নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে ঘুরা নয়, চাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

এখনও পূরণ হয়নি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন। নি:স্ব শ্রেণীর মানুষের দুর্বিসহ জীবনে একটুখানি সুখের সুশীতল পরশ নেই। কারো স্থান অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের বস্তিতে কিংবা কারো ফুঁটপাতে। অমানুষিক পরিশ্রম করেও নিজেদের দুমুঠো অন্ন আর পরিধেয় বস্ত্রের সংস্থান করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে তারা মানবেতর যিন্দেগী যাপন করে। রোগে শোকে মরলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারেনা, সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে পারেনা, শীতেও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারেনা। অনেক ফোটা ঘাম, বহু চোখের অশ্রু, শরীরের লাল রক্ত এমনকি মূল্যবান জীবনের বিনিময়ে বেঁচে থাকার নূন্যতম উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে না।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় ‘অভিবাসীদের মানবাধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাআ’দ আল হুসেন বলেন, দরিদ্রতার কারণে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে পাচারকারীদের হাতে পড়ছে বাংলাদেশিরা।

অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। গত বছর জুলাইতে জাতিসংঘের প্রকাশিত এমডিজি ২০১৪ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারাবিশ্বে যতো অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠি আছে, তার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের বাস বাংলাদেশে। অতি দারিদ্র্যের তালিকায় বাংলাদেশের সামনে অবস্থান করছে ভারত, চীন এবং নাইজেরিয়া।

জাতিসংঘের হিসাবে দেশের মোট জনগোষ্ঠির প্রায় ৪২ শতাংশ দরিদ্র ।২৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে বাংলাদেশের দরিদ্র্যতা মানচিত্র প্রকাশ করে। এই মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম কুষ্টিয়ায়। আর এ সংখ্যা বেশি কুড়িগ্রামে। কুষ্টিয়া জেলায় এ হার মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ আর কুড়িগ্রামে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে ঢাকা বিভাগে (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। আর সিলেট বিভাগে এ সংখ্যা সবচেয়ে কম (৫ দশমিক ৭ শতাংশ)।

বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকের ‘এন্ডিং এক্সট্রিম পোভার্টি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অতি দরিদ্রের অধিকাংশই ভূমিহীন। এদের মাঝে নারীর সংখ্যা বেশি। অপরদিকে রাজধানীর বস্তিবাসীর প্রায় শতভাগই অতি দরিদ্র। গতবছর ৫ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অধিবেশন চলাকালে সংসদকে জানান, রাজধানীতে বস্তির সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৭২০টি। আর বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

২০১২ সালে পরিচালিত বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে। এদের অধিকাংশই হতদরিদ্র, যারা রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিনমজুরি করে অর্থ উপার্জনের আশায় ঢাকায় আসে। বাসা বাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই এসে উঠছেন নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে।

সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশে প্রায় ৫ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করতো আর এর মাঝে ২ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ ছিল অতি দরিদ্র। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে দরিদ্রসীমার নিচে আছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ। এর মাঝে ১ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র।

দেশের ২৫ ভাগ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ সাক্ষরতার আলো থেকে বঞ্চিত। এ বাঙালি জাতির মধ্যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সঠিকভাবে সেগুলো ব্যবহার করা। মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকগুলো সমৃদ্ধ করা। আর আমাদের যে সম্পদ রয়েছে তা কাজে লাগানো।

এসব সমস্যার মধ্যেও এটি আনন্দের ব্যাপার যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দরিদ্রমুক্ত এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। ১জুলাই (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছেন, দারিদ্র্যের হার ২২.৭ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৭.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। আরেকটু কষ্ট করলে আমরা দারিদ্র্য আরও কমিয়ে আনতে পারব। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, এখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা আর ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে ঘুরতে চাই না। স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।

আমরাও আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এই আশা পূরণ হোক। আমরা দেখতে চাই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্য আয়ের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে সুখী সম্মৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলতে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। দেশের উন্নতি ও জাতির সমৃদ্ধি চিন্তা করলে আমাদেরকে দারিদ্র অসহায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দারিদ্র্য-ক্লেষ-অভুক্ত ব্যক্তি এবং বাকস্বাধীনতা-মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ব্যক্তি যতক্ষণ না তাদের অধিকার পাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মুক্তি পাব না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.