল ইসলামের \'বাঁশি\'

০১ লা জুন, ২০২১ রাত ৯:০১



২০২০ সালের ঘটনা । প্রিয় লেখক মনোয়ারুল ইসলামের ‘নয়নতারা’ বইটি দিয়ে শুরু করেছিলাম। লেখকের লেখা ৩য় বই হলেও আমার পড়া প্রথম বই ছিল সেটা।অতিপ্রাকৃত জনরার বই আমার পছন্দের হলেও বাংলাদেশে মানসম্পন্ন অতিপ্রাকৃত জনরার মৌলিক উপন্যাসের ঘাটতি আছে। কিন্তু ‘নয়নতারা’ বইটি পড়ে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে লেখকের লেখা প্রথম এবং দ্বিতীয় বই ‘বকুলফুল’ এবং ‘বিড়ালাক্ষী’ অর্ডার করে ফেললাম পরবর্তীতে। মূলত অতিপ্রাকৃত থ্রিলার ঘরানার বকুলফুল সিরিজের ট্রিলজির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব ছিল বইদুটি।প্রথম বইটি জুড়ে ছিল মশাইয়ের বকুলফুলের গন্ধ পাবার রহস্য, স্মিতা চৌধুরানীর আগমন, ভয়ানক কিছু মৃত্যুর গা ছম ছম করা বর্ণনা, কৃষ্ণনগরের জমিদারবাড়ী নিয়ে দ্বন্দ্ব সর্বোপরি ভিলেনরূপী রুক্সিনী চৌধুরীর আগমন। প্রথম বইটি যেখানে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বইটির শুরু ঠিক সেখান থেকেই। বইয়ের নাম ‘বিড়ালাক্ষী’ হলেও বই জুড়ে শুধু বিড়ালের অক্ষি ছিল না। আগের বইয়ের রেশ জুড়েই ছিল বকুলফুলের মোহনীয় গন্ধ, স্মিতা চৌধুরানীর পুনঃআগমন, রুক্সিনী চৌধুরীর জমিদারী দখলের চেষ্টার সাথে সাথে তার অবৈধ ব্যবসার গা শিউরে ওঠা বর্ণনা। সেই সাথে ডান পা ভাঙা অদ্ভুত কাঠের বিড়াল পুতুল রহস্য এবং মশাইয়ের ভালোবাসার মানুষ ‘রাত্রি’। বইটিতে টান টান উত্তেজনা ছিল। একদম শেষ দিকে এসে ভালো লাগছিল মশাইয়ের সাথে তার ভালোবাসার মানুষ ‘রাত্রি’র দেখা হওয়াটা। কিন্তু এ কি! এই রাত্রিও শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ হয়ে দেখা দিল, মশাইয়ের খুব কাছের কেউ। হঠাৎ সেখানে আরেকজন চলে এলো বাগড়া দিতে। শেষ ! যাহ্ ! এরপর কি হল? হ্যাঁ, এরপরের কাহিনী জানতেই হাঁসফাঁস লাগার মত অবস্থা হল। আর এই হাঁসফাঁস নিয়েই অপেক্ষা করতে হল এ বছরের বইমেলার জন্য। বকুলফুল ট্রিলজির শেষ বই ‘বাঁশি’র জন্য।

অবশেষে পড়ে শেষ করে ফেললাম ‘বাঁশি’। ‘বিড়ালাক্ষী’ যেখানে শেষ হয়েছে ‘বাঁশি’র শুরু ঠিক সেখান থেকেই। আগের দুই বইয়ে যে সব রহস্য রহস্যই থেকে গিয়েছিল সেগুলোর মোটামুটি সবগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে একে একে কাহিনীর আবর্তনে। প্রতিটি পাতায় পাতায় ছিল টান টান উত্তেজনা।এমনকি সিরিজের আগের দুটি বইয়ের চেয়ে এটায় বেশি শিহরিত হওয়ার মত ব্যাপার ছিল।
নতুন চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘শাতু’ চরিত্রের কথা আলাদা ভাবে না বললেই নয়। রহস্যময় এই চরিত্রটি নিয়ে শুরু থেকেই দোটানায় ছিলাম। সে আসলে কি চায়? সে কি ভালো নাকি খারাপ? এই দোটানা লেখক বেশ ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বোধ করি পাঠকের মনে।

বইটির শেষ দিকে এসে সব কিছুর ঠিকঠাক ব্যাখ্যা পাওয়ার পর ভালো লাগছিল। কিন্তু একদম শেষ পাতায় এসে এমন ভাবে গল্পের ইতি টানলেন লেখক যে মনে হচ্ছিল এভাবে কি রহস্য রেখে শেষ করার দরকার ছিল? এখন তো আবার সাধ জাগছে এই সিরিজের আরেকটা বই বের হোক ! যাই হোক, এটা লেখকের সৃষ্টি, লেখক ভালো বুঝবেন আরেকটা বই বের করবেন কিনা।

তবে রুক্সিনী চৌধুরীর সমগ্র শরীর জুড়ে যে টিউমার রহস্য ছিল আগের বইয়ে ভেবেছিলাম ‘বাঁশি’তে এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা হবে কিন্তু সেটা পাইনি।আরেকটা ব্যাপার ভালো লাগেনি, ডাক্তার সুপ্রিয়ার সাথে দেখা করার জন্য মশাই যখন দ্বিতীয় বারের মত সুবর্ণ মেডিকেল হাসপাতালে যান তখন তিনি হাসপাতালের যে কেবিনে আগে ছিলেন সেই ৫০৭ নাম্বার কেবিনে গিয়ে নতুন রোগীকে যে ভয় দেখিয়ে পৈশাচিক আনন্দ নিলেন সেটা ভালো লাগলো না। ঘটনাটা পড়েই মনে হল, আরে! মশাই তো মানুষকে এমন ভয় দেখিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার মত মানুষ না। এটা তো মশাইয়ের চরিত্রের সাথে গেল না।

বইপড়ুয়া মশাইকে বেশ কিছু বই পড়তে দেখা গেছে পুরো ‘বাঁশি’ জুড়ে। ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। আমি নিজেই নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলাম যখন একে একে বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিক, তারাশঙ্করের কবি, অতীনের নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে অথবা ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো বইয়ের কথা আসছিল। মশাই আর আমার বইয়ের টেস্ট দেখি একই !

বইয়ে টুকটাক বানান ভুল ছিল, আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে তা শুধরে নেওয়া হবে।তবে বইয়ের পেজগুলো খুব ভালো লেগেছে।এমন হলদে টাইপ পেজ আমার খুব পছন্দের।এমন পাতার বই পড়তে কেন জানি খুব শান্তি শান্তি লাগে।
বইয়ের একটা উক্তি এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে; ‘মানুষের যে কত রূপ তা বোধ হয় মানুষই জানেনা। আর জানেনা বলেই সে ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়।’ একদম চিরন্তন সত্যি কথা!

যাই হোক, পরিশেষে এটাই বলবো সব মিলিয়ে লেখক সফল। ট্রিলজি লেখা বেশ দুঃসাধ্য কাজ। ট্রিলজির শেষ পর্ব লিখতে বোধ করি বেশি শ্রম দিতে হয় লেখককে কারণ, আগের বইদুটির সাথে শেষ বইটি যথাযথ ভাবে যোগস্থাপন করা, সকল রহস্যের সমাধান করা, আগের দুই বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে কাহিনীর আবর্তনে নতুন চরিত্রের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। লেখক পেরেছেন, সফল ভাবে পেরেছেন। বকুলফুল ট্রিলজি বাংলা সাহিত্যের একটি সফল অতিপ্রাকৃত থ্রিলার ঘরানার ট্রিলজি।

লেখকের প্রতি একটা আবদার।বকুলফুল সিরিজের প্রথম বইটি লিখতে বসার আগে ‘ব্যথা’ নামের যে উপন্যাসটি লেখা শুরু করেও শেষ করতে পারেননি আমি চাই আপনি যেভাবেই হোক উপন্যাসটি শেষ করুন। আমি চাই অতিপ্রাকৃত ঘরানার লেখকের পাশাপাশি মনোয়ারুল ইসলামকে একজন সফল সামাজিক এবং রোম্যান্টিক ঘরানার লেখক হিসেবেও মানুষ জানুক।

এক নজরেঃ
বই – বাঁশি
লেখক – মনোয়ারুল ইসলাম
প্রচ্ছদ – মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশনী – নালন্দা
মুদ্রিত মূল্য – ৩০০ টাকা
প্রকাশকাল – মার্চ ২০২১

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০২১ রাত ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি এই লেখকের নাম আজই প্রথম শুনলাম। এটা আমার ব্যর্থতা।

০২ রা জুন, ২০২১ দুপুর ১:১৮

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ইদানিং অনেক নতুন লেখকই ভালো লিখছেন। গত তিন বছর ধরে আমি নতুন লেখকদের বই বেশি পড়ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.