নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপহার প্রসঙ্গ ও অসামাজিক ধার্মিক

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৪

যখন কোন বিয়েতে বা অনুষ্ঠানে অতিথির আগমণের চেয়ে উপহার দেয়ার বাধ্যবাধকতা ও কম দামি নাকি বেশি দামি এমন প্রসঙ্গ আলাপচারিতায় উত্থাপিত হয় তখন অনুষ্ঠান তার মূল্য হারায়। বিয়েতে উপহার দেওয়ার প্রথা প্রথম চালু হয়েছিল ইউরোপে। দেখাদেখি সেখান থেকে কালক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। আমাদের সমাজে বিয়ে শাদিতে নব দম্পতিকে আশির্বাদ স্বরূপ উপহার দেয়ার একটা প্রথা প্রচলিত আছে। কিন্তু আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্যই যদি উপহার হয় তবে তা ভাল দেখায় না। অনেকে ছেলে বা মেয়ের বিয়ের উপহার সামগ্রী দিয়ে অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ পুষিয়ে নেয়ার ব্যপারে সচেষ্ট থাকেন। বর বা কনেকে অতিথিদের দেয়া উপহার সামগ্রীর দাম হিসেব নিকেশ করে দেখেন,অনুষ্ঠান করে পোষালো কিনা।আমার বিবেচনায় এটা অত্যন্ত নীচু মনমানসিকতা। কে কী উপহার দিল সেটা যাচাই করা, উপহার দিয়ে উপহারদাতাকে মাপা আর যাই হোক খুব ভদ্রোচিত ব্যাপার হতে পারে না। অনেকে নিজে উপস্থিত হতে না পারলেও কারো মাধ্যমে উপহার পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, এটাও বোধহয় অযৌক্তিক।কারণ ব্যক্তির উপস্থিতি জরুরী না হয়ে উপহারের উপস্থিতি জরুরী হলে ব্যক্তিরই অপমান বা অবমূল্যায়ন হয়।

অনেকেই বিয়েতে উপহার হিসেবে টাকা দেয়ার একটা প্রথা দেখে থাকবেন।বিয়ের অনুষ্ঠানে একজন ধনী টাইপের অতিথি পনেরো বিশ হাজার টাকা দিয়ে গেলেন আর আরেক গরীব অতিথি সেটা দেখে এক হাজার টাকা দিতে এসে লজ্জা পাচ্ছেন। পাড়ার প্রতিবেশী বা দুরের আত্নীয়দের তো কী উপহার দেব, কত দামের মধ্যে দেব- এনিয়ে ঝামেলাতেই পড়তে হয়। কমদামী হলে কেমন দেখা যাবে,কী মনে করবে ইত্যাদি ভেবে পেরেশান হতে হয়। উপহার দেয়ার ভয়ে অনেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে শাদীর দাওয়াত কে পাশ কাটিয়ে যান। আপনি চাইলেও আপজনদের বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠানে এরকম উপহার গ্রহণের ব্যবস্থা না রাখলেও পারবেন না। কারণ সমাজ তো বদলায় নি, মানুষ উপহার নিয়েই আসবে।উপহার ফিরিয়ে দিলে অনেকে অপমানিত বোধ করবে।

আসলে আমরা একটা সমাজে বাস করি। এই সমাজের বিদ্যমান রীতি-নীতি-প্রথাকে কিছুতেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কেউ দাওয়াতনামা বা কার্ডের নীচে লিখে দেন প্রচলিত উপহার প্রথা বর্জনীয়। উপহার নয়,আপনাদের আন্তরিক দোয়াই কাম্য। এটা সুন্দর উদ্যোগ। আসলে উপহার স্নেহ ভালবাসা থেকেই দেয়া হয়। তবে উপহারের চেয়ে অনেক মূল্যবান হচ্ছে মন খুলে দোয়া করা। আমি দেখেছি সামাজিকতার খাতিরে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা বিয়ের অনুষ্ঠানে ধারকর্জ করেন। ধার করেও ফুটানি করাটা যে একটা সামাজিক ব্যাধি এটা অনেকেই মানতে চাইবেন না। এটা ঠিক গরীবদের বিয়েতে উপহার হিসেবে টাকা খামে ভরে দেয়া হলে মা-বাবার এবং বর-কনের উপকার হবে। তবে আয়োজকদেরও উচিৎ সাধ্যের অতিরিক্ত প্রদর্শনের চেষ্টা না করা।

যারা নাছোড় বান্দা, সামাজিকতা রক্ষার যুক্তিতে উপহার দিতে কিংবা নিতেই চাইবেন তাদের উচিৎ এমন কিছু উপহার দেওয়া যা তাঁদের নতুন সংসারে কাজে লাগবে। উপহারটি যেন হয় নান্দনিক, বাজেটের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, শিল্পরুচির পরিচয় বাহক। নতুন দম্পতিকে কী উপহার দেয়া ভাল হবে তা নির্ভর করে অনেকটাই সম্পর্কের ওপর। প্রায়ই অনেককে একই ধরনের উপহার দিতে দেখা যায়। তাই ভেবেচিন্তে উপহার দেওয়া ভালো, যাতে কারও সঙ্গে মিলে না যায়।

'নড়াইল এক্সপ্রেস' মাশরাফি বাংলাদেশ দলের তারকা ক্রিকেটার। তার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয়নি। কারণ, মাশরাফি এই প্রথা পছন্দ করেন না। বৌভাত অনুষ্ঠানে অতিথিদের উপহার না আনার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছিল মাশরাফির পরিবারের পক্ষ থেকে। আমন্ত্রণপত্রে লেখা ছিল 'দয়া করে উপহার আনবেন না। এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য।' এটা আমার খুব পছন্দই হয়েছে।

এমনিতে বাড়িতে বেড়াতে আসলেও অতিথিকে উপহার প্রদানের রেওয়াজ দেখা যায়। বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরে নতুন অতিথি কিংবা নতুন প্রাণের আগমনে। মেজবান অতিথিকে কতটা পছন্দ করেন তার বর্হি:প্রকাশ ঘটে উপহার প্রদানের মাধ্যমে। উপহার এমন একটা জিনিস যা সবাই পছন্দ করে। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট খাট কিছু উপহার দেয়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক সৌজন্যতার নামান্তর, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্তরিক হৃদ্যতার বহি:প্রকাশ, কিছ কিছু ক্ষেত্রে রীতি। আত্মার বন্ধন সুদৃঢ় করণে, হৃদ্যতা বাড়াতে উপহার ফলপ্রসূ হয়। এক্ষেত্রে কৃপণতা কিংবা অপচয় দুটোই অযৌক্তিক। অভদ্রতার মাঝে ধার্মিকতা নেই, মানুষকে অপমাণিত করার মধ্যে পূণ্য নেই। সামাজিক রীতি-নিয়ম-নীতিকে অস্বীকার করলে হয় ফেরেশতা হতে হয় না হয় দেবতা হতে হয়, মানুষ থাকা যায় না। মানুষকে যে ভালবাসতে পারে না, হাসিমুখে সাদরে গ্রহণ করতে পারে না সে স্রষ্টারও প্রিয় হতে পারে না। তাই সমাজ সংস্কৃতির উর্ধ্বে উঠার চেষ্টা কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্যে শোভনীয় নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.