নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবারে সুখ নিশ্চিতকরণে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১১

পারিবারিক শান্তি অনেক বড় শান্তি। ছোট খাটো কিছু সমস্যা সব দম্পতির মধ্যেই থাকে। সেটা বড় আকার ধারন করলেই শুরু হয় অশান্তি। বৌয়ের সাথে নিজ পরিবারের সদস্যদের সম্পর্ক ভাল না হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় ছেলে, সবার কাছে ছেলেটাই বেশি খারাপ হয়ে ওঠে। মা বুঝতে চায় ছেলেটি বিয়ে করে পর হয়ে গেল নাকি পরের বাড়ির মেয়ে নিজের পরিবারের সবাইকে আপন করে নিল। বৌও বুঝতে চায় স্বামী কি এখনো মায়ের আচল তলে আছে নাকি বঊ এর বাহুবন্ধনে আছে। এই দুটি জিনিস যে পুরুষ যত ভালো করে ব্যালান্স করতে পারবে তার সংসারে বৌ-শাশুড়ী সম্পর্ক তত ভালো হয়। এক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়টা ছেলের ওপরেই বর্তায়। অনেক সময় ছেলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন, কোন কুলই রক্ষা করে উঠতে পারেন না।

কেউ নারী নাকি পুরুষ তার চেয়ে বড় কথা সে সৎ, আদর্শবান, ভাল কাজের প্রতি উৎসাহী ও জ্ঞানবান কিনা। নারীর জীবন সুন্দর ও সার্থক করতে হলে তাকে যেমন সততা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জীবন পরিচালনা করতে হয় পুরুষকেও তেমনি। স্বামীর সংসারকে আগলে রেখে ঐ পরিবারের মধ্যে শান্তিসুখ বাড়াতে নারীর ভুমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপন করে নেওয়ার ব্যার্থতাই অনেক সমস্যার উদ্রেক ঘটায়। স্বামীর বাসাটিকে ও মানুষগুলোকে আপন করে নেওয়ার জন্য বৌ এর ইচ্ছে ও বৌকেও আপন করে নিতে পরিবারের সকলের আন্তরিক ভুমিকা প্রয়োজন। অনেক পরিবারেই ছেলের বিয়ের পূর্বে পরিবারের মধ্যে যেরুপ আনন্দ ও সুখ বিদ্যমান থাকে তা শেষ হয়ে যায় ছেলের বিয়ের পর। আবার অনেক পরিবারেই ছেলের বিয়ের পর আনন্দ ও সুখ আরো বেড়ে যায়।

অনেকেই মনে করেন, একটি পরিবারকে সুন্দর রাখতে পুরুষের চেয়েও নারীর ভূমিকাই মুখ্য। এমনকি বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে রাসূল (সা) বলেছেন, “একজন স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনবর্গের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিনী।” সেই স্ত্রী স্বামীকে মানসিক দিক দিয়ে প্রফুল্ল রাখতে পারে না যে স্বামীর পরিবারের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিজের অঙ্গ সংস্থান ভেবে তার সুস্থতার জন্য সার্বিক কাজ পরিচালনা করতে আন্তরিক থাকে না। একজন স্বামী তখনই নিজের স্ত্রীকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে যখন ঐ স্ত্রী তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় সচেষ্ট থাকে। ধন সম্পদ, শিক্ষা, বংশ, রুপ সৌন্দর্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ায় ভুমিকা রাখলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিনয়ী আচরণ ও উত্তম ব্যবহারই বেশি গুরুত্ব পায়।

আমাদের সমাজে অনেক পুত্রবধু নিজের সুখ নিশ্চিত করতে যেয়ে শাশুড়ীকে অভিশাপ ভেবে থাকে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। পুত্রবধু শাশুড়ীর স্থান নিজ মায়ের আসনে আসীন করলে তার শাশুড়ীও তাকে মেয়ের জায়গায় স্থান দিতে বাধ্য থাকবেন। শিক্ষিত মূর্খ কিংবা কম বুদ্ধিমতি স্ত্রীরাই মায়ের তুল্য শাশুড়ী এবং পিতৃতুল্য শ্বশুরের সাথে যথাসাধ্য সম্মান প্রদর্শনপূর্বক মাধুর্যপূর্ণ আচরণ প্রকাশ করেন না। স্বামীর ছোট বোনকে যে নিজের ছোট বোন ভাবতে পারে না, সুন্দর ব্যবহার করতে ও ভালভাবে কথা বলতে পারে না সে শুধু অশান্তির নরক রাজ্যই পয়দা করতে পারে।অনেক উচ্চশিক্ষিত পুত্রবধু শশুড়-শাশুড়ী ও স্বামীর বাড়ীর অন্যদের খেদমত করা আইনের দৃষ্টিতে তার ওপর বর্তায় না বলে এড়িয়ে যেতে চান। তারা ভুলে যান আইনের শুষ্ক-রুক্ষ পথে সুখের সংসার রচিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন-ত্যাগ,ভালবাসা,অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা,সেবা ইত্যাদি মহৎ গুণাবলীর চর্চা। সুখের নীড় রচিত করতে পুত্রবধুর উচিত স্বেচ্ছায় শশুড়-শাশুড়ীর খেদমত করা। একে সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা। মনে রাখতে হবে শ্বশুর-শাশুড়ীর খেদমত করা আইনতঃ ফরয না হলেও নৈতিক ফরয।

শ্বশুরবাড়ীর লোকদেরও ভুলে গেলে চলবে না, বধু শ্বশুর বাড়ীর সেবিকা বা চাকরানী নয়। তাকেই গামলাভর্তি কাপড় ধুইতে হবে, থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে শুরু করে সবকাজ করতে হবে-এমনটি নয়। সেও একটি মানুষ, তাঁরও আছে স্বাদ-আহলাদ, দরকার আছে বিশ্রামের। শশুর,শাশুড়ী ,ননদ,দেবর ও ভাসুর সবাই ঘরের বৌ থেকে খেদমত নেয়াটা তাদের মৌলিক অধিকার মনে করে। বৌ তার স্বামীর খেদমত করল কি করল না, সেটা বড় বিষয় নয়। পরিবারের অন্যদের খেদমত হল কি না সেটাই বড় বিষয়। অনেক পরিবারে বৌ আসার পর কাজের লোক রাখার প্রয়োজন অনুভব করা হয় না।পুত্রবধু শশুর-শাশুড়ীকে আপন পিতা-মাতার মত তখনি মনে করবে,যখন শশুর-শাশুড়ীও তাকে আপন মেয়ের মত মনে করবে। নিজের মেয়ে কবিরা গুনাহ করলে তার দোষ গোপন আর পুত্রবধুর রান্নায় সামান্য দোষ হলে তা অন্যের নিকট বলার আচরণ কখনোই কাম্য নয় । আসলে একটি সুখী পরিবার গঠনে বৌ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য- উভয়দিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ কাম্য।

এমন যদি হয় মা বাবা ভেবে কষ্ট পায় ছেলের বৌ তাদের কাছ থেকে ছেলে ছিনিয়ে নিয়েছে। আর বউ স্বামীর পরিবারকে বোঝা মনে করে। তাহলে একে অপরকে পছন্দ করতে পারার অবস্থা তৈরি হবে না। ধীরে ধীরে একে অপরকে জানতে ও চিনতে পারলে তখন একে অপরের আপন হয়ে ওঠা যায়। যারা আপন হতে পারে না তারা আসলে একে অপরকে চিনে না। স্ত্রীকেও স্বামী, স্বামীর বাড়ি, স্বামীর স্বজনদের নিজের ভাবতে হবে। স্বামীর বাড়ীটি তার কাছে প্রথম দিকে হোস্টেলের মতন মনে হতে পারে। ওখান থেকে ছুটে বাবার বাড়ী যেতে পারলেই শান্তি অনুভব হতে পারে। হোস্টেলের মতন থাকলে কোনদিন কারো সেবা করা যায় না। নিজের বাড়ির মতন থাকলে তখন সেবাও করা যায় এবং এটা করলে তখন নিজেকে দাসীও মনে হয় না। শাশুড়ীও আগে বৌ এর আপন হয়ে পরে সেবা নিতে চাইতে পারে। শাশুড়ী যদি আপন হতে পারে তবে বৌ অবশ্যই সেবা করবে। আপন না হয়েই সেবার আবদার করাটা বোকামী।

সংসার জীবনে নারী নির্ভরশীল স্বামী ও পুত্রের উপর। পুত্রের মাধ্যমে সংসারের বৈষয়িক দিকটি রক্ষিত হয় বলেই মায়েরা পুত্রের উপর নির্ভর করে। মেয়ের বিয়ে দিলে শাশুড়ী মেয়ে জামাইকে স্বাভাবিক ভাবেই আদর করে থাকে। কারণ মেয়ের সুখ-দুঃখ নির্ভর করে যার সংগে তার বিয়ে হয়েছে তার উপর। সমাজ ব্যবস্থার কারণে বিয়ের দু’তিন বছরের মধ্যে পুত্রবধুর সন্তান না হলে শাশুড়ী পুত্রবধুর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ছেলে যে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে এ চিন্তাই করে না। তখন পুত্রের দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ দরকার এমন শাশুড়ী যারা বৌদের প্রতি অতি নম্র ও ভদ্র হবে। মা রূপে বৌমাকে বুকে তুলে কাছে টেনে নেবে। বৌমাও অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসবে না। কেননা মায়ের মনে কষ্ট দিলে প্রসববেদনা থেকে শুরু করে ছেলেকে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে তার মনে পড়ে যাবে।

পুত্র ও পুত্রবধুকে এমন আচার ব্যবহার করতে হবে যাতে মা বুঝে তার ছেলে তারই আছে ও থাকবে এবং বৌমাও তার যত্ন নেবে-সম্মান করবে। স্বামী স্ত্রীকে বোঝতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে একাকি নয়, একসাথে পথচলতে হবে। নতুন জীবনে চলার পথে দুজনেরই অনেক কষ্ট হলেও পাশে থেকে কষ্টের সান্ত্বনা হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একে অন্যের কষ্ট দূর করতে না পারলেও অনুভব করতে পারা এবং কিছুটা লাঘব করায় সচেষ্ট থাকতে হবে। একজন পিছিয়ে পড়লে আরেকজনকে টেনে নিতে হবে। দুজনকেই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে একজনের দ্বারা আরেকজনের হক নষ্ট না হয় এবং কারো প্রতি যুলুম না হয়।

মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা কিংবা স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেয়া কোনটাই কাম্য নয়। মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়। তাই পারস্পরিক আচরণ এমন হবে যেন দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন আরেকজনকে উত্তম স্বামী বা স্ত্রী মনে করে। আসলে দীর্ঘ সাধনা করেই হৃদয় জয় করতে হয়, মনের দুয়ার খোলতে হয়, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করতে হয়।

দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। শ্বশুর বাড়ীর কোন দোষ ত্রুটি মা-বাপের কাছে না বলা বা শ্বশুরালয়ের কারও সম্পর্কে কোন গীবত বাপের বাড়ীতে না করা উচিৎ। এ থেকেই ক্রমান্বয়ে উভয় পক্ষের মন খারাপ হয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এবং ছেলে মেয়ে যেই হোক যত দিন শ্বশুর-শাশুড়ী জীবিত থাকবে তাদের সাথে কথা-বার্তা ও উঠা-বসায় আদব-সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:১০

শারলিন বলেছেন: লিখেচেন ভাল কিন্তু কথা হচ্ছে সব কিছু মেয়েদের ই করতে হয়। ছেলেদের ও অনেক কিছু করার আছে, একজন মেয়েকে বিয়ের পর এসে সম্পূর্ণ এক নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়। এটা মেয়েদের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং একবার ভেবে দেখেন। তারপরও মেয়েরা যুগযুগ ধঅরে সেটা করে আসছে। এই ক্ষেত্রে কোন পরিবরতন আসবেনা। ছেলেরা যদি শাশুড়ি কে নিজের মা হিসেবে দেখে তাহলে মেয়েরাও আরও সহজে শাশুড়ি কে মা হিসেবে গ্রহণ করতে পারত।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরা নিজের মা কে তার বউ মায়ের আসনে বসাক এটা চাইলেও নিজে কখনও শাশুড়িকে মা হিসেবে মানেন্না।
এখানেই সমস্যাটা হয়,
ছেলেরা যদি তাদের বউ এর পাশে সবসময় থাকেন, সহযোগিতা করেন, তাহলে মেয়েদের ক্ষেত্রে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সহজ হয়।
ছেলেদের মানসিকতার পরিবরতন হওয়া দারকার।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ। সহমত।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯

পিচ্চি হুজুর বলেছেন: সুখের নীড় রচিত করতে পুত্রবধুর উচিত স্বেচ্ছায় শশুড়-শাশুড়ীর খেদমত করা। একে সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা। মনে রাখতে হবে শ্বশুর-শাশুড়ীর খেদমত করা আইনতঃ ফরয না হলেও নৈতিক ফরয।

এইটা একটা ভূয়া কথা। কোন স্ত্রীই তার স্বামী ছাড়া আর কারও জন্য কিছু করতে বাধ্য নয়। যারা ধর্মের কথা তুলে এই টাইপের নৈতিক ফরয প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা নিজেরাই জানে না ধর্মে স্ত্রীদের কি কি অধিকার দেয়া আছে। এমনকি আপনার বউ যদি আপনারে রান্না করে খাওয়াতে না ও চায়, আপনার তারে রান্না করে খাওয়াইতে হবে। আমাদের মেয়েদের প্রবলেম হইল তারা নিজেরাই জানে না তাদের কি কি অধিকার দেয়া হয়েছে আর তাদের কর্তব্যের সীমারেখাই বা কতটুকু।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ‘বউ যদি আপনারে রান্না করে খাওয়াতে না ও চায়, আপনার তারে রান্না করে খাওয়াইতে হবে’- আপনার এই মন্তব্যের পক্ষে যুক্তিগুলো জানালে খুশি হবো।

৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯

হারানোপ্রেম বলেছেন: আমি পারিনি কেন জানি না। চেসটার কমতি ছিল না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.