নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাশবিকতার বিজয়, মানবিকতার মৃত্যু ও অস্তিত্বের বিনাশ

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২২

মানুষ অস্ত্র তৈরী করে মানুষ হত্যা করার জন্য। বাঘ বাঘকে মারে না, সিংহ সিংহকে মারে না। কিন্তু মানুষ মানুষকে মারে। সামান্য স্বার্থের লোভে খুন করে, সাময়িক উত্তেজনায় ধর্ষণ করে। তাহলে কিছু মানুষ রুপী পশু আছে যারা পশুর চেয়েও অধম, জানোয়ারের মতো বললে জানোয়ারকেও ছোট করা হয়। জানোয়ারের চেয়ে খারাপ আছে বলেই মানুষ এখন বন্য জানোয়ার থেকে নিরাপদ কিন্তু মানুষ থেকে নিরাপদ নয়। সর্বদাই অমানুষের ভয়ে অস্থির থাকে মানব জাতি। সামান্য একটু খোঁচা দিলে ভদ্র মানুষগুলোও অভদ্র হয়ে ওঠে; চিৎকার চেঁচাম্যাচি, গালাগালি শুরু করে; ঝগড়া-মারামারি লেগে যায়। নিজের সবচেয়ে আস্থাভাজন মানুষের হাতে খুন হতে হচ্ছে অনেককে। সম্প্রতি দেশব্যাপী স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, সন্তানের হাতে বাবা-মা, অথবা বাবা-মায়ের হাতে সন্তান খুনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন, স্ত্রীর হাতে স্বামী, সন্তানকে খুন করে মা বা বাবার আত্মহত্যা, স্ত্রী, সন্তানকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা, পিতাকে খুন, বা মাকে খুনের মতো ঘটনা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমে।



নরসিংদীতে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা:

নরসিংদী জেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জংঙ্গয়া গ্রামে এক পাষণ্ড স্বামী মেয়ে সন্তান হবে বলে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। সন্তানসম্ভবা জোনাকি বেগমের ৫ম সন্তানও মেয়ে হবে এই ছিল জোনাকি বেগমের দোষ। জোনাকি বেগমের ৪ মেয়ে রাধিকা (৭), আকিদা (৬) এবং যমজ আহরিনা ও জেদিয়া (৩) কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখা দ্বায়।



রাজবাড়ীতে মায়ের হাতে খুন মেয়ে:

রাজবাড়ীর রামকান্তপুরের মাটিপাড়া বাজার এলাকায় মায়ের পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় দুপুরে মা হাফসিয়া বেগমের হাতে খুন হয় রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মর্জিনা খাতুন (১৭)। হাফসিয়া বেগম তাঁর পরকীয়া প্রেমিক খোরশেদ মোল্লার সহযোগিতায় মেয়ে মর্জিনাকে হত্যা করে।নিহত মর্জিনার পিতা বৃদ্ধ আজগর আলী সরদার জানান, তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর হাফসিয়াকে তিনি বিয়ে করেন। হাফসিয়ার সংসারে ছেলে ফরহাদ ও মেয়ে মর্জিনা। গত কয়েক বছর হাফসিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের খোরশেদ মোল্লার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর হাফসিয়াকে পরকীয়া থেকে বিরত রাখতে তিনি ও তাঁর ছেলে বাধা দেন। এতে হাফসিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বাপ-ছেলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আসায় বাবা ও ছেলে দুজন পালিয়ে থাকেন। এ সুযোগে হাফসিয়ার পরকীয়া প্রেমিক খোরশেদ নিয়মিত তাঁদের বাড়িতে আসে। একই সঙ্গে পরকীয়া প্রেমকে আরো বেশি পোক্ত করতে খোরশেদের ছেলে রাশেদের সঙ্গে হাফসিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী মর্জিনার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মায়ের পরকীয়া প্রেম ও খোরশেদের ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ করে মেয়ে মর্জিনা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সকালে মর্জিনার সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হয়। এরপর সে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে আসে। এ সময় খোরশেদের সহযোগিতায় হাফসিয়া নিজ ঘরের মধ্যে বালিশচাপা দিয়ে তাঁর মেয়ে মর্জিনাকে হত্যা করে। পরে হাফসিয়াকে আটক করে থানা পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী।



সিরাজগঞ্জে স্বামীর পরকীয়ার বলি স্ত্রী:

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে পরকীয়ার বলি হয় দুই সন্তানের জননী আলো খাতুন। যে স্বামীর হাত প্রাণ গেছে এই হতভাগীর। পনের বছর আগে একই গ্রামের মৃত জসিম মণ্ডলের ছেলে ছোহরাব আলীর সঙ্গে প্রেম করে আলো খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই সন্তান। প্রতিবেশী শফিকুল ইসলামের স্ত্রী দুই সন্তানের জননী মর্জিনা খাতুনের সঙ্গে ছোহরাব আলী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে আলো এবং ছোহরাবের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতো। ঘটনার দিন ছোহরাব আলোকে বেদম মারপিট করে। রাতের কোনো এক সময়ে আলোকে হত্যা করে মৃতদেহ ঘরের মধ্যে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।



মায়ের পরকীয়ায় মেয়ের মানসিক অসুস্থতা:

আফরোজা আহমেদ (ছদ্মনাম)। বয়স ৩২। ১১ বছর বয়সে মায়ের পরকীয়ার চিহ্ন এখনও বহন করছেন হতাশা ও মানসিক বিষণ্ণতা নিয়ে। গৃহ শিক্ষকের সঙ্গে মায়ের পরকীয়ার সর্ম্পক। ১১ বছর বয়সী আফরোজা সেটা দেখে ফেলে। সেই থেকে তার মানসিক অবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।



ঢাকায় মেয়ের হাতে মা ও বা খুন:

রাতে ঢাকায় নিজ ফ্ল্যাটে নেশাগ্রস্ত সন্তান ও’ লেভেল পড়ুয়া ঐশী রহমানের হাতে তার বাবা-মা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান(৪৯) এবং তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান(৪১) খুন হয়। ঐশীর ছিল অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড। বেশ কয়েকমাস যাবত পরিবারের সঙ্গে বেশ উশৃঙ্খলা আচরণ করতো সে। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ইয়াবা সেবন করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। রাতে মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের নিয়ে বাসায়ও আসতো ঐশী। তবে ইয়াবা সেবন ও বাইরে বেশি রাত থাকা এসব কিছু করতো তার বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে নিয়ে। একাজে তাকে উৎসাহ দিতো বান্ধবীরা। এদের মধ্যে তৃষা নামে তার এক বান্ধবী ছিল। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিৎষতের কথা চিন্তা করে একটু কঠোর হলেন পুলিশ দম্পতি। জব্দ করলেন হাতের মোবাইলটি, নেট কানেকশন, ফেসবুক-স্কাইপি সবকিছুতেই বাড়তি নজরদারিতে।তার খেসারতই দিতে হল মাহফুজ রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে। মেয়ের কাজে 'বাঁধা' হয়ে মায়ের ভাগ্যে জুটলো ১১টি কোপ আর বাবার ভাগ্যে ৩টি।



পরিকল্পনা অনুযায়ী চেতনানাশক ও ছুরি কেনা ছিল আগেই। রাতে কফির সাথে নেশা জাতীয় চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয় রাখে ঐশি। মাহফুজুর রহমান রাত ১২টার দিকে বাসায় এসে দেখেন তার স্ত্রী ঘুমিয়ে আছেন। পরে তিনি আর না ডেকে নিজেই খেয়ে নেন। এরপর ঐশীর দেয়া মেশানো কফি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে গভীর ঘুমে যখন বাবা-মা আচ্ছন্ন, তখন বাবা-মায়ের রুমে হত্যার উদ্দেশ্যে যায় ঐশি। তখনকি একবারও ঐশির স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠেনি মায়ের হাসিভরা মুখখানি, কিংবা জন্মদিনে বাজার থেকে কিনে আনা বাবার সবচেয়ে দামি উপহারটির কথা। মাদকাচ্ছন্ন ঐশি প্রথমে ছুরি চালায় বাবার গলায়। ছুরির 'কৌশলি' আঘাতে শ্বাসনালি কেটে যায় বাবার। পেটের মাঝামাঝি জায়গাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এসময় বাবা কিছুক্ষণ গোঙান। মায়ের ওপর ঐশির প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। তাই মাকে হত্যার সময় আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে ঐশি। মা স্বপ্নার শরীরে উপর্যুপরি ১১টি ছুরিকাঘাত করে। ঐশি যখন তার মা স্বপ্না রহমানকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছিল তখন অচেনতন অবস্থা থেকে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন মা স্বপ্না। ঘুম ভেঙে মা দেখতে পান মেয়ের হাতে রক্তাক্ত ছুরি! ‘তুই আমার মেয়ে না' বলতেই ঐশি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মায়ের প্রতি।গলায়, ডান পাঁজরে, বুকে, পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করে স্নেহময়ী মাকে। বাবা-মাকে খুনের পরও মাথা ঠান্ডা রাখে ১৭ বছর বয়সী ঐশি। বুদ্ধি করে ধারালো ছুরিটি নিজেই পরিষ্কার করে রেখে দেন ড্রয়ারে।



খুনের সময় জেগে যায় কাজের মেয়ে সুমি। খুনের ব্যাপরটি সর্বপ্রথম বুঝতে পারে সুমি।এসময় চতুরতার সাথে সুমিকে কসম কাটিয়ে নেয় ঐশি। ঐশি লোভ দেখিয়ে সুমিকে বলে তোকে অনেক টাকা পয়সা দেব। ‘কিন্তু তুই এ কথা কোথাও বলবি না। তোর মায়ের কসম বল।' ঐশির মন ভুলানো কথা সুমি কসম কাটলেও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সব তথ্যই বলে দেয়। মাকে খুন করার সময় পাশেই ঘুমিয়ে ছিল ওহি। সুমির সহায়তায় বাবার লাশ টেনে নিজ রুমে নেয়ার পর ওহি ঘুম থেকে জেগে ওঠে। মায়ের শরীর রক্তাক্ত দেখে কাঁদতে থাকে ওহি। এ সময় ঐশি বলে, আব্বু আম্মুকে মেরেছে। তারপর অন্যরুমে নিয়ে যাওয়া হয় ওহিকে। সকালেও ওহি মিথ্যা বলে বাসা থেকে সরিয়ে নেয় ঐশি। দুটি লাগেজ নিয়ে সকালে পালিয়ে যায় ঐশি। লাগেজে ছিল বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত অর্থের স্বর্ণালঙ্কার। পরে ঐশির বন্ধুরা এই স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি লোভ দিলে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারেনি। পরে কথিত বন্ধু পারভেজের পরামর্শে ধরা দেয় ঐশি। ঐশিকে মেরে ফেলে তার স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল পারভেজ ও রনির। রনির হাত ধরে ঐশি রহমান অনেক ক্লাব, ডিজে ড্যান্সে অংশ নেয়। রনি মূলত ঐশির ড্যান্স পার্টনার।



সিলেটে মা বাবার হাতে সন্তান খুন:

২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর সিলেটে খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া খিদিরপুর গ্রামে ৫ বছরের শিশু তানজিনাকে তার বাবা সাব্বির ও সৎমা আফজা বেগম খুন করে। তানজিনা ছিল সাব্বিরের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রী আফজার প্ররোচণায় তিনি ও আফজা তানজিনাকে খুন করেন বলে জানা গেছে।



কুমিল্লায় তিন সন্তানকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা:

২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ভাওড়খোলা গ্রামে পরিবারে অভাব-অনটন ও দাম্পত্য কলহের কারণে তিন শিশু সন্তানকে (রেখা আক্তার, সুমাইয়া ও ছেলে ইমন) খাবারের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়ে হত্যার পর রেখা আক্তার নিজেও আত্মহত্যা করেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, স্বামী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে স্ত্রী রেখা আক্তারের বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া হতো। সম্ভবত এর জের ধরেই রেখা তার সন্তানদের কীটনাশক খাইয়ে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেছেন।



স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে খুন:

২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় শৈলাটে পারিবারিক কলহের কারণে পারভিন আক্তারকে খুন করে তার স্বামী ফজলুল হক। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হক শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। বাড়ির পাশেই ছিল তার শ্বশুরবাড়ি। পারিবারিক কলহের জের ধরে দেড মাস আগে ফজলুল বাড়ি চলে যান। পরে ২২ আগস্ট আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে আসেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ হয়। এরপর গত ২৪ আগস্ট ভোরে পারভিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম বাধা দিলে তাকেও এলোপাতাড়ি কোপান ফজলুল।



১৯ অক্টোবর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী।



১৪ অক্টোবর গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী জহুরা বেগম।

১৪ অক্টোবর মাদারগঞ্জে বাসরঘরে খুন করা হয় এক নববধূকে। সন্তানের নাম রাখার অনুষ্ঠান নিয়ে তুচ্ছ বিতর্কে এক স্বামী তার স্ত্রীকে আঁতুড়ঘরেই পিটিয়ে হত্যা করে।





সাভারে তিন সন্তানকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা:

চলতি বছরের ২৭ জুন রাজধানীর অদূরে সাভারের জয়নাবাড়ি এলাকায় তিন শিশু সন্তানকে (রবিউল, মোস্তফা ও রাহাত) বিষ খাইয়ে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে বাবা আবু সাঈদ। এ ঘটনার একদিন আগে ভাগনেকে নিয়ে বিবাদের জের ধরে স্ত্রীকে মারধর করেছিলেন আবু সাঈদ। এরপর অভিমান করে তিনি তিন সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেন । খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে সাঈদ তার সন্তানদের খাওয়ান। ওই বিষক্রিয়ায় তারা মারা যায়। এর পর তিনি নিজেও ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।



চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা:

দুই শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা ২০১৪ সালের ১৬ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের কারণে দুই শিশু সন্তানকে (অপি ও অমি) শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মোরশেদুল হক অবুঝ।



শেরপুরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোটভাই খুন:

২০১৪ সালের ১ জুন শেরপুর জেলার নকলা থানার ধনাকুশা গ্রামে তুচ্ছ ঘটনায় (মুরগির খামারের একটি বৈদ্যুতিক পাখা হারিয়ে যাওয়ায়) ছোট ভাই রিপনকে ছুরিকাঘাতে খুন করে বড় ভাই রুবেল হোসেন। ১৪ অক্টোবর জামালপুরে বড় ভাইয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হন ছোট ভাই।



মায়ের হাতে সাত সন্তান খুন:

মোহাম্মদপুরে আয়শা নামে এক মহিলা তার সন্তানকে হত্যা করে। মহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। যাকে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘সাইকো কিলার’। বাংলাদেশেই শুধু এধরনের ঘটনা ঘটেছে- এমনটি নয়। মায়ের হাতে সাতটি সন্তান খুনের ঘটনা ঘটেছে সভ্যতার চরম শিখরে উঠা বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রায় ১৭ বছর সময়ে নিজের গর্ভজাত সাত সন্তানকে খুন করার অভিযোগে আমেরিকার উটাতে প্লিজেন্ট গ্রোভের বাড়ি থেকে ৩৯ বছরের মেগান হান্টসম্যানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্তানগুলির জনক মেগানের প্রাক্তন স্বামীর দেয়া খবরের ভিত্তিতেই এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত মাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। নিজেদের পুরানো বাড়িতে ফিরবেন বলে গ্যারেজ পরিষ্কার করছিলেন মেগানের প্রাক্তন স্বামী। সেই সময়ই তিনি একটি শিশুর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ প্রায় অক্ষত একটি সদ্যজাতের দেহ উদ্ধার করে। এরপর ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরো ছটি সদ্যোজাতর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রত্যেক সদ্যোজাতকে পৃথক পৃথক মোড়কে রাখা হয়েছিল। প্রায় ১০ বছর ধরে ওই সন্তানদের প্রসব করার পরই তাদের মেরে ফেলেন মেগান। মেগান ও তার প্রাক্তন স্বামীর আরো তিনটি মেয়ে রয়েছে। তারা মেগানের প্রাক্তন স্বামীর বাবা-মার বাড়িতে থাকেন। তাদের মধ্যে বড় দুটির বয়স ২০ ও ১৮। সর্ব কনিষ্ঠের বয়স ১৩।



কল্যাণপুরে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন:

২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর কল্যাণপুরে সালাহ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি রাতে খুন হন স্ত্রী লাবণী আক্তারের হাতে। সালাহ উদ্দীনের দ্বিতীয় বিয়ে করাই এ ঘটনার কারণ বলে জানা গেছে। ওই দিন এ বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নিলে রাগের মাথায় স্ত্রী লাবণী বঁটি দিয়ে বুকে ও হাতে কুপিয়ে হত্যা করে স্বামীকে। পরে লাশ লুকিয়ে রাখেন ওয়ার্ডরোবে। স্বামীকে খুন করে লাবনি আক্তার নিজেই পুলিশকে খবর দিতে থানায় আসেন। বলেন, ‘সারেন্ডার করব। স্বামীকে খুন করেছি। লাশ ঘরে আছে। লাশটি নিতে আসুন।’ সালাহ উদ্দীন দম্পতির চার ও দুই বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। সালাহ উদ্দীন কল্যাণপুর বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে।



চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের সর্ত্তা গ্রামের দুদু মিয়াকে পারিবারিক কলহের কারণে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যার পর রান্নাঘরে মাটিচাপা দিয়ে রাখে স্ত্রী শাহনাজ বেগম। প্রতিবেশী বাবুল এ কাজে সহযোগিতা করে। দশ দিন পর ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর দুদু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সিএনজি অটোরিকশা চালক দুদু মিয়া ওই এলাকার টুনু মিয়ার ছেলে। দুদু মিয়া ও শাহনাজ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। স্বামী হন্তারক শাহানাজ জানান, ঈদের দিন রাতে স্বামী ও তার মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্বামী দুদু মিয়া তাকে মারধর করে। পরে স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে শাহনাজ দা দিয়ে ঘুমন্ত স্বামীর গলায় কোপ দেন। এতেই মৃত্যু হয় দুদু মিয়ার। এ ঘটনার একদিন পর বাড়ির আশেপাশের লোকজন শাহনাজের কাছে জানতে চান, দুদু মিয়া কোথায়? এ সময় তিনি একেক দিন একেক কথা বলায় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এর মাঝে গত বুধবার রাতে লাশ পচে গন্ধ বের হলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। রাউজান থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।



চাঁদপুরে বেয়াইনের ছুরিকাঘাতে বেয়াই খুন:

১৫ অক্টোবর চাঁদপুরে বেয়াইনের ছুরিকাঘাতে খুন হন বেয়াই।



পাবনায় প্রেমের সম্পর্কের কারণে হত্যা:

১৯ অক্টোবর পাবনা সদর উপজেলার জালালপুর এলাকায় প্রেমের সম্পর্কের কারণে সাইফুল ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।



টাঙ্গাইলে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় চারজনকে খুন:

মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বখাটের হাতে নিহত হয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার প্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম ও তার তিন মেয়ে। দুর্বৃত্তরা তাদের বসতঘরে পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলে নিজ বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় মা ও তিন মেয়ে পুড়ে মারা যান।





ঝিনাইদহে ছেলের পিতৃপরিচয় দাবি করায় হত্যা:

ছেলের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতি চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের একদিন পরেই ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা ও তার ছেলেকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। ছেলের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি করে রোববার ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাজেদা। সেখানে তিনি শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাট ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামকে নিজের স্বামী ও ছেলের বাবা বলে দাবি করেন। এরপর সোমবার রাতে নিজের বাবার বাড়িতে ‘দুর্বৃত্তের’ হাতে খুন হন সাজেদা।



মানিকগঞ্জে বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে:

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ঘাতক ছেলে সাইদুর রহমান (৩৫)। পরে গণপিটুনীতে ঘাতক সাইদুর রহমান নিজেও নিহত হয়েছে।



স্কুলছাত্রকে গোপনাঙ্গ কেটে হত্যা:

১লা আগস্ট তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এক স্কুলছাত্রকে কয়েক প্রতিবেশী চোখ উৎপাটন ও গোপনাঙ্গ কেটে হত্যা করে।



মিরপুরে স্ত্রী ও পুত্রকে হত্যা:

‘বাবা, মার কি হয়েছে? মা হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ল কেন? এ কি বাবা তুমি আমার গলা টিপে ধরছো কেন? বাবা, আমি ব্যথা পাচ্ছি তো। বাবা, বাবা, প্লিজ আমায় ব্যথা দিও না।’ এভাবেই বাবার কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল শিশুপুত্র সাবিদ। কিন্তু তাতেও মন গলেনি ঘাতক বাবার। বাবার হাতে এভাবেই নিস্তেজ হয়ে যায় সাবিদ (৭)। এর পরই হুঁশ আসে বাবার। মিরপুরের ৬৭/এ, মধ্য পাইকপাড়ার বাসায় স্ত্রী আইরিন আক্তার আরজু (৩২) ও পুত্র সাবিদকে হত্যার পরই সম্বিত ফিরে পান ঘাতক এলিফ্যান্ট রোডে কর্মরত পূবালী ব্যাংক অফিসার আমান উল্লাহ আমান। মুহূর্তের মধ্যেই সাবিদকে নিয়ে চিৎকার করতে করতে পঞ্চম তলা থেকে নিচতলায় পাগলের মতো নেমে আসেন তিনি। এ সময় পাশের বিল্ডিং থেকে আমানের বাসার নিচে ছুটে আসেন ভবনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মোস্তফা (৬০)। রাতে অসংলগ্ন কথাবার্তা ও বেসামাল আচরণের কারণে আমান ধরা পড়ে যান প্রতিবেশীদের কাছে। আরজু ও তার শিশুসন্তান সাবিদ না ফেরার দেশে চলে যায়। আরজুর ভাই অপু বলেন, ‘আপা বলতেন, দুলাভাই ওই মেয়ের জন্য তাকে মেরে ফেলতে পারে। প্রায়ই আমাকে ফোন করে আপা কান্নাকাটি করতেন।’ ব্যাংক লোনের জন্য সুবর্ণা আগে কয়েকবার আমানের পাইকপাড়ার বাসায় এসেছিলেন জানিয়ে অপু বলেন, ‘সাবিদ তখন থেকেই তাকে চিনত।’ আমান ও আরজু দম্পতির ঘরে দু’সন্তান। সাবিদ ও তানভির। দু’সন্তানের মধ্যে সাবিদ বড়। এক বছর বয়সী তানভির ঘটনার সময়ে নানু বাড়ি থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে।



মুন্সীগঞ্জে যৌতুকের দাবি পূরনে ব্যর্থ হওয়ায় হত্যা:

যৌতুকের দাবি পূরনে ব্যর্থ হওয়ায় লৌহজংয়ে স্বামী বাড়ির লোকজনের হাতে মিম আক্তার (১৯) নামের এক গৃহবধু প্রাণ হারিয়েছে। ঘরে লাশ ফেলে ভোর রাতে স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পালায়। খুজে পাওয়া যায়না নিহত গৃহবধুর দেড় মাসের শিশু সন্তানকে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা হলদিয়া গ্রামের নিমকি ব্যবসায়ী স্বপন সাহার মেয়ে তুলী রানী সাহা (১৯) পার্শবর্তী দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের জয়নাল শেখের ছেলে জুলহাস শেখকে ভালবেসে বছর খানেক আগে বিয়ে করে। বিয়ের আগে তুলী ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে নাম রাখে মীম আক্তার। ধর্মান্তরের ফলে বাবা-মার সংসার ছেড়ে স্বামীর ঘরে চলে আসলেও বাবা-মায়ের সাথে কম-বেশি যোগাযোগ ছিল। সে প্রায় দেড় মাস আগে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। কাঠ মিস্ত্রী জুলহাস আর মীমের সংসার ভাল চললেও দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মীমকে চাপ দিয়ে আসছিল জুলহাস। কিন্তু মীম পালিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা চাইতে অস্বীকার করে। তারপরও জুলহাসের চাপাচাপিতে মীম তার বা-মায়ের কাছে জুলহাসের ব্যবসার জন্য এই টাকা চায়। এ ঘটনা মীমের বাবা-মা স্থানীয় শঙ্কর মেম্বারসহ কয়েকজন এলাকাবাসীকে জানালে তারা কোন প্রকার টাকা দিতে মানা করায় মীমের বাবা-মা টাকা দিতে আপারগতা প্রকাশ করে।টাকা না পেয়ে জুলহাস প্রায়ই মীমের প্রতি অত্যাচার করত। মীমের মা মীমকে তাদের বাড়িতে আনার জন্য গেলে জুলহাসের পরিবার রাতে বাড়িতে পিকনিক আছে বলে তাকে যেতে দেয়নি। ওই রাতে জুলহাসের বাড়িতে উচ্চস্বরে ডেস্কসেটে মিউজিক বাজিয়ে ধুমধামের সাথে চলে পিকনিক পার্টি। মীমের স্বামী জুলহাস ও তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবসহ শ্বশুর-শশুড়ী ও ননদসহ অনেক লোকজনই রাত ভর ধূম-ধাম করে। রাত ৪ টা পর্যন্ত মিউজিক বাজানোর এক ফাঁকে মীমকে হত্যা করা হয় বলে এলাকাবাসী দাবি করে। মীমকে হত্যা করে মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সকলকে নিয়ে পালিয়ে যায় স্বামী জুলহাস। যাবার পূর্বে পাশের বাড়ির লোকদের ডেকে বলে যায় মীম আত্মহত্যা করেছে।



মায়ের হাতে শিশু খুন:

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় মা নাজমা খাতুনের হাতে ৮ মাসের শিশু লাভলী খুন হয়েছে। ৪ বছর আগে চট্টগ্রামের জসিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করে নাজমা খাতুন। সেখানে মিম (২) নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হলে নাজমা বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বাবার বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের রুদ্রপুর গ্রামে চলে এসে বাবলুকে বিয়ে করে। বিয়ের পর ওই ঘরে আরেক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু অভাবের কারণে রেল স্টেশন পাড়ার শাহিনুর বেগমের কাছে শিশু লাভলীকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। বিক্রির তিনদিন পর নানি টাকা ফেরত দিয়ে শিশুটিকে বাড়িতে এনে তার বাবা-মার কাছে দিয়ে আসে। কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার রাতে ঘুমন্ত শিশুকে হত্যা করে মা নাজমা।



২০১০ সালে ২৩ জুন রাজধানীর আদাবরে মায়ের অনৈতকি সম্পর্ক দেখে ফেলায় একইভাবে মা তার প্রেমিককে দিয়ে পাঁচ বছরের শিশু সন্তান সামিউল আজিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সামিউলের মা আয়েশা হুমায়রা এশা ও তার প্রেমিক শামসুজ্জামান বাক্কু ওরফে আরিফকে গ্রেফতার করে পরবর্তীকালে কারাগারে পাঠানো হয়।



ভাই-ভাবি ও বাবা-মাকে হত্যা:

সিংগাইর উপজেলার শায়েস্তা ইউনিয়নের নিলটেক গ্রামে সকালে ছেলে তার বাবা-মাকে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত মহিউদ্দিনের বোন নুরী বেগম জানান, তার ভাইপো সাইদুর রহমান ভারসাম্যহীন ছিলেন। কোনো কাজকর্ম করতেন না। এ নিয়ে কয়েক দিন আগে তার ভাই-ভাবির সঙ্গে সাইদুরের ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে সাইদুর রহমান কুপিয়ে তার তার ভাই-ভাবিকেও হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ঘরের ভিতরে বাবা-মাকে হত্যার পর সাইদুর রহমান ওই ঘরের ভেতর অবস্থান করছিলেন। কেউ তার কাছে যেতে পারছিলেন না। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আটকের জন্য চার রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সাইদুর রহমান দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তার পায়ে গুলি করে। এতে তিনি পড়ে যান। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তখন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।



বাবার আছাড়ে শিশুর মৃত্যু:

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে কালু জোয়ার্দ্দার ওরফে বিপ্লব নামের এক মাদকাসক্ত বাবার হাতে মোস্তাকিন রহমান ওরফে নয়ন নামে পাঁচ বছরের এক শিশু খুন হয়। কালু মণ্ডল প্রায়ই নেশা করে রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রী খাদিজা বেগমকে মারধর করত। বিপ্লব নেশা করে বাড়ি এসে স্ত্রীকে মারধর শুরু করে। এ সময় তার পাঁচ বছরের শিশুপুত্র মোস্তাকিন রহমান ওরফে নয়ন মাকে মারধরের দৃশ্য দেখে কাঁদতে থাকলে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা চড়-থাপ্পড় দেয়। তাতেও নয়নের কান্না না থামায় শিশুটিকে মাটিতে আছাড় দেয় বাবা। এতে ঘটনাস্থলেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়।



স্বামী কর্তৃক স্ত্রী খুন:

খুন হয়েছেন মা, তাও আবার বাবারই হাতে। স্ত্রীকে হত্যার দায়ে জেলে ঘাতক বাবা। এমন কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছে দুই শিশু। শিশু দুটির একটি ১৫ দিনের নবজাতক, আরেকটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। চিকিৎসকের পরামর্শে কৌটার দুধ ফিডারে ভরে খাওয়ানো হচ্ছে ১৫ দিনের কন্যা শিশুটিকে। তাতে মিটছে না মায়ের ‘দুধের ক্ষুধা’। আর সাড়ে তিন বছরের অরিন বারবারই খুঁজছে তার মাকে। খুঁজছে বাবাকেও। কী ঘটেছে তার মা-বাবার ভাগ্যে তা জানা নেই এই শিশুর। দুই শিশুর কান্না থামতে পারছেন না স্বজন, প্রতিবেশীরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হওয়ার পর এখন এক মর্মস্পশী উপাখ্যান তৈরি হয়েছে।ভোরে স্ত্রী সুরভী আক্তারকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাষণ্ড স্বামী সাজ্জাতুল ইসলাম রাসেল। মাত্র পাঁচ বছর ওদের বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দর একটি ছেলে হয়। গত ১৫ দিন হল মেয়ে জন্মেছে। সব মিলে সুখেই ছিল। কেন যে এমন হয়?’ নিজ ফ্ল্যাটে শিশু সন্তানের সামনেই স্ত্রী সুরভী আক্তারকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেন রাসেল। এরপর বাইরে থেকে দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান। ভেতর থেকে বাচ্চাদের অব্যাহত কান্নার শব্দ শুনে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে বাসাটি তালাবন্ধ, ভেতরে শিশুর কান্না। এক পর্যায়ে ফ্ল্যাটের আশপাশের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে পুলিশকে খবর দিলে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে খাটের উপর সুরভীর লাশ মেলে। সুরভীর দুই সন্তানের মধ্যে পৌনে চার বছর বয়সী ছেলে অরিন তখনও মেঝেতে মায়ের রক্তাক্ত লাশের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। পাশেই বিছানায় শোয়ানো ছিল এ দম্পতির ১৫ দিন বয়সী মেয়েটি।



মায়ের পরকিয়ায় সন্তান বলি:

২০১৪ সালের ১২ আগস্ট পুলিশ ডেমরা-চিটাগাং রোডে শুকুরশী এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে কামরুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করে। খুনের সাথে জরিত তার মা মরিয়ম বেগম । বয়স চল্লিশোর্ধ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ডেমরার আশোক আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মধ্যবয়সী এই দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলের নাম কামরুজ্জামান (৩০)। দুই মেয়ে আরিফা (২৬) ও মারুফা (২৪)। দুই মেয়েই বিবাহিত। রাজধানীর ডেমরায় স্বামীর নিজ বাড়িতেই ছেলে, ছেলে বউ এবং নাতনি নিয়ে তার সুখের সংসার। কিন্তু গত একবছর ধরে সেই সুখের সংসারে অশান্তি প্রবেশ করে মরিয়ম বেগমের বিবাহবহির্ভূত অনৈতক সম্পর্ক বা পরকীয়ার হাত ধরে। মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি ছেলে কামরুজ্জামান। মাকে অনৈতিক সম্পর্ক থেকে বের করতে চেষ্টা চালায় কামরুজ্জামান। কিন্তু এতে মা তাকে শত্রু ভাবতে শুরু করেন। মরিয়ম বেগম প্রেমিক আজিজুল হককে নিয়ে পরিকল্পনা করেন ছেলেকে হত্যা করে পথের কাটা শেষ করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেমিক আজিজকে দিয়ে এক লাখ টাকায় হত্যাকারী ভাড়া করেন মা। মায়ের সহযোগিতায় হত্যা করা হয় কামরুজ্জামানকে। এক বছর আগে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয় মরিয়ম বেগম ও গাড়ি চালক আজিজুল হকের। ফোনে নিয়মিত কথা হয়। তারপর তারা পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। নগরীর খিলগাঁওয়ে আজিজের স্ত্রী-সন্তান থাকেন। মরিয়মের স্বামী মো. আশোক আলী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় আজিজুল হকের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। দুই জনেই পরিবাররের বাধা এড়াতে মাতুয়াইলের পাড়াডগাইর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানেই অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত রমযান মাসে বিষয়টি ছেলে কামরুজ্জামান জেনে ফেলায় তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। মরিয়ম তার প্রেমিক আজিজুলকে বিষয়টি জানান এবং ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য প্রেমকিকে দায়িত্ব দেন।



ঘটনার সন্ধ্যায় মা মরিয়ম বেগম ছেলে কামরুজ্জামনকে জানায় তার শরীর খারাপ। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে ছেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। মা খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে দুই জনে একসঙ্গেই বের হন। হাসপাতালে পৌঁছার পর ভেতরে প্রবেশ করেন মা। তিনি ভেতরে পৌঁছে আজিজকে ফোনে জানান কামরুজ্জামান হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছে। আজিজ কামরুজ্জামানকে আগেই চিনতেন।কিন্তু কামরুজ্জামান কখনো এরআগে আজিজকে দেখেনি। হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ কামরুজ্জামেনর সামনে এসে আগ বাড়িয়ে পাথর কেনা নিয়ে বলেন আজিজ। তাদের পাশেই আজিজের মাইক্রোবাস রাখা ছিল। গাড়িতে বসে আলোচনা করবে বলে তারা দুই জনই গাড়িতে উঠেন। এসময় আজিজ কফি পানের কথা বলেন কামরুজ্জামানকে। দুই জনে মিলে কফি পান করেন। এরপর অচেতন হয়ে যায় কামরুজ্জামান। এসময় গাড়িতে উঠেন তাফাজ্জাল ও মঞ্জুরুল। গাড়ি চালায় আজিজ। কিছুদূর নিয়ে যাওয়ার পর কামরুজ্জামানকে গাড়ির সিটবেল্ট দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কামরুজ্জামানের লাশ ডেমরা-চট্টগ্রাম রোডের শুকুরশী নামক স্থানে ফেলে যায় ঘাতকরা। হত্যা মিশন শেষ করে তারা ফোনে মরিয়ম বেগমকে নিশ্চিত করেন। খবর পেয়ে মা মরিয়ম বেগম তাদের সঙ্গে দেখা করেন। হত্যাকারীদের চুক্তি অনুযায়ী দশ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর তিনি বাসায় চলে যান। ১৯ আগস্ট কামরুজ্জামানের চেহলাম সম্পন্ন করে ২১ আগস্ট আজিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটটিতে যায় মরিয়ম বেগম। সেখানে আজিজসহ অপর খুনিরাও একসঙ্গে মিলিত হয়।হত্যার পর কামরুজ্জামনের স্ত্রী নূরজাহানের ওপর এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করেন মরিয়ম বেগম। কারণ নূরজাহানের সঙ্গে মরিয়ম বেগমের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। কামরুজ্জামেন স্ত্রী হিসেবে তিনি নিজের বোনের মেয়েকে চেয়েছিল। কিন্তু কামরুজ্জামান খালাত বোনকে বিয়ে করেননি। এনিয়েও মা-ছেলের দ্বন্দ্ব ছিল।কিন্তু মরিয়ম বেগমের দুই মেয়ে আরিফা (২৬) ও মারুফা (২৪) হত্যাকান্ডের সঙ্গে কামরুজ্জামেনর স্ত্রীকে জড়াতে রাজি হননি। ঘটনার দিন বাসার আলামারী থেকে একলাখ টাকা খোয়া গেছে। যা কামরুজ্জামান নিয়ে গেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিল মরিয়ম বেগম। কিন্তু সেই টাকা তিনি খুনিদের পেছনে খরচ করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।



মরিয়ম বেগমের বোনের মেয়ের নাম শাহিদা বেগম (২৪)। তার সঙ্গে ছেলে কামরুজ্জামানের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মরিয়ম বেগম। কিন্তু ছেলে বিয়ে না করায় ক্ষেপে যান তিনি। ছেলে বিয়ে করেন নূরজাহান (২২) নামের এক তরুণীকে। এরপর পারিবারিক কলহ শুরু। ছেলের বউকে পছন্দ না হওয়া ছেলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। স্বামীর অসুস্থতাও ছিল তার বাড়তি হতাশা। এর মধ্যেই তিনি জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া সম্পর্কে।ছেলেকে মেরে ফেললে তার প্রেমের সম্পর্ক আরো উন্নতি হবে এবং আজিজের সঙ্গে তিনি আরো ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে পারবেন বলেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ধারণা। জিয়ানা বয়স মাত্র দেড় বছর। দাদীর পরকীয়ার জেরে খুন হওয়া কামরুজ্জামানের একমাত্র কন্যা সন্তান। সে জানে না তার বাবা কোথায়। কতটা নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বাবার আদর স্নেহ বোঝার আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে তারই দাদী। কামরুজ্জামান খুন হওয়ার পর তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম জিয়ানাকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।



মা যখন বাবার হত্যাকারি:

সারাদিন গাড়ি চালিয়ে (সিএনজি ট্যাক্সি ) রাতে বাড়ি ফেরার সময় আদরের ছোট ছেলে মিজান (৪) ও নাইমা (৬) এর জন্যে কেক নিয়ে আসতো সিএনজি ট্যাক্সি চালক দুদু মিয়া। স্ত্রী শাহনাজের হাতে নির্মমভাবে নিহত হবার পর এখন তাদের জন্যে প্রতিদিন রাতে কেক নিয়ে আসবে কে ? এমন প্রশ্নই করছেন মিজান ও নাইমার ফুফু তারা বেগম ও প্রতিবেশিরা। মিজান, নাইমা, মামুন ও মাইমুনা বাবাকে হারিয়েছে অবুঝ বয়সে। মাও বাবার হত্যাকারি হয়ে চলে গেছে জেলে। এতিম হয়ে পড়া এই অবুঝ সন্তানদের দাদা-দাদীও নেই। এখন কে দেখবে দুদু মিয়ার এসব অবুঝ সন্তানদের ? রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সর্ত্তায় স্ত্রী শাহনাজের হাতে খুন হয়। পরে মাটি চাপা অবস্থায় থাকা দুদু মিয়ার লাশ উত্তোলন করে পুলিশ। বড় ছেলে মামুনের কাছে জিজ্ঞেস করা হয় বাবাকে মারার সময় দেখেছো ? বাবাকে না পেয়ে তুমি আর তোমরা ছোট ভাই বোনেরা খোঁজনি ? অনেকক্ষণ পর উত্তর দেয় ‘আমি সেদিন শুধু ঘুম থেকে উঠে দেখি রক্ত। তখন মা বলে গরুর মাংসের রক্ত। সকালে বাবার খোঁজ করলেও মা আবার বলে বাবা সিএনজি ট্যাক্সিতে গ্যাস নিতে গেছে।’ তার ছোট অন্য ভাই বোনরা কিছু বলতে পারেনি। তারা শুধু মা আর বাবাকে খোঁজছে।



পরকীয়া প্রেমের জের ধরে খুন হন স্বামী:

রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন নলভোক এলাকায় পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এবার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের (২২) হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন স্বামী মনির হোসেন (৩০) । নিহত মনির হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। নলভোকে নিজের তিনতলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে থাকতেন মনির।





কি ভয়াবহ অবস্থা! আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবার হলো মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এখন পরিবারের মধ্যেও নিরাপত্তা খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সামাজিক অবক্ষয়ের প্রভাবে পরিবারের সদস্যদের একের প্রতি অপরের মমত্ববোধ হ্রাস পাওয়ায় ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বন্দ্বে আপনজনের প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে।গত ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এ পাঁচ বছরে সারা দেশে ২০ হাজার ৬৮০ জন খুন হয়েছেন। বিশিষ্ট কলামনিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মানুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতার প্রবণতা বেড়ে গেছে। মানুষের মন থেকে স্নেহ-মায়া-মমতা ও সুকুমার বৃত্তি লোপ পাচ্ছে। এ কারণে পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.