নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন থেকে আমি 'মুক্ত মানব' -এই নিক-এ লিখবো। আপনি আমন্ত্রিত।

মৃম

আমার নতুন ব্লগের লিংক: http://www.somewhereinblog.net /muktamanabblog/ যা দেখি যেভাবে দেখি (কহিলো সে ফিরে দেখো, দেখিলাম থামি , সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি....) [email protected]

মৃম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অর্থনীতির কথিত ওলন্দাজ অসুখ (Dutch Disease): একটি সংক্ষিপ্ত প্রতি-প্রস্তাবনামুলক সুলুক সন্ধান

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৩

ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির কথিত ওলন্দাজ অসুখ নিয়ে। এক অগ্রজ বন্ধু নিজেও এ বিষয়ে দু'কলম লিখেছেন এবং আমিও অনুরুদ্ধ হ'য়ে এ বিষয়ে আমি দু'প্যারা লিখতে সম্মত হয়েছি। আমি এটাই লিখতে চাইছি যে অন্তত দু'টি কারনে ভাইরাল পোষ্টে বর্ণিত 'ওলন্দাজ অসুখ' এর নিরুপন (ডায়াগনোসিস) বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সে কথায় যাবার আগে সংক্ষেপে আরেকবার ঝালিয়ে নেয়া যাক 'ওলন্দাজ অসুখ' কি? "ওলন্ডাজ অসুখ" (Dutch Disease) পরিভাষাটি প্রভাবশালী ইংরেজী সাপ্তাহিক "The Economist" এর ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত একটি সংখ্যার নিবন্ধে প্রথম ব্যবহৃত হয় ষাটের দশকে নেদারল্যান্ডের উপকুলে তেল-গ্যাস সম্পদ আবিষকারোত্তড় রপ্তানী সমৃদ্ধি এবং তদপরবর্তী মুদ্রা বিনিময় বাজারে ডাচ (ওলন্দাজ) মুদ্রার ( গিল্ডারের) তেজী বিনিময় হারজনিত অপ্রধান রপ্তানী পন্যের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে । সময়ের আবর্তে 'ওলন্দাজ অসুখ' পরিভাষাটি জনপ্রিয়তা পায় যেকোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানীর মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় আয় বৃদ্ধি পরবর্তী অপ্রত্যাশিত কিছু অর্থনৈতিক পার্শপ্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে এ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে ১৯৮২ সালে অর্থনীতিবিদ W. Max Corden এবং J. Peter Neary ১৯৮২ সালে এ বিষয়টিকে একটি অর্থনৈতিক মডেল আকারে একটি গবেষনা পত্রে প্রকাশ করেন। অর্থনীতিবিদ Corden এবং Neary এর মডেলটির সারাংশ হলো এ রকম: একটি প্রাকৃতিক (খনিজ) সম্পদশালী ছোট দেশ যার তিনটি খাত হলো নিম্নরুপ: একটি অভ্যন্তরীণ খাত (মুলত: সেবা খাত, খুচরা পণ্য বিক্রয় খাত কিম্বা স্থানীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মান খাত) যেগুলো কিনা দেশটির অভ্যন্তরীন চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, আর দু'টো রপ্তানী খাত যার মধ্যে (বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নিরিখে) একটা উদীয়মান প্রধান (booming) খাত (খনিজ সম্পদ বা লাভজনক কোন কৃষিপণ্য) এবং অন্যটি অপ্রধান এবং অপেক্ষাকৃত প্রথাগত (traditional) রপ্তানী খাত। এই মডেলের কয়েকটি অনুমিতি (assumptions) হলো: ক. উৎপাদনের চারটি উপকরণের মধ্যে (জমি, শ্রম, উদ্যোগ এবং পুঁজি) একটি উপকরন -পুঁজি' এই তিনটি খাতের মধ্যে চলমান নয়, (not mobile),কিন্তু শ্রমিক এই তিনখাতের মধ্যে চলিষ্ণু (mobil ) তাই এই তিনটি খাতে মজুরীর হার কাছাকাছি ; খ. উৎপাদিত সব পণই ভোগ্যপণ্য (কাঁচামাল নয়, সরাসির ভোক্তার ভোগের কাজে লাগে এমন পণ্য; গ। বাণিজ্য ঘাটতি নেই, অর্থাৎ আলোচ্য দেশটির রপ্তানী জনিত আয় এবং আমদানী জনিত ব্যয় কাছাকাছি; এবং ঘ. উৎপাদণের উপকরন সমুহের দাম এবং উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর দাম বাজার কর্তৃক প্রতিযোগীতামুলকভাবে নির্ধারিত। এই মডেলের মর্মার্থ অনুযায়ী এই ওলন্দাজ অসুখটি নিম্নোক্ত কারনে ধাপে ধাপে ঘটে:
১। কোন একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল আন্তর্জাতিক চাহিদার কারনে সে পণ্যের রপ্তানীর পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধির কারনে দেশটিতে দ্রুত প্রচুর অর্থসমাগম হতে থাকে;
২। এই বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আগমনের ফলে দেশের ভোক্তাগণের আয় অনেক বেড়ে যায় , এবং সে কারনে দেশে সকল পন্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়;
৩। এই বর্ধিত আয় দেশের দাম স্তরের উপরে এবং মুদ্রার বিনিময় হারের উপরেও প্রভাব ফেলবে। তবে এই প্রভাব কেমন হবে সেটা কয়েকটা নিয়ামক যেমন সে দেশের মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাজারে কতোটা কাংখিত, সে দেশের মুদ্রা বিনিময় হার কতোটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের চাহিদা এবং যোগানের মিথস্ক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং কতোটা সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী সিদ্ধান্তের দ্বারা নির্ধারিত হয় ইত্যাদি উপরে নির্ভরশীল। সাধারন সুত্র অনুযয়াী যে দেশের পণ্য রপ্তানী বৃদ্ধি পায় আন্তর্জাতিক সে দেশের মুদ্রার চাহিদা বাড়ে এবং ফলশ্রুতিতে সেদেশের মুদ্রার বিনিময় হার বাড়তে পারে (exchange rate appreciation). মুদ্রা বিনিময় হার প্রশাসনিক ভাবে স্থির (fixed) থাকলে আয় বৃদ্ধির কারনে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে জিনিস পত্রের দাম বাড়তে পারে তথে মুল্যস্ফীতি (inflation) ঘটতে পারে। যদি মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনশীল (flexible exchange rate) হয়
মুদ্রা বিনিময় হার প্রশাসনিক ভাবে স্থির (fixed) থাকলে আয় বৃদ্ধির কারনে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে জিনিস পত্রের দাম বাড়তে পারে তথে মুল্যস্ফীতি (inflation) ঘটতে পারে। যদি মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনশীল (flexible exchange rate) হয় তবে দেশের মুদ্রা বিনিময় হার সাধারনভাবে (nominal exchange rate appreciation) বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকারান্তরে দেশের অভ্যন্তরের মুল্যস্তরবৃদ্ধির কারনে মুদ্রা বিনিময়ের প্রকৃত হারও বৃদ্ধি পাবে (real exchange rate appreciation)।
৪। দেশী মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারনে প্রচলিত খাত সমুহের রপ্তানী নিরুৎসাহিত হতে থাকবে, কারন আমদানীকারককে এখন সমপরিমান আমদানী পন্যের জন্য আগের চেয়ে বেশী দাম পরিশোধ করতে হবে (যদিও প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক নব্য জনপ্রিয় খাতের রপ্তানী অব্যাহত থাকবে)। এদিকে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারনে আমদানী খরচ কমবে এবং সে কারনে ইতোপুর্বে দেশে উৎপাদিত হতো এমণ আনেক পন্য বিদেশ থেকে সস্তায় আমদানী হতে থাকবে। ফলে দেশীয় অনেক শিল্প ভোক্তা এবং অভ্যন্তরীন বাজারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গুটিয়ে যেতে থাকবে। এসব সংকোচনশীল খাত থেকে শ্রম, পুঁজি, উদ্যোগ, জমি এসব প্রত্যাহৃত হয়ে রপ্তানীমুখী খাতে পুন:নিয়োজিত হতে থাকবে। এর ফলে সমষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
সংক্ষেপে এই হলো ওলন্দাজ অসুখ। এবারে দেখা যাক কোন দু'টি কারনে এই মডেলের সাথে বাংলাদেশেকে মেলানো যাবে না।
এক। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী পণ্য কোন প্রাকৃতিক খনিজজাত সম্পদ নয়, মনুষ্যশ্রমের দ্বারা উৎপাদিত তৈরি পোশাক। দেশের মোট রপ্তানী আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ বর্তমানে এই খাত থেকে আসে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় রপ্তানী আয়ের উৎস জনশক্তি রপ্তানী । উভয় খাতই এখন পর্যন্ত ক্রমবর্ধনশীল। এই বাস্তবতাগুলো ওলন্দাজ অসুখের বর্নিত উপসর্গের সাথে মিলছে না।

দুই। ছত্রিশটি দেশের মুদ্রার সাথে বাংলাদেশের টাকার গত দুই দশকের বিনিময় হার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মাত্র কয়েকটি দেশ (সিরিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলন্কা, নেপাল, কানাডা) ব্যতীত অধিকাংশ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপুর্ণ দেশের মুদ্রার বিপরীতেই বাংলাদেশের মুদ্রা হারের অবনয়ন (exchange rate depreciation) ঘটেছে যা বাংলাদেশের রপ্তানীর জন্য হিতকর এবং যা ওলন্দাজ অসুখের উপসর্গগুলোর সাথে মিলছে না। দেশে মুল্যস্ফীতি যদিও ঘটেছে, তবে সেটা এখনো সমষ্টিক অর্থনীতির জন্য তেমন উদ্বেগের কোন কারন হয়ে দাঁড়ায় নি।
মুলত: উপরে উল্লেখিত এই দুটি কারনের ভিত্তিতে বলা যায় ওলন্দাজ অসুখের উপসর্গ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দৃশ্যমান নয়।


তথ্যসূত্র:

1. Bangladesh Bank database
2. Bangladesh Garments Manufacturers and Exporters Association database
3. Brinčíková, Z. (2016). The Dutch Disease: An Overview, European Scientific Journal, Special edition, pp. 95-101
4. Corden W.M., Neary J.P. (1982). Booming Sector and De-industrialisation in a Small Open Economy. The Economic Journal, 92, pp. 829-831।
5. World Bank database
6. The Dutch Disease. The Economist, 26 November, 1977, pp. 82-83.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.