নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার অদম্য ইচ্ছেসহ আগামীর পথে

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান

আমি প্রতিসাম্য তৈরি করতে ভালবাসি

এম্বিগ্রামিষ্ট জুলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরর ফ্যান্টাসি

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

নখর
- জুলিয়ান

পাগলীটা অল্প কিছুদিন হল শহরটায় এসেছে। একদমই হঠাৎ করে একদিন সকালে জজকোর্টের বারান্দায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। পরনে শতচ্ছিন্ন ময়লা সালোয়ারকামিজ তার ভরাট দেহকে সম্পুর্ন আড়াল দিতে পারছিল না। ষোল সতের বছর বয়স হবে মেয়েটার, চেহারাও বেশ সুন্দর। এরকম একটা মেয়ে এই অবস্থায় কোর্টের বারান্দায় শুয়ে থাকবে এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না সেখানে জড় হওয়া লোকদের।

চৌকিদারের হাকে এরপর জমায়েত যেমন চমকে উঠে, মেয়েটাও চমকে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। অবিন্যস্ত চুলগুলো কাধের দুইপাশে ছড়িয়ে পড়ে তার, মুখের সাথে লেপ্টে থাকে কয়েকটা। ফাকা চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখতে থাকে সে তার সামনে জড় হওয়া বিভিন্ন বয়সী লোকদের। জনতাও তাকে দেখে। কিন্তু তাদের অনেকের দৃষ্টিকে ঠিক সুদৃষ্টি বলা যায় না।

চৌকিদার ভীড় ঠেলে সামনে এসে মেয়েটাকে দুই তিনটা প্রশ্ন করার পর উপস্থিত কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে মেয়েটা স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন নয় বরং বাকশক্তিহীন পাগলী। অফিস সময় শুরু হয়ে আসছিল বিধায় বেরসিক চৌকিদারের হস্তক্ষেপে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আর নতুন কমবয়সী পাগলীর কথা রাষ্ট্র হয়ে যায় চতুর্দিকে।

সেই থেকে শহরেই থাকছে মেয়েটা। প্রথমে কিছুদিন সহমর্মী সমাজসেবকরা তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নীরবে তা প্রত্যাখ্যান করে কি এক অজানা কারনে জজকোর্ট এর প্রাঙ্গণকেই নিজের শোবার জায়গা বানিয়ে নিল মেয়েটা। সারাদিন টোটো করে ঘুরে বেড়ায় শহরের এখানে সেখানে। লোকেরা এটা সেটা দেয়। কেউ টাকা দেয়, কেউবা রান্না করা খাবার দেয়, কেউ আবার দোকান থেকে কিনে দেয়। মোটকথা মেয়েটার খাবার এর কোন কষ্ট নেই। দিনে যেখানেই ঘুরুক না কেন রাতে সে নিজের পছন্দের জায়গাতেই চলে যায়।

কথায় আছে, পুরানো পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি। কথাটা এই পাগলীর বেলায় খাটল না। পুরানো পাগলদের ভাতের অভাব থাকলেও এর জন্য মনে যেন কারোরই দয়ার অভাব নেই। কিন্তু এর পিছে যে শুভঙ্কর এর বড় একটা ফাঁকি রয়ে গেছে তা জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারবেন। শহরবাসী অনেকের আদিমরিপু তলে তলে ধাক্কা মেরে যায় আকর্ষণীয় দেহসৌষ্ঠবের অধিকারিণী পাগলী কে দেখলে! সেই রিপু প্রথম প্রথম কেবল দয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে হাতের বিস্তার বাড়তে লাগল।

শহরটার পুরানো কিছু কুখ্যাতি ছিল। ঠুলি আটা প্রশাসন আর ক্ষমতাশালীদের দৌরাত্ম্য এর কারণে ভয়াবহ সব অপরাধ শহরের একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এর ভিতরে সবচেয়ে খারাপ অপরাধ ছিল ধর্ষণ। যুবতী থেকে শুরু করে কিশোরী হয়ে একেবারে বাচ্চা পর্যন্ত বয়স, ধর্ম, পোশাক কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ধর্ষকদের সামনে। প্রশাসন এর সামনে দিয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত হলেও তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে অত্যন্ত খারাপ আকার ধারণ করেছে ব্যাপারটা। বেশ কয়েকটা খুন হয়ে গেছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষকচক্র যে থাকতে পারে তা এই শহরকে না দেখলে বোঝা যেত না। মেয়েদের অভিভাবকদের প্রতিটা দিন যেন দুঃস্বপ্নে কাটে যে, আদরের মেয়েটা ঠিকমতো ঘরে ফিরতে পারবে তো!

এহেন অবস্থায় পাগলীর আগমন ঘটেছে শহরে, সুতরাং একটা ঘটনা ঘটতে বাধ্য। তাই সেটাই ঘটল...

-------------

শহরের কুখ্যাত অপরাধচক্রের ভিতর সবচেয়ে সক্রিয় ছিল স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার বখে যাওয়া ছেলে পলাশের গ্যাং। এমন কোন অপরাধ নেই যা এই দল করত না। ক্ষমতাবান বাবার ছত্রছায়ায় অন্য বিরোধী পক্ষগুলোকে কেটেছেটে ছোট করে অপরাধজগতের মুকুটহীন যুবরাজ হয়ে বসেছিল এই ছেলে আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা ছিল যুবরাজের সকল কর্মের সঙ্গী।

এই পলাশের দৃষ্টি পড়ল সেই পাগলীর প্রতি। সেক্স এডিক্ট বলতে যা বোঝায় এই ছেলে ছিল তার বাস্তব উদাহরণ। তাই তার আর তার দলের ঝুলিতে ছিল বেশ কয়েকটা ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পরে খুনের ঘটনা। কয়েকটা কেস ঝুলছে ঘাড়ে, কিন্তু তার থোড়াই পরোয়া করে সে। শাস্তি যেহেতু হয় না, অপরাধ করাই যায়- এই হল তার কথা।

যাই হোক। পাগলী তার রাডারের আওতায় এসে পড়ল এবার। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী রতন আর রমিজকে সে তার ইচ্ছার কথা জানালো। আসলে ওদের জানানো আর না জানানো সমান কথা। মেরুদণ্ডহীন এই দুই অপরাধী পলাশের কথায় এমনই বসে ওঠে যে সে যদি বলে যা তোদের অমুক আত্মীয়কে খুন করে আয় তো তারা খুন করে প্রমানস্বরূপ মাথা কেটে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে চলে আসবে।

পলাশের কথা শুনে যথারীতি উৎসাহী হয়ে উঠল দুইজন। প্ল্যান হল শহরের বাইরে তাদের যে 'সেইফ হাউজ' আছে ওখানে তুলে নিয়ে যাবে পাগলী মেয়েটাকে, তারপর আগে যেমন হয়েছে সবকিছু তেমনই হবে। বেশি ঝামেলা করলে লাশ হয়ে পিছের খালে চলে যাবে, আর ঝামেলা বেশি না হলে সবকিছু ঠিকমতোই মিটে যাবে।

প্ল্যান অনুযায়ী পাগলী কে ঠিকই সেইফ হাউজে নিয়ে যেতে পারল তারা। খাবারের লোভ দেখিয়ে একটা মাইক্রোবাসের কাছে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। এরপর হ্যাচকা টানে উঠিয়ে নেয় ভিতরে। আশেপাশে কেউ ছিল না তখন, তাই কাজটার সময় কেউ তাদের দেখতে পায় নি। আর একটা পাগলীর অনুপস্থিতি অত সহজে কারও চোখে পড়ার কথা নয়।

পাগলী হলেও কিছু একটা যে ঠিক নেই সেটা বুঝতে পারল মেয়েটা কিছুক্ষণ এর মধ্যে। চোখের তারায় কাকুতি ফুটে উঠল, বোবাকান্না দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল। কিন্তু ও কি আর জানে কোন পাষণ্ডদের হাতে পড়েছে। বাকশক্তি ওয়ালা মেয়েদের হাজার আকুতি আর চিৎকার যাদের মন গলাতে পারেনি, বোবাকান্না কিভাবে তা গলাবে!!

সেইফ হাউজের বারান্দায় পায়চারি করছিল পলাশ। সেইফ হাউজ বলতে আসলে উঁচু দেয়ালঘেরা বিশাল এক বাংলোবাড়ি। শহরের নির্জন প্রান্তে এক খালের পাড়ে অবস্থিত। এখান থেকে পলাশের বাবা তার জমিজমা আর মাছের বিশাল সব পুকুর সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচলনা করতেন। এখন সেই দায়িত্ব ছেলে পালন করে বিধায় তার আর এদিকে আসা লাগেনা। এই সুযোগে এই বাংলোকে ব্যবসা ছাড়াও অন্যকাজে ব্যবহার করে পলাশ। পায়চারি করতে করতে গাড়ির শব্দ পেল সে। সাথে সাথে শরীরে ছড়িয়ে পড়ল উত্তেজনার এক আবেশ! এই তো আর মাত্র কিছুক্ষণ! দুই সাগরেদের উপর অগাধ বিশ্বাস আছে তার। আজ পর্যন্ত তাদের উপর অর্পিত কোন কাজেই অসফল হয় নি তারা। আজও হবে না।

গেট দিয়ে কিছুক্ষণ এর ভিতরই বাংলোর সামনে এসে দাঁড়ালো মাইক্রো টা। গেট খুলে প্রথমেই বেরিয়ে এল রমিজ। নিয়মিত ব্যায়াম করা পেশীবহুল হাতে ধরে আছে পাগলীকে। সে এখন প্রানপনে চেষ্টা করছে হাত ছাড়ানোর জন্য। আসলে নিষ্ফল চেষ্টা করছে। কয়েকটা হেচকা টানে পলাশের সামনে নিয়ে এল মেয়েটাকে সে। ভাল করে খেয়াল করল পলাশ।

পাগলী হলে কি হবে, স্বীকার করতেই হবে চেহারা এবং দেহসৌষ্ঠব দুইদিক দিয়েই মেয়েটা আকর্ষণীয়। এই মুহুর্তে বড় বড় দুইচোখে রাজ্যের ভয় ভীড় করেছে। তাতে যেন সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে তার। উত্তেজিত হয়ে উঠল পলাশ। রমিজের হাত থেকে পাগলী কে নিয়ে নিল সে। ছোটাছুটি করার জন্য বল প্রয়োগে কোন ক্ষান্ত দিচ্ছে না মেয়েটা। টানতে টানতে ভিতরের ঘরে তাকে নিয়ে চলল সে। রতন আর রমিজ প্রথমে বাইরেই থাকে। ওর শেষ হলে তবে সুযোগ পায় ওরা। ততক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করে।

পলাশ মেয়েটাকে টেনে একদম ভিতরের ঘরে নিয়ে এল। দরজা জানালা বিহীন ঘরটার দরজাটা বিশাল আর ভারী কাঠের তৈরি। ওর বাবা যখন হাতে অনেক কাঁচাটাকা আসত, তা ব্যাংকে রাখার আগে বিশেষভাবে নির্মিত এই ভল্ট টাইপের রুমে রাখত। দরজা আটকে দিলেই বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পলাশ তার কুৎসিত কামনা চরিতার্থ করার জন্য রুমটা ব্যবহার করে। অনেক নিষ্পাপ মেয়ের সর্বনাশের সাক্ষী এর অভিশপ্ত রুমটা।মেয়েটাকে ভিতরে ঠেলে দিয়ে দরজা আটকে দিল পলাশ। উদগ্র কামনায় ওর চোখ এখন চকচক করছে।

পাগলী টা আর নড়াচড়া করছে না এখন। অদ্ভুত চোখে তার সামনে পিশাচরূপী মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে যে এখন দ্রুত তার পরণের কাপড় খোলায় ব্যস্ত। ওদিকে পলাশ একটু অবাক হয়েছে। ভেবেছিল প্রতিরোধ আসবে অনেক বেশি। কিন্তু একদম শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাগলী মেয়েটা। অত ভাবার সময় নেই এখন। শুধুমাত্র নিজের আন্ডারওয়ারটা রেখে বাকি কাপড় খুলে সে বলতে গেলে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ল মেয়েটার উপর।

আর তখনই জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল পলাশ। একেবারে শেষ মুহুর্তে চট করে নিজের জায়গা থেকে একটু পাশে সরে গেল মেয়েটা। পলাশ সাময়িকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল, আর সেই সুযোগে মেয়েটা তার একহাতধরে মুচড়ে পিঠের কাছে নিয়ে আসল এবং অন্য হাত দিয়ে বাকি হাতটা পাকড়াল। বজ্রকঠিন এক বাঁধনে আটকে গেল পলাশ মুহুর্তের মধ্যে।

ঘাড়ের কাছে মেয়েটার গরম নিশ্বাস অনুভব করতেই একরাশ আতংক মাকড়শারজাল এর মত আঁকড়ে ধরল ওকে। ধীরে ধীরে নিশ্বাস টা ঘাড় বেয়ে কানের দিকে উঠছে এখন। সেখানকার চুলগুলো একটা একটা করে দাঁড়িয়ে গেল আতংকে আর মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল শীতল একটা স্রোত। সেই ভয়টা যেন লক্ষগুনে বাড়িয়ে দিতেই কানের গোড়ায় শুনতে পেল একটা ঠান্ডা মেয়েলি কণ্ঠস্বর। 'অনেক অপরাধ করে ফেলেছ বাছা, আর না।'

পাগলিটা কথা বলতে পারে!!!

পলাশের এই ভাবনাটা শেষ হতে না হতেই ঘ্যাচ করে চারটা কর্তন আর দুটো ছেদন দাত মাংস ভেদ করে হামলা চালালো গলার রক্ত নালিকায়। চিৎকার করতে মুখ খুললেও সামান্যতম শব্দ বেরুলো না মুখ দিয়ে। কামড় টা শেষ করেই পলাশকে ছেড়ে দিল পাগলী টা।

অবশ্য মেয়েটাকে এখন আর পাগলী বলা চলে না। কারণ সম্পুর্ন নতুন রূপ ধারণ করেছে সে এতক্ষণে। চামড়া রক্ত হারিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে আর সেই রক্ত যেন দুইটা চোখে গিয়ে জমা হয়েছে সব। টকটকে লাল চোখ নিয়ে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে পলাশকে।

ওদিকে পলাশ ঘাড়ে হাত দিয়ে দুলছে মাতালের মত। চোখের সামনে যেন একটা অর্ধস্বচ্ছ পর্দা কেউ সেটে দিয়েছে। বারবার চোখ কচলে দৃষ্টি পরিষ্কার করতে চেষ্টা করল ও। ধীরে ধীরে শরীরের উপর নিয়ন্ত্রন কমে আসছে। ত্রিশ সেকেন্ডের ভিতরেই পাদুটো তার ভার নিতে অস্বীকার করে বসল। ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেল পলাশ। একচুল নাড়াতে পারছে না হাত-পা। চোখের মনির উপর সামান্য নিয়ন্ত্রণ তখনো রয়ে গিয়েছিল। সেগুলো ঘুরিয়ে চারিদিকে নজর বুলালো সে। পুনর্বার আতংকিত হবার মত বৈশিষ্ট্য তার চতুর্দিক জুড়েই এখন বিরাজমান।

চিরপরিচিত রুমটা যেন ভোজবাজির মত মিলিয়ে গেছে, তার বদলে দেখল স্যাঁতসেঁতে এক গুহারমত স্থানে আলকাতরার মত কালোরঙ এর আঠালো কাদার ভিতর শুয়ে আছে সে। পুরো জায়গাটাই কুচকুচে কাল রঙ এর। দেয়ালগুলো দেখে মনে হচ্ছে কোন জীবিত প্রানীর ত্বকের মত সজীব। মাথার উপর থেকে কালো রঙ এর আঠালো পদার্থ কোথাও চুয়ে চুয়ে আবার কোথাও ফোটায় ফোটায় পড়ছে। এটা নরকের কোন অন্ধকার প্রকোষ্ঠ না হয়ে যায় না, ভাবল ও। পূর্ণমাত্রায় সচেতন অবস্থায় আছে এখন কিন্তু একটুও নড়তে পারছে না। গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা হল, কিন্তু জানে কোন লাভ নেই।

হঠাৎ কাদার প্যাচপেচে আওয়াজ পেল ও। কিছু একটা এগিয়ে আসছে ওর দিকে। কিছুক্ষণ এর ভিতরই চোখের ডানকোনা দিয়ে দেখতে পেল সেটাকে। একটা মেয়ে মুর্তি, না ভুল হল, আদৌ যদি এখন মেয়ে বলা যায় আর কি!! কারন এগিয়ে আসা মুর্তিটার মুখের অর্ধেকটাতে মাংসের কোন চিহ্নই নেই। সাদা রঙ এর হাড় বেরিয়ে আছে একপাশের দাঁতকপাটি সহ। চোখের জায়গায় অন্ধকার কোটর। বাকি মুখে অর্ধগলিত মাংসের তাল প্রতি পদক্ষেপে এমনভাবে কাঁপছে যেন এখুনি তা হাড় থেকে খুলে পড়বে। সারা শরীর বেঢপ ভাবে ফুলে আছে, যেমনটা পানিতে কয়েকদিন ডুবে থাকা লাশের ক্ষেত্রে দেখা যায়। পা ঘষটে ঘষটে পলাশের মুখের একদম সামনে চলে এল সেটা।

অবাক হয়ে পলাশ বুঝতে পারল, এত বীভৎসতা সত্ত্বেও মেয়েটাকে চিনতে পেরেছে সে। মাস ছয়েক আগে এই গরীব মেয়েটাকে তুলে এনে ধর্ষণ করেছিল তারা। বাচ্চা মেয়েটা বাচতে পারেনি। ওই রাতেই রুমের ভিতর মারা যায় সে। পেট কেটে একটা বস্তায় করে খালে ডুবিয়ে দিয়েছিল ওরা। লাশটার হদীস আর কেউ পায় নি। আজ ফিরে এসেছে আবার!!!

অন্যদিকে চোখ ঘুরাল সে, সেই সাথে বুঝতে পারল আজ আর সত্যিই নিস্তার নেই তার। কারণ একে একে বিভিন্নদিক থেকে কুৎসিত রূপে বেরিয়ে এল তার সব শিকার। এমনকি যাকে হত্যা করার পর ট্রেনলাইন এ রেখে আসার ফলে তিনটুকরা হয়ে গিয়েছিল সেও ওইভাবেই গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে তার দিকে। এখন কথা হল তাকে নিয়ে এরা কি করবে!!

চারিদিক থেকে এগিয়ে আসা অপার্থিব বীভৎসতার মাঝে খানিকটা বেমানানভাবে দাঁড়িয়ে ছিল পাগলী হিসেবে যাকে একসময় চিনত সেই মেয়েটা। আজকের ঘটনায় নাটেরগুরুর ভূমিকা পালন করছে যে। একেরপর এক থিওরি ধাক্কা মেরে গেল পলাশের মনে যে, আসলে কি ঘটছে। কিন্তু সব থিওরির শেষ হল একটা কথা দিয়েই যে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত আজ করতেই হবে তাকে। মৃত মেয়েগুলো এসে ওর চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়ালো একে একে, যেন কোন কিছু দেখার জন্য দর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর তাদের মাঝ দিয়ে ধীরেসুস্থে হেটে এল প্রাক্তন পাগলী মেয়েটা। ওর হাতের দিকে তাকাতেই অন্তরাত্মা শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হয়ে গেল পলাশের। দুই হাতের দশটা আংগুল এর আকৃতি এখন আর স্বাভাবিক নেই তার। বরং বদলে গিয়ে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করেছে। তর্জনীটার আকৃতি চিনতে পারল, কারণ একবার মোটরবাইক দুর্ঘটনার ফলে ক্লিনিকের সার্জিক্যাল নাইফ দেখেছিল। অন্য আংগুল গুলোও কোনটা চিমটা, কোনটা বাঁকানো আংটা; মোটকথা চলমান অপারেশন থিয়েটার যেন মেয়েটা।

নিথর পড়ে থাকা পলাশের কাছে এসে বসল সে। 'জীবনভর তো অনেক কাটাকুটি করেছিস তাই না', ঠান্ডা গলায় বলল সে, 'চাপাতি, দা, কসাইয়ের জবাই করার ছুরি, আরও কতকিছু! কত মেয়ের পেট কেটেছিস রে তুই! বুকেরপাটা তো কম না! দেখি কই এত সাহস ধরে তোর!’

ঘৃনায় চকচক করছে এবার মেয়েটার লাল চোখ দুটো। পলাশের নগ্ন পেটের দিকে নজর দিল সে এবার। অন্যরা তাদের বলয় আরও ছোট করে আনল ভাল করে দেখার জন্য! মেয়েটা তার ডানহাতের তর্জনী বসিয়ে দিল পলাশের তলপেটের চামড়ায়। মাখনে গরম ছুরি চালাবার মত করে ভিতরে ঢুকে গেল রূপান্তরিত আংগুলটা। বিস্ফোরিত হল পলাশের দুই চোখ, আঝোর ধারায় অশ্রু গড়াতে শুরু করল কিন্তু একচুল নড়তে পারল না সে। কর্দমশয়নে শুয়ে নিরবে ব্যাথায় কাতরাতে লাগল।

'ভেবে দেখ কুত্তার বাচ্চা, মেয়েগুলোর কেমন লেগেছিল যখন তোরা মজা নিচ্ছিলি', আঙ্গুলটা দিয়ে পেটের চামড়া উপরের দিকে চিরতে চিরতে কথাগুলো বলল মেয়েটা। ঘিরে রাখা আকৃতিদের ঘোলাটে চোখের তারায় দেখা গেল উল্লাসের আভাস। গলাপর্যন্ত চিরে ফেলল সে চামড়া। রক্তে ভিজে গেল কর্তিত অংশের আশপাশ। এখনো ফিনকি দিয়ে ছোটেনি রক্তধারা।

এবার দুই হাতের আংটার মত আঙ্গুল ব্যবহার করে গা থেকে দুইদিকে ছাড়াতে শুরু করল চামড়া। প্রথমে বুকের দিকটাতে ছাড়িয়ে ফেলল। লাল রঙ এর মাংসপেশি বেরিয়ে পড়েছে ওখানটায়। রক্তক্ষরণ শুরু হল পুরোমাত্রায়। ভিকটিমের কষ্টের বর্ননা দেবার চেষ্টা করা নিরর্থক। কল্পনা করে নিন।

কাজ শুরু করার কিছুসময়ের ভিতরেই সে পলাশের বুকের পাজরের উপর থেকে সমস্ত চামড়া ছাড়িয়ে নিল। এটা তো আর অপারেশন থিয়েটার না যে প্রচুর সময় দরকার হবে!!

এবার বুকের স্টার্নাম বরাবর করাতের মত আকৃতির আংগুল চালালো সে। দ্রুতই ব্রেস্টবোনটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। তারপর হাতের আংগুলগুলোকে রিট্র‍্যাকটর হিসেবে ব্যবহার করে পলাশের বুকের পাজর খুলে ফেলল সে। কটকট করে শব্দ করে হাড়গুলো বিদ্রোহ জানাচ্ছিল এই সময়। কিন্তু মেয়েটা থোড়াই পরোয়া করল সেটা।

পলাশের আক্ষরিক অর্থেই খোলা বুকের সামনে এবার ঝুকে পড়ল উপস্থিত সবাই। সুপিরিয়র ভেনা কাভা, এওর্টা, পালমোনারী ধমনী পরিবেষ্টিত হয়ে দুই ফুসফুসের মাঝে একটু বাঁদিক ঘেষে জীবিত কোন প্রানীর মত স্পন্দিত হচ্ছিল লালরং এর হৃৎপিন্ডটা। ওটা দেখার সাথে সাথেই জমায়েতের ভিতর উত্তেজনার একটা ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল। এতক্ষণে বোঝা গেল তাদের উদ্দেশ্য। উপস্থিত সবাই চাচ্ছে যেন ওটার স্পন্দন থেমে যায়, যেন রক্তসঞ্চালন বন্ধ করে দেয় সেটা।

ধীরে ধীরে মেয়েটার ডানহাত তার স্বাভাবিক আকৃতি ফিরে পেল। আস্তে করে হাত ঢুকিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে নিল জিনিসটাকে। জমায়েতের ভিতর মৃদু গুঞ্জন উঠল এবার, ক্রমান্বয়ে বাড়ছে শব্দের বেগ। অচেনা ভাষায় একঘেয়ে সুরে কি যেন বলে যাচ্ছে সবাই।

মেয়েটা ধীরে ধীরে হাত উঁচু করল। এখনো পলাশের দেহে রক্ত সঞ্চালন করে নিজের লয়ালিটি জাহির করে যাচ্ছে হৃৎপিন্ডটা। এবার মেয়েটা তীব্র ব্যথায় নিরবে ছটফটানো পলাশের চোখে চোখ রাখল। সেই চোখের তারায় তীব্র আকুতি প্রকাশ পাচ্ছে, বিপরীতে মেয়ের চোখে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই।

জমায়েতের একঘেয়ে উচ্চারণ এবার তীব্র হয়ে উঠল। মেয়েটার আংগুল আস্তে আস্তে চেপে বসল তুলতুলে মানব অংগটার উপর। এরপর পিচকারির মত রক্ত চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাতের মুঠোয় গলে গেল জীবনদায়ী হৃৎপিন্ডটা। কয়েকবার মৃদু কেপে উঠে চিরতরে স্থির হয়ে গেল পলাশ। এমন কষ্টদায়ক মৃত্যুই ন্যায়বিচার ছিল ওর অপরাধের শাস্তি হিসেবে।

------

এদিকে রতন আর রমিজ বাংলোর বারান্দায় অপেক্ষা করে আছে তো আছেই। এত সময় কেন লাগছে আজ তা বুঝতে পারছে না। এদিকে দুজনে আর সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু পলাশের কঠোর বারণ আছে ভিতরে ঢুকবার ব্যাপারে। তাই চুপচাপ বসে আছে তারা।

এরপরে একটা সময় তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত সদর দরজা খোলার আওয়াজ কানে গেল। কিন্তু তারপরে যা দেখতে পেল তা দেখার জন্য দুইজনে প্রস্তুত ছিল না। দোড়গোড়ায় সারাশরীরে রক্তমাখা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে পাগলী মেয়েটা। দুই চোখ ভাটার মত জ্বলছে এখন তার। এমন প্রাণসংহারকারী রুদ্রমূর্তি দেখে দুইজনেরই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড় হল। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড় দিল দুইজন।

কিছুদুর দৌড়ে যাবার আগেই বাংলোর সামনে একটা দেয়াল বানানোর জন্য সোজা করে রাখা লোহার রডের একটা স্তুপ থেকে আটটা লোহার রড ছুটে এসে বিভিন্নদিক থেকে এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলল রমিজকে। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই ভাইটাল কোন অংগ এড়িয়ে গেল সেগুলো। তীব্র ব্যাথায় রডে গাথা অবস্থায় ঝুলতে লাগল সে। মরার দেরী আছে বহু। কারণ একমাত্র রক্তক্ষরণই মৃত্যু ঘটাতে পারে তার, আর যেভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সেভাবে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে বহু সময় লাগবে। আর ব্যাথা!! সেটা নাই বলি। শুধু বলি, মরে গেলেই বরং ভাল হত রমিজের জন্য।

রতন চোখের সামনে রমিজের অবস্থা দেখতে পেয়েছে। আতংকে বিস্ফোরিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখেছে কিভাবে পাগলী মেয়েটার হাতের ইশারায় রমিজের দিকে রডগুলো ছুটে গিয়েছিল!! আবার ছুটল ও। কিন্তু পাগলী মেয়েটা এত দ্রুত এসে তার একেবারে সামনে দাঁড়ালো যে হৃৎপিন্ড সাময়িকভাবে কাজ করা যেন বন্ধ করে দিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রতনের এক পায়ের গোড়ালি ধরে জোরে এক আছাড় দিল মেয়েটা। শরীরটা মাটি স্পর্শ করা মাত্রই তার হাড় ভাংগার গা গোলানো মট মট আওয়াজ ভেসে এল। ভগ্ন হাড়গুলো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অংগকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষত হল অগ্ন্যাশয় টা। প্যানক্রিয়াস জুস বেরিয়ে ভিতরে সবখানে ছড়িয়ে পড়ল। কয়েক আছাড়ের পর একটা জড় পদার্থের থলের মত হেলাভরে তাকে ছুড়ে ফেলল মেয়েটা ধীরমৃত্যুর জন্য।

এরপর একবারও পিছে না তাকিয়ে সোজা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। ততক্ষণে স্বাভাবিক পাগলী বেশধারণ করেছে।

এখনো অনেক কাজ বাকি আছে তার!!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বর্তমান এবং ভবিষ্যত বাবুল মিয়াদের এটা পড়া উচিত।

২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন গল্প!

বর্ণনা পরিণতি থিম সবই ভাল লাগল :)

++++++++

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: হুমম। মৃত্যুর পর প্রতিশোধ। পরিচিত প্লট। তবে বর্ণনা ভালো...

৪| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০২

ভূষণ্ডির কাক বলেছেন: আপনার এই হরররর......... ফ্যান্টাসিটা কয়েকজনের সাথে বাস্তবে ঘটে গেলে হয়ত আমাদের পরিবেশটা একটু ভালো হতো

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৩৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভায়োলেন্সটা ম্যাড়ম্যাড়ে লাগলো। বর্ণনা ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.