নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে সমুদ্র পারি দেওয়া ছেলেটি জেগে উঠে দেখে সে মাত্র বিছানার এপাশ ফিরে ওপাশে শুয়েছে মাত্র

অমিত বসুনিয়া

পৃথিবীর মৃত্যু ঘটুক শূধু তৃনলতাগুলো বেড়ে উঠুক , ছুয়ে দিক নীল আকাশের ভ্রান্ত সীমানা ।

অমিত বসুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইষিমুশি - পর্ব ৪ - অমিত বসুনিয়া

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০০

ভোর ৬ টা বেজে ১৩ মিনিট ।
এলার্ম নামের অদ্ভুত বস্তুটা টানা ১৩ মিনিট ধরে ডেকে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো । নিয়মের বহির্ভুত কোনকিছুই শরীর সহ্য করে না ,বিছানা থেকে নামতে গিয়ে সামনে থাকা চেয়ারের সাথে বাড়ি খেলাম । এত সকালে লোকজন কেমন করে উঠে কে জানে ? ঘুম ঘুম চোখে ব্রাশ এ পেস্ট লাগাচ্ছিলাম , হাত কাপতেছিল । হাটতে গিয়ে পায়ের তলায় নরম কিছু আঠার মতো লেগে গেলো , পরে আবিস্কার করলাম কাপা হাতে পেস্ট ব্রাশে লাগাতে গিয়ে মেঝেতে পরে গেছে । ব্রাশ টা মুখে ঢুকিয়ে মুখের এপাশ থেকে ওপাশ করতে করতে এগুচ্ছি । ব্রাশ প্রতিবার নড়াচড়া করার সাথে সাথে মাথার ভেতর করাত দিয়ে কাঠ কাটার সময় যেরকম শব্দ হয় সেরকম শব্দ হচ্ছিল । দরজা খুলে বাইরে এসে দারালাম । সুর্য তখন পুর্বাকাশে এসে দ্বাড়িয়েছে মাত্র । সদ্য বিয়ে হওয়া গ্রাম্য বধুর পায়ের আলতার মতো রক্তিম সে সুর্য । ধীরে ধীরে রঙ বদলাচ্ছে , রঙ বদলে হলুদের দিকে যাচ্ছে । পরিবর্তন এত সুক্ষ ভাবে হচ্ছে যে মস্তিষ্ক অত সহজে জিনিসটা ধরতে পারছে না । আমি হা হয়ে খানিক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম । সৎবিৎ ফিরে পেলাম যখন মুখ থেকে কিছু ফেনা গড়িয়ে স্যান্ডো গেঞ্জিতে পড়লো । বাইরে দেখি মজিদ চাচা চাটাই গাথছে । তার মুখের মধ্যে সুপারির ছাল , গ্রামের লোকদের অনেকেই দাত মাজা ব্রাশ হিসেবে সুপারির ছাল, কয়লা বা গাছের ডাল ব্যাবহার করে । মজিদ চাচা হঠাৎ হঠাৎ চাটাই গাথা বন্ধ করে মুখ থেকে সুপারির ছাল টা বের করে থু থু ফেলছে । কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লক্ষ্য করলাম ব্যাপার টা ঘটছে একটা নির্দিষ্ট তাল/ছন্দ মেনে । কোন তালে চলছে ? আমি আবার তাল বা ছন্দ বুঝি না ঐসব ব্যাপার রকি ভালো বলতে পারে ।আমার বাল্যবন্ধু গুলোর একজন এবং এই গ্রামের একমাত্র মিউজিশিয়ান হচ্ছে রকি । সে একাই গিটারিস্ট লিরিকিস্ট এবং ভোকাল । তার জীবনের সবচেয়ে বড় শখগুলোর একটা হচ্ছে ওয়ারফেইজের কমল দা যে গিটার বাজায় সেইটা সে চুরি করবে । যাইহোক ,
আমি মজিদ চাচা কে জিজ্ঞেস করলাম ,
- ও চাচা এত সকালে চাটাই কি করেন ?
আমার প্রশ্নের জবার দিতে গিয়ে চাচা একদলা নিজের থু থু তার বা হাতে ফেললেন । চাচা সেটা লুঙ্গির কোন দিয়ে মুছতে মুছতে বললো ,
- গইলের ( গোয়ালঘরের ) চাটিখান ভাঙ্গি গেইছে বাহে , এলাকাত চোর চামার যে হইছে না বাপো । ঘরটাত তিনটা গাই আর টা আড়িয়া( ষাড়) থাকে তাই তোর আব্বা কইলো বিপদ আপদের কতা কওয়া যায় না , ঐখান চাটী ঠিক করতে ।
আমি জানি মজিদ চাচা একবার বলা শুরু করলে আর থামে না তাই কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম ।
মজিদ চাচা হচ্ছে আমাদের বাড়ীর ২৫ বছরের পুরানো কর্মচারী । শুনেছি বাবা তাকে এনেছেন আমার নানাবাড়ির ওইদিক থেকে ।
নানা বাড়ির এলাকার সব মধ্যবয়সীই আমাদের মামা । কিন্তু মজিদ চাচা কে আমরা মামা না বলে চাচা কেন ডাকি এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই । অবশ্য ইংরেজি হলে সমস্যাটা হতো , এমনকি আমার মনে প্রশ্নও আসতো না । মামা/চাচা দুইটাই আঙ্কেল । ছোট বেলা থেকেই আমার বড় ভাই রা উনাকে চাচ বলেই ডাকে তাই আমিও ডাকি । একবার বড় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মজিদ চাচা কে কেন মামা ডাকা হয় না ।
উত্তরে একটা মাথায় চটকনার সাথে কেজিখানেক ঝাড়ি ছাড়া আর কিছুই পাই নাই ।
মজিদ চাচার সবচেয়ে ভালো গুন হচ্ছে ইনি কঠোর পরিশ্রম করতে পারে । টানা ৮ ঘন্টা জমিতে মাটী কাটার পর তাকে যদি বলি চাচা ডাবগাছ থেকে চারটা ডাভ পারেন তো । সে ৯ মিনিটের মাথায় চার চৌক ষোলটা ডাব এনে সামনে রেখে বলবে " একনা থাকেন বাহে দাও খান আনি ছিলি দিচ্ছুং " ।
মজিদ চাচার সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে , ইনি অত্যাধিক কথা বলেন । একবার বলা শুরু করলে ঘণ্টাখানেক ধরে বলতেই থাকবে । দেশিও টিভি চ্যানেলের কেউ যদি এনার মতো কাউকে পায় তাহলে মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন দিয়ে চাকুরিতে রাখবে । এনার শুধু কাজ হতো সারাক্ষন ক্যামেরার সামনে কথা বলে যাওয়া । আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি নিজেই গিয়ে কোন চ্যানেল কে খবর দেই , কিন্তু ইনি যদি চলে যায় তাহলে বাবার কাজগুলো কে করে দিবে ? এই ভয়েই আর টিভি চ্যানেল কে খবর দেই না ।
মজিদ চাচা যতই বাচাল হোক আমি উনাকে খুব পছন্দ করি । অবশ্য পছন্দ করার পেছনে কারন আছে , আমার বয়স যখন ১১ তখন পুকুর পাড়ের আমগাছটায় চড়েছিলাম আম পাড়তে । হঠাৎ ছোট বাবু চাপ দিলো , আমি তখন গাছ থেকেই দ্বাড়িয়ে দ্বাড়িয়ে কাজ সারতে লাগলাম ।কাজ শেষে এক হাত দিয়ে প্যান্টের চেন লাগাতে গিয়ে সেটা বিশেষ জায়গায় আটকায় যায় । এমন অবস্থা আমার হইছিলো , না পারি চেচাতে না পারি চুপ থাকতে । এক্টূ সাহস দেখিয়ে দুহাত দিয়ে চেন ঠিক করতে গিয়ে পা পিছলালাম । পা পিছলে পড়ে যেতে গিয়ে আমার এক পা আটকে গিয়েছিলো গাছের ডালের ফাকে । আমি একপায়ে ঝুলছে ,আর গোঙ্গাচ্ছি । হঠাৎ সেইদিক দিয়ে দিয়ে মজিদ চাচা যাওয়ার সুয় আমায় দেখে আমাকে গাছ থেকে নামান । এরপর বুঝতে পারেন আমার চেইন আটকে গেছে । কোন এক বিশেষ কায়দায় ততক্ষনাৎ চেইন ঠিক করে দিলেন । আমার মনে আছে এরপর টানা ৫ মাস আমি কোন চেইন ওয়ালা প্যান্ট পড়ি নাই ।
আমি বাড়ীতে ঢুকে বাথরুমে গেলাম , ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আম্মুর নাস্তা রেডি । নাস্তা খেয়ে প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী সকালের ছাই উড়াতে নদীর দিকে গেলাম । নদীর দিকটা গ্রাম থেকে একটু দূর তাই এদিকে সিগারেট খেলে কেউ দেখতে পায় । সেইজন্য আমাদের ছেলে পেলের কাছে এই জায়গাটার মুল্য অপরিসীম । এলাকার শেষ মাথায় থাকা দোকান থেকে সিগারেট আর ম্যাচ নিয়ে নদীর ধারে গেলাম । নদীর ধার ধরে হাটতে হাটতে সিগারেট টানতেছি । হঠাৎ দেখি সামনে দিয়ে দিব্য আসতেছে সাথে আরেকটা ছেলে । মনে হয় দিব্য'র বন্ধু হবে । ওরাও দুজনে সিগারেট টানতে টানতে আসছে । বলে রাখি দিব্য আমার প্রাইমারীর সময় থেকে বন্ধু ।
( চলবে )

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩

বিজন রয় বলেছেন: পড়ছি।
++++

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫

রাজু বলেছেন: বাকিটা কনে!! তারা তারি দেন....

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৯

অমিত বসুনিয়া বলেছেন: লিখতে হবে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.