নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার কান্না

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

শিশিরের দু'চোখ ভরা বিস্ময়। ভোরে সূর্যের আলোটা মুখে পরতেই তাকায়ে দেখল শিরিন জানালা খোলে দিয়ে চলে গেল। জানালার ফাঁক দিয়ে মিষ্টি সূর্যের আলো দেখে সে নিশ্চিত হল সকাল হয়েছে। সে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করল বৃষ্টিস্নাত ফুলের সৌন্দর্য। কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি এসে ফুলগুলোকে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে।আজকের আবহাওয়া খুবই সুন্দর, আকাশ পরিষ্কার। রং বেরঙের সুন্দর ও নিখুঁত ফুলগুলোর উপর স্বাধীনভাবে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে নানা রকমের প্রজাপতি। সবুজ ঘাসের দেশে নীল আকাশে তাদের রঙিন ডানা দেখে মুগ্ধ নয়ন। সুন্দর প্রজাপতি সুন্দরের উপমা হয়ে ভাসছে ঘাসে ঘাসে,ফুলে-ফলে,মানুষের মনে দক্ষিণা বাতাসের মৃদুমন্দ সমীরণে।



গাছের পাতার উপর জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো চিক চিক করছে। বাইরের আঙ্গিনাটা বৃষ্টির বিন্দুগুলো ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেছে। ভেসে আসছে পাখির গান। একটি পাখি ডানা মেলে উড়ে দৃষ্টিসীমানার বাইরে হারিয়ে গেল। শিশিরের ইচ্ছে করল,পাখির মত উড়ে যাবার এমনভাবে যেখানে তার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূর্ণতা পাবে।সব সুন্দর,সকল জীবন আপন আলোতে উদ্ভাসিত হবে প্রকৃতির নিয়মে।



শিরিনকে পেয়ে শিশিরের আনন্দের সীমা নেই।ওর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বেশ ক'দিন হয়েছে। নাস্তার টেবিলে শিরিনের প্রস্তাব-আজ ছুটির দিনে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতে চাই। শুনেছি সেখানে ভোরে পাখিদের মধুর গান শুনা যাবে, পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙবে। শিশিরও রাজি। দ্রুতই প্রস্তুতি সম্পন্ন। ব্যস্ততম যানজটের রাজধানীর রাস্তাঘাট আজ অনেকটাই ফাঁকা। শহরের কংক্রিটের দেয়াল আর যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া। বাসে বসে তাদের নানান গল্প চলে। শান্ত, গভীর কালো চোখগুলো চলে যায় সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠের পানে। যেখানে সাদা বক গুলো ওরে যায়, সুন্দর সুন্দর পাখি দেখা যায়।



পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছেই বাগানে রং বেরঙের অসংখ্য ফুলের সমারোহে অনিন্দ্য সুন্দর রুপ আকন্ঠ পান করছে তারা। শিশির বরান্দায় বসে ছোটবেলার নানা কাহিনী শুনাচ্ছে সুমিকে। ছেলেবেলায় পছন্দের অনেকগুলি জোনাকি পোকা ধরে এনে রাতে শুয়ে আলো নিভিয়ে মশারির নিচে ছেড়ে দেয়ার আনন্দের কথা। জোনাকিগুলোর হঠাৎ জ্বলে হঠাৎ নেভে যে দৃশ্য তৈরি করত তা তার ভীষণ ভাল লাগত। তালগাছের মধ্যে থাকা বাবুই পাখির বাসা, পাখির কিচির মিচির আওযাজ, পুকুরে ফুটে থাকা লাল শাপলা তুলতে যেয়ে পুকুরে পড়ে যাওয়া কোন ঘটনাই বাদ যায়না।



পরদিন ভোর ছুঁই ছুঁই ভাব। পূর্বাকাশে সাদা আলোর রেখাপাত।কালো অন্ধকার আকাশটায় একগুচ্ছ জোসনা যেমন করে ফোটে তেমনি মনে হয়েছে এ সময়। শিরিনের কাছে গ্রামীণ জীবনটা অসাধারণ মনে হয়। শহরে ব্যস্ততা বেশি, যান্ত্রিকতাও বেশি। যান্ত্রিকতা বেশি মানে মানবিকতাই কম। মানুষ যে মানুষের কত আপন তা বোঝাতে আন্তরিক অনুভূতি ভাষা হয়ে ধরা দিল। চোখে চোখ রেখে শিশির বলল-শিরিন আমাকে কেমন ভালবাস? শিরিন বলল-তুমি ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন। আমার জীবনে তুমি এতটা অপরিহার্য আগে বুঝিনি।এ জীবনে তোমার মত একজন পুরুষকে আপন করে পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য- আলহামদুলিল্লাহ।



দিনশেষে রাত। নৌকায় নানির বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল শিরিন, শিশির ও শিশিরের মা। টলমলে জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। মস্ত চাদঁ ঝুলে আছে মাথার উপর। চিকমিকে আলোর ফুটকি খেলা করছে পানির উপর। দু-একটা রাতজাগা পাখি উড়ে যাচ্ছে ক্লান্ত ডানায়। সমস্ত চরাচর ডুবে আছে গভীর নিথর নিদ্রায়। তাদের চোখ জুড়ে খেলা করছে অনবরত আলোর জগৎ। শিরিন শহরে বড় হয়েছে। কখনো এভাবে রাতকে দেখেনি। নদীকে পায়নি কাছে। উদারমুক্ত বাতাসে নি:শ্বাসের সুযোগও ঘটেনি এমন।



শহরের কলোনির খাঁচার জানালা থেকে যতদিন আকাশ দেখেছে,তার সঙ্গে কোন মিল নেই এর। এ এক অন্য ভূবন। নদী যে এত প্রাণময় হতে পারে, চঞ্চল আলোর ছলকে মেতে উঠতে পারে ঢেউয়ের শোভা, বাতাস যে হতে পারে এত বাঁধ ভাঙ্গা উত্তাল, এই প্রথম সেটা হ্নদয দিয়ে অনুভব করল শিরিন। শিরিনের নদীর পানিতে হাত পা ভিজাতে যেয়ে মাঝে মাঝে শাশুড়ীর বকুনি খাওয়া- শিশির বেশ উপভোগ করছিল। সামনের খোলা প্রান্তর কেবলই হাতছানি দিযে ডাকছে -আয় ,আয় ,আয়....। সামনে যে বিশাল চরাচর,হাওয়ার ঘূর্ণি,নানা বর্ণের মায়াবি ঝিলিক,তাকে কী আর উপেক্ষা করা যায়।



মাকে নৌকায় ঘুমাতে দেখে শিশির নিরবতা ভেঙ্গে বলল- এমন চন্দ্র রাতে লেকের স্বচ্ছ জলাধারে একসাথে মাছ ধরা কি মনে আছে?



শিরিন হেসে বলল-অবশ্যই।সেখানকার বনলতা এত সুন্দর, স্বচ্ছ জল এত চকচকে, জলে ভাসা মাছ এত চঞ্চল, আকাশ এত বড়,মাঠ এত সবুজ- যা কখনো ভুলা যায়না।আনন্দঘন পরিবেশে সর্বাপেক্ষা সুন্দর সময় কাটিয়েছি সেখানে।



শিশির বলে-আচ্ছা! তুমি শহরের মেয়ে হয়ে গ্রামের ছেলেকে বিয়ে করলে কেন?



শিরিন বলল- আমি গ্রামে এসেছি তোমাকে পেতে। কেননা যে কারও থেকে আমি তাকে বেশি ভালোবাসি। দীর্ঘ জীবনের চাওয়া দীর্ঘ, কিন্তু পাওয়ার জন্য সময় সত্যিই বড় কম।এরপরেও বাল্যকাল থেকে যে বন্ধুদের সাথে একসঙ্গে খেলেছি, দৌড়ে তেপান্তরের মাঠ পাড়ি দিয়েছি,সময়মতো ঠিক জায়গায় উপস্থিত না হলে বিচলিত হয়েছি, সূর্যা ডোবার পর ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছতে পারলো কি না ভেবে সারা রাত অস্থিরতায় পায়চারি করেছি, অপেক্ষায় থেকেছি কখন ভোর হবে,নতুন প্রভাতে নতুন আলোয় বন্ধুকে দেখে নিশ্চিত হয়েছি তার কোনো অসুবিধা হয়নি। তাদের ছেড়ে মনের মত নতুন বন্ধু খুঁজে নিতে পেরেছি। আমি যাই করেছি তা সবটুকুই করেছি, যতটা চেষ্টা করা যায় তার সব চেষ্টাই আন্তরিকতার সঙ্গে করেছি।মানুষের জীবনে কেউ একজন আপনজনের একান্তই দরকার।



শিশির শিরিনের দিকে একটু গভীরভাবে তাকিয়ে বলল-তুমি চোখ বন্ধ করো,ধীরে প্রশ্বাস নাও,এবার চোখ খোলো দেখ তোমার হাত আমার হাতের মধ্যে।এটাই ভালবাসার শেষকথা নয়। অন্যের জীবনে সহানুভূতির অভাব, ধারাবাহিক লাঞ্চনা বঞ্চনার নিরসন, নূন্যতম একটু সুযোগ সৃষ্টি করে আনন্দদানে সত্যিকার ভালবাসা।স্বপ্ন আর আবেগ নয় বাস্তবতার আলোকেই সম্পর্ককে ভাবতে হবে।আবেগের মূল্য আমার কাছে শূণ্য।মনে রাখতে হবে, তোমার সমুদ্র যেমন অনেক বড় হতে পারে তেমনি আমার তরীও খুবই ছোট হতে পারে।যখন শেষ নদীটা শুকিয়ে যায়, শেষ গাছটাও কাটা পড়ে এবং শেষ মাছটাও ধরা পড়ে তখনই বোঝা যায় টাকা চাবিয়ে খেলেও পেট ভরে না।প্রকৃত ভালোবাসা সাফল্যগাঁথা শুধু মুভিতে দেখা যায়, বাস্তবজীবনে এর কোন অস্তিত্ব নেই।



শিরিন বলল- তুমি এত জটিল করে বল কেন? বটতলা থেকে শহীদ মিনার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরী থেকে ট্রান্সপোর্ট সর্বত্র কঠিন করে বলেছ। এখনও আবার জটিলতা। আমি এত কিছু বুঝিনা; আমি বুঝি-প্রেমের মধ্য দিয়েই আমার উত্থান প্রেমের মধ্য দিয়েই আমার অবসান হবে। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। তুমি আমার দেখা সেরা মানুষ। তুমি আর আমি একসঙ্গে বাঁচবো।স্বামীকে একান্তে একবারেই আপন করে পাবার জন্য দরকার একটি ঘর, বহু আকাঙ্ক্ষিত নিজের সেই ঘর আমি পেয়েছি।ফলে আর কিছু না পেলেও চলবে। আমি মনে করি, শুধু যৌনতা দিয়ে মানবিক সম্পর্ক হয় না। যৌনতার সম্পর্ক লেনদেনের, রক্তপাতের তথা হিংস্রতার।মানবিক সম্পর্ক, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মননের, বিশ্বাসের এবং ভালোবাসার।



দূরের দিকে তাকিয়ে একটা গভীর নি:শ্বাস নেয় শিশির।কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল এমন সময় মার ঘুম ভাঙ্গল। শিরিনের উদ্দেশ্যে শিশিরের আর কোন কথা বলা হল না।



কিছুক্ষণ পড়ে নৌকাও ঘাটে ভিড়ল। নানু ওদের একসঙ্গে পেয়ে আনন্দে কেদেঁ উঠল । নানুর দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল আনন্দাশ্রু। ভালবাসার মানুষদের পেয়ে তার অশ্রুসজল চোখ সবার মনকে আনন্দে ভরিয়ে দিল ।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:০১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর অনুভূতির গল্প । :)

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.