নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিশ্চয়তার চাকরি কখনো মহৎ পেশা নয়

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৫২

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়। অধীনস্ত ও শ্রমিক শ্রেণীর সমস্যার সমাধান হয়না, সংকট বাড়তেই থাকে। সম্মিলিত মেধা, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তাকে ঐক্যতানের সঙ্গে বাঁধার জন্যে পারস্পরিক যে সম্মানবোধ ও দায়িত্ববোধ থাকতে হয় তা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদেরই থাকে না। প্রতিষ্ঠানের মান-মর্যাাদা, সমৃদ্ধি, ভাবমূর্তি সমুন্নত ও উজ্জ্বল রাখার স্বার্থেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মালিকদের সুদৃষ্টি ও আন্তরিক বিবেচনা দরকার হয়।

অদম্য কর্মস্পৃহা স্বীকৃতি ও সম্মানের ফলেই স্থায়ী বৈশিষ্টে রুপ নেয়। প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার চাইতে সম্পৃক্ত থেকে সেই প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত মানে উন্নীত করার জন্যে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নেয়ার দায়িত্বনুভূতিই যথেষ্ট নয় প্রয়োজন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেয়ার স্বতস্ফূর্ত মানসিকতা। আর এই মানসিকতা তৈরি হবার জন্যে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও সম্পৃক্তদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথ মানের হওয়া লাগবে,অধীনস্ত ও উর্ধ্বতনদের পারস্পরিক সম্পর্ক মধুর হওয়া লাগবে।

মালিকপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়াসে অনেক সময় উর্ধ্বতনরা অতিমাত্রায় তৈল দেয়ার প্রয়াস চালান। ক্ষমতাবানদের নেক নজরে আসার সুবাধে উর্ধ্বতনরা নিজেদের প্রতি আস্থা বিশ্বাস বাড়াতে নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। পেশাগত মান ও দক্ষতা অর্জনের চাইতে উপরের সন্তুষ্টি অর্জন ও নীচের অসহায়ত্বে সহজ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাকে বেশি গুরুত্ব দেন।

স্বাধীনতা অর্জন করার চাইতে রক্ষা করা যেমন কঠিন ভাল কর্মী পাওয়ার চাইতে তাকে সক্রিয়ভাবে ধরে রাখাও তেমনি কঠিন। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ যাদের কাছে প্রবল তারাই বেশি ভাল বিবেচিত হবার স্বার্থে অধীনস্তদের ওপর বেশি খরগহস্ত হন।বলা হয়ে থাকে পেটে দিলে পিঠে সয়। আপনি অধীনস্তদের চাহিদা, প্রয়োজন, আবেগ, অনুভূতিকে থোয়াই কেয়ার করবেন আবার তাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ আদায় করে নিয়ে নিজেকে সফল ও যোগ্য হিসাবে বড় করে তুলবেন এটা না হয় মানবিক আর না হয় যৌক্তিক।

শক্তি ও বল প্রয়োগ করে কায়িক শ্রমে নিয়োজিতদের শোষণ করা যতটা সহজ সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মে নিয়োজিতদের ভয় ভীতি দেখিয়ে সেভাবে কাজ করিয়ে নেয়া কঠিন। কারণ ভেতর থেকে ভালবাসা ও স্বতস্ফূর্ততা না আসলে বাইরের কঠিন চাপ দিয়ে কোয়ালিটি কাজ আদায় করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ভাল ফলের জন্যে ভাল বীজ লাগাতে হবে, উত্তম পরিচর্যা সুনিশ্চিত করতে হবে, সময় দিতে হবে।

আপনি তেল কম দিয়ে ভাজা মচমচে চাইলে তা খুব বেশি ফলপ্রসু হবেনা। কর্মীর ব্যক্তিত্ববোধে আঘাত করে, রুচিবোধকে নষ্ট করে, স্বপ্ন ও আশাকে আক্রমণ করে ভাল কাজ করানো সম্ভব নয়। যে প্রতিষ্ঠানকে সত্যিকারে ভালবাসে তারপক্ষে কোন স্তরের জনবলকেই অবহেলা বা তুচ্ছ জ্ঞান করা সমীচীন হতে পারেনা। তাই নিজের স্বার্থকে কেউ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের চাইতে বড় করে দেখলেই কেবল সে অধীনস্তদের সাথে কোন হিসেব নিকাশ ছাড়াই খারাপ ব্যবহার করতে পারে।

পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি সীমিত শক্তি ও সামর্থ্য নিয়েও হতে পারে যদি সবার মাঝে উন্নত নৈতিকতাবোধ ও সহানুভূতিশীল মনোভাব থাকে। সার্বিক কল্যাণ প্রচেষ্টার জন্যে উদার মনের নেতৃত্ব লাগে। পরের ন্যায্য অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে নিজের মর্যাকদা প্রতিষ্ঠার লড়াই সর্বোচ্চ নির্লজ্জতার একটি উজ্জল উপমা মাত্র।যারা নিজে অসৎ তাদের পক্ষে অন্যকে সৎ ভাবাটা খুবই কঠিন কাজ।

যে নিজে দুর্নীতি করে, কাজে ফাঁকি দেয় সে মনের অজান্তেই অন্যের ব্যাপারে কুধারণা পোষণ করে। দিন দিন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে শুধু নিজের ভালটা বুঝলেই হবেনা পরের ভালটাও বুঝতে শিখতে হবে। আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, খুব সহজেই অন্যকে ভুল বুঝা এবং অন্যের মঙ্গল চিন্তা ততক্ষণ পর্য ন্ত করা যতক্ষণ তা নিজের সুযোগ সুবিধা হাসিলে সহায়তা করে।পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভালবাসার মনোভাব ছাড়া ভাল ফল আশা দূরাশা, ঘোড়ার চেয়ে ঘোড়ার লাগাম কখনো বেশি কদর পেতে পারেনা।

নিজেদের চেহারা না বদলাতে পারলে দেশ ও জাতির চেহারা বদলাবে না।নীতিকথা বলা ও লেখার চেয়ে চর্চা করাটা ঢের কঠিন। নিজেদের দায়িত্বশীলতা বাড়ায়েই কেবল সামনের অনাগত সময়কে অর্থবহ করা সম্ভব।এজন্যে প্রস্তুতির দরকার আছে।প্রত্যেক পেশাজীবী ব্যক্তিরই পেশাগত নীতিবোধের বন্ধনের মধ্যে থেকে কাজ করতে সচেষ্ট থাকাটাই উন্নত গুণ।কিন্তু যদি প্রতিষ্ঠানে স্বজনপ্রীতি চলে, পক্ষপাতমূলক কর্মকান্ড দেখা যায়, সম সুযোগের ঘাটতি দেখা যায় তখন সততা ও নৈতিকতার প্রাচীরটা দূর্বল হয়ে যাবার ঝুকিঁতে পরে।

কোন মালিক যদি মনে করেন বেতন দিয়েই আগের যুগের দাস দাসীর মতো কিছু মানুষকে কিনে নেয়া সম্ভব যাদের মতের কোন মূল্য নেই, মাস শেষে বেতন ছাড়া তাদের জীবনের অন্য কোন চাওয়া পাওয়া নেই, তাদের স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র মূল্যবোধ নেই তবে সেটা ঠিক হবেনা।বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত বলে শোষণের চেষ্টা ভদ্রোচিত আচরণ হতেই পারেনা। স্রেফ একটি অনিশ্চয়তার চাকরি কখনো মহৎ পেশা হতে পারে না।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.