নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

:):):)(:(:(:হাসু মামা

:):):)(:(:(:হাসু মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিস ভূমিকা ভুলে যাওয়ার মত না

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪


১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দুইটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক এবং ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ।আর সেই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষাভাষীর সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম নেয় এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায় সে সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং বাঙ্গালিরা মানসিকভাবেও প্রস্তুত ছিলেন না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ মিছিল ইত্যাদি বেআইনী এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রয়ারি এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহু সংখ্যক ছাত্র এবং তাদের সাথে প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক,সালাম,বরকত সহ আরও অনেকে। শহিদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ সেই ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। গণপরিষদের ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ঢাকায়। ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদের উদ্যোগে শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখেও ধর্মঘট ঘোষিত হয় এবং ঐদিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদ দিবস এবং ধর্মঘট পালন করা হয়। সরকারের প্ররোচনায় পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে এবং অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।তমদ্দুন মজলিস ঐসময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তমদ্দুন মজলিস ১৯৪৭ সালে আবুল কাসেম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি তুলে তমদ্দুন মজলিস বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম।ভারত বিভাগের পরপরই ১৯৪৭ সালের পহেলা সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ঢাকায় তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে সংগঠনটি বেশ সক্রিয় ছিল,বাংলা ভাষা আন্দোলনে সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই সংগঠনের সদস্যগণ পূর্ব পাকিস্তান নবজাগরণ সমাজের ধ্যান ধারণা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। দেশবিভাগের পর সংগঠনটি বুঝতে পেরেছিল যে পাকিস্তান সরকার সেই আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল না যার প্রতিশ্রুতি তাদের দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কারণেই তমদ্দুন মজলিস মুসলিম লীগ থেকে আলাদা হয়ে যান। যদিও তমদ্দুন মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান নামক নতুন রাষ্ট্রের মানুষের ইসলামিক চতনা শক্তিশালী করা, কিন্তুভাষা আন্দোলনে সেই ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির সাহসী ভূমিকার জন্য বাংলা ভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি মোটেও পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি এবং কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। ১৯৪৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে তমদ্দুন মজলিস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যার নাম ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু ? আর সেই পুস্তিকার লেখক ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন,আবুল মনসুর আহমেদ এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম তিনি অবশ্য তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ছিলন। বাংলা ভাষাকে বাংলার ভাব বিনিময়, অফিস ও আদালতের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেন। তারা বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষেও জোরালো দাবি জানান।

সেই পুস্তিকাটিতে অধ্যাপক আবুল কাসেম কিছুসংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন যার মূল কথা ছিলঃ
বাংলা হবেঃ
(১)পূর্ব-পাকিস্তানে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম;
(২)পূর্ব-পাকিস্তানের আদালতের ভাষা
(৩)পূর্ব-পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা।
(৪) উর্দু এবং বাংলা ভাষা হবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা।
(৫)পূর্ব-পাকিস্তানে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হবে বাংলা ভাষা যা সব শ্রেণীর মানুষ শিখবে।
(৬)উর্দুপূর্ব-পাকিস্তানের দ্বিতীয় ভাষা বা আন্তঃ-প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে গণ্য হতে পারে যা সেই সমস্ত মানুষকে শেখানো হবে যারা পশ্চিম পাকিস্তানে কাজ করবে।
(৭)পূর্ব-পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫% থেকে ১০% মানুষ উর্দুশিখলেই যথেষ্ট।মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে উপরের দিকের শ্রেণীতে উর্দুশেখানো যেতে পারে এবং একই সাথে ইংরেজি হবে পূর্ব-পাকিস্তানের তৃতীয় অথবা আন্তর্জাতিক ভাষা।
৮)কয়েক বছরের জন্য ইংরেজি এবং বাংলা উভয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার হবে।

তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙ্গালি বিরোধী নীতি এবং বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য এবং সেই সময়কার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান কর্তৃক রচিত পত্রের বিরোধিতার জন্য ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে তমদ্দুন মজলিসই প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনে নেতৃত্ব দেন। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম প্রধান সমন্বয়ক নির্বাচিত হন তবে তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাসেম বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য দেশব্যাপী সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি তরুণ প্রজন্ম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্দোলনে যুক্ত করতে সক্ষম হন। আর সেভাবেই প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৭ সালের শেষভাগে এবং ১৯৪৮ সালের শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিক শক্তি প্রদান করে। করাচীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে প্রথম বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী যোগদান করেন। সেই সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। সেই সমাবেশে যোগদান করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান,কল্যাণ দাসগুপ্ত, এ.কে.এম. আহসান এস.আহমেদ এবং ডাকুসের তৎকালীন সভাপতি ফরিদ আহমেদ। বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে তমদ্দুন মজলিসের অবস্থান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করেছিল।যা কখনো ভুলে যাওয়ার মত না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

খাঁজা বাবা বলেছেন: জানলাম

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.