নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার অদম্য ইচ্ছেসহ আগামীর পথে

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান

আমি প্রতিসাম্য তৈরি করতে ভালবাসি

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইপ্রেমী নাকি বইচোর!!! [আমার জীবনের সত্য ঘটনা]

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪২

তখন আমি ক্লাশ এইটে পড়ি। বইপড়ার অভ্যাস আমার শৈশব থেকেই। আর সেই অভ্যাসটা নেশার দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে তখন। মন তখন পেপারব্যাক আর হালকা-পাতলা বইয়ের রাজ্য ছাড়িয়ে মোটা মোটা আর খটমটে নামের বইয়ের দিকে যেতে শুরু করেছে। ততদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, বয়স্ক আর জ্ঞানী লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে বসে নাকের ডগায় ভারী চশমা লাগিয়ে মোটা মোটা আর খটমটে নামের বইয়ে ডুবে থাকেন দিনরাত। কি এত পড়েন তারা, তা জানার ইচ্ছা থেকে হোক বা নিজেকে একজন মোটা কঠিন বইয়ের পাঠক হিসেবে জাহির করার ইচ্ছা থেকে হোক, আমাকে মোটা বই সংগ্রহ করার নেশায় পেল। নিজের পরিচিত গণ্ডিতে বইপ্রেমী হিসেবে তখন থেকেই আমার নাম রটে গিয়েছিল। সুতরাং এরকম একটা বই যে আমার সম্মান আরও বাড়িয়ে দেবে এরকম একটা চিন্তাও মনের কোনে উকিঝুকি মারছিল। সুতরাং একটা মোটা বই আমার চাই-ই চাই।

কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। আমার জন্য মাসিক বরাদ্দের টাকা থেকে টাকা বাঁচিয়ে বড়জোর পেপারব্যাক (সেবা) বা পাতলা বই কেনা যেতে পারে কিন্তু মোটা, খটমটে নামের বই? কক্ষনো না। আর অভিভাবক মহলে একথা পাড়লে তো “আউট বই” নামে এমন একটা শোরগোল পড়ে যাবে যে, প্রতিবেশীরা ও দৌড়ে চলে আসতে পারে কিছু একটা হয়েছে ভেবে। কি করা যায় ভাবছি। এমন সময় সমাধানটা দেখতে পেলাম। যদিও সমাধানটা একটু...............

আমি তখন সরকারী পাবলিক লাইব্রেরীর একজন নিয়মিত পাঠক। বন্ধের দিন ছাড়া আর প্রায় প্রত্যেকদিনের অবসর এবং স্বঘোষিত অবসর (পড়ুন ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে) কাটে পাবলিক লাইব্রেরীতে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে। একদিন বই পড়ার জন্য বই নিতে সেলফের কাছে গেলাম, তখন হঠাৎই চোখ পড়ল একটা বইয়ের দিকে। সাথে সাথে আমার হৃৎপিণ্ড কয়েকটা বিট মিস করল। আহ, কি সুন্দর খটমটে নাম আর কত্ত মোটা!!! আক্ষরিক অর্থেই নামটা শুধু খটমটে না, ভীষণ শক্তও বটে! বইটার নাম ছিল ‘ইস্পাত’। আর লেখক? ওয়াও!!!! উপরিপাওনা হিসেবে বইটার লেখকের নামটা বইয়ের নামের চেয়েও কঠিন। নিকোলাই অস্ত্রভস্কি। ততক্ষণে আমি দৃঢ় সংকল্প, তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার এই বইটাই চাই! ইতোমধ্যেই কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম, আমার পড়ার টেবিলের পাশে রাখা র‍্যাকের একেবার নিচতলায় স্থাপিত ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর প্রচুর পেপারব্যাক আর পাতলা বইয়ের ভিড়ে মাথা উঁচু করে, গর্বোদ্ধত ভঙ্গিতে বসে আছে ‘ইস্পাত’ মহাশয়।

কিন্তু একটা ছোট সমস্যার উদয় হল। সেদিন রাতে বিছানায় শবার পর মনের অন্য একটা অংশ বলে উঠল, “কি করতে যাচ্ছে জুলিয়ান? লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে আসাটা (পড়ুন চুরি করে আনাটা) কি ঠিক হবে?” কিছুক্ষণের জন্য দমে গেলাম। কিন্তু না, আমি হাল ছাড়লাম না। মনকে বোঝালাম, এ লাইনে আমিই প্রথম না। আমার পুর্বে আরও অনেকে এ কাজ করেছে। এমনকি একজন পৃথিবী বিখ্যাত লেখকের কথা জানি, যিনি তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরী গড়ে তুলেছিলেন বিভিন্ন উরাধুরা উপায়ে বই সংগ্রহ করে। আর বলা বাহুল্য যে, সব উপায় মোটেও নৈতিক ছিল না। সুতরাং অন্য ব্যাপারে যাই হোক না কেন, বইয়ের ব্যাপারে নৈতিকতাটাকে কিছুটা পাশ কাটানো যায়!! মনকে এমনটা বুঝ দিয়ে বইটা বাগানোর প্ল্যান করতে লাগলাম।

পরদিন এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্কুল থেকে ফিরে ‘অপারেশন বুকহান্ট’ এর জন্য নিজেকে গিয়ার আপ করতে লাগলাম! প্ল্যান অনুযায়ী ঢোলা ক্যামোফ্লেজ (পড়ুন ঢোলা শার্ট-প্যান্ট) পরলাম, প্যান্টে বেল্ট লাগালাম। তারপর দুরু দুরু বুকে পাবলিক লাইব্রেরীর দিকে চললাম। সেদিন আর পড়তে মন বসছিল না। বারবার চোখ যাচ্ছিল কাঙ্ক্ষিত বইটার দিকে, আগেরদিন যেটাকে লাইব্রেরীর নির্জন কোনার দিকে সরিয়ে রেখেছিলাম। এরপর সুযোগ বুঝে দুরুদুরু বুকে বইটার দিকে এগোতে লাগলাম। দেহে হরমোনের ক্রিয়ায় ততক্ষণে আমার একেবারে বেহাল দশা। কপাল, হাতের তালু, নাকের ডগাসহ সারা শরীর ঘেমে একাকার। পা দুটো ভাইব্রেশন দিতে শুরু করেছে নোকিয়া ১১০০ মডেলের মত। একবার মনে হল ক্ষান্ত দেই। কিন্তু পরক্ষনেই আবার মন ঠিক করে বইটাকে হাতে নিলাম।

ওমা, একি? এত ভারী কেন!! থাক, ওজন নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন নয়। ঢোলা শার্ট টা উঁচু করে বইটাকে প্যান্টের ভিতরে গোঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক (!!) বেল্ট টা বাগড়া দিল, যেন সে বইটাকে কিছুতেই প্যান্টের ভিতর ঢুকতে দেবে না। আমি ভিতরে ঢুকানোর জন্য যত জোরে চাপ দেই, নিউটনের তৃতীয় সুত্রকে ভুল প্রমানিত করে বেল্টটা তার থেকে বেশি জোরে উল্টোদিকে ধাক্কা দেয়। বইটার পুরুত্বই এই খটমটে সমস্যার জন্য দায়ী। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে মুল্যবান ত্রিশটা সেকেন্ড।

ওদিকে আমার সন্দেহজনক দেহভঙ্গিমা আর হস্তযুগলের রহস্যময় নড়াচড়ায় লাইব্রেরিয়ানের ভুরু কুঁচকে উঠেছে। দেখলাম আমার দিকে তিনি এগুতে শুরু করেছেন। বুঝলাম ‘অপারেশন বুকহান্ট’ এর এখানেই সমাপ্তি। তিনি কাছে এসে বললেন, ‘এই ছেলে, কি করছ?’ আমি সম্মোহিতের মত ঢোলা শার্টের ভিতর থেকে বইটাকে বের করে তার হাতে দিলাম। তিনি বইটাকে সেলফে রেখে আমার দিকে ফিরলেন। আমরা লাইব্রেরিয়ান বলতে যেমন শান্ত, সৌম্য, নিপাট ভদ্রলোককে বুঝি তিনি তা ছিলেন না। তিনি বরং কোন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার পদের জন্য বেশি মানানসই ছিলেন। তাই যখন বুঝলাম তার হাত দুটি আমাকে অর্ধচন্দ্র দেবার দিকে ধাবিত হচ্ছে, আমি আর দাঁড়ালাম না। পড়িমরি করে দে ছুট। অন্য পাঠকেরা তখন পড়া রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবছিলাম, লাইব্রেরীতে আমার পড়াশোনার এখানেই সমাপ্তি। সত্যিই আর কোনদিন যাওয়া হয় নি পাবলিক লাইব্রেরীটাতে।

তারপর বয়ে গেছে অনেকটা সময়। আজ আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে প্রচুর মোটা মোটা আর খটমটে নামের বই আছে। দিনকে দিন বিষয়বস্তু আরও খটমটে হচ্ছে। আমি নিজেও বই লিখতে পারি। তারপরেও ঘটনাটা আজও ভুলতে পারি না। মনে পড়লে ফিক করে হেসে ফেলি। আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে অন্য বইয়ের ভিড়ে ‘ইস্পাত’ বইটা (স্বাভাবিক উপায়েই সংগ্রহ করা) আজ আর মাথা উঁচু করে গর্বোদ্ধত ভঙ্গিতে না বসে থেকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বসে থাকে।

আজ ভাবি ‘অপারেশন বুকহান্ট’ এর দিন লাইব্রেরীর অন্যান্য পাঠকেরা আমাকে কি ভেবেছিল? বইপ্রেমী নাকি বইচোর? আমি তো সব খুলে বললাম। পাঠক, আপনারা কি ভাবছেন?

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪০

জয় মন্ডল বলেছেন: ভাল লিখেছেন। পড়ে খুব ভাল লাগল। আরও আরও লিখুন।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৭

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: লিখব, লিখি। পাশে থাকবেন :)

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা। আপনি চরম রসিক একজন মানুষ সেটা আপনার লেখা পড়েই বুঝতে পারছি; যতই খটোমটো বই নাকের ডগায় আটা চশমার ফাঁক দিয়ে পড়ুন না কেন B-)
আমি নিজেই নিয়ম করে লাইব্রেরী থেকে বই চুরি করেছি। আমার টেবিলের উপরে যে জীবনানন্দ রচনাবলী, সঞ্চয়িতা, গীতবিতান আছে- তিনটাই আপনাদের দোয়ায় লাইব্রেরী থেকে মেরে দেয়া। এবং এক্ষেত্রে আমি বেশ সফল বলা যায়, কারণ কোনোদিন ধরা পড়িনি আর বেশ অনায়াসেই আমি লাইব্রেরিয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে বই নিজের করে নিতে পারি। B-))
আপনাকে জাজ করি কীভাবে বলুনতো!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৫৮

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: আরিব্বাস!!!!! আগে কোথায় ছিলেন। আপনার শিষ্যত্ব বরণ করতে পারলে তো আমার বইয়ের কালেকশনটা আরেকটু বাড়ত। :) একজন সফল বইপ্রেমী(!!) আপনি। হা হা হা হা হা

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৩

পারভেজ উদ্দিন হৃদয় বলেছেন: হুম,বইপ্রেমী বটে, আমার ও ছিল,তবে চুরি করে নয়,বলে নিয়ে আর ফেরত দেয় না,

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: এটাও এক পদ্ধতি। :)

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৪

ঠাহর বলেছেন: আমার ইস্পাত বইটা আমার রুমমেট ৫/৬ বছর আগে পড়ার জন্য যে নিয়া গেল, এখনো দেয় নাই! আমিও ভুইলা গেছিলাম! আপনার লেখা পড়ে মনে পড়লো! হালারপুতেরে আজকাই ফোন দিতে হইবো! হালা বরিশাইল্লা আমার বইটা মাইরা দিছে!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: তাড়াতাড়ি ফোন লাগান। কত বড় হাসের পর্দা, থুক্কু আস্পর্ধা, ইস্পাত মেরে দেয়!!!! :)

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৭

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চুরি করার আগে ভোতাঁ একটা ছোরা রাখতেন সাথে ।তাহলে আর অসফল হতেন না ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৩

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: পরের কোন মিশনে সাথে রাখব :)

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আমি স্কুলের প্রাচীন লাইব্রেরি থেকে বই মেরেছি অনেকবার। অবশ্য আমার দোষ ছিল না, লাইব্রেরি খালি পড়ে থাকত, কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হত না, তাই বিদ্রোহ প্রকাশ করে জানালা দিয়ে লাঠির মাথায় আঠা লাগিয়ে ঢুকিয়ে বই আত্মসাৎ করতুম। আহা কি রোমাঞ্চ ছিল!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ঢুকতে না দিলে আর কি করবেন, মেরে দেয়াই ভাল। অন্তত কিছু লোক তো পড়তে পারবে :)

৭| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪১

বিপরীত বাক বলেছেন: আপনার এই দুঃসাহসিক ও বিপদসঙ্কুল অভিযান নিয়ে একটা বিগ সাইজ কাহিনী টাহিনী বানানো টানানো যায় কিনা তা চিন্তা করা শুরু করবো ভাবছি টাবছি।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করে দেই। কি বলেন!!!!!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

৮| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: হা হাহা । অপারেশন বুকহান্ট !! আমি অবশ্য অতোটা বইপ্রেমী না, বলা যায় বই পড়তে ভালোই লাগে না । কোন লাইব্রেরীর দোরগোড়ায় আমাকে কখনো দেখা যেত না । লাইব্রেরী আর আমি যেন চম্বুকের উলটা পিঠ !! হা হা

বেশ লেগেছে আপনার বই কাহিণী । বিচার করবো কী করে তা ভাবছি, ভেবে দেখলাম আপনি আসলে বইপ্রেমী । তাছাড়া এমন রিস্ক কেউ নেয় !!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৫

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: এতদিনে কেউ আমাকে বুঝতে পারল!!!! ওরে তোরা কে কোথায় আছিস দেখে যে, আমি চোর না, প্রেমিক পুরুষ :)

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০

কঙ্কাল দ্বীপ বলেছেন: ছেলেবেলায় বইপড়বার নেশা ছিলো, মধ্যবিত্ত বাবার কিনে দেয়া প্রতিটি বই পড়ে খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখতাম। আর স্থানীয় একটি লাইব্রেরীর মেম্বার হয়ে দুইটাকা ভাড়া দিয়ে বই ভাড়া আনতাম। সেই ছোট্ট আমার থেকে অনেকে বই পড়বার জন্যে নিয়ে যেতো, কিন্তু কিছু বই মেরে দিতো, যাদের বাসায় বেশ সম্মান করা হতো। জিনিসটা আমাকে এখনও কষ্ট দিয়ে যায়। বাসায় আসা সেলিম ভাই আমার কিশোর জীবনের সেরা বই "মালাকাইটের ঝাপি" মেরে দিয়েছিলেন। আজও চোখের সামনে ভাসে বইটির সবুজ সুন্দর প্রচ্ছদ। আরেক সম্মানিত মোয়াজ্জেম ভাই নীল মলাটের মোটা বই "সেরা সত্যজিত" মেরে দিয়েছিলেন। হারিয়ে গেছে আমি আরেকটি কিনে দেবো বললেও তিনি কথা রাখেন নাই। স্কুলের টিচার হারুন অর রশীদ স্কুল ব্যাগ থেকে মেরে দিয়েছিলেন জুলভার্ণের "হারানো পৃথিবী" । আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছর নতুন বন্ধু মশু তার বান্ধবী ইউনা কে আমার বইটি আমার অমতেই দিয়ে দিয়েছিলো। বাসায় আলমিরার উপর আছে, আনতে পারছিনা বলে বছর কাটিয়ে বইটি মেরে দেয় ও। সেদিন ফেসবুকে হঠাত ওকে খুজে পেয়ে ম্যাসেজ করেছিলাম বইটির জন্যে। উত্তরে সে রসিকতা ছলে আরেকটি কিনে দিতে চায়, কিন্তু বইটি আমার প্রিয় একজনের গিফট করা ছিলো, আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর আমাকে হুমায়ুন আহমদের "কবি" বইটা দিয়েছিলেন তিনি। অন্য একটি কপি আজ আমিও কেনার সামর্থ রাখি, কিন্তু তার সেই ভালোবাসার পরশের উপহার কি তাতে পাবো? বই চুরী করা যত মহান রূপেই দেখানো হোক না কেন, যার বই তার মনের কষ্ট কখনই লাঘব হবার নয়। জীবনে অনেক কিছুই হারিয়েছি (মোবাইল থেকে শুরু করে বউয়ের গহনা পর্যন্ত)। অর্থমূল্যে সেগুলো হয়তো বইয়ের থেকেও দামী , কিন্তু বই হারানোর (অন্যের চুরি) বেদনার মতো সেগুলো এতো কষ্টকর হয় নাই।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: ঠিক :(

১০| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০১

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি জীবনে দুইটা বই চুরি কর্সিলাম লাইব্রেরি থেকে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিলো। কুয়েটের লাইব্রেরি, ধরা পড়লেই এক বছর খায়া দিবে। সেই রোমাঞ্চটা আপনার লেখায়ও পেলাম।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান বলেছেন: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কি আমি করব নাকি?? না থাক, পাঠ্যবই চুরি করে লাভ কি!!!! ওগুলো থেকে দূরে থাকতেই বরং বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.