নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতিবীদদের পশ্চাৎমুখী সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা দেখাতে। পারেনি সংযত হতে, গণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলতে, সাংবিধানিক আচার-আচরণ রপ্ত করতে। ফলে রাজনৈতিক সংকট নানা ধরণের মানবিক সংকট তৈরি করছে।সহনশীলতা ও সৌজন্যতাবোধ যেন বিদায় নিয়েছে রাজনৈতিক ময়দান থেকে। গুম-হত্যা-আগুন-অপহরণ-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-নির্যাতন-মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে বর্তমানের রাজনীতির জটিল সম্পর্ক রয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষী বানানোর অভিপ্রায়ে অপরাধ সংঘটিত করে অপরের ওপর চাপায়ে দেয়ার একটি মারাত্মক প্রবণতা ক্রমশই তীব্রতর হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে নতুন ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক খেলার মাঠে মানুষের প্রাণ খেলনায় পরিণত হচ্ছে। দলীয় পূজা আর অন্ধ আনুগত্যের কারণে নিজ দলকে বিতর্কের উর্ধ্বে তুলতে যেয়ে রাজনীতিবীদ নেতাকর্মীরা অনেক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনকেই কলুষিত করে ফেলছেন।

দেশের স্বার্থ রক্ষা ও জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি পরিচালিত হওয়া দরকার। দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের বিরোধে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার পরিবেশ কাম্য নয়। কালো টাকা ও পেশী শক্তিই রাজনীতির মূল নিয়ামক উপাদান হলে ক্ষমতার অপব্যাবহার বাড়বে। সেবার নেশা না থাকলে রক্তের কিংবা টাকার নেশা থাকলে তার রাজনীতিতে আসাটাই উচিৎ নয়। দেশের সচেতন মানুষ ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কখনই সমর্থন করে না। শান্তিপূর্ণভাবে জীবন পরিচালনা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করতে হলে শান্তিপূর্ণ উপায়েই সকল রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন হওয়া দরকার। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে গণতান্ত্রিক সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। সহিংস কর্মসূচির ফলে বাড়ে চরম হতাশা, স্থবির হয়ে পড়ে উৎপাদন, বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান যাতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অরাজকতা, দ্বন্ধ-বিদ্বেষ যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। কপটতা, সঙ্কট, ভাবাদর্শের সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে ব্যবহার করে উত্তরাধিকারের রাজনীতি কলুষিত করে ফেলছে। ব্যক্তি প্রাধান্য, মৌল সমস্যার অনুপস্থিতি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যুদ্ধংদেহী মনোভাব/মাস্তানবাদ, স্ববিরোধিতা দেখা যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যমতের সংকট, আকাশ কুসুম বিপ্লবের বাণী, বিরোধিতা অশনি বার্তা বয়ে আনছে। ছাত্র সংগঠনের প্রাধান্য, বাম রাজনীতির গতিশীলতা ও ডানপন্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব বাস্তবতা হয়ে দাড়িয়েছে।

সমাজের অনেক মানুষ আড়ালে যাকে গালি দেন, যার সমালোচনা করেন- কোন এক অজানা স্বার্থে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। একজন মানুষ কোন রাজনৈতিক নেতাকে তার বাপ মা তুলে গালাগাল করছেন আবার তাকেই মুখোমুখি হলে সালাম দেন, কদর করেন। ক্ষমতাসীন কোন নেতা যতটা প্রশংসা শুনেন ক্ষমতা হারানোর পর ততটাই নিন্দা শুনেন। কয়েক ধরনের চামচাদের আবির্ভাব দেখা যায়- যারা স্বার্থের প্রয়োজনে সুবিধাবাদি নীতি গ্রহণ করে আজ যার সাথে বন্ধুত্ব করে, কাল তারই সাথে শত্রুতা করে।পাতি নেতারা নেতার অনুগত থেকে দালালি করতে যেয়ে নিজের রুচি-ব্যক্তিত্বকেও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। হরতাল-অবরোধ-ভাঙ্চুর কখনই প্রতিবাদের একমাত্র যৌক্তিক ভাষা হতে পারে না। আমি এটাও বলছিনা যে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাই অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়ার একমাত্র কারণ। তবে এটা জোর দিয়েই বলতে পারি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশকে গতিহীন করে দিলে এর দায়ভার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাসরোধ করে কেউ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

দেশের সঙ্কট সমাধানে রাজনীতিবিদদের মানসিকতার পরিবর্তন খুব বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। হিংসা বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের যে চচা রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে, এমন অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এজন্য পিছিয়ে যাওয়া আর পেছনে টানার এই সংস্কৃতি থেকে রাজনীতিবীদদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে- যা দেশকে রক্ষা করবে, জাতিকে রক্ষা করবে, ব্যবসায়ীদের শান্তিতে ব্যবসা করতে দেবে। দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা দেশপ্রেমিক জনগণ কখনই বরদাশত করবেনা।

পরিশেষে এটি বলা যায়, বাংলাদেশের মূল সংকটটি স্রেফ রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়। ব্যর্থতা নিছক গণতন্ত্রেরও নয় বরং মূল সংকটটি মানবিক। সমস্যা এখানে বিবেকহীনতার। বহুদেশে প্রাকৃতিক সম্পদে অতি সমৃদ্ধ হলেও শিল্প-বিপ্লব,সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবও আসেনি। অথচ প্রাকৃতিক সম্পদে দরিদ্র দেশেও বিপ্লব এসেছে। ইংল্যান্ড, জার্মান, জাপান ও কোরিয়ায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের কারণ উন্নত সোশ্যাল ক্যাপিটাল তথা মানবিক উন্নয়ন। মানব-উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক,সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন আসে না –এটাই বাস্তবতা। তাই বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে যাতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সকল নাগরিকের সুখ শান্তি নিশ্চিত করাটা সহজ হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সেই রাজনীতি এখণও ইউটোপিয়া!!!!!

ব্যখ্তিপূজা, দলান্ধতা আর স্বার্থবাদীতা থেকে অন্তত এই জেনারেশেনর বেরিয়ে আসা আপাত: অসম্ভবই বটে।

আর নতুন জেনারেশনও ধারাবাহিকতায় তাদের ষ্টাইলেই ধীরে ধীরে অব্যস্ত হয়ে উঠছে্

কাম্য সমাজ সুস্থ রাজনীতি আর স্বপ্নের দেশ গড়তে হলে চাই পরিপূর্ন বিপ্লব।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
বাংলাদেশের মূল সংকটটি স্রেফ রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়। ব্যর্থতা নিছক গণতন্ত্রেরও নয় বরং মূল সংকটটি মানবিক। সমস্যা এখানে বিবেকহীনতার। -একমত।

বেরিয়ে আসার পথটি সবসময়ই খোলা আছে। দেখা যাক বোধদয় হয় কি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.