নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার অদম্য ইচ্ছেসহ আগামীর পথে

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান

আমি প্রতিসাম্য তৈরি করতে ভালবাসি

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

থ্রিলার বড় গল্পঃ হ্যালুসিনেক্সিন (২)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৭

প্রথম পোষ্টের লিংকঃ Click This Link

অয়নের চোখ হতে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। চোখ মুছল হাত দিয়ে।
“তারপর কি হল?”, প্রশ্ন করল শৈবাল।
“পরিচিত এক ডাক্তারকে বাসায় ফোন দিয়ে আনলাম,” বলল অয়ন। “প্রাথমিকভাবে দেখে তিনি জানালেন হার্ট এটাক হয়েছে। পরে জানলাম মাঝরাতের কিছু পরে তিনি মারা গেছেন।”
“এ পর্যন্ত যা শুনলাম তাতে তো সন্দেহের কোন আলামত পেলাম না,” বলল শৈবাল। “হার্ট এটাক তো অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু তুমি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছ যে তোমার আব্বু খুন হয়েছেন?”
“আমারও সন্দেহ হত না”, অয়ন বলল। “কিন্তু আরেকটা ঘটনায় সন্দেহটা জেগেছে আমার।’’
“কি রকম?”, সীমান্তের প্রশ্ন।
“আব্বু যে রুমে মারা গেছেন সে রুমে গোপনে কেউ ঢুকেছিল। আব্বুর মৃত্যুর তিনদিন পরে। সে রাতে আমার নিজের রুমে শুয়েছিলাম। কি থেকে কি হয়ে গেল চিন্তা করছিলাম। ঘুম আসছিল আন। হঠাৎ মৃদু একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম। ধাতব আওয়াজ। মনে হল আব্বুর সেই রুমটা থেকে আসছে। আমার রুমের কাছেই সেই রুমটা। তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়লাম। সাবধানে এগিয়ে গেলাম। চাবি দিয়ে দরজা খুলে উঁকি দিলাম ভিতরে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রথমে কিছুই ঠাওর করতে পারলাম না। সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। ঠিক তখনই রুমের সাথে সংযুক্ত খোলা ব্যালকনি থেকে ঠং করে একটা আওয়াজ হল।”

শৈবালের দিকে তাকাল অয়ন, “আপনাকে রুমটার বর্ননা দেই। রুমটা বেশ বড়। আব্বুর বিভিন্ন জিনিসপত্রে ঠাসা। আব্বুর ছাত্রজীবনের স্মৃতিবাহী বিভিন্ন জিনিস একটা শোকেসে রাখা। তারপাশে বইয়ের তাক। বড় একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিল। রুমের পাশে খোলা ব্যালকনি। সেটায় যাবার জন্য থাইগ্লাসের একটা বড়সড় দরজা আছে, যা দেয়ালের অর্ধেকটা জুড়ে আছে। তো, সেই রাতে শব্দ শুনে ব্যালকনি যেদিকে সেদিকে তাকালাম। দেখলাম থাইগ্লাসের দরজাটা খোলা। একটা মানুষ গলতে পারে এরকম বড় ফাঁক। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে দরজাটা বন্ধ করা ছিল। দ্রুত ব্যালকনিতে বেরিয়ে এলাম। কাউকেই চোখে পড়ল না আশেপাশে। আমাদের ফ্ল্যাটটা তিনতলায়। আমাদের বিল্ডিংটার পাশেই একটা অন্ধকার গলি। তার অপর পাশে আরেকটা বিল্ডিং। সবদিকে নজর বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেলামনা। এরপর মেঝের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হলাম কেউ রুমে ঢুকেছিল। জুতার কয়েকটা ছাপ ছিল ব্যালকনিতে। ব্যালকনির রেলিঙটাও পরীক্ষা করলাম। দেখলাম কয়েকটা আঁচড়ের দাগ। বেশ গভীর। আংটা জাতীয় কিছু হবে হয়ত।”

অয়ন কথা থামিয়ে একগ্লাস পানি চাইল। সীমান্ত উঠে গিয়ে পানি নিয়ে এল। খেয়ে আবার শুরু করল অয়ন, “রুমে ফিরে সবকিছু পরীক্ষা করলাম। কিছু খোয়া গেছে কিনা দেখতে লাগলাম। দেখলাম সেক্রেটারিয়েট টেবিলের বড় ড্রয়ারটা খোলা। ভিতরে বেশ কয়েকটা ফাইল পাশাপাশি সাজানো ছিল। দেখলাম এক জায়গায় দুটো ফাইলের মাঝে একটা বড় ফাকা জায়গা। ফাইলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, কিছু একটা সরানো হয়েছে এখান থেকে। যে ঢুকেছিল সে জানত সে কি খুঁজছে আর তা কোথায় আছে। তখনই আমার সন্দেহ জাগলো আব্বুর মৃত্যু নিয়ে। মনে পড়ল আব্বু কাদের বিরুদ্ধে যেন তথ্যপ্রমান জোগাড় করতে চেয়েছিলেন। মনে হল,এর জন্যই আব্বুকে প্রান দিতে হয়েছে। এবার বলুন ভাইয়া, আমার সন্দেহটা কি অমূলক?”

শৈবাল আনমনে মাথা দোলাল, “তুমি খুব করিতকর্মা ছেলে,অয়ন। অসাধারন কাজ দেখিয়েছ। তোমার সন্দেহ তুমি আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছ। যা শুনলাম এই পর্যন্ত তাতে তোমার সন্দেহটাকে অমূলক বলে উড়িয়ে দিতে পারছিনা। ঐ দিনের পর আর কোন ঘটনা ঘটেছে তোমাদের বাসায়?”
“না”, অয়ন বলল। “ আমি সেদিনের পর থেকে আব্বুর সেই রুমটাতে থেকেছি। সারারাত চোখের পাতা এক করিনি। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। তবে......”
“তবে?”, সীমান্তের কণ্ঠে ব্যাগ্রতা।
“আমার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হত রুমটাতে থাকলে”, বলল অয়ন। “মনে হত কিছু একটা আছে রুমটায়। দরজা-জানালা ভাল করে বন্ধ থাকা সত্ত্বেও মনে হত রুমে আমি একা না। কিছু একটা নজর রাখছে আমার উপর। পরে ভাবনাটা উড়িয়ে দিয়েছি আমার ভীতু মনের কল্পনা বলে।”
অয়ন থামলে শৈবাল বলল, “এতক্ষন যা বললে তা কি অন্য কাউকে জানিয়েছ এখন পর্যন্ত? পুলিশ বা অন্য কেউ?”
“না”, উত্তর দিল অয়ন। “কাউকেই বলিনি । সীমান্তের মুখে আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি। তাই আমার মনে সন্দেহ জাগামাত্র আপনার কথা মনে পড়ে। ভাইয়া, প্লিজ কিছু একটা করুন। আব্বু কাদের মুখোশ খুলতে চেয়েছিলেন, কেন তাকে মারা যেতে হল- এসব প্রশ্নের উত্তর বের করে দিন আমাকে। আব্বুকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না কিন্তু আব্বুর মৃত্যুর পিছে যদি কারও হাত থাকে তার খোঁজ বের করুন। এটাই আপনার কাছে পিতৃহারা এক সন্তানের চাওয়া।”
তারপর আবার বলল, “আমি আপনাকে যথেষ্ট পে করব।”
“ছি! অয়ন”, তাড়াতাড়ি বলল শৈবাল। “বোকার মত কথা বলবে না। তুমি সীমান্তের বন্ধু, তারমানে আমারও কাছের মানুষ। তোমার আব্বুর মত মেধাবী মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া কষ্টের ব্যাপার। কথা দিলাম, আমি এই ব্যাপারে তদন্ত করব।”

অয়নের মুখ হাসি হাসি হয়ে উঠল। পাশ থেকে নিজের ব্যাগটা টেনে নিতে নিতে বলল, “আমি কিছু জিনিস নিয়ে এসেছি আপনার কাজে লাগতে পারে এই ভেবে। আব্বুর রুম খুঁজে বের করেছি এইগুলো।”
অয়ন ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করল। দুটো ডায়েরীও আছে তার ভিতর। ছোট একটা টেবিল ক্যালেন্ডার, আর কিছু টুকিটাকি বিভিন্ন রঙয়ের কাগজ।
“তুমি তো দেখছি রীতিমত একজন গোয়েন্দা!”, শৈবালের কণ্ঠে প্রশংসা ঝরে। “এবার বোধহয় সীমান্তকে অবসর নিতে হবে আমার সহকারীর পদ থেকে।”
অয়ন জোরে হেসে উঠল। টোল দুটো গভীর হল তার গালের। সীমান্ত মুচকি হাসছে। সময় সুযোগ পেলেই হলো, শৈবাল সীমান্তকে খোঁচাবেই। পুরানো অভ্যাস। অবশ্য সীমান্তও উপভোগ করে ব্যাপারটা।
“আমাকে গত কয়েক বছরের সাপ্তাহিক পাওনাগুলো মিটিয়ে দিলে তবেই অবসর নেব”, হেসে বলল সীমান্ত।
“তিনজন এবার একযোগে হেসে উঠল। পরিবেশ হালকা হয়ে গেল অনেকটা। শৈবাল অয়নের দেয়া কাগজপত্রগুলো নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল কিছু সময়। তারপর বলল, “সত্যিই এগুলো অনেক কাজে দেবে।

আরো কিছুসময় অয়নকে টুকটাক প্রশ্ন করল শৈবাল। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নোট করে রাখল কালো ডায়েরীটাতে। তারপর সেটা বন্ধ করে রেখে দিল বুকপকেটে। ইতোমধ্যে অয়নদের বাসার ঠিকানাটা টুকে নিয়েছে। তারপর অয়ন বিদায় নেবার আগে তাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলো আর বলল মায়ের কাছাকাছি থাকতে। তদন্তের প্রয়োজনে যে কোন মুহুর্তে বাসায় যেতে হতে পারে জানিয়ে রাখল। সন্তুষ্ট হয়ে বিদায় নিল অয়ন।

দরজা বন্ধ করে রুমে ফিরে সীমান্ত দেখল শৈবাল অয়নের দেয়া কাগজপত্রগুলোতে গভীর মনযোগে চোখ বুলোচ্ছে। সীমান্ত ভাবল, এই শুরু হল। বন্ধুবরের মৌনপর্বের সুচনা হলো মাত্র। শৈবাল চায় এ সময়টায় কেউ যেন তাকে ডিস্টার্ব না করে। তাই সীমান্ত এনাগ্রামে মনযোগ দেয়। কিন্তু আগের মত মন বসাতে পারল না। শৈবাল যেহেতু তদন্ত শুরু করেছে, ফল একটা আসবে এটা নিশ্চিত। সেটা কি হবে, কখন ঘটনা কোনদিকে মোড় নিবে, পূর্বানুমিত সিদ্ধান্ত ভুল প্রমানিত হলে নতুনটা কি হবে সবকিছু মাথার মধ্যে এসে ভীড় করতে লাগল।

মুখ তুলে দেখল শৈবাল অয়নের আব্বুর ডায়েরীর পাতা উল্টে চলেছে আর নিজের ডায়েরীতে মাঝে মাঝে কি যেন লিখছে। নিজের প্যাডের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল সীমান্ত।
"আমার লাইব্রেরীর তিন নম্বর শেলফের ছয় নম্বর ফাইলটা একটু এনে দেবে সীমান্ত", অনেক সময় পরে শৈবাল ডায়েরী থেকে মুখ না তুলে বলল।

সীমান্ত উঠে লাইব্রেরীর দিকে এগোয়। অজস্র দেশী-বিদেশী বই, জার্নালে সমৃদ্ধ শৈবালের এই লাইব্রেরীটা। এছাড়া রয়েছে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই, ঘটনা এবং সংবাদপত্রের ডিজিটাল রেকর্ড। শৈবাল প্রত্যেকটা কেসেই এই লাইব্রেরীটা ব্যবহার করে। পরষ্পর সংযুক্ত তিনটা কম্পিউটার, একটা বিশাল প্লাজমা পর্দা, একটা প্রজেক্টর আর মেঝে হতে ছাদ পর্যন্ত চারটা বিশাল বুকসেলফে সজ্জিত লাইব্রেরীটা। লাইব্রেরীর সাথে সংযুক্ত একটা ছোট ল্যাবও আছে। শৈবালের প্রত্যেক কেসের অপরিহার্য অঙ্গ এই লাইব্রেরী আর ল্যাবটা। সুতরাং এই কেসেও যে এটার প্রয়োজন হবে তাতে আর সন্দেহ কি!

তিন নম্বর শেলফের সামনে গিয়ে দাড়ায় সীমান্ত। নিচের তাকে প্রচুর ফাইল সাজানো রয়েছে। ফাইলগুলোতে কি রাখা হয় জানে সীমান্ত, কেননা কয়েকটা সে নিজেই তৈরি করেছে। পেপারকাটিং। ছয় নম্বর ফাইলটা হাতে নিয়ে লাইব্রেরী ছাড়ে সে। শৈবালের হাতে ফাইলটা দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে প্যাডটা নিয়ে।

সন্ধ্যায় সীমান্তকে রেখে বেরিয়ে গেল শৈবাল। কয়েকমাস আগে গঠিত এক টাস্কফোর্সে কাজ করছে সে। তাদের একটা মিটিং আছে সরকারী এক দপ্তরে। সীমান্ত কে বলে গেল ফিরতে রাত হবে, যেন সে অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে একা একা খাবার খেয়ে বিছানায় গেল সীমান্ত। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল একসময়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল শৈবাল লাইব্রেরী তে তার প্রিয় চামড়ার গদিমোড়া প্রকান্ড চেয়ারটায় বসে কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত।
সীমান্ত কে দেখে বলল, "শুভ সকাল। রাতে ভাল ঘুম হয়েছে ?"
সীমান্ত মাথা দোলাল। তারপর বাথরুমে ঢুকল প্রাতঃকৃত্য সারতে। খাবার টেবিলে আবার দুবন্ধুতে আবার কথা হলো।
"আজ কি তোমার কোন কাজ আছে?", মাখনমোড়া একটুকরো পাউরুটিতে একটা কামড় দিয়ে বলল শৈবাল।
"তেমন কিছুনা", বলল সীমান্ত। "কেন?"
"অয়নদের বাসায় একবার যাব ভাবছি।"
"আমার কোন সমস্যা নেই", বলল সীমান্ত। তারপর আবার বলল," কতটুকু কি অগ্রসর হলে এই পর্যন্ত? "
"যেই তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। মন বলছে, ওখানে গেলে কিছু কাঁচামাল পাওয়া যেতে পারে। গতকাল হতে এই পর্যন্ত যা বুঝেছি তা হল, মো: হাবিবুর রহমান খন্দকার অর্থাৎ অয়নের আব্বু খুব বুদ্ধিমান এবং সতর্ক লোক ছিলেন। তার ডায়েরীই সেই সাক্ষী দিচ্ছে। ডায়েরীতে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই লেখেননি কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু নমুনা রেখে দিয়েছেন। ওগুলো বুঝতে হলে আমাকে আরও তথ্য পেতে হবে। আপাতত ওনার উত্তরার ফ্ল্যাটই আমার টার্গেট।", শৈবাল মুখ মুছল খাওয়া শেষ করে।

দুবার কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে গেল। ঢাকার কুখ্যাত জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে এইমাত্র উত্তরায় পৌঁছেছে শৈবাল-সীমান্ত। অয়ন ওদের অভ্যর্থনা জানিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল। সাজানো গোছানো, চমতকার পরিবেশ। সবকিছুতেই রুচির ছাপ স্পষ্ট। অয়নের আম্মুর সাথে পরিচয় হল দুজনের। সম্ভ্রান্ত চেহারার নারীটি দুইএকটা সৌজন্যমূলক কথা বলে আবার জায়নামাজে ফিরে গেলেন। আর ওরা তিনজন ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল।
"তারপর, কি খবর?" , আলাপ জমানোর মত সুরে অয়নকে বলল শৈবাল। "সব ভাল তো?"
আস্তে করে মাথা দোলাল অয়ন। বলল,"আপনি আজকেই বাসায় আসবেন ভাবতে পারিনি।"
"তদন্তের প্রয়োজনে যে কোন মুহুর্তে যে কোন জায়গায় যেতে হতে পারে। আজ-কাল বলে কোন কথা নেই", শৈবাল বলল। "তোমার আব্বুর সেই রুমটায় একবার যেতে হবে।"
"নিশ্চয়ই", অয়ন দাড়িয়ে পড়ল।

অয়নের পিছে পিছে রুমটায় প্রবেশ করল দুজনে। দামী এয়ার ফ্রেশনার এর মৃদু গন্ধ সারা ঘর জুড়ে। অয়ন আর সীমান্ত দাঁড়িয়ে রইল। শৈবাল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রুমটাকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করল। প্রত্যেকটা শেলফের প্রত্যেকটা তাকের কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখল। খোজা শেষ হলেও তাকে সন্তুষ্ট মনে হলো না সীমান্তের। যেন সে যা আশা করছে তা পায়নি।
"এটা কি?", ঘরের এক পাশে রাখা শোকেসের একটা তাকের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে অয়নকে জিজ্ঞাসা করল শৈবাল।

সীমান্ত দেখল সেখানে অদ্ভুত আকৃতির একটা বস্তু রয়েছে। কাচের তৈরি একটা বেদীর উপরে পরষ্পরের সাথে বিভিন্ন কৌনিক অবস্থানে সংযুক্ত ধাতব কতগুলো গোলক। দেখতে কোন জটিল জৈব যৌগের গাঠনিক সংকেত বলে মনে হচ্ছে।
"কোম্পানির পক্ষ থেকে আব্বুকে এটা উপহার দেয়া হয়েছে", অয়ন উত্তর দিল। "আব্বুর টেবিলের উপর থাকত ওটা। আমি শোকেসে ঢুকিয়ে রেখেছি।"

শৈবাল এবার ঘরের আরেকপাশে একটা টেবিলের কাছে চলে গেল। টেস্টটিউব, বকযন্ত্র, কাচের জার, নানা রংয়ের তরলপূর্ণ এম্পুল সহ আরো নানারকম যন্ত্রপাতিতে টেবিলটা সজ্জিত। ছোট খাট একটা রসায়নাগার বলা যায়। কিছুসময় সেগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে অয়নের আব্বুর সেক্রেটারিয়েট টেবিলটায় গিয়ে বসল শৈবাল। ফাইলগুলোতে চোখ বুলাতে লাগল। এই সময়টাতে সীমান্ত আর অয়ন ব্যালকনিতে বেরিয়ে আসল। নিচে একটা সংকীর্ণ গলি। গলির শেষ মাথার বিল্ডিংটাই অয়নদের। অপরপাশে একই আকৃতির আরেকটা বিল্ডিং। উপরে-নিচে তাকাল সীমান্ত। শুকাতে দেয়া রংবেরংয়ের কাপড়চোপড় পুর্ন সেটার ব্যালকনিগুলো। তাদের সরাসরি সামনের ফ্ল্যাটটাতে জনমানুষের কোন চিহ্নই চোখে পড়ল না। কাচের জানালাগুলো সব আটা। ব্যালকনিটা একেবারে পরিষ্কার। শুধুমাত্র একটা চেয়ার পাতা রয়েছে।
"সীমান্ত, তোমাদের এটার কথাই বলেছিলাম", নিজেদের ব্যালকনির রেলিংটার একটা জায়গা দেখালো অয়ন।

সীমান্ত দেখল এক ইঞ্চি ব্যবধানে গভীর দুটো আঁচড়ের দাগ। ভালভাবে পর্যবেক্ষন করে অয়নের সন্দেহটাকে স্বীকৃতি দিল সে মনে মনে। আংটা জাতীয় কিছুই আটকানো হয়েছিল এখানে। খোলা ব্যালকনি থেকে দুজনে যখন রুমে ফিরে আসল তখন শৈবাল সবে ড্রয়ারটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়েছে। সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে তাকে।
"আমার একটু ব্যালকনিটা দেখা দরকার", বলে ওদের দুজন কে পাশ কাটিয়ে ব্যালকনিতে বেরিয়ে গেল সে।
বাইরে দুইমিনিট সময় ব্যয় করল শৈবাল। তারপর ভিতরে এসে বলল, "আপাতত আমার দেখা শেষ।"
"কি বুঝলেন ভাইয়া?", উতসুক কন্ঠে বলল অয়ন।
"এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না", বলল শৈবাল। "আরও সময় লাগবে। অয়ন, আমি এখান থেকে কিছু জিনিস নিয়ে যেতে চাই।"
"আপনার যা যা প্রয়োজন নিয়ে যান।", অয়ন বলল।
শৈবাল কতগুলো ফাইল আর এম্পুল একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। বেরোবার আগে অয়নকে বলল, "তোমার আব্বু যে কালো ব্রিফকেস নিয়ে বেরিয়েছিলেন, ওটা কোথায় নিয়ে যেতে পারেন, এব্যাপারে তোমার কোন ধারনা আছে?"
"না, ভাইয়া", বলল অয়ন। "তবে বাসায় ফেরার পর আব্বুর হাবভাবে মনে হচ্ছিল নিরাপদ কোন জায়গায় তিনি ওটা রেখে এসেছেন।"
"নিরাপদ কোন জায়গায়", আপনমনে বিড়বিড় করল শৈবাল। তারপর বলল, "ওটা পেলে রহস্যের একটা কিনারা হতো হয়ত। যেহেতু নেই তাই হাতে যা আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যা হোক, সাবধানে থেকো। আর তোমার আব্বুর ওই রুমের উপর নজর রেখো।"

অয়নদের বাসার গেট থেকে বেরিয়ে একবার তাদের ব্যালকনির দিকে শৈবালকে তাকাতে দেখল সীমান্ত। কিছু হিসেব করছে যেন মনে মনে। তারপর মাথা হাল্কা একটু ঝাঁকিয়ে বলল, "চলো।"

চলবে----------

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.