নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার অদম্য ইচ্ছেসহ আগামীর পথে

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান

আমি প্রতিসাম্য তৈরি করতে ভালবাসি

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ক্রিকেটীয় দেশপ্রেমের গল্প

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৬

বসে বসে একটা ঢাউস একটা বইয়ের লাইনের ফাঁকে ফাঁকে পেন্সিল চালাচ্ছিলাম। পুরোপুরি মগ্ন, গত দুইদিন যাবত ডুবে আছি একেবারে। এমন সময় হঠাৎ এক বন্ধুর গলা-
- দোস্ত, কি খবর?
- এইতো।
- খবর জানিস না কিছু? বসে বসে ডিম পাড়ছিস নাকি?
- কি হইছে?
- বাংলাদেশ আজকের ক্রিকেট ম্যাচে জিতেছে। বাঘেরা গর্জন শুনিয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকে।
- জানতাম খেলা চলছে। দেখা হয় নি। দারুন খবর তো!
বন্ধু মহাশূন্য থেকে পড়ে যেন। চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় করে বলে-
- তুই বাংলাদেশের খেলা দেখিস নি!!!!! শালা, তোর মধ্যে তো দেশপ্রেমের ছিটেফোঁটাও নাই।
- তাই নাকি! জানতাম না তো। তোর দেশপ্রেম অনেক গভীর, তাই না দোস্ত?
- তাইলে আর বলছি কি! জানিস, যখন খেলা দেখি কেমন লাগে তখন? মনে হয় যুদ্ধে আছি। প্রতিপক্ষের এক একটা বলকে তখন বল মনে হয় না। মনে হয় বুলেট। হারলে বুকের মধ্যে কেমন লাগে জানিস? জিতলে কেমন আনন্দ হয় জানিস? ৭১ এর আবেগ ভর করে। সাকিব, তামিম, মাশরাফির নাম মুখে আনলে গর্বে বুকের ছাতি বেঁড়ে চারহাত হয়ে যায়। তোকে এসব বলে লাভ নেই। বুঝবি না। বুঝবি না, যখন বলি বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার আমাদের, তখন কেমন লাগে।
- দোস্ত, যখন আজাদের নাম মুখে আনিস তখন বুকের মধ্যে কেমন লাগে?
- কোন আজাদ?
- ক্র্যাক প্লাটুনের আজাদ। ঢাকার আরবান গেরিলা গ্রুপ। ঢাকার পাকিস্তানি সেনাদের ত্রাস ছিল তারা। এবার চিনেছিস?
- না। শুনিনি আগে।
- জুয়েল, বদি, রুমি এদের নাম তো শুনেছিস? রুমির যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কাগজপত্র চলে এসেছিল। সেগুলো রেখে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিল। শেষে পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হয়। আজাদের কি অবস্থা হয়েছিল ধরা পড়ার পর জানিস? অকল্পনীয় টর্চারে লোহার বাটালি দিয়ে আজাদের পায়ের প্রত্যেকটা আঙ্গুল ছেচে দেয়া হয় তার, হাতে পেরেক মেরে টেবিলের সাথে গেথে দেয়া হয়। তবুও আজাদ মুখ খুলেনি, ফাস করেনি ক্র্যাক প্লাটুনের প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের অবস্থানের তথ্য। ওনাদের কথা মনে করলে আমার বুকের ভিতর মহাশূন্য কে ঢুকিয়ে দেবার মত জায়গা তৈরি হয়।
বন্ধু কথা বলে না। আমি বলে যাই-
- নাদের গুণ্ডাকে চিনিস?
- দেশপ্রেমের মধ্যে আবার গুন্ডা পাণ্ডার কথা বলছিস কেন? গুন্ডা কে চিনে কি করব?
- এ গুন্ডা যেনতেন কোন গুন্ডা না। ড্যাশিং চেহারার এই যুবকটা ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত গুন্ডা থাকলেও পরের কাহিনি ছিল ভিন্ন। ২৫ মার্চের রাতে পাকি জানোয়ার বাহিনী যখন ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তখন ঢাকার মানুষের পালাবার রাস্তাও ছিলনা। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল নাদের। চারিদিকে গুলি, কামান আর মর্টারের গোলাগুলিতে নাদের বুঝতে পারে কি ঘটছে সাথে সাথে সে নিজের মতো করে তৈরি হয়ে যায়। পাকি আর্মির কনভয় বংশালে ঢোকার সাথে সাথে নাদের একটি দেশী বন্দুক নিয়ে ছাদ টপকে টপকে ঈসা ব্রাদার্সের ছাদে গিয়ে পজিশন নয়। বন্দুকের রেঞ্জের মধ্যে আসার সাথে সাথেই নাদেরের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকজন পাক আর্মি। অবিশ্বাস্য এই আক্রমণে পাক আর্মি তৎক্ষণাৎ ফিরে যায়। নাদেরর আক্রমণে হায়েনার মতো ক্ষিপ্ত পাকি আর্মিরা শক্তি সঞ্চয় করে ঝাপিয়ে পড়ে বংশাল, নয়াবাজার, আবুল হাসানাত রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোডের বিভিন্ন বাড়িতে। প্রথম দিকে তাদের টার্গেট শুধু হিন্দু বাড়ির প্রতি হলেও প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় তারা নির্বিচারে বাড়ি ঘরে আগুন দিতে থাকে। সে যাত্রা নাদের পালিয়ে গেলেও পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনের সহায়তায় তার গেরিলা অপারেশন অব্যাহত রাখে। নাদেরর অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলা সংগ্রাম নামে এক পাঞ্জাবী। অর্থের বিনিময়ে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে দিত। পরে সংগ্রামের যড়যন্ত্রে পাকিস্তানিদের হাতে নিহত হয়। কিন্তু তার আগেই হায়েনাদের কয়েকটাকে যমের বাড়ি চিনিয়ে দেয় সে। দোস্ত হায়দারের নাম শুনছিস?
- কোন হায়দার? ওই যে হিন্দি মুভিটা? শহীদ কাপুর তো পুরাই জোসসসসস...
- নাহ। আমাদের হায়দার। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এসজিএস কমান্ডো ছিল, ৭১ এ গেরিলাযুদ্ধের সংজ্ঞাই পাল্টিয়ে দিছিল...
- নাহ, চিনতে পারলাম না। এতো পুরান ঘটনা...
- ৬৫’ সালে আর্মিতে যোগ দিছিল মুক্তো, মায়ের খুব আদরের পোলা ছিল। সেই বছরই ট্রেনিং শেষ কইরা কমিশন পাইছিল, গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসেবে পোস্টিং হইছিল মুলতানে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সেনারে টপকিয়ে অসীম সাহস, অসাধারন দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কয়েকবছরের মধ্যেই একটা বারুদ হিসাবে নিজেরে প্রমান করছিল সে। তাই তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কঠিনতম আর সেরা ট্রেনিং স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ( এসজিএস) এর জন্য মনোনীত করা হয়। আজব পাবলিক ছিল, বুকে সামান্যতম ভয়ডর ছিল না। প্যারাট্রুপারস আর সারভাইভাল ট্রেনিংয়ে হাজার হাজার ফুট উপর থেকে লাফ দিতে হইত, পাকিস্তানী অফিসারগুলা প্লেন থেকে ঝাপ দেওয়ার আগে ভয়ের চোটে চোখ বন্ধ কইরা কেদে ফেলত। আর সেটা দেখে তো এই পোলা হাসতে হাসতে খুন। “ দেখো, আমরা বাঙ্গালী। ভয় জিনিসটা পাইতে শিখি নাই। আমরা চোখ খুইলাই লাফ দেই।“ কথা শেষ হওয়ার আগেই লাফ দিছে সে, হাসতে হাসতে বাতাসে উড়তেছে... মেজর খালেদ মোশাররফের নির্দেশে ঢাকা থেকে পোলাপান মতিনগর আসছে, ট্রেনিং নিবে, যুদ্ধে যাবে। ব্রিফিং শেষে খালেদ একটা শক্ত চেহারার ভাবলেশহীন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বাঁ হাত ভাঙ্গা, স্লিঙ্গে ঝুলতেছে। আজকে থেকে ইনিই তোমাদের গেরিলা ট্রেনিং দিবেন, ইনার নাম ক্যাপ্টেন এটিএম হায়দার, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এসজিএস কমান্ডো। দড়ির মত পাকানো শরীর, ঠাণ্ডা, শান্ত দৃষ্টির মধ্যেও গনগনে ভাটার আগুন টের পাওয়া যাইতেছে। সিংহ হৃদয় ছিল মানুষটার, খুব দ্রুত আপন করে নিতেন সবাইকে। একেবারে বিজন পাহাড়ে জঙ্গল কাটা, তাবু তৈরি, খাওয়া দাওয়ার কষ্টকর ব্যবস্থা থেকে শুরু কইরা হাড়ভাঙ্গা ট্রেনিং– সবসময় সামনে খালি একজনকেই দেখা যাচ্ছে, ঠিক ট্রেনের ইঞ্জিনের মত, ক্যাপ্টেন হায়দার নাম। ব্যক্তিত্বের পারফেকশনে কড়া শিক্ষককে ট্রেনিংয়ের সময় বাঘের মতো ভয় পেত সবাই, কিন্তু যখন কেউ হঠাৎ করে কিছু একটা শিখে ফেলতো, করে দেখাত নিখুঁত ভাবে, তখন তৃপ্তির একটা হাসি ফুটে উঠত তাঁর মুখে, পিঠ চাপড়ায়া বলতেন, ওয়েল ডান, বয়,ওয়েল ডান। ব্যস, সব রাগ-অভিমান ভ্যানিশ। এই লোকটাই ক্রাক প্লাটুন কে ট্রেনিং দিয়েছিল। এই লোকটাই ক্রাক প্লাটুন পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর ‘মাই বয়েজ, মাই বয়েজ’ বলে বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছিলেন। দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা এদের কাছেই পাওয়া যায়। প্লেন হাইজ্যাকার জ্যা কুয়ে কে মনে পড়ে?
- প্লেন হাইজ্যাকার এর খবর আমি রাখতে যাব কেন?
- এ প্লেন হাইজ্যাকার যেমন তেমন হাইজ্যাকার নন। মানবিকতা কাকে বলে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। যাদের জন্য দেখিয়েছিলেন তাদের তখনো পৃথিবির বুকে আলাদা দেশ হিসেবে জন্মই হয় নি। ১৯৭১ সালের তেসরা ডিসেম্বর জ্যা ক্যুয়ে এমন এক ঘটনা ঘটান যা দেশে-বিদেশে আলোচিত হতে থাকে। পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, পৃথিবীর মানুষ জানতে শুরু করে, হতবাক করে দেয়ার মতো এক ঘটনা ঘটেছে পৃথিবীর এমন এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে, যার কি না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার অধিকার রয়েছে; ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং হাইজ্যাক করেন জাঁ কুয়ে।
‘আমার কাছে অস্ত্র আছে, বোমাও আছে, আমার কথা না শুনলে এ বিমান উড়িয়ে দেব’ — ককপিটে ঢুকে বোয়িংটি হাইজ্যাক করার সঙ্গে সঙ্গে জাঁ কুয়ে এ কথার পাশাপাশি ঘোষণা দেন, বাঙালি উদ্বাস্তুদের জন্যে এ বিমানের মাধ্যমে ২০ টন মেডিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের সব মানুষের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায় — নিছক টাকা-পয়সা নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দালালদের নির্যাতনের শিকার হয়ে যেসব বাঙালি উদ্বাস্তু হয়েছিলেন, রোগেশোকে ভুগছিলেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর তীব্র এক মানসিক তাড়না থেকে কম্যুনিস্ট বিদ্বেষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন। পরে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ এই ঘটনায় অনুপ্রানিত হয়ে সাহায্য করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা রিফিউজি বাঙ্গালীদের। এই দেশের মানুষ না হয়েও, তাদের দুঃখ দেখে যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন জ্যা ক্যুয়ে, তাকে সম্মান জানানোও আমাদের দেশপ্রেমের মধ্যে পড়ে, দোস্ত।
- তুই কিসের মধ্যে কি মিলাচ্ছিস?
- সবকিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দোস্ত। আচ্ছা ঠিক আছে, মাশরাফির কথাই বলি তাহলে। তোরও ভাল লাগবে।
- হ্যা বল।
- তুই তো জানিস মাশরাফির পায়ে ৮ টা অপারেশন হয়েছে। তারপরেও খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। বলতো, এই অনুপ্রেরণা পায় কোথা থেকে।
- জানিনা।
- মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে পেয়েছেন। বলেছেন, তারা যদি পায়ে গুলি লাগার পরেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে, তবে আমি কেন অপারেশন নিয়ে খেলতে পারব না। ওনার আরও কিছু বানী শোন।

“ আমি বলি, এই যারা ক্রিকেটে দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে চিৎকার করে, এরা সবাই যদি একদিন রাস্তায় কলার খোসা ফেলা বন্ধ করত, একটা দিন রাস্তায় থুতু না ফেলত বা একটা দিন ট্রাফিক আইন মানত, দেশ বদলে যেত। এই এনার্জি ক্রিকেটের পেছনে ব্যয় না করে নিজের কাজটা যদি সততার সঙ্গে একটা দিনও সবাই মানে, সেটাই হয় দেশপ্রেম দেখানো ”

“ আজ কিছু কথা পরিষ্কার করে বলি। আমরা সবাইকে বিনোদন দেই। আমরা প্রকৃত অর্থে বীর নই। আমাদের সত্যিকার বীর হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা দেশের জন্য কোন কিছু বিসর্জন দিই নি, মুক্তিযোদ্ধারা দিয়েছেন। আমাকে ভূল বুঝবেননা—ক্রিকেট কিন্তু জীবনের সবকিছু নয়। আমরা শুধুমাত্র চেষ্টা করি আমাদের দেশের মানুষকে খুশী করতে ”
সবারই একটা নিজস্ব জীবনদর্শন আছে, বুঝেছিস। তোর কাছে যেখানে, মাঠে গিয়ে ক্রিকেটীয় উম্মাদনা দেখানো, জিতলে রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে মিছিল করা, হারলে দেশপ্রেমের ঠেলায় ফেসবুকে প্লেয়ারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা, টিকিট কিনতে গিয়ে পুলিশের ব্যাটনের বাড়ি খাওয়ার মানে দেশপ্রেম; সেখানে অনেকের কাছে দেশপ্রেমের অন্যরকম সংজ্ঞা আছে।

যেদিন আমরা লোকজনকে সচেতন করতে ইভেন্ট এর আয়োজন করেছিলাম শহীদ মিনারের সামনে, ওদিন তো তুই ছিলি না, তাই না?
- কোন ইভেন্ট?
- ওই যে, শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের নির্লজ্জ কাজ না করা। ফুলের উপর শুয়ে বসে সেলফি না তোলা, গার্লফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ধরে শহীদ মিনারের সামনে ছবি না তোলা, সন্ধ্যাবেলায় শহীদ মিনার চত্বরে বসে গাঞ্জাসেবন না করা—এসবের বিরুদ্ধে যে ইভেন্ট করেছিলাম, ওটার কথা বলছি। শহীদ মিনারের একটা সম্মান তো আছে!
- না রে, যাওয়া হয় নি। মাথা ধরেছিল খুব।
- হুম, জানি। আগের পুরো রাত জেগে ক্ল্যাশ অফ ক্লানস খেলেছিলি বলে মাথা ধরেছিল, তাই যাসনি। আমরা যারা গিয়েছিলাম, তারা অভাবনীয় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম দোস্ত। নানা বয়সের অনেক মানুষ এসেছিল। ধরে বেঁধে আনতে হয় নি। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসেছিল। চোখে পানি এনে দেয়ার মত মিলনমেলা। অথচ কি অদ্ভুত ব্যাপার জানিস। এরা অনেকেই আসে না ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিন।
- কি বলিস? কেন?
- কারণ, নিজেদের চোখের সামনে শহীদদের অপমান সহ্য করতে পারে না এই কারণে। তারা চায় অচিরেই যেন ফেব্রুয়ারির সকালের অনেকের এই বেহায়াপনা বন্ধ হয়। যেন দিনটার ভাবগম্ভীর্য বজায় থাকে। নিছক কোন উৎসবে, আচারে পরিণত যেন না হয় দিনটা। যে আবেগ নিয়ে ভাষা শহীদেরা মৃত্যুমিছিলে গিয়েছিল, তাদের মত না হোক অন্তত এই মানসিকতা নিয়ে যেন আমরা তাদের শোকমিছিলে যাই যে, আমরা দেশকে ভালবেসে যাচ্ছি। ক্যামেরার সামনে ঘাড় উঁচু করার জন্য না। শহীদেরা ফুল চায়না, সম্মানটা চায়। যেটা তাদের দেয়াটা দেশপ্রেম হিসেবেই গন্য হয়।
বন্ধু এবার উঠে দাঁড়ায়। বলে-
- তুই শালা একটা আঁতেল। আমি কি বললাম, আর আমাকে কি শোনালি। তোর কাছে এতক্ষণ বসাটাই আমার ঠিক হয় নি।

ও আর দাঁড়ায় না। হন হন করে হেঁটে চলে যায়। আমি ভাবি আমার কাছ থেকে না হয় চলে গেল, কিন্তু যে কথাগুলো বললাম ওকে, একসময় বিবেক ওকে ঠিকই মনে করিয়ে দেবে কথাগুলো। সেটার কাছ থেকে তো আর হেঁটে দূরে চলে যাওয়া যায় না। এই ভেবে তৃপ্তির একটা ঢেঁকুর তুলি আমি। আর বন্ধুর কথা মত নতুন করে আতলামির নিত্যনতুন উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করি।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: চমৎকার বস্।।
লাল সালাম রইলো।।
আপনার লেখা আমার শরীরের লোম খাড়া করে দিয়েছি।।
ভালবাসি বাংলাদেশ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪২

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ। আমাদের আসলে অতীতকে খুঁড়ে বের করা দরকার। দেশপ্রেম তাহলে গভীর হয়ে যাবে :)

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: বন্ধুর কথা মত নতুন করে আতলামির নিত্যনতুন উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করি।

এমন আঁতেল হতে পারলেও জীবন স্বার্থক।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: :) হুম, স্বার্থক

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একেবারে হৃদয়ে গেথে রাখার মতো!

দারুন দেশপ্রেমের গল্প। সত্যিকারের দেশপ্রেম।

এমন আঁতেলের সংখ্যা যদি দেশে বাড়ত- ভালই হতো।

++++++++++++++++++

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে :)

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৭

মাদিহা মৌ বলেছেন: চমৎকার লেখা!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৮

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
চমৎকার লিখসেন জুলিয়ান ||

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: রক্তে আগুন ধরানো পোস্ট। নতজানু হলাম। ভেবেছিলাম ক্রিকেট নিয়ে কিছু মতদ্বৈততার কথা বলবো, কিন্তু থাক, অন্যদিন হবে। এই পোস্টে অন্তত নয়।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৭

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: :)

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: চমৎকার কিছু বোধকে নাড়া দিয়ে গেলো আবারো

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৮

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার তুলে ধরেছেন

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৮

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.