নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ উদ্যোগ, অশুভ বাঁধা ও স্বার্থক স্বপ্ন

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

আমাদের সমাজে যে কোন শুভ উদ্যোককে হাসিমুখে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে উৎসাহ দান ও কল্যাণকর প্রয়াস চালানোর যথোপযুক্ত স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে উদার মনোভাব প্রদর্শনের অভাব রয়েছে। অনুপ্রেরণা জোগানো ও স্বীকৃতি প্রদানের ঘাটতি সত্ত্বেও স্বপ্নবান ও কর্মপ্রিয় মানুষ তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। সমাজ, দেশ ও জাতি উপকৃত হয়।

ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের চলচ্চিত্র মন্থন এমন বাস্তবতাকেই হাজির করছে ।চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্র ড. রাও হচ্ছেন ‘‘মিল্কম্যান অফ ইন্ডিয়া’’ বলে পরিচিত ড. ভের্গেজ কুরিয়েন। যিনি চলচ্চিত্রটির যৌথ কাহিনীকারের একজন।সাদা বিপ্লবের কাহিনী মন্থন চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে গুজরাটে। এই চলচ্চিত্রটি এখনও গ্রামাঞ্চলের শোষণ বঞ্চনার একটি বিশ্বস্ত দলিল হয়ে আছে। এটি মানুষের সংগ্রামের চিত্র, স্বপ্নের চিত্র আর ঐক্যের চিত্র।

ভারতের গুজরাট রাজ্যের খেরা জেলার এক গ্রামের স্টেশনে নামেন পশু চিকিৎসক ড. মনোহর রাও। রোগা ও দুর্বল ঘোড়ার একটি গাড়িতে তাঁকে তার বাংলোয় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে। দুর্বল ঘোড়া দেখে তিনি মনে কষ্ট পান। পশু চিকিৎসক পশুর কষ্ট সহ্য করতে পারলেন না, হেটেঁই বাংলো যেতে মনস্থির করলেন।

গুজরাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু মানুষের একমাত্র পেশা হচ্ছে দুধ বিক্রি। গুজরাটের গ্রামাঞ্চলে দুধ উৎপাদন দীর্ঘদিনেরই রেওয়াজ। এই দুধের ক্রেতা হচ্ছে উচুঁ জাতের শোষক শ্রেণী। মিশ্র সাহেব এই শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। মিশ্র সাহেবদের শোষণের ক্ষেত্র হচ্ছে গ্রামের অসহায় নিম্ন জাতের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। মিশ্র সাহেব তাদের উচ্চসুদে ঋণ দেন মহিষ কেনার জন্য। আবার সেই মহিষের দুধ তিনি অতি অল্প মূল্যে কিনে নেন তাদের কাছ থেকে। আর শোষণের এই প্রক্রিয়া যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে।

দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন, চিন্তা চেতনায় আধুনিক এবং আদর্শবাদী ড. রাও এবং তার সংগঠন শোষকদের খপ্পর থেকে এই অসহায় দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের মুক্ত করতে চান। এজন্যে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চলে। আধুনিক পদ্ধতিতে ড. রাও দেখেন যে, এই এলাকার মহিষের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ খুব ভাল। শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের কল্যাণে নিবেদিত ড. রাও ও তার সঙ্গীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে দুধের মান অনুযায়ী দুধের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করতে চান, দুগ্ধ সম্প্রদায়কে দুগ্ধ সমিতির মালিক বানাতে চান।

ড. রাও ও তার সঙ্গীদের দুগ্ধ সম্প্রদায়ের মঙ্গলের জন্যে কাজ করাটা খুব সহজ হয় না।ভিন্ন পোশাক, কথা বলার আলাদা ঢংয়ের কারণে গ্রামবাসীরা তাদের কথা শুনলেও তাদের প্রতি আস্থা রাখেন না। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় সচেতন তরুণ ভোলা এই শহুরে মানুষদের কথাকে মিষ্টি গল্প বলে মনে করেন। ভোলার ছিল সহজাত নেতৃত্বের গুণ এবং অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা।ড. রাও সমিতি করার প্রয়োজনে ভোলাকে দলে ভেড়ানোর মাধ্যমে হরিজন সম্প্রদায়কে কাছে টানার চেষ্টা করেন।

স্বামী থেকে বিতাড়িত বিন্দু এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান। উচুঁ জাতের প্রতিনিধি বিন্দু এলাকার গোত্র প্রধান হলেও গোত্রের সুবিধা অসুবিধা দেখার প্রতি উদাসীন। ক্ষমতা ও রাজনীতির প্রতি আগ্রহী বিন্দু ড. রাওকে সাহায্য করেন এই আশায় যে, নিজে সমিতির প্রধান হতে পারলে গোত্রের প্রতি আরও বেশী কর্তৃত্ব করার সুযোগ পাবেন।

কাজ সফল করার জন্য ড. রাওয়ের দলে রয়েছে দেশমুখ, চন্দ্রভারকার।তরুণ সমাজ সেবী চন্দ্রভারকার এলাকার এক নিম্নবর্ণের নারীর সাথে প্রেমে পড়েন। মেয়েটির সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক জানাজানি হলে তাকে এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয়। ড. রাওয়ের এই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ভোলা ভিড়ে যায় সমিতি নির্মাণের সাথে।

সমিতির জনপ্রিয়তার বাড়তে থাকে আর মিশ্র সাহেবের দুধের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। পশু চিকিৎসক হলেও প্রয়োজনে কিছু রোগী দেখে জনপ্রিয়তা পান ড. রায়। সমিতি প্রধানের নির্বাচনে দাঁড়ান পঞ্চায়েত প্রধান আর হরিজন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভোলার বন্ধু। নির্বাচনে পঞ্চায়েত প্রধান পরাজিত হন আর ভোলার জিতে যায়।

নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পঞ্চায়েত প্রধান নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। মিশ্র সাহেবরাও শোষণের ক্ষেত্রকে এত সহজে ছাড়তে চান না। তাদের ষড়যন্ত্রের নির্মম শিকার হন বিন্দু, ভোলা, ড. রাও এবং তাদের সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার আকাংখা।গ্রাম ছেড়ে চলে যায় ড. রাও কিন্তু তার আদর্শের বীজ রয়ে যায় ভোলা, বিন্দুদের অন্তরে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.