নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ!

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২১

অনেকে মুখে দেশপ্রেমী ও মানবপ্রেমী বললেও তাঁদের হৃদয়ের শ্লোগান হচ্ছে- জয় সুবিধাবাদ, সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ! এসব মধ্যসত্ত্বভোগী আছে পুঁজিপতি মালিকদের মাঝে, বেপারি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে, প্রভাবশালী নেতা ও মুনাফালোভীদের মাঝে। দালাল আছে বাজারে, অফিসে-আদালতে, যানবাহনে, হোটেলে, শপিংমলে, পার্কে। কেউ কোনো কর্পোরেট গ্রুপের দালাল, কেউ কোনো ব্যক্তির পক্ষে দালাল, কেউ দলের দালাল, কেউ অপরাধী সিন্ডিকেটের দালাল, কেউ অন্য কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের দালাল। রাজনৈতিক ময়দান থেকে শুরু করে খেলার মাঠে, মিডিয়ায়, সংগঠনে দালালির রুপ ও স্বভাব চরিত্র ভিন্ন। কারো ক্ষমতার লোভ, কারো টাকার লোভ, কারো নারীর লোভ আবার কারো প্রাণের লোভ। তবে যে সেক্টরেই থাকুক এদের কমন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বার্থের কারণে এরা যে কোনো কিছু করতে দ্বিধাবোধ করে না।
মানুষের কল্যাণে দেয়া কোনো কর্মসূচি আসলে মানুষের ভোগান্তি-দুর্ভোগের কারণ হতে পারে না। মানবসেবা ও জনসেবার কথা বলে যারা নির্বাচিত হয়েই গণ-মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়; তাঁরা মূলত স্বার্থপর ও লোভি। যে কিছু প্রাপ্তির জন্য প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অর্জন শেষে তা’ ভুলে যায় সে মিথ্যবাদী-প্রতারক। মানুষকে ঠকিয়ে যে হৃদয় আনন্দ পায়, সে হৃদয় ধারণকারী ব্যক্তি বড়লোক-প্রভাবশালী-বড়কর্তা হতে পারে; তবে সে পিশাচ প্রকৃতির। লেখার সাথে যার বলার মিল নেই, বলার সাথে যার কাজের মিল নেই কিংবা কথা দিয়ে যে কথা রাখে না; সে আর যাই হোক ভদ্রলোক হতে পারে না। দুর্বলকে যে শাসন-শোষণ করে মানসিক পরিতৃপ্তি লাভ করে, অযৌক্তিক-অন্যায় সিদ্ধান্তকে মানাতে পেরে গর্বিত-অহংকারি হয়; সে আর যাই হোক বিবেকবান নয়।

কত বড় পদে আছেন তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কত বেশি দায়িত্বপরায়ণ-কর্তব্য সচেতন। নিরীহ মানুষের প্রাণকে-ঘামকে-রক্তকে যে সস্তা মনে করে যে প্রকৃত পক্ষে দাম্ভিক চরিত্রের। অহংকার ইবলিস-শয়তান এর বৈশিষ্ট, ক্ষমাশীলতা-উদারতা-সহমর্মিতা মানবিক গুণ; ফলে প্রকৃত মানুষ হয় সুন্দর মনের ও আন্তরিক আচরণের। বাঘ-সিংহের যেমন হরিণ শিকারের জন্য পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়, নেতৃত্বের গুণহীন প্রশাসকেরও তেমনি দল পরিচালনায় গালি-চড়-থাপ্পর-অশোভনীয় আচরণের প্রয়োজন হয়। মানুষ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যারা নিজের মাঝে পশুর চরিত্র-বৈশিষ্টকে ধারণ করে তাঁদের রুচি বিকৃত-মানসিকতা অস্বাভাবিক। স্রষ্টা লাখো-কোটি অপরাধ করলেও যেখানে আলো-বাতাস-পানি-খাদ্য বন্ধ করেন না; সেখানে নমরুদ-ফেরাউনের উত্তরসূরিরা কথায় কথায় মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেন, রিযিক বন্ধের হুমকি দেন। এরা মূলত নিজেদেরকে নিজেদের মনের অজান্তেই খোদার আসনে বসিয়েছে; না হলে বলতে পারতেন না-অফিসে দেরীতে আসলেই চাকরি নট, কাজে ভুল হলেই জরিমানা, একটু পান থেকে চুন খসলে বা এদিক-সেদিক হলেই বেতন বন্ধ, গল্প করায়-ফেসবুক দেখায়-স্কাইপিতে কথা বলায় চা-খাবার বন্ধ ইত্যাদি। দুনিয়ায় মানুষকে সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে, কম অর্থ দিয়ে বেশি খাটায়ে যারা নিজেকে চালাক-চতুর ভাবেন; তাদের শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব স্রষ্টাই নিজ হাতে নিয়ে নেন। কারণ স্রষ্টার কাছে তাঁর সকল সৃষ্টিই মূল্যবান-সুন্দর-গুরুত্বপূর্ণ। আসলে মানুষকে মানুষের মর‌্যাদা দেয়া শিখতে হবে, দাস-চাকরের নয়।

যার নিজের স্বচ্ছতা নেই সেই আক্রান্ত হবার ভয়ে সবসময় অন্যকে দায়ি করে, যাতে সে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে তথা নিজের গা বাঁচাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করায় অন্যকে আক্রমণের সুযোগ না পায়। সাধারণত যে যত ওপরে থাকে তাঁদের মধ্যে অধীনস্থদের দৌড়ের ওপরে রাখা-চাাপের মধ্যে রাখা-কর্মব্যস্ত রাখার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কর্তা মানুষ দানব কিংবা রাক্ষসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েই কর্মী মানুষকে নেতিবাচকভাবে পরিচালিত করে বেশি কাজ বের করে নিয়ে আসতে পারবেন, এমনটি ভুল ধারণা। কারণ জগতে যারা বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলে ভালো আচার-ব্যবহার-চিন্তা-কথা-লেখনি দিয়ে। প্রেম-ভালোবাসা-দরদ গুণে মানুষ মহামানব হয় আর হিংসা-অবিশ্বাস-নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি-কঠোরতার বদৌলতে মানুষ হয় জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও নিৎকৃষ্ট। মানুষ সম্প্রীতি-সহমর্মিতা-পারস্পরিক সম্মানবোধের মাধ্যমে দুনিয়াতেও স্বর্গসুখ রচনা করতে পারে আবার বিদ্বেষ-ক্ষোভ-ঘৃণা-হতাশা থেকে নরক যন্ত্রণাও তৈরি করতে পারেন। আসলে শারীরিক আকৃতিতে বড় হলে, বয়স বেশি হলে কিংবা দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরলেই সে সৎ-মহৎ-চরিত্রবান হয়ে যায় না; জ্ঞান-বুদ্ধি-শিক্ষা- সৌজন্যতাবোধ ও সামাজিকতাবোধই মিশুক-প্রাণচঞ্চল-প্রাণপ্রাচুযময়-কর্মপ্রিয়-ত্যাগী বানায়।

এই দেশে মানুষ নামক দানব জাতীয় একশ্রেণি দায়িত্ব পালনে ক্ষমাহীন ব্যার্থতার পরও বত্রিশপাটি দন্ত বিকশিত করে বলে, পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই আসে না। অথচ সভ্য দেশ ও সভ্য জাতি মন্ত্রীত্বকেও তুচ্ছ জ্ঞান করে, দেশ-জাতি-মানুষকে সবার উপরে তুলে ধরে পদত্যাগ করেন। যেমন- ২৭শে এপ্রিল ২০১৪ দক্ষিণ কোরিয়ায় ফেরী ডুবিতে ৩০০ লোকের প্রাণহানীতে কোরীয় মন্ত্রীর পদত্যাগ করেন। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ সামান্য একটা বেফাস কথা বলার কারণে জাপানে এক মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। ১৪ই জানুয়ারী ২০০৫ একজন ভারতীয় রিফুজি প্রার্থীর মৌখিক অভিযোগের কারণে কানাডার মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৪ বৃটিশ ইমিগ্রেশন মন্ত্রী পদত্যাগ করার কারণ ছিল- তিনি একজন ক্লিনারকে চাকরি দিয়েছিলেন যার ওই দেশে কাজ করার আইনগত অনুমোদন ছিল না। যদিও হয়তো তিনি না জেনেই করেছিলেন, কিন্তু ওই না জানাটাই তার অপরাধ বলে মেনে নিয়েছিলেন। এরকম হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে।

এমতাবস্থায় যখন নষ্টদের দখলে চলে যাবে সবকিছু, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে খারাপটাকেই বেছে নিবে মানুষ, ভালোরা হারিয়ে যাবে অন্ধকারের গহীন অতলে। তখন চূড়ান্ত জয় হবে সুবিধাবাদের, একটাই শ্লোগান হবে সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ!

(বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়; লেখকের উপলব্ধি বা অনুমানের সাথে কারো বাস্তবতা মিলে যাওয়ায় কষ্ট পেলে দুঃখিত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.