নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পান্তাবুড়ির গল্প শুনেছেন? সম্ভবত ঠাকুরমার ঝুলির গল্প। গল্পটি পড়ার সুযোগ হয়নি, তবে অনেকবার শুনেছি। লিখবো, তাই স্মৃতি ঝালিয়ে নিতে গুগলের কাছে জানতে চাইলাম, গুগল নিয়ে এলো অনেকগুলো ভিডিও। পড়ার মত কিছু নাই। ঈশ্, পড়ার মজা কি ভিডিওতে হয়?
ছোটবেলায় মা আমাদের গল্প বলে ভাত খাওয়াত। একটু বড় হওয়ার পরেও সে অভ্যাস যায়নি। আর ছোট ভাই তখনো ছোট। আমরা দু'জন খেতে বসতাম, আর মা গল্প বলত। তার একটি ছিল পান্তাবুড়ির। যেটুকু মনে পরে, নিজের ভাষায় লিখছি।
**********************
এক ছিল বুড়ি। বুড়ির বয়স হয়েছ, বেশী কাজ করতে পারেনা। তাই একবেলা ভাত রেঁধে তাতে জল ঢেলে রাখত। পরেরদিন সকালে সেই পান্তা খেতো। একদিন সকালে উঠে দেখে কে যেন পান্তা খেয়ে গেছে। পরের দিনও একই ব্যাপার। পরের দিনও। বুড়ি গাঁয়ের লোকের কাছে পরামর্শ চাইলো। সবাই বললো, বুড়ি, তুমি রাজার কাছে বিচার দাও। রাজা চোর ধরে শাস্তি দিবে। বুড়িও তাই ঠিক করলো। পরদিন সকালে লাঠি ঠুকঠুকিয়ে বুড়ি রওনা হলো রাজার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
পথের ধারে এক পুকুর। সেখান থেকে এক শিং মাছ বুড়িকে ডেকে বললো, বুড়ি কই যাও?
যাই রাজার বাড়ি। এক চোর প্রতিদিন আমার পান্তা চুরি করে খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে বিচার দিতে।
ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যেও।
কেনো? বুড়ি জিগ্গাসা করে।
সে তখনই দেখতে পাাবে।
ঠিক আছে। বলে বুড়ি হাটতে থাকলো।
একটু পরে এক বেলগাছ। তার তলায় পরে থাকা এক বেল বুড়িকে ডেকে বললো, বুড়ি কই যাও?
যাই রাজার বাড়ি। এক চোর প্রতিদিন আমার পান্তা চুরি করে খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে বিচার দিতে।
ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যেও।
কেনো? বুড়ি জিগ্গাসা করে।
সে তখনই দেখতে পাাবে।
ঠিক আছে। বলে বুড়ি হাটতে থাকলো।
একটু পরে এক মাঠে গরু চরছিলো। মাঠে পরে থাকা একতাল গোবর বুড়িকে ডেকে বললো, বুড়ি কই যাও?
যাই রাজার বাড়ি। এক চোর প্রতিদিন আমার পান্তা চুরি করে খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে বিচার দিতে।
ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যেও।
কেনো? বুড়ি জিগ্গাসা করে।
সে তখনই দেখতে পাাবে।
ঠিক আছে। বলে বুড়ি হাটতে থাকলো।
একটু পরে এক ধানক্ষেত। ষেখানে এক কাস্তে ডেকে বললো, বুড়ি কই যাও?
যাই রাজার বাড়ি। এক চোর প্রতিদিন আমার পান্তা চুরি করে খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে বিচার দিতে।
ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যেও।
কেনো? বুড়ি জিগ্গাসা করে।
সে তখনই দেখতে পাাবে।
ঠিক আছে। বলে বুড়ি হাটতে থাকলো।
তারপরে বুড়ি রাজার বাড়ি পৌছালো। রাজার বাড়ির বিশাল দ্বার। দ্বারে মস্ত মস্ত গোঁফওয়ালা প্রহরীরা পাহারা দিচ্ছে। তারা তো বুড়িকে ঢুকতেই দিলনা। দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল।
আরে যাও যাও। রাজার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যাবে সামান্য পান্তা-চোর ধরতে। তাঁর কতো কাজ আছে।
বুড়ি মনের দুঃখে ফিরে চললো। ফেরার পঠে কাস্তে, গোবর, বেল, এবং শিং মাছ নিয়ে যেতে ভুললো না।
বাড়ি আসতেই কাস্তে বললো, বুড়ি আমাকে উঠানে ঘাসের মধ্যে রাখো। বুড়ি তাই রাখলো।
ঘরে ঢুকতে গোবর বললো, বুড়ি আমাকে দরজার পাশে রাখো। বুড়ি তাই রাখলো।
ভাত রান্না করে হাঁড়ি নামাতে বেল বললো, বুড়ি আমাকে চুলোর মধ্যে রাখো। বুড়ি তাই রাখলো।
খাওয়ার পরে বাকি ভাতে জল ঢালতে শিং মাছ বললো, বুড়ি আমাকে ভাতের হাঁড়িতে রাখো। বুড়ি তাই রাখলো।
রাতে বুড়ি ঘুমিয়ে পরলে চোর আসলো। প্রতিদিনের মতো পান্তা খেতে হাঁড়িতে হাত ঢুকাতেই -- শিং মাছ ফুটিয়ে দিলো কাঁটা।
ঊহ্ । হাতের ব্যাথায় চোর গেলো চুলার পাশে, হাতটা সেঁকে নিতে। আর অমনি-- বেলটা ফেটে চোরের চোখেমুখে ছিটে এলো।
ওরে বাবারে মারে। লাফিয়ে উঠলো চোর। এখানে থাকা যাবেনা। পালাই এখান থেকে। চোর দৌড়ে বেরুতে গেলো দ্বরজা দিয়ে। সেখানে ছিলো গোবর । তাতে পা পরতেই-- ধপ্পাস্।
উহুহুহূ, পায়ের গোবরটা না মুছলে দৌড়ে পালানো যাবেনা। তাই সে গেলো ঘাসে পা মুছতে। আর কাস্তেতে পা গেলো কেটে।
আর পারলোনা চোর। চিৎকার করে উঠলো বাপরে মারে বাঁচাওরে বলে। ছুটে এলো গ্রামের লোক। তারপরে চোরকে আ্যয়সা পিটুনি দিয়ে গ্রামের বার করে দিলো।
**********************
যাক। খুশি হলাম চোরের উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায়। যেমন কর্ম, তেমন ফল।
ওমা, ছোট ভাইএর চোখ দেখি ছলছল করছে। থেমে গেছে ভাত খাওয়াও।
কিরে, তোর কি হলো? কাঁদছিস কেন? মা প্রশ্ন করে।
মা, চোরকে কি কেউ খেতে দিতনা? সে তো ক্ষুধার জন্যই পান্তা চুরি করেছিলো। সে কি খাবে?
তাইতো, চোরেরও তো ক্ষুধা পায়। তার ভাতের কি উপায় হবে?
মা তখন গল্পের শেষটা অন্যরকম করে দিত।
*************
বুড়িও লাঠি হাতে চোরকে মারতে এলো। চোর কেঁদে উঠলো। বুড়িমা, আমাকে মেরোনা। ওদের থামতে বলো। আমার ঘরে ভাত নেই, আমাকে খেতে দেওয়ার কেউ নেই, তাই চুরি করে খাই। আর তোমার পান্তা চুরি করবোনা।
হ্যারে হতভাগা চোর, আমি বুড়ো মানুষ, কষ্ট করে একবেলা রেঁধে দু'বেলা খাই, আর তুই সেই পান্তা চুরি করিস!! কেনো কাজ করে খেতে পারিসনা?
বুড়িমা অনেক কাজ খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। তাই তো চুরি করে খাই।
আচ্ছা ঠিক আছে। তুই এখন থেকে আমার ভাত রান্না করে দিবি? পান্তা খেতে আর ভালো লাগেনা। তুই যদি রান্না করে দিস, তবে আমিও গরম ভাত পাই, তোকেও খেতে দিতে পারি।
চোর রাজি হলো। এখন চোরও খুশি, বুড়িও খুশী।
-----------------------
খুশি আমরাও। চোর এবং বুড়িকে ভাত খাইয়ে, আমরা দু'ভাই-বোন ভাত খেয়ে উঠে গেলাম।
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:২৪
আনমোনা বলেছেন: আমিও পান্তা ভালোবাসি। মাঝে মাঝে গরম ভাতে জল ঢেলে পান্তা বানিয়ে নেই।
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:৩৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
গল্পের শেষ অংশটুকু যোগ করাতে গল্পটা সুন্দর হয়ে উঠেছে, ভালো
১০ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:২৭
আনমোনা বলেছেন: ধন্যবাদ। কিন্তু তারপরেও শেষ দুই লাইন দেখছি বাদ পরে গেছিলো। ফিনিশিং হচ্ছিলো না। এডিট করে দিলাম।
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:৫০
যাযাবর চখা বলেছেন: সুন্দর গল্প। আরো লেখুন।
১০ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:২৪
আনমোনা বলেছেন: ধন্যবাদ। আমিও ব্লগ পড়ছি অনেকদিন। লেখালেখির শখটা নতুন।
৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪৪
ল বলেছেন: অতি চমৎকার গল্প লিখেছেন।
শুভ কামনা রইলো
১০ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১:১৮
আনমোনা বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: গত বিশ বছরেও পান্তা ভাত খাইনি।
এখন খুবই খেতে ইচ্ছা করছে। সাথে ডিম ভাজা আর আলু ভর্তা। দুইটা শুকনা মরিচ পোড়া।