নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একা একা থাকতেই ভালবাসি- "ভালবাসি" কথাটা হয়ত ঠিক না... একা থাকতে থাকতে এমন হয়ে গ্যাছে। আমি সহজে কারো সাথে মিশতে পারি না। একবার মিশলে তাকে সহজে ছাড়তে পারি না। হয় বরাবর কথা বলি... নয়তো একেবারেই বলি না। আমার একটা কথাও যদি ভাল লাগে আপনার... এতেই নিজেকে ধন্য মনে করবো!! .....রুদ্ধ নয় মুক্ত থাকব.....
১.
আজ থার্টিফাস্ট নাইট। আমি, সজল আর কমল রামের বোতল সামনে নিয়ে বসে আছি। কমল তার অভিজ্ঞ হাতে গ্লাসে রামঢালে। তারা দুইজন বিভিন্ন মশকরায় ব্যস্ত। হঠাৎ কমল খেয়াল করে আমি চুপচাপ আছি। সে বলে..
-দেখতো সজল.. শালা.. আসার পর থেকে শুধু পাছা নাড়ছে, কিন্তু মুখ খুলছে না।
- কী আর হবে। সেই মহামানবীর কথা হয়ত ভাবছে। দেখ ভাই রক্তিম, বারোটা বেজে গেছে। হ্যাপি নিউ ইয়ার.. আর গুডবাই সিক্তা। এত কী ভাবিস! সিক্তা এখন অতীত। এই ২০১৩‘র মতো অতীত।
-এই শালা বাইনচোৎ! সিক্তা অতীত কিরে! সিক্তা একটা সংখ্যা? সাল? এই তোরে কে কইছে সিক্তারে নিয়া কথা কইতে! শালা বান্দির পুত!
-ইরেরে... শালা! দেখছস কমল! ভদ্রপোলার মুখ দিয়া কেমন বাণী বের অইল! শালা! তুমি ভিজা মুরগি অইয়্যা বাণী কপচাও, আর তোমার পেয়ারী মুহিতরে নিয়া শুইয়া আছে!
- তো তোরে আর কমলরে নিয়া শুইবে নাকি? সে তো তার স্বামীর সাথেই আছে।
‘এই তোরা কী শুরু করছিস! থামতো সজল।’ কমল বলে.. ‘ আচ্ছা রক্তিম, সিক্তার সাথে তো তোর প্রেম হয় নাই। আমি যতটুকু জানি সিক্তাও তোরে বলে নাই কোনদিন ভালবাসি। বলতো কাহিনী টা কী?’
আমার রাগ একটু কমে আসে। সজলও চুপ হয়ে যায়। আমি বলতে থাকি.. ‘ ঠিক কথাই বলেছিস। সিক্তার সাথে আমার প্রেম ছিল না বা সে কোনদিন বলে নাই ভালবাসি। কিন্তু আমি ভালবাসি। এই কথাটা ওকে বলেছিলাম ক্লাশ টেনে থাকতে। সে নাকচ করেছিল। পরে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ২০০৩ সালের শেষের দিকে ঈদের ছুটিতে যখন বাড়িতে আসি, একদিন বাজারে দেখা। সে আমাকে ঈদের দাওয়াত করে। আমিও ঈদের পরদিন তাদের বাড়িতে যাই। সেখান থেকে আসার পথে সে তার হোস্টেলের ঠিকানা দেয়। বলে চিঠি লিখতে। আমি হোস্টেলে আসার পরে চিঠি লিখলাম.. অনেক চিঠি লিখলাম। সেও লিখলো। আমি আবার ভালবাসার কথা বল্লাম। সে আবার নাকচ করে দিল। তবুও সেই দিনগুলো ছিল আমার আনন্দের দিন। এইচএসসি পাশের পর তো আমি ঢাকা চলে গেলাম কোচিং করতে।একদিন মিঠুর সাথে কথা বলতে গিয়ে সে জানালো সিক্তার বিয়ে হয়ে গেছে। সেইদিনটা ছিল আমার জীবনের কঠিন দিন। তারপর তো সময় চলে যাচ্ছে।’
‘হ্যাঁ.. ভিজা মুরগির মতো’ সজল বলে ওঠে।
-এই সজল থামবি! কমল বলে.. তারপর কী হল? সে যোগাযোগ করেছিল?
- না, সে অনেক ইতিহাস। পড়ালেখা লাটে উঠল। আমার শুধু মনে হতো.. সিক্তা বিয়ে করুক ঠিক আছে, কিন্তু সে কি একদিনও বলতে পারতো না যে আমাকে ভালবাসে। পরে মোবাইল নাম্বার যোগাড় করলাম। যোগাযোগ হল। এই কয়েকমাস আগেও তো আমরা তিনজন গেছিলাম তার বাড়িতে!
- হ্যাঁ.. সেদিন আমি খেয়াল করেছি, তুই করেছিস কি না জানি না। সিক্তা কিন্তু তোর থেকে একটা দুরত্ব বজায় রাখে। আমাদের সাথে যেভাবে কথা বলে তোর সাথে কিন্তু সেভাবে বলে না। খাবার টেবিলে তোর পাশ দিয়ে বেশি আসে নাই।
- এটাই তো করা উচিৎ। আমাদের সাথে তো মুহিত ভাই ছিল। আমি খেয়াল করেছি এবং মেনেও নিয়েছি।
‘এই তোরা বাদ দিবি। আমি আর শুনতে চাই না। রাত অনেক হয়েছে। বাসায় যাব।’ সজল জড়ানো কণ্ঠে বলে। দেখলাম দুইটা বেজে গেছে। আমিও সম্মতি দিলাম। কমল আর সজল টলতে টলতে চলে গেল।
২.
ঘুম আসছে না। আমার মনে হচ্ছে রাতটা একদিকেই ধাবিত হচ্ছে। শুধু সিক্তা। এখন কি কল দেব? নেশা বেশি হয়ে গেল নাকি! অনেকদিন যাবৎ এইগুলো গিলি না। শালা কমল! কেনো জানি কমলকে গালি দিতে মন চাচ্ছে। অনেক ভেবে কল দিলাম। কিন্তু দুইবার ডায়াল করেও সিক্তা কে পেলাম না। চোখে হয়ত ঘুম চলে এসেছিল কিন্তু রিংটোনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সিক্তা কল দিছে। কল রিসিভ করে বল্লাম..
-হ্যালো...
- কিরে কি খবর? এতো রাতে কল দিলে? ঘুমাস নাই?
- হ্যাপি নিউ ইয়ার! কোথায় এখন তুই?
- হ্যাপি নিউ ইয়ার! আমি আমার কর্মস্থলে। তারপর..
- এই আছি.. তোর কথা মনে হল।
- আমি ভাবলাম স্বপ্নে দেখলি নাকি আমারে।
-স্বপ্নেতো দেখি.. সবসময়ই দেখি। আমার তো স্বপ্নই সম্বল।
- কেমন আছিস?
-ভাল আছি.. ভাল না থেকেও যে ভাল থাকা যায় সেইটা অনুভব করি আর কি! তুইতো ভালই আছিস.. স্বামী.. সন্তান...
- হ্যাঁ... আমি তো ভালই আছি। মানুষ তো তাই দেখে।
- দেখিস.. সিক্তা! আমি চলে যাব.. অনেক দূর।
- কেন! হঠাৎ কেন এ কথা? কই যাবি?
-বিদেশ চলে যাব। আর একবার যদি যাই আর আসবো না।
- এটা কি আমার উপর রাগ করে? তুই কি আমাকে খুব ঘৃণা করিস?
- না .. না.. ঘৃণা করবো কেন! আমি কি তা পারি?
- তাহলে এ কথা বল্লি কেন!
সিক্তা কেঁদে ফেলে। তারপর অনেক সময় কথা বল্লাম। অনেক আলাপ হল। আমি বল্লাম ‘তোকে দেখতে মন চায়।’ সে আমাকে তার অফিসে যেতে বলে। আমিও বল্লাম আগামি পরশু যাব। সে চাকরি করে গ্রামের এক কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে। তার কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ি।
৩.
আমি বসে আছি সিক্তার সামনে। সে আজ আকাশি নীল থ্রিপিচ পড়ে এসেছে। আমার মুখে কোন কথা নেই। তার দিকে ভাল করে থাকাতেও পারছি না। বুক দুরুদুরু করছে।
‘তারপর রক্তিম সাহেব কেমন আছেন?’ সিক্তা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে।
-ভাল..
-শুধুই ভাল? আমাকে তো জিজ্ঞেস করলি না আমি কেমন আছি! আমি অনেক ভাল আছি।
- সেটা তোর মুখ দেখেই বুঝা যায়..
-ওরে বাব্বা! আজকাল আমার মুখের দিকেও তাকাতে পারিস!
- তোরে আজ অনেক সুন্দর লাগছে..
-চা খাবি? আমি ফ্লাক্সে করে চা নিয়ে এসেছি।
- তুই কেমন আছিস?
- এখন অনেক ভাল। বেশিরভাগ সময় তোর মতই ভাল না থেকেও ভাল থাকি।
- তুই তো তোর কষ্টের কথা শেযার করিস না।
- সেটাই ভাল না? আমার কষ্ট শুনে তুই আরো কষ্ট পাবি।
-আমি তো সেটাই চাই। আচ্ছা তুই কি এক মুহূর্তের জন্যও কোনদিন আমায় ভালবেসেছিস?
- থাক না এসব... চা খাবি?
-আমি কি তোর হাতটা একবার ধরতে পারি?
- উচিৎ হবে? আমিতো অন্যের অধিকারে..
-তাইলে থাক.. তুই কাজ কর আমি চলে যাচ্ছি।
-তুই রাগ করেছিস.. নে.. হাত ধর।
- না.. আমি রাগ করি নাই। তুই দূরে আছিস ,দূরেই থাক। তোকে আমি স্বপ্ন সমান দুরত্ব থেকেই অনুভব করে যাব।
- হ্যাঁ .. আমি তোকে দূরে রেখেছি। এতে আমার খুব কষ্ট হয়। আয় তোরে আজ কানেকানে একটা কথা বলি..
-এমনিই বল.. কাছে যাওয়ার দরকার কি..
- ভয় পাসনে.. মুখে কোন গন্ধ নেই। একটু আগে দাত ব্রাশ করে এসেছি... হা..হা..হা
সিক্তা চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। আমার কানের কাছে মুখ এনে বলে..‘ আমি তোকে অনেক ভালবাসি গাধা! অনেক.. আমার কষ্টের মুহূর্তগুলো তোকে ফিল করেই কাটিয়ে দেই।” আমি চেয়ার ছেড়ে ওঠে পড়ি। তাকিয়ে দেখি সিক্তা কাঁদছে। আমার হৃদয় ভারি হয়ে আসে। আমি সোজা দরজা দিয়ে হেঁটে যাই । পেছনে হয়ত সিক্তা তাকিয়ে আছে- কাঁদছে। আমি কাঁদতে চাই না।
০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০৭
আনজির বলেছেন: হা...হা.... ভাই.... সেইটা আমিও বুঝি না..... আমার কাছেও বিরক্ত লাগে.....
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩২
হাসান মাহবুব বলেছেন: এত ভালোবাসে তাইলে আগে সাড়া দেয় নাই কেন? বিরক্তিকর!