নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবর্তিত সময়, অপরিবর্তিত সংকট ও সুখ-শান্তির বিদায়

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪১

আমি বড় হয়েছি গ্রামে। তখন সেখানে শিক্ষার হারও ছিল খারাপ ও শিক্ষিত মানুষও ছিল কম। সেই সময়ের গ্রামীণ জীবনের সাথে এই সময়ের নগর জীবনটা তুলনা করলে একটু বেশিই যান্ত্রিক মনে হয়। আমরা সমবয়সীরা একসাথে খেলতাম, পড়তে যেতাম, বৃষ্টিতে ভিজতাম। এতে পরস্পরের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ তৈরি হতো। এখন শহরের বাচ্চাদের মানবিকতাবোধ তৈরি হবার জন্যে উপযুক্ত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটা নেই। ফলে ক্রমশই বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, বাড়ছে অশ্লীলতা, নষ্ট হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কগুলো, সমাজ হয়ে উঠছে অস্থির। আমাদের সমাজে যে পচন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে এর বহি:প্রকাশ ঘটছে। কেউ দায়ী করেন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটকে, কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে, কেউ ডিশ ও মোবাইলকে। তবে কোনটার জন্যেই ছোটদের খুব বেশি দোষ দেয়ার যৌক্তিক কারণ দেখিনা।

আসলে আমরা বড়রাই কেমন যেন লক্ষ্যহারা হয়ে পড়েছি। পথহারা পথিকের ন্যায় কেউ টাকার পেছনে, কেউ ক্ষমতার পেছনে, কেউ জগতে প্রতিষ্ঠার জন্যে পাগলের মতই ছুটে চলছি। স্বার্থের লোভে আমাদের মাঝে তৈরি হচ্ছে অনৈক্য, সংকীর্ণ মানসিকতা। আমাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার, কাজকর্ম আর বয়ানকৃত নির্দেশনামূলক কথাবার্তার মাঝে কোমলমতি নবীনেরা সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছে না। লোভী ব্যবসায়ীরাই মাদক ও নেশাজাত দ্রব্যকে সহজলভ্য করেছে, ক্ষমতা লিপ্সুরাই অস্ত্রকে অবস্থান শক্তিশালী করার স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আমাদের বড়দের কারণেই সমাজ, দেশ নানা সামাজিক অস্থিরতায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাবা মা সন্তানকে স্বপ্ন দেখতে শিখাচ্ছেন ভালভাবে পাশ করে ভাল উপার্জনের, অত:পর বাড়ি হবে, গাড়ী হবে। এই যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বা বড়লোক হওয়ার চিন্তা করা শিখানো হচ্ছে, এর সাথে সততা, মানবিকতা ও নৈতিকতা শিখানো হচ্ছেনা। ফলে আমরা ডাক্তার পাই কিন্তু মানব প্রেমিক ডাক্তার পাইনা, কর্মকর্তা পাই তবে দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা পাইনা, শিক্ষক পাই তবে নীতি নৈতিকতার প্রশিক্ষক পাইনা, নেতা পাই তবে জনসেবক পাইনা, কর্মী পাই তবে কর্মপ্রিয় মানুষ পাইনা।

আমরা নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়গুলোকে ভরাট করেছি। ছোটরা সাঁতার কাটতে পারেনি, ছোট বড় সুস্বাদু মাছ খেতে পারেনি। আমরা বৃক্ষ নিধন করেছি, বালি উত্তোলন করেছি, পাহাড় কেটেছি, কীটনাশকের ব্যবহার করেছি, জমিতে রাসায়নিক সার দিয়েছি, বিষ প্রয়োগ করেছি। এমনকি খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন, হাইড্রোজ মিশিয়েছি। এতে করে সার্বিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, বাচ্চা বয়সে চোখে চশমা পরতে হয়েছে। ফাস্টফুড আর চাইনিজ খাওয়ায়ে অবস্থা এমন হয়েছে যে শরীর নিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করতেই ওদের কষ্ট হয়। আমরা ছেলেবেলায় যেরকম দুরন্ত ছিলাম, সর্বক্ষণ ছুটাছুটি করতাম ওরা তেমনটি করেনা। আমাদের মতো খাঁটি মধু পায়না বলে শীতকে ওরা ভয় পায়। গুড়ো দুধ কিংবা প্যাকেটস্থ তরল দুধ খেয়ে ওরা হযতো গাভীর খাঁটি দুধের স্বাদের ব্যাপারে অজ্ঞই থেকে যায়।

যৌথ পরিবার কমে যাওয়ায় পরিবর্তন ঘটছে সামাজিক পরিবেশে, আর অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবর্তিত হওয়ায় তা প্রভাব ফেলছে শরীর ও মনে। অসুস্থ পরিবেশ ও অস্বাভাবিক যে সমাজ বেখেয়ালে আমরা তৈরি করে চলছি তাতে সুস্থ দেহ ও সুন্দর মনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটা অসম্ভব। যান্ত্রিক, ব্যস্ত ও জাগতিক অর্জনে নিবেদিত অবস্থায় ভারসাম্যহীন চিন্তা, অবাস্তব কল্পনা ও আকাশ কুসুম স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠছে ছোটরা। যদি সামাজিক পরিবেশ ভারসাম্যহীন না হতো তবে আমাদেরকে অযাচিত যুদ্ধ, হত্যা, ধর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, লুটতরাজ ইত্যাদি দেখতে হতো না। সামাজিক পরিবেশ অস্থির করে তুলেছি বলেই মানসিক ব্যাধি বাড়ছে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, অগ্নুত্পাত, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা ইত্যাদি সময়ে-অসময়ে অস্বাভাবিকভাবে মহাবিপর্যয় ডেকে এনেছি, প্রকৃতি হয়ে উঠছে লাগামহীন ও চরম খেয়ালী। আর সন্তান যখন মা বাবাকে হত্যা করছে, পরকীয়ার কারণে পিতামাতার হাতে সন্তান খুন হচ্ছে তখন নৈতিক অবক্ষয়ের চরম অবস্থা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে। সামাজিক ও প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এর জন্যে কেউ না কেউ অবশ্যই দায়ী। আমাদের রয়েছে ভোগবাদী, বস্তুবাদী ও পুঁজিবাদী মানসিকতা, অপসংস্কৃতির ছোবল, অন্ধ অনুকরণপ্রিয়তা। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক কথা ও চুক্তি হচ্ছে, অনেক পরিবেশবাদী গ্রুপ কাজ করছে কিন্তু বিশ্বমানবতার স্বার্থে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে টেকসই উন্নয়ন ও সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলা হচ্ছে না।

চারপাশের অসুস্থ পরিবেশ দ্বারা আমাদের মননশীলতা প্রভাবিত হচ্ছে। ফলে নবীনেরা সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠতে পারছে না। অনেক সমাধান দেয়া হচ্ছে, নতুন নতুন আইন হচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক তত্ত্ব আসছে, কিন্তু সুস্থ ধারার সামাজিক পরিবেশ বিরাজ করছে না। মূল গলদটা আসলে আমরাই বাঁধিয়েছি তাই অন্য কোন দৈব শক্তি এসে আমাদেরকে উদ্ধার করবে এমনটা আশা করা বোকামি। নৈতিক ও সামাজিক মূলবোধের অবক্ষয়ের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্ট হচ্ছে। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি, ফলে আত্মহত্যা ও হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলছে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সামাজিক সম্পর্কের এমন নির্ভেজাল জায়গাগুলোতে ফাটল ধরছে, ঢুকে পড়ছে অবিশ্বাস। ফলে সুখ-শান্তি এখন যেন ইহজগতের কোন ব্যাপার নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.