নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে সমুদ্র পারি দেওয়া ছেলেটি জেগে উঠে দেখে সে মাত্র বিছানার এপাশ ফিরে ওপাশে শুয়েছে মাত্র

অমিত বসুনিয়া

পৃথিবীর মৃত্যু ঘটুক শূধু তৃনলতাগুলো বেড়ে উঠুক , ছুয়ে দিক নীল আকাশের ভ্রান্ত সীমানা ।

অমিত বসুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনাহির কথা

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:২৫

আনাহি,আনাহির ছোট বোন তনয়া এবং দুঃসম্পর্কের এক খালামনি ইয়ানা ইসলাম অনেক সময় থেকেই কয়রা বাস স্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। তনয়ার খুব শখ ছিল সুন্দরবনে আসার, খালামনি ইয়ানা ইসলাম আর আনাহিরও বিন্দু মাত্র কম ছিল না ইচ্ছেটা। কিন্তু অনেক সময় হিসাব নিকাশ করে চলার জন্য কিছু ইচ্ছে ধামা চাপা দিতে হয়। হিসাব করে সংসার চালানোর সময় দেখা যায় ইচ্ছে থাকলেও সংসার বাঁচানোর জন্য অনেক ইচ্ছা মারা যায়, আবার কখনো অনেক ইচ্ছা প্রকাশ করার ইচ্ছা জাগে না। হয়তো এজন্যই ইয়ানা ইসলাম, আনাহি ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। আনাহির চার বছরের ছোট তনয়া । আনাহির কখনোই মনে হয়না সে তনয়াকে ভালো বাসে । কখনো তনয়ার সাথে ভালো মত কথা বলে না কিন্তু আনাহি যখন বকা দেয়,তনয়া মুখ গোমড়া করে বসে থাকে, লুকিয়ে কান্না করে তখন আনাহির খুব মন খারাপ হয়, বুঝতে পারে কতটা ভালোবাসে বোনকে। আনাহির এগারো বছর বয়সে মা মারা যায় চিকিৎসার অভাবে। বাবা ছিল বাউন্ডুলে স্বভাবের। কোন কাজ ঠিক মতো করতেন না। বিভিন্ন মাজার শরীফে ঘুরে বেড়াতেন, কবিরাজির নাম করে অচেনা লোকদের ঠকিয়ে টাকা নিয়ে জুয়া খেলে উড়াতেন। কখনো মানুষের বাড়ি বাড়ি খেয়ে বেডাতেন। মেয়েরা কি করছে, কি খাচ্ছে তার কোন খোঁজ করেনি। বাবাকে মা অনেক বকতেন, অকথ্য ভাষায় গালি দিতেন। বাবা দাঁত বের করে নির্লজ্জের মত হাসতেন তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। গালি দেওয়ার জন্য বাবা একদিন ভীষণ ভাবে মাকে মেরে ছিলেন। ঐ দিনের পর থেকে বাবা আর বাড়ি ফিরেননি, কোন খোঁজও নেননি কারো। মা যেন আপদ বিদায় হয়েছে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। পুরুষ মানুষ ঘরে বসে বউয়ের কামাই খাবে এটা মেনে নিতে পারেনা কোন নারী। আনাহির মা নিহারীকা খাতুনও মেনে নিতে পারেননি। রাস্তায় মাটি তোলার কাজ করে নিহারীকা খাতুন তার সংসার চালাতেন। তনয়া তখন খুব ছোট, আনাহিও তেমন কিছু বুঝতো না। শুধু এতটুকু মনে হতো এক বেলা খেয়ে না খেয়ে থাকা, মাসে দুই একবার মাছ মাংস খাওয়া মানে পৃথিরীর সব সুখ পেয়েছি বলে ধরে নেওয়া। কেউ দশটা থাপ্পড় দিয়ে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে কথা বললে মনে করা খুব ভালোবাসে তাকে । নিহারীকা খাতুন মোটেও লিখা পড়া জানতেন না কিন্তু পড়ালেখা মূল্য বুঝতেন । তাই হাজার কষ্টের মাঝেও চেয়েছিলেন মেয়ে লেখা পড়া শিখুক। অভাবের সংসার হলেও বেশ কেটে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ এক দিন রাতে খাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছে আনাহি তখন বুঝতে পারে মা কেমন করছে। ভয়ে ভয়ে যায় মায়ের কাছে, যানতে চায়
- কি হয়ছে মা?
-কিছু না মা, বুকে ব্যাথা করছে। তুই ঘুমায় যা। ভয় পাসনা আমার কিছু হবে না।
-ঐ দিন রাতে আনাহি আর ঘুমাতে পারে না । মায়ের বুকের ব্যাথা বেশি হয়েছিল। আশেপাশের বাড়িতে ছুটে গিয়ে ডেকে এনেছিল অনেক কে। মায়ের ব্যাথা কমানোর জন্য অনেকে তেল মালিশ করে ছিল বুকে , মাথায় পানি দিয়েছিল কিন্ত মায়ের ব্যাথা কমেনি। ঐ সময়ও মা তনয়ার কথা কি যেন বলছিল বুঝা যায়নি, আনাহির কথাও বলেছিল। এক সময় মা চুপ করে যায়। শান্ত মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড়ে যে ঘুম কখনো কারো ভাঙ্গে না। ঐ দিনও বাবার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু মানুষের কাছ থেকে শুনা গেছে বেঁচে আছেন তিনি । আনাহিকে অনেক পরিচিত এসেই উপহাস করে বলছে তোর বাবা সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল।কেউ বলে তোর বাবাকে দেখালাম চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, পিছ মোড়া দিয়ে বেঁধে মানুষ তোর বাবাকে মারছে। আমাকে দেখলে বাঁচাতে বলতে পারে তাই পালিয়ে এসেছি। আবার কেউ বলেছে তোর বাবাকে দেখলাম রাস্তার পাশে জুতা সেলাই করছে। আনাহি একবার নয় অনেক বার শুনেছে এমন কথা,কিছু বিশ্বাস করেছে আবার কিছু বিশ্বাস করেনি। কাউকে কিছু বলতেও সাহস পায়নি শুধু ছোট্ট তনয়াকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে থেকেছে। আর প্রার্থনা করেছে আল্লাহ তুমি সব ঠিক করে দাও। কোথাও লুকোনোর মত একটা জায়গা করে দাও।

মনে হয় একদিন আল্লাহ শুনলেন সব কথা। বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ালেন ইয়ানা ইসলাম। শুধু পাশেই দাঁড়ালেন না মায়ের যতটুকু দায়িত্ব পালন করা উচিত তার সবটাই করেন। ইয়ানা ইসলামের বাসা ঢাকা মোহাম্মদপুরে। তিনি মোহাম্মদপুরের একটা কলেজের শিক্ষিকা। মোটামুটি স্বাধীনচেতা একজন মহিলা । একাকি একটা ছোট্ট ফ্লাট নিয়ে থাকেন। কোন এক কারণে বিয়ে করেননি, একা থাকা টাই আনন্দের বলে মনে করেন । ক্লাসের ফাঁকে এখানে সেখানে ঘুরে ফিরে সময়ই কাটানো আর গরীব মানুষকে সাহায্য করাটাকে এক মাত্র কাজ বলে ধরে নিয়েছেন। একদিন ইয়ানা ইসলাম আনাহিদের গ্রাম আনন্দপুর উপস্থিত হন। আনাহি আর তনয়া কে দেখে মায়া পড়ে যায়, নিয়ে যায় ঢাকায়। নতুন করে জীবন শুরু করে, মা বোন বন্ধুর মত আগলে ধরে আনাহি তনয়াকে। আনাহি তনয়া ই যেন নিজের দুই মেয়ে আর ওদের ও মনে হয় ইনায়া ইসলাম ই আসল মা। দেখলে মনে হয় মা মেয়েদের ছোট্ট সংসার, সুখী পরিবার।
এখন আনাহি তনয়া বেশ বড় হয়ে গেছে। আনাহি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাইড কেমিষ্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইনজ্ঞিনিয়ারিং এ পড়ে। তনয়া এবার ইন্টারমিডিয়েটে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে কিন্তু তারপরও পিচ্চিদের মতই রয়েগেছে। আর এই পিচ্চি মেয়েটির আবদার রাখতেই খুলনায় আসা। খুলনায় আসার দুই দিন আগের কথা, আনাহি সাহায্য করছে এবং ইনায়া ইসলাম রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। হঠাৎ করে তনয়া এসে
- খালামনি তোমার কাছে কিছু টাকা হবে?
- হঠাৎ তুই টাকা কি করবি? কয় পয়সা লাগবে?
- হুমম! বলোতো আছে কিনা।
- আছে অল্প কিছু।
- অল্প থাকলেই চলবে।
আচ্ছা খালামনি অহন ভাইয়াদের বাসা না খুলনা তে?
হ্যা, কেন তা তো বল?
- খালামনি চলো না আমরা সবাই খুলনা থেকে ঘুরে আসি। অনেক দিন হলো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওনা।
- এবার আনাহি ও সুর মিলালো খালামনি চলোতো যায়। আমারও যেতে ইচ্ছে করছে।
ব্যাস। পুরোনো ইচ্ছে টা আবার দোলা দেয় মনে ইয়ানা ইসলামের মনে আর না করতে পারেনি।
অহন কে কল করে বললেন, অহন আমরা আগামি কাল তোমাদের বাড়িতে যেতে পারি। অহন জবাবে বলেছিল যখন বের হবেন আমাকে একটা কল করে দিয়েন, কখন,কিভাবে আসতে হবে এই সব আরো অনেক কিছু।

-অহন ও ঢাকা থাকে, পড়াশুনার পাশাপাশি একটা কোম্পানিতে কাজ করে। অহনের নানির জমি সংক্রান্ত কিছু কাজ করার জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। ছোট্টবেলায় অহনের বাবা মা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় তারপর থেকে নানির সাথে থেকে মানুষ অহন । নানা মারা গেছেন অনেক আগেই। বুড়ি নানি খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে মানুষ করেছে অহন কে।

অহন আনাহিদের বাসায় অনেক বার এসেছে। ইনায়া ইসলাম অহনের দুঃসম্পর্কের ফুফু হয়। এই সুবাদে অনেক বার আসে তাছাড়া অহনের কথাবার্তা, ডাক শুনেও ভালো লাগে ইনায়া ইসলামের। অহনকেও ছেলের মতই মনে করেন ইনায়া ইসলাম। আনাহি তনয়ার সাথেও ভলো সম্পর্ক অহনের। আনাহি তনয়ার খোঁজ নেওয়া একদিন বাদ যাই না অহনের। ঠিক যেন ভাই বোনের সম্পর্ক, বোনদের কাজ আবদার করা আর ভাইয়ের কাজ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।

- খুলনাতে আসার সময় গাড়ির অভাবে বিরক্ত হয়েছিল আনাহি রাস্তা থেকেই ফিরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু খালামনির বকা শুনে চুপ করে গিয়েছিল। গ্রামের রাস্তা, দু পাশে সারিসারি গাছ লাগানো।গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির ডাক, দুপুরের খাঁ খাঁ রৌদেও প্রকৃতির মৃদুল হাওয়া দোলা দিয়ে যায় মনে। ব্যস্ত শহর থেকে এই মৃদু হাওয়া গায়ে মাখার জন্যই ব্যস্ত মানুষ গুলো একটু সুযোগ পেলেই ছুঁটে আসে প্রকৃতির কাছে।

অহনদের বাড়িতে এসে খুব কষ্ট লেগেছে আনাহির। অহনদের বাড়ির ঘর দুইটা,আসলে ঠিক বাড়ি বলে মনে হয়নি আনাহির। খুব ছোট একটা ঘর। গ্রামের বাড়িতে ঘর গুলো বেশ বড় হয় কিন্তু এটা সেই তুলনায় যথেষ্ট ছোট। ঘরের মধ্যে একটা চৌকি রাখা হয়েছে। ছোট ঘর বলে অর্ধেকটা বেশি জায়গা চৌকি নিয়ে নিয়েছে।চৌকির সামনে কাঠের পুরনো একটা ছোট্ট বাক্সো । বাক্সোর উপরে অহনের কিছু শার্ট প্যান্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বাক্সোর পাশেই একটা সাইকেল রাখা। পাশের ঘরে টিন দিয়ে গুরুর ঘর তৈরি করা। তার সামনে শুধু বৃষ্টির পানি না পড়ার জন্য খরের ছাউনি দিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য ছোট্ট জায়গা করা।বাড়িতে থাকার মত একটাই ঘর। দেখে বুঝাই যাচ্ছে এ ঘরে অহন থাকে। চৌকির উপরে অহন ঘুমায় আর অল্প একটু জায়গার মধ্যে মেঝেতে গুটি শুটি মেরে কোন ভাবে অহনের নানি ঘুমায়। একটা ঘর এটা কোন ব্যাপার না, ঘর অগোছালো হলেও ঘুমানো যায় কিন্তু ঘরটা ঘুমানো তো দুরের কথা এক মিনিট বসার জন্যও অনুপযোগী। কারণ, পাশের ঘর থেকে গবরের যে দূর্গন্ধ আসছিল তার জন্য এর মধ্যে তনয়া বমি করা শুরু করেছে।আনাহি ও অনেক কষ্টে দাঁত চেপে আস্তে করে ঘরে থেকে বের হয়ে এসেছে। তখন অনেক খারাপ লেগেছে অহনের জন্য। তনয়াদের জন্য এক খালার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছিল অহন। তাই শেষ পর্যন্ত একদিন থাকতে পেরেছিল আনাহি আর তনয়া।

দুপুরের মধ্যে অহনদের বাসায় পৌছয় সবাই। দুপুরের খাবার খেয়ে ঐ দিনই সুন্দরবন থেকে ঘুরে আসে সবাই। রাতে তনয়া এবং আনাহি অহনের সাথে বাজারের দিকে ঘুরতে যায়। বাজারে অহনের কিছু বন্ধুর সাথে পরিচয় হয় আনাহির
এক বন্ধু -আপনি আনাহি? অহন আপনার কথা এত বলে যে আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।

আরেক বন্ধু- আপনার যত কথা শুনেছি আপনি তার থেকেও অনেক সুন্দর....

ফুসকা খেতে খেতে অহন আরেক বন্ধুকে দেখিয়ে বললো আমার বন্ধুদের মধ্যে সব থেকে কিপ্টা। এখন পর্যন্ত খেয়েই আসছে সবার কাছ থেকে, কাউকে এক টাকার কিছু খাওয়ায়নি। আজ তুমি বললে তোমাকে খাওয়াবে।
বন্ধুটি মজা করে বলেছিল আপনি কি চান আমি আমার এতদিনের গড়া রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলি।
আনাহি হেসে ছিল অনেক , তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিল। অহনের বন্ধুরা তাকে এক আপন করে নিয়েছে!!
আজ চলে যাওয়ার সময় অহন আর অহনের একটা বন্ধু এগিয়ে দিতে এসেছে।

বাসে ইনায়া ইসলাম আর আনাহি পাশাপাশি বসেছে,তনয়া ঠিক তার পিছনের সিটে বসেছে। দুই বোনকে খালামনি একসাথে বসার জন্য বলেছিল কিন্তু জানালার পাশে বসা নিয়ে আলাদা বসা। বাসটা দাঁড়িয়ে আসে, সব যাত্রী উঠে গেলেই বাসটা ছেড়ে দিবে। বাসের হর্ন দিচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়বে বাস।আনাহি বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে অহন দৌড়ে কোথাও যাচ্ছে। বাসটি ছেড়ে দিছে এমন সময় অহন দুইটা কোন আইসক্রিম হাতে নিয়ে বাস থামিয়ে,
- আনাহি! তুমি না আইসক্রিম পছন্দ করো। নাও।
বাস দ্রুত গতিতে চলা শুরু করেছে। আনাহি আইসক্রিম হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছে। এতক্ষণ পরে-
-খালামনি! দেখছো, অহনের মনে আছে আমি আইসক্রিম পছন্দ করি। শুধু মাত্র আমাকে খুশি করার জন্য এভাবে আইসক্রিম আনতে গিয়েছিল। অথচ আমি গত তিন মাসের মধ্যে অহনের সাথে কোন কথা বলিনি।

- অহনের সাথে তুমি আর রেগে কথা বলোনা। নিজের চোখেই তো দেখলে কিভাবে থাকে ছেলেটা। তোমার তো ওর কষ্টো টা বুঝা উচিত। ভালো ভাবে কথা বললে কেউ খারাপ বলবে না তোমাকে।

-তিন মাস আগে, আনাহি অহনকে কল করে বলেছিল-
- অহন, কাল তুমি একটু আমাদের বাসায় এসো, খালামনি আসতে বলেছে।
- ঠিক আছে আসবো তুমি যদি আমাকে বাজার থেকে এসে নিয়ে যাও তাহলে।
- আচ্ছা! এসো।
আনাহি ভেবেছিল অহন হয়তো শয়তানি করছে, যেহেতু বাসা চিনে তো নিয়ে আসতে হবে কেন।
- অহন বাজারে এসে কল করে বলেছিল
-কই তুমি? আসবে না?
- তুমি তো বাসা চিনো, আমাকে যেতে হবে কেন? রিক্সা নিয়ে চলে এসো।
- না, তুমি যদি না আসো তাহলে আমি যাবো না।
- ঠিক আছে,আসতে হবে না, চলে যাও।
-অহন ঐ দিন তিন ঘন্টা বাজারে বসে ছিল। কল করে আনাহিকে অনেক কথা শুনিয়েছিল। তারপর থেকে আনাহি আর কথা বলেনি অহনের সাথে। অহন অনেক বার সরি বলেছে। তারপরও বলেনি।
অহনদের বাড়িতে না আসলে হয়তো আর বলাও হতো না।

ঢাকায় আসা অনেক দিন হয়ে গেছে। অহনও বাসায় রীতিমত আসা যাওয়া করে। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে অহনকে কল করে খেয়ে যেতে বলে আনাহি। তনয়া মাঝে মাঝে বায়না ধরে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার জন্য । তনয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে আনাহি কেও যেতে হয়। আনাহির খুব শখ রান্না করার, একেক দিন একেকটি নতুন আইটেম রান্না করে আর খারাপ হলেও খুব ভালো হয়েছে বলে শেষ করা অহনের কাজ। একদিন চাল কুমড়োর বড়ি রান্না করে খেতে দিয়েছিল অহন কে। অহন বেশ মজা করেই এক বাটি খেয়ে উঠেছে। এমন সময় তনয়া বললো আপু আমাকেও দে, আমিও খাবো। তনয়া
একটু মুখে দিয়ে সব বের করে বললো। ওয়াকথু, শুধু হলুদ। লবণ,মরিচ কিছু নাই। অহন কে অনেক বকেছিল ঐ দিন। তারপর থেকে আনাহি রান্না করলে অনেক সাবধানে রান্না করে। আগে না খেয়ে কাউকে খেতে দেয়না অানাহি।

অহনের প্রতি কেমন একটা মায়া জমে গেছে আনাহির। বুঝতে পারে অহন আনাহিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে,ভালোবাসে অনেক । কিন্তু আনাহি তো ভালো জানে একজন মানুষকে, ভালোমত কথা বলে,এর বেশি কিছু নয়।
কিন্তু অহন! অনেক বেশি ভেবে ফেলেছে। অনেক কিছু বলতে চাই আনাহি কে। আনাহি বুঝেও না বুঝার ভান করে,এড়িয়ে যায়।
একদিন আনাহির হাত ধরে বলেই ফেললো অহন
- আনাহি, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
-বলো,কি বলবা?
- আমি কি বলতে চাই তুমি বুঝতে পারোনা?
- না, বলো।
সত্যিই কি তুমি বুঝতে পারো না?
- তুমি যেটা বলতে চাচ্ছো তা কখনোই সম্ভব নয়।
- কেন সম্ভব নয়?
- জানিনা।
-তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?
- আমি যেন এই কথাটা আর তোমার মুখে না শুনি। আর শোনো তুমি আমাকে কখনো কল করবে না। তোমার সাথে আজ থেকে আমার থেকে আমার কোন কথা নায়। তুমি ভালো করেই জানো খালামনি তোমাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন। আর খালামনি যদি এ কথা জানতে পারেন তাহলে তোমাকে কি করবেন তুমি বুঝতে পারো?
- হুমমম,জানি। ঠিক আছে,তুমি না মানতে চাইলে মানবে না কিন্তু প্লিজ ফুফু কে বলো না।
- দেখি বলে চলে এসেছিল সেদিন আনাহি আর অহন করুণ দৃষ্টিতে আনাহির চলে আসা দেখেছিল।

অহনের কথা রাখেনি আনাহি। বলে দিয়েছে খালামনি কে। খালামনি বলেছেন, তুমি একথা আর কাউকে বলো না আর অহনকেও বুঝতে দিও না যে আমি জানি এ ব্যাপার টা।

-অহন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে এতদিনে। ভালোবাসার কথা বলেই যেন আরো বেশি কষ্টে আছে অহন। ঐ দিনের কথা গুলো আনাহিকে না বললে আজ কত ভালো সময় কাটতো। অন্তত আনাহির কাছে অপরাধী হতে হতো না। আনাহি বলা কথা গুলো ভুলে যেতে চেয়েছে বারবার। আবার আগের মত করে হাসতে চাই, কথা বলতে চাই আনাহির সাথে। খালামনি লক্ষ্য করেছেন, অহন ঠিক মতো অফিসে যায় না, খাওয়া দাওয়া করে না, পড়াশুনায় মনোযোগ নেই । মুখ চোখে কেমন হতাশার চিহ্ন। খালামনি সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে জানতে চেয়েছেন
- কি হয়ছে অহন?
- জানিনা ফুফু, রাতে ঘুম আসেনা। কিসের যেন চিন্তা কাজ করে মাথায় ধরতে পারি না, কোন কাজে মন বসে না।
- তুমি না ঐ দিন বললে কিসের ব্যবসা করবে, তার কি হলো? কবে থেকে শুরু করছো?
- ফুফু আমার আর এসব কাজ নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না। আমার কিছু ভালো লাগে না। আমি জানিনা আমি কি করবো।
-ইনায়া ইসলাম বুঝতে পারেন সব কিছু। অহনের বিয়ে দিবেন বলে ঠিক করেন কিন্তু অহন রাজি হয়নি বিয়ে করতে।
বিয়েতে রাজি করানো জন্য আনাহি অহনের সাথে কথা বলেছিল একদিন
- তুমি বিয়েটা করতে রাজি হচ্ছো না কেন?
- আমি কখনো বিয়ে করবো না।
- তুমি কি চাও তোমার ঐ কথা গুলো আমি খালামনি কে বলে দিই?আর যদি তুমি বিয়ে করতে রাজি না হও তো আমি খালামনি কে সব বলে দিব।
- না, প্লিজ তুমি এটা করো না আর এজন্য তুমি যা বলবে আমি তাই করবো কিন্তু কাউকে বিয়ে করতে বলো না ।
- সমস্যা কি জানতে পারি?
-আমার কোন সমস্যা নাই।
- তাহলে বিয়ে করছো না কেন?
- তুমি যদি চাও আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবো না। তারপরও প্লিজ বিয়ে করার কথা বলো না। আমি আগের মতো করে থাকতে চাই। প্লিজ, আমার মত থাকতে দাও আমাকে।

আনাহি বুঝতে পারে অহন ভালো নেই। আনাহিকে ভালোবেসে ভালো নেই অহন। কিন্তু ভালোবাসা তো অন্যায় নয় তাহলে ভালো থাকবে না কেন সে? আনাহি যে অন্য কাউকে ভালোবাসে, যাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলা হয়নি। আনাহি কখনো বলবেও না তাকে ভালোবাসার কথা। কিছু কিছু ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করতে নেই, প্রকাশ করলে শুধু কষ্টই বাড়ে। এটা আনাহি বিশ্বাস করে। ভালোবাসা মানেই কাউকে ভালোবাসি বলে পাগল হয়ে পিছে পিছে ঘুরার নাম ভালোবাসা হতে পারে না। ভালোবাসি বলেই কারো জন্য নিজের ক্ষতি করার নাম ভালোবাসা নয়। কারো কাছ থেকে কিছু আশা না করে,নিঃস্বার্থ ভাবে কাউকে ভালোবাসার নামই ভালোবাসা। কারো মুখ থেকে ভালোবাসার কথা না শুনে,তাকে না দেখেও ভালোবাসতে পারাটাই ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষটির ভালো লাগার জিনিস গুলোকে ভালোবাসতে পারাটাই ভালোবাসা। দুরে থেকে কাউকে ভালোবেসে পাশাপাশি থাকতে পারাটাই ভালোবাসা। এই ভালোবাসা কখনো মিথ্যে হয়না, কষ্ট পেতে হয় না, কাউকে ঘৃণা করতে শিখায় না।শুধু ভালোবেসে যেতে শিখায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.