নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণ: প্রেক্ষিত জাপান

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০

পারমাণবিক তেজস্ক্র্রিয়তার প্রকোপভেদে আহত হওয়া এবং পঙ্গু হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুই এর শেষ পরিণতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তথ্য মতেঃ কোনো মানুষ যদি ১ হাজার মিলিসিভার্ট পর্যন্ত পারমাণবিক রেডিয়েশনের শিকার হয়, তাহলে তাকে তেজস্ক্র্রিয়তাজনিত অসুস্থ বলা যাবে। আর যদি ৪ হাজার মিলিসিভার্ট পর্যন্ত রেডিয়েশনের শিকার হয়, তাহলে বেশিরভাগ মানুষ মারা যাবে। তবে ৬ হাজার মিলিসিভার্ট রেডিয়েশনের শিকার হলে মানুষের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারো কারো রেডিয়েশনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদীও হতে পারে। রেডিয়েশনে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রাসায়নিক পরিবর্তন হবে। তার দেহের কোষ ধ্বংস হবে। ফলে রক্তক্ষরণ, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া, ঘা হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেবে। প্রাথমিকভাবে তেজস্ক্র্রিয়তাজনিত অসুস্থতার লক্ষণ হলো অস্বস্তি ভাব এবং বমি হওয়া। সাধারণত ১ হাজার মিলিসিভার্ট রেডিয়েশনে আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এ লক্ষণগুলো দেখা যাবে। পারমাণবিক রেডিয়েশন যত কম মাত্রারই হোক না কেন, এর ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।

জাপানের হিরোশিমা :
১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট ঘড়িতে বাজছে ঠিক ৮টা ১৫মিনিট। জাপানের হিরোশিমা নগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ‘এনোলা গে’ থেকে ৬০ কেজি ওজনের পারমাণবিক বোমা"লিটল বয়" নিক্ষেপ করে। এটি তার নিজস্ব গন্তব্যে পৌছাতে সময় নেয় ৫৭ সেকেন্ড এবং অতিক্রম করে ৬০০মিটার দূরত্ব। এ বিস্ফোরণটে ছিল ১৩ কিলোটন টিএনটির সমান এবং সে সময় তাপমাএা হয়েছিল ৩৯০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ বিস্ফোরণের পর ১ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকা জুড়ে ধ্বংসলীলা শুরু হয় এবং হিরোশিমার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এতে বিস্ফোরণের সাথে সাথেই মারা গিয়েছিল সেখানকার সেখানকার ২০ ভাগ তথা ৭০,০০০ মানুষ, ঐ বছরের শেষ দিকে ১,৪০,০০০জন, ১৯৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় দুই লাখ। । বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে লক্ষাধিক৷ এদের অনেকের মাঝে ছিল ক্যানসার ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বিশাল ছিল যে বিস্ফোরণ সংঘটনের প্রায় 10 মাইল দূরের মানুষদেরও শরীরের চামড়া খসে পড়ছিল। বোমা হামলার সময়ই কেবল নয়, তেজস্ক্রিয়তায়ও কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ তেজস্ক্রিয়তা, পোড়া ও ক্ষতের কারণে ১৯৪৫ সালের শেষে কেবল হিরোশিমাতেই নিহত হয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ৷ পাঁচ বছর পরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৩০ হাজারে৷

জাপানের নাগাসাকি:
১৯৪৫ সালের ৯ই আগস্ট পারমাণবিক বোমা"ফ্যাট ম্যান"আছড়ে পড়ে নাগাসাকি শহরে৷।বোমাটিতে বিস্ফোরক ছিল ২২ হাজার টন টিএনটি৷ এই বোমা হামলার চার মাসে সেখানে প্রাণ হরান ৭০ হাজার মানুষ৷ পরে আরো ১০,০০০জন মারা যায়। মানুষের শরীরের ওপর এবং পরিবেশের ওপর ঐ বোমার রেডিয়েশন বা তেজ্বষ্ক্রিয়তার প্রভাব তার বহু বছর পরও দেখা যায়।


জাপানের ফুকোশিমা
২০১১ সালের ১১ই মার্চ তোহুকুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে দূরবর্তী একটি ৯.০ ভূমিকম্প জাপানকে আঘাত করে।জাপান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুসিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২০ কিলোমিটারের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সরকার ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের ২০ কিলোমিটার এলাকায় থাকা সব বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন৷ এতে প্রায় এক লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যায়৷ তবে আদতে ২০ কিলোমিটারের বাইরের লোকজনও নিরাপত্তার কারণে এলাকা ছেড়ে চলে যায়৷ এদের একজন মিকিও নিহাই৷ ৩৮ বছর বয়সি নিহাই'এর স্ত্রী তাদের ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে ফুকুশিমা ছেড়ে এখন থাকছেন টৌকিওতে৷ আর নিহাই জীবিকার তাগিদে রয়ে গেছেন ফুকুশিমাতেই৷ কারণ তিনি সেখানে একটি গাড়ি কারখানায় চাকরি করেন৷ অর্থাৎ তাঁর পরিবার দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে৷ যাতায়াত ব্যয়বহুল হওয়ায় নিহাইয়ের পক্ষে মাসে একবারের বেশি টোকিও যাওয়া সম্ভব হয় না৷ তাই মানসিকভাবে কষ্টে আছেন নিহাই৷ ফুকুশিমা দাইচি পাওয়ার প্ল্যান্টের রিএক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলে মহাসাগরীয় জলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিকিরণ ছড়িয়ে পরে। জাপানের ঊর্ধ্বতন দুই হাজার বিজ্ঞানীর সংগঠন সায়েন্স কাউন্সিল অফ জাপান এক গবেষণায় বলেছে, আগামী এক জনমেও ফুকুশিমা আর বসবাস যোগ্য হবে না। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জানিয়েছে, ফুকুশিমার মানুষ ভয়াবহ পর্যায়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিশেষ করে দুর্ঘটনার পরে ওই শহরের এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বহু মানুষ এখনও ঘরছাড়া৷

জাপানে আতংক
ফুকুশিমা প্লান্টের চারপাশে ৩০ কিলোমিটার জায়গায় মানুষকে ঘরের মাঝে থাকতে বলা হয়। ১৭ই মার্চ জাপান সরকার ফুকোশিমার আশে পাশে নিরাপত্তা এলাকা বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করে। কারণ রেডিয়েশন যত দূর অতিক্রম করে তত তার শক্তি কমে আসে। ফুকুশিমা প্রকল্প এলাকার চার দিকে ২০ কিলোমিটার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রথমে তিন কিলোমিটার এলাকা ফাঁকা করার কথা থাকলেও পরে এর পরিসর বাড়ানো হয়। বিদেশীদের এই এলাকা থেকে দূরে নিরাপদ আশ্রয়ে অথবা নিজ দেশে ফেরত যাবার পরামর্শ দেয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেবার জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে। বিস্ফোরণের স্থান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে টোকিওতেও রেডিয়েশনের প্রভাব দেখা গেছে। জাপানে পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং তা ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে সেখানকার অধিবাসীরা জানালা দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে আতঙ্কে দিন কাটায়েছেন। ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হননি। পাশাপাশি লোকজনের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ধুম পড়ে।

জাপানের এই আতঙ্ক দ্বীপ দেশটির গণ্ডী পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দলে দলে লোক নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পাশাপাশি তেজস্ক্র্রিয়তার প্রকোপ হ্রাস করতে ঔষধের শরণাপন্ন হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশেষ ব্র্যান্ডের ঔষধ বিক্রি করে ঔষধ কোম্পানীগুলো বিপুল মুনাফা লুটে নিতে শুরু করে।

ফুকুশিমা ট্র্যাজেডির পর জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তহুকো’র উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের ৭০-৮০ ভাগ বাজার চলে গেছে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দখলে। এমনকি তেজস্ক্রিয়তার কারণে দূর্ঘটনা অঞ্চলের ৩০০ কিলোমিটার দূরবর্তী কায়াসু কোম্পানীর উৎপাদিত দ্রব্যের বিক্রি কমে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ।

ফুকুশিমার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া খাদ্য শৃঙ্খলেও দেখা যাচ্ছে এবং তা বেশ ভালোভাবেই। জাপানে উৎপাদিত সবজি পর্যন্ত বিকৃত হয়ে গেছে। টমেটোতে পিণ্ড, দ্বিগুণ আকারের পিচ, বিশালাকার পাতাকপি, পাঁচটি আঙুলযুক্ত শালগম, বীভৎস রূপের সূর্যমুখী ইত্যাদি এখন সাধারণ দৃশ্য।

ফুকুশিমা পারমাণবিক প্লান্টের কাছে ভূগর্ভস্থ পানিতে উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ পাওয়া যায়। সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি স্ট্রনটিয়াম-৯০ পাওয়া যায়। এই দূষিত পানি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। প্লান্টটি থেকে এখনো মাঝে মাঝে তেজস্ক্রিয় পানি নির্গত হয়। ২০১১ সালের ১১ মার্চের বিপর্যয়ের পর থেকে সাগরের পানিতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। বিপর্যয়ের মাত্র তিন দিনের মাথায় অকুস্থলের কাছাকাছি একটি স্থানে সিজিয়ামের মাত্র ৯০ গুণ বেশি দেখা গিয়েছিল।

ফুকুশিমা পারমাণবিক প্লান্ট সংলগ্ন এলাকার আশপাশে প্রবীণ লোকদের মৃত্যুহার তিন গুণ বেড়েছে। পঙ্গু শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তেজস্ক্রিয় মাটিতে খেলার কারণে শিশুদের পা খোঁড়া হয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তার শিকার হচ্ছে অন্য দেশের নবজাতকেরা পর্যন্ত। শিশুদের কণ্ঠস্বরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।


বিদেশীদের উদ্বেগ
উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বা অনুমান করে অনেক দেশ জাপান থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়। কোনো কোনো দেশ টোকিওতে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় । আমেরিকা দুর্ঘটনার শুরু থেকে জাপানে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপের জন্যে নিজস্ব পরমাণু বিজ্ঞানীদেরকে জাপানে পাঠায়। জাপানের ওকিয়ানা দ্বীপে অবস্থিত আমেরিকান সামরিক ঘাটিতে অবস্থানরত হাজার হাজার সৈন্য এবং হাওয়াই দ্বীপে বসবাসকারী আমেরিকান নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিন সরকার আগে থেকেই উদ্বিগ্ন রয়েছে । কারণ, জাপানে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা যদি মধ্যম মানেরও হয়, তাহলে ঐ দুটি স্থান আক্রান্ত এলাকার মধ্যে পড়বে এবং সেখানকার মানুষ, গবাদী পশু, শাক-সবজী, ফল-মূল এবং মাছ তেজষ্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হবে।

নতুন সংস্কৃতি
হিরোশিমা নগরীর ‘সিটি সেন্টার’ বোমা হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যা আবার নতুন করে গড়া হয়৷ কেবল ‘ওটা’ নদীর ধারে দ্বীপটিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি৷ সেখানে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ: শান্তি জাদুঘর, শিশুদের শান্তি স্মারক স্তম্ভ, শিল্প ও বাণিজ্য ভবনের ধ্বংসস্তূপ আর শিখা অর্নিবাণ, যেটা জ্বলবে বিশ্বের সব আণবিক বোমা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত৷

১৯৫৫ সালে নাগাসাকিতে অ্যাটোমিক বোমার জাদুঘর এবং একটি ‘পিস পার্ক’ বা শান্তি উদ্যান নির্মাণ করা হয়৷ সেখানে গিয়ে অনেকেই বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন৷ এটা জাপানিদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
শান্তির ঘন্টা বাজিয়ে এবং শান্তির গান গেয়ে জ্বাপানের হিরোশিমা শহরের অধিবাসীরা গত শনিবার ওই শহরে পারমাণবিক বোমা হামলার ৬০ বছর পূর্তি পালন করেছে।
হিরোশিমায় বেঁচে যাওয়াদের শিল্প নিয়ে প্রদর্শনী হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোসিমায় আঘাত হেনেছিল পারমাণবিক বোমা। সেসময় বেঁচে যাওয়াদের আঁকা শিল্পকর্ম এই প্রথম জাপানের বাইরে প্রদর্শনী করা হচ্ছে। এই পেইন্টিংগুলো আগামী মাসে ম্যানচেস্টার আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীতে যাবে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান থেকে হিরোসিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। ঐ সময়ের ভয়ংকর দৃশ্য এই পেইন্টিংয়ের মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।




১৯৭০ সালের দিকে জাপানি ব্রডকাস্টার এনএইচকে এর অনুরোধে এই ছবিগুলো তৈরি করা হয়। বোমা প্রদর্শিত মানুষের জাপানি ভাষায় যাদের বলা হয় ‘হিবাকুশা’, তাদের ১২টি পেইন্টিং ও ড্রয়িং নিয়ে ম্যানচেস্টারে ‘দ্য সেনসরি ওয়ার ১৯১৪-২০১৪’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে নেয়া হবে। ১৯৭৪ সালে এনএইচকে পাঠানো ২০০০ ছবির মধ্য থেকে এগুলো বাছাই করা হয়। পরবর্তীতে এই ছবিগুলো নিয়ে হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়াম এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শনী করা হয়। ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের সাথে সাথে ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো মানুষ ঘটনস্থলেই মারা যান। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী রেডিয়েশন অসুস্থতার কারণে পরবর্তীতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক লাখ ৩৫ হাজারে পৌঁছায়। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে। সূত্র: বিবিসি।

প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প ও সুনামির সেই বিভীষিকাময় দিনটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছিলো। অনেকেই ভাবেন তারা নিখোঁজ হয়েছেন। আবার হয়ত ফিরে আসবেন স্বজনরা, কারণ তাদের লাশের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেদিনের ভয়াবহ দুর্যোগের স্মরণে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলে এক মিনিট নীরবতা পালন করে জাপানের অধিবাসীরা। টোকিওর জাতীয় থিয়েটারে এই দিনের স্মরণে জাতীয় স্মরণসভার আয়োজন করে। সেখানে সম্রাট আকিহিতো ও প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিকো নোদা অংশ নেয়। ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ফ্রেন্ডস অব জাপানের উদ্যোগে বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণসভা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বোলন করা হয়। নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।



তেজস্ক্রিয়তায় কি ধরনের ক্ষতি
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড ওয়াকফোর্ড জানান, তেজস্ক্রিয়তা অস্থিমজ্জায় রক্তকোষের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। কেন্দ্রে কর্মরত কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, আশপাশের এলাকার লোকজনের জন্য কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। স্বল্পমাত্রায় তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণ হলো ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চরম বিতৃষ্ণা বোধ ও বমি শুরু হবে। এরপর আস্তে আস্তে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা ও জ্বর আসবে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো কেটে যাওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ মনে হতে পারে অসুস্থতা আর নেই। কিন্তু এরপর আবার নানা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হলে আগের লক্ষণগুলোই প্রাথমিকভাবে দেখা যাবে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী আকার নেবে। সেক্ষেত্রে জ্বর ও রক্তবমি হবে। পরবর্তী সময়ে মাথার চুল পড়ে যাওয়া, শরীরে ক্ষত সৃষ্টি এবং ক্ষত সহজে সারবে না। এ থেকে ক্যানসার হতে পারে। তবে সব কিছু নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তি কতক্ষণ ও কী মাত্রার তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে ছিলেন তার ওপর। তেজস্ক্রিয়তা দীর্ঘস্থায়ীভাবে পাকস্থলী ও অস্থিমজ্জার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সাধারণত বছরপ্রতি ২ মিলিসিভার্ট তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন আমরা হই, এই মাত্রা স্বাভাবিক। এক দফায় ১ গ্রে (১০০০ মিলিসিভার্ট) পরিমাণ তেজস্ক্রীয় এক্সপোজার বিভিন্ন অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। এক দফায় ৪ গ্রে (৪০০০ মিলিসিভার্ট) পরিমাণ তেজস্ক্রীয় এক্সপোজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ৫০ থেকে ১০০ মিলিসিভার্ট হলে রক্তের রসায়নে পরিবর্তন, ৫০০ মিলিসিভার্টে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিরাগবোধ, ৭০০ মিলিসিভার্টে বমি, ৭৫০ মিলিসিভার্টে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, ৯০০ মিলিসিভার্টে ডায়রিয়া, এক হাজার মিলিসিভার্টে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, চার হাজার মিলিসিভার্টে চিকিৎসা না হলে দুই মাসের মধ্যে মৃত্যু, ১০ হাজার মিলিসিভার্টে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু এবং ২০ হাজার মিলিসিভার্টের বেশি হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়বে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া তেজস্ক্রিয়তায় শিশুদের ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিমাত্রার তেজষ্ক্রিয়তা অস্থিমজ্জার ক্ষতি করে, রক্তের শ্বেতকণিকার উৎপাদন হ্রাস করে এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা কমায়। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পেয়ে অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ ঘটায়। তেজস্ক্রিয়তার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আরও বেশি তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত জামা-কাপড় ও জুতা পরিবর্তন করতে হয়। এরপর সাবান ও পানি দিয়ে শরীর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হয়।

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খুবই স্বল্প পরিমাণ তেজস্ক্রিয়ায় ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তেজস্ক্রিয়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। আবার বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে। আবার বৃষ্টির সঙ্গে সাগরের পানিতে ও মাটিতে নেমে খাদ্যশস্য, পানি ও সামুদ্রিক প্রাণীতে চলে যায়। সেগুলো গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে তেজস্ক্রীয় উপাদান প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেজস্ক্রিয়া থাকা ঘাস খেয়েছে এমন গরুর দুধের মাধ্যমেও তেজস্ক্রিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়া এক সময় পানিতে যাবে এবং সমুদ্রের পানি ও জীবজগতে তা মিশে যাবে। আর বৃষ্টি হলে সুপেয় পানিতেও তেজস্ক্রিয়া মিশে যেতে পারে।


ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর খারাপ প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে মানুষের থাইরয়েড ও বোন ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়ার ঝুঁকি বাড়বে। পরমাণু কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তার কারণে খাবার ও পানির মাধ্যমে ক্যান্সার হতে পারে। তেজস্ক্রিয়া মানুষের শরীরের কোষের ডিএনএ’র (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) গঠনে পরিবর্তন ঘটায়। তাতে দেহকোষের অসম বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। পরিণতদের চেয়ে গর্ভজাত ও বাড়ন্ত শিশুদের দেহকোষের বিভাজন অনেক বেশি হারে হয় বলে তেজস্ক্রিয়তায় তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। শিশুরা দুধ বেশি খায় বলে তাদের শরীরে তেজস্ক্রিয়তা প্রবেশের ঝুঁকিও বেশি। এজন্য গর্ভজাত ও শিশুরাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকবে। যে সব পারমানবিক পদার্থের অর্ধায়ু অনেক বেশি সময়ের হয় সেগুলো বিভিন্নভাবে মানুষ ও অন্যান্য জীবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। গড়ে প্রতি ১০৫ জন ছেলে শিশু জন্ম হলে ১০০ জন মেয়ে শিশু জন্ম নেয়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায় রেডিয়েশন আক্রান্ত এলাকায় মেয়ে শিশু জন্মের চেয়ে ছেলে শিশু জন্মের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।জাপানের হিরোসিমা নাগাসাকিতে বোমা বিষ্ফোরনের পর বেশ কিছু পঙ্গু ও অস্বাভাবিক শিশু জন্ম নিতে দেখা যায়।চেরনোবিল দূর্ঘটনার পরেও সেই এলাকায় মেয়েদের চেয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছেলে শিশু জন্ম নিতে দেখা যায়। অনেকে ধারণা করছে- শিশু জন্মের ক্ষেত্রে এক্স ক্রোমোজম হয়তো বেশি পরিমান নষ্ট হয় তাই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর আশপাশের এলাকার শিশুরা ব্যাপক মাত্রায় গলগ্রন্থির ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল।





জীব কোষে ও মনে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
সাম্প্রতিক সময়ে ফুকুসিমা দাইচি প্লান্টের পাসেই একটি কানহীন খরগোসের বাচ্চা জন্ম নিতে দেখা যায়। অনেকে এটা রেডিয়েশনের প্রভাব বলে ধারণা করছেন। জীব কোষের উপরে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে। ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়ের পর মানুষের মনে তেজস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক বেড়েছে।তেজস্ক্রিয়া রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বিরাট ক্ষতি সাধন করে ব্যাকটেরিয়াগুলি৷ ইভা গেইনেন জানান, ‘‘প্রথমে ব্যাকটেরিয়াগুলি সংক্রমণ সৃষ্টি করে৷ এরপর তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয় রক্তদূষণ৷ এক কথায় ব্যাকটেরিয়ার ভয়ানক সংক্রমণ৷ এই রক্ত দুষণই মূল সমস্যা৷''

কিছু ব্যাকটেরিয়া রক্তে থাকাটা সুস্থ মানুষের পক্ষে তেমন ক্ষতিকারক নয়৷ প্রায় প্রতি দিনই এমনটি ঘটে থাকে৷ যেমন দাঁত ব্রাশ করার সময়৷ ব্রাশ থেকে দাঁতের মাড়িতে ঢুকতে পারে ব্যাকটেরিয়ারা৷ রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা এগুলিকে দমন করতে পারে৷ দেহের নিজস্ব এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ‘বিপিআই'এর সাহায্যে ব্যাকটেরিয়াগুলিকে শুধু মেরেই ফেলা হয় না, সংক্রমণ প্রক্রিয়াও প্রতিরোধ করা হয়৷ কিন্তু তেজস্ক্রিয় রশ্মিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেলায় এটা সম্ভব নয়৷ লেভি বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এই রশ্মি অস্থির মজ্জা ধ্বংস করে৷ ফলে রক্তে শ্বেত কণিকার বিপিআই বা দেহের নিজস্ব অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুত হয় না৷ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যখন প্রতিরোধ শক্তিটির বিশেষ প্রয়োজন, তখনই থাকে এটি অনুপস্থিত৷''


বিশেষজ্ঞ মতামত আর সাধারণের চর্চা
চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় তাহলে করণীয় হিসেবে প্রত্যেকের আয়োডিন ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। কেননা শরীরে প্রয়োজনীয় আয়োডিন থাকলে শরীর তেজস্ক্রীয় আয়োডিন গ্রহণ করবে না। সরকারি হিসেবে ফুকুশিমা দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও এর কারণে মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাত হচ্ছে তার কোনো শেষ নেই৷ শুরুতে যখন বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছিল তখন ধারণা ছিল, হয়তো বছর দুয়েকের মধ্যে আবার ফেরা সম্ভব হবে৷ কিন্তু আজ দুবছর পার হতে চললেও কবে ফুকুশিমায় ফেরা যাবে তা জানেন না নিহাই৷ যদিও সরকার সহ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলো বলছে যে, ফুকুশিমার পরিবেশে এখন যে তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে তাতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু তারপরও মানুষ আশ্বস্ত হচ্ছে না৷ তারা ফিরে যেতে চাইছেন না৷ লিতাতে গ্রামের মেয়র নোরিও কানো, যিনি ফুকুশিমা ছেড়ে এখন টোকিওতে থাকছেন, তিনি বলছেন ফুকুশিমার পরমাণু চুল্লি ও তার আশেপাশের এলাকা পুরোপুরি তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করতে লাগতে পারে প্রায় ৩০ বছর৷ ফুকুশিমা এলাকার কৃষক ও মৎসজীবীরাও রয়েছেন বিপদে৷ গবেষণায় তাদের উৎপাদিত ফসল ও মাছ তেজস্ক্রিয়তামুক্ত বলে প্রমাণিত হলেও মানুষ তা কিনতে চাইছে না বলে জানান তারা৷


জনস্বাস্থ্যের ওপর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এই তেজস্ক্রীয় পদার্থগুলো ক্রমাগত ভাঙতে থাকে এবং তৈরি করে নতুন নতুন তেজস্ক্রীয় পরমাণু। একই সঙ্গে উত্পন্ন হয় বিভিন্ন ক্ষতিকর তরঙ্গ যেমন—গামা রে এবং এক্স-রে, যা মাত্রা ছাড়ালে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর ক্ষতি করে থাকে। পরিবেশের সংস্পর্শে এলে এই পরমাণু পানি ও বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জীবজগতের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে কাজ করে। মানবদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক বন্ধন তখন হুমকির মুখে পড়ে, তেজস্ক্রীয় পদার্থের সৃষ্ট নতুন নানারকম বিক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে পারে না। ফলে নানা ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।

একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনার জন্ম
ফুকুশিমা পাউয়ার প্লান্ট পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ পারমানবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট। এখানকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় তেজষ্ক্রিয় নির্গত হওয়ায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। জাপানে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প ও সুনামির পর পারমানবিক স্থাপনায় বিষ্ফোরণের কারণে ছড়িয়ে যাওয়া তেজষ্ক্রিয়তা জাপান থেকে আমদানীকৃত খাবারে আছে কি না তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারত সরকার ১১ মার্চের পর জাপান থেকে আমদানিকৃত সকল খাদ্যের তেজষ্ক্রিয়তা সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে পরীক্ষা জন্য বলেছে।

ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও গবেষক দলটির প্রধান জস লেলিভেল্ড বলেন, ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কার সৃষ্টি হয় এবং আমাদের পারমাণবিক মডেলে তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করি। সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশ্বে এখন যতোগুলো পারমাণবিক চুল্লি সক্রিয় রয়েছে, তার একটিতে ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একবার দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ৪৪০টি পারমাণবিক চুল্লি সক্রিয় রয়েছে এবং আরো ৬০টি পরিকল্পনায় আছে।

দূর্ঘটনা কবলিত এলাকায় চলে ব্যাপক খাদ্য সঙ্ককট। এমন কি খাবার পানি ও পাওয়া যায় না। আগে সবাই বোতলের পানি কিনে খাচ্ছিল, কিন্তু এখন তা ও শেষ। নেই পানি নেই বিদ্যুৎ নেই গ্যাস। কিছুই নেই। এক বাংলাদেশী বিবিসিকে বলছে তার ২২ বছরের জাপানের জীবনে এ রকম সঙ্কটে পড়ে নি। এক মিনিটের জন্য ও যেখানে কারেন্ট যায় না শেখানে আজ থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সব কষ্টই শেষ নয়। তার উপর রয়েছে পারমানবিক দূর্ঘটনায় সৃষ্ট তেজষ্ক্রিয়তা। না খেয়ে কোন রকম বাচাঁ যাবে কিন্তু তেজষ্ক্রিয়তার হাত থেকে তারা কিভাবে বাচঁবে??

ফুকুশিমা থেকে ৪৩০ লিটার তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। ভুলবশতঃ এক শ্রমিক চুল্লির একটি পাইপ বিচ্ছিন্ন করে ফেললে ৭ টন তেজস্ক্রিয় পানি চুল্লি থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়ে৷ টোকিও থেকে ২২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ফুকুশিমা দাইচি চুল্লিতে এই দুর্ঘটনায় টেপকোর কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ বলা হচ্ছে, ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয়তা দূর করতে টেপকোর কয়েক দশক লেগে যেতে পারে৷

তেজস্ক্রিয় পদার্থ অপসারণে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ এবং এর পদক্ষেপ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে টেপকোকে নির্দেশ দিয়েছে জাপানের নিউক্লিয়ার রেগুলেশন কর্তৃপক্ষ৷

প্লান্টটিতে এবং আশপাশে কর্মরতদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। ফুকুশিমায় তেজষ্ক্রিয়তা রোধক পোষাক পরে উদ্ধারের কাজে নামে সেনাবাহিনী৷



মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া
ভয়ে মানুষ টোকিও ছেড়ে যাচ্ছে৷ কেউ বা বেশি করে খাবার কিনে ঘরেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে৷ যেমনটা করেছে বাংলাদেশও৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আজ সাংবাদিকদের বলেছেন যে, তারা খবর পেয়েছেন যেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস অবস্থিত সেটা বিপদমুক্ত নয়৷ তাই দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া জাপানে থাকা ১২ হাজার বাংলাদেশিকেও সরে যেতে বলা হয়েছে৷ টোকিওতে থাকা বিভিন্ন কোম্পানিও তাদের কর্মীদেরও নিরাপদে সরে যেতে বলেছে৷ এদিকে জার্মানির বিমান সংস্থা লুফটহানসা টোকিওতে বিমান না নামিয়ে পাশের কোনো শহরে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

ফুকুশিমা প্রশাসনিক অঞ্চলে ২০ লাখ মানুষ বসবাস করছে এবং তারা নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবেলা করছে। ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত ফুতাবা নগরের সাবেক মেয়র কাতসুতাকা ইদোগাওয়া বলেন, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা চেরনোবিলের চেয়ে অন্তত চারগুণ বেশি। তিনি আরো বলেন, তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা এতো ভয়াবহ মাত্রায় থাকা সত্ত্বেও জাপান সরকার ওই এলাকার নগরবাসীকে নিজ নিজ বাসভবনে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফুকুশিমা শরণার্থীদের ভবিষ্যত কি?
পরমাণু তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার পর ফুকুশিমা ও তার আশেপাশের ৩০ কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এখনো তারা ঘরে ফিরতে পারেনি৷ ভূতের শহরে পরিণত হয় ঐ এলাকাটি৷ দুর্ঘটনাস্থল পরিষ্কার করা হলে, তাঁরা আবারো তাঁদের পুরোনো আবাসনে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে সরকার৷ ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অংশ পড়েছিলো সেখানকার ফুটাবা নামে ছোট্ট একটি শহরের মধ্যে৷ সেখানকার সাড়ে ছয় হাজার অধিবাসীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাদের একজন সুজুকি৷ ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন বাস করেন উত্তর টোকিও'র কাজো এলাকার একটি জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে৷ নিজের বাড়ি ছেড়ে তার আশ্রয় হয়েছে এখন ৫০ বর্গমিটার আয়তনের একটি কক্ষে৷ তার মত আরও প্রায় ৫০০ মানুষ রয়েছে এই আশ্রয় কেন্দ্রের৷ তাদের সকলেই সুজুকির মত বয়স্ক৷ সুজুকি বলেন, ‘‘আমি এখানে একা থাকি৷ আমার পরিবার এখন তোচিগিতে থাকে; আমার মেয়ে, তার স্বামী ও বাচ্চা৷ আমরা এখানে একসঙ্গে এসেছিলাম৷ কিন্তু আমার নাতনির পড়াশোনার জন্য পরে তারা তোচিগিতে আমার জামাইয়ের বাড়িতে চলে গেছে৷'' আরেক শরণার্থী ৬১ বছরের ইশিরো কাজাওয়া বলেন, এমন ভাসমান অবস্থায় পুরো জীবন কাটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়৷

সবচেয়ে তেজস্ক্রিয় এলাকা তোমিওকা, সেখানকার অধিবাসী কিকো সিওই জানালেন, যতক্ষণ না তেজস্ক্রিয়তা পুরোপুরি সারানো যাচ্ছে, তাঁদের যত ইচ্ছেই থাকুক সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়৷ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, ঐ এলাকার শরণার্থীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ তাঁদের পুরোনো বাড়িতে ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ কেননা ঐসব এলাকার স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস আদালত কিছুই আর সচল নেই৷

শরণার্থীদের জীবন নানা চাপে ও মানসিক অস্থিরতায় ভরা। মনে শান্তি নেই। নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতায় অনেকেই আক্রান্ত। সমাজ জীবন ও ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। অহরহ ঘটছে বিপত্তি, বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি। অনেক এলাকা পুনর্গঠিত এবং সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হলেও অনেকেই তাদের ভূমিকম্প পূর্ববর্তী জীবনে ফিরে যেতে এখনো সংগ্রাম করছে। সার্ফারদের মতো যারা পানিতে নেমে বেঁচে থাকে বা যারা পানি থেকে জীবন ধারণ করে – যেমন জেলেরা – তারাই বুঝতে পারছে তেজষ্ক্রিয়তা কীভাবে তাদের জীবন পরিবর্তন করতে পারে, তাদের অব্যহত কল্যাণের চাবিকাঠি হতে পারে।

তেজষ্ক্রিয়তা এবং দুর্যোগ মোকাবেলার জটিলতা সংক্রান্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরের মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সহজ নয়। স্থানীয়দের সাথে মিশে তাদের মতামত ও জ্ঞান জেনে কমিউনিটিগুলোতে কাজ করার মাধ্যমে জীবন পূণর্গঠণের উপায় বের করা বড্ড কঠিন। অনাগত সন্তানসহ তার কমিউনিটি উপর তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব বুঝতে চেষ্টা করা চ্যালেঞ্জিং নি:সন্দেহে। ঝুঁকি পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুর্যোগটির বিভিন্ন প্রভাব আবিষ্কার রত মানুষ কঠিনেরে ভালবেসেই সামনে এগিয়ে যায়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার পোষ্টটি ভালো লেগেছে। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ন একটি পোষ্ট। এই বিষয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিছু পরে আবার ফিরে আসছি।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.