নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে

আমি অতি সাধারণ মানুষ। সাতে পাঁচে নাই...খাই দাই ঘুমাই। লিখতে চেষ্টা করি। লেখা আমাকে ধরা দেয় না

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প : স্বাগতাকে খুঁজে বের করতেই হবে যেভাবেই হোক

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫


ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে বের হবার সময় মঞ্জুর এক কারারক্ষীর কাছে জানতে চাইল কয়টা বাজে। বিরক্তি নিয়ে ঘড়ি দেখে লোকটা বলল, সাড়ে দশটা।
জেলগেট থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে মঞ্জুর। কই যাবে কোথায় যাবে জানে না সে। জেলে বসে অনকেদিন ভেবেছে ছাড়া পেয়ে কোথায় যেতে পারে। কিন্তু কোন জায়গাই তার মনে ধরেনি। একজনের কথা গত ষােলটা বছর সে প্রতিদিনই ভেবেছে। না. তার কাছেও যাওয়া যাবে না। আর যাবেইবা কোন মুখ নিয়ে?

তাই গন্তব্যহীন মঞ্জুরের হাঁটতে থাকা। হাঁটতে হাঁটতে সে চলে এল চাঁনখারপুলের কাছে। হঠাৎ মনে হল কার্জন হলের পুকুর পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলে মন্দ হয় না। আহ প্রিয় ক্যাম্পাস। কতই না স্মৃতি এখানে।
মঞ্জুর মনে মনে ভাবছে মুক্তির আনন্দটা কেন সে উপভোগ করতে পারছে না। শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে একটি নারকেল গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে পড়ে মঞ্জুর। কচি ঘাসের ডগা চিবুচ্ছে আর আনমনা হয়ে কী যেন ভাবছে। পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা আড়চোখে তাকাচ্ছে মঞ্জুরের দিকে। শ্যামলা বর্ণের মঞ্জুর এখন আরো কালো হয়ে গেছে। লম্বা ঝাকড়া চুল গুলা কেমন যেন নিস্তজে। আর মঞ্জুরের চোখজুড়ে রাজ্যের হতাশা।
হঠাৎ ঝিমুনি চলে আসে মঞ্জুরের। বৈশাখ মাসের তীব্র গরমের মধ্যে এখানে বেশ ঠান্ডা একটা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে।
সেই কোমল বাতাসের আরামে নারকেল গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মঞ্জুর।

মুহুর্তেই সে চলে যায় মধুর ক্যান্টিনে। ষোল বছর আগে। একটা লম্বা টেবিলে তুমুল আড্ডা চলছে। বীথি, স্বাগতা, শামীম, মোবারক, হাসান. জেনি আর সে আড্ডায় মত্ত।
ওরা সবাই ফিজিক্সে পড়ে, ফোর্থ ইয়ারে। সারাদেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওরা সবাই এসব নিয়ে আলোচনা করছে। যে যার মতামত জানাচ্ছে কীভাবে এরশাদকে নামানো যায়, জোটের আন্দোলন কীভাবে তীব্র করা যায়।
এসবের মধ্যেও মঞ্জুর আর স্বাগতার মাঝে ইশারায় কথা হচ্ছে। কী যেন বলতে চাচ্ছে স্বাগতা. কিন্তু মঞ্জুর তা ধরতে পারছে না।
স্বাগতকাকে প্রথম যেদিন দেখে সেদিনই ভাল লেগে যায় মঞ্জুরের। গ্রুপ স্টাডি, রহীমের চায়ের দোকানে আড্ডার সময় তাদের মধ্যে একটা ভাল সম্পর্কও গড়ে ওঠে। তবে বন্ধুত্বের বাইরে পরিচয় দেয়ার মত কিছু নয়।
মঞ্জুর সবসময় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাতে স্বাগতা তার মনের কথা পড়ে না ফেলে । কারণ, বুঝলে যদি সে তার উপর রাগ করে, ভাবে বন্ধুত্বের নামে মঞ্জুর তার সঙ্গে চালাকি করছে। এ জন্য সবসময়ই স্বাগতার সামনে স্বাভাবিক থাকার চেস্টা করে মঞ্জুর।

এদিকে মধুর ক্যান্টিনে আড্ডার সময় খবর এল শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। হাপাতে হাপাতে বশীর এসে এই খবরটা দিল। এরই মধ্যে বশীর ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। বশীর বাংলায় থার্ড ইয়ারে পড়ে। বলল, মঞ্জুর ভাই তাড়াতাড়ি চলেন, ছাত্রদের একজোট করতে হবে। আজকেই সুযোগ। আজ শালাকে গদি থেকে টেনে নামাবোই।

চেয়ার ছেড়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে মঞ্জুর ও শামীম। দুজনই তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গেই এরশাদবিরোধী আন্দােলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শামীম বলে ,চল দোস্ত দেরি করে লাভ নেই
এরই মধ্যে স্বাগতার চেহারায় কীসের যেন একটা ভীতি আর সংকোচ খেলা করছে। মঞ্জুরকে একপাশে ডেকে নিয়ে বলল, তোর সাথে কিছু কথা ছিল। ভাবছিলাম আজ বলব। কিন্তু আজ তো মনে হয় তোর সময় হবে না।
স্বাগতা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, তোর মুহসীন হলের রুমে একটি জিনিষ রেখে এসেছি কাল, পেয়েছিস?
মাথা নেড়ে না বলে মঞ্জুর। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কখন গেছিলি?
স্বাগতা জবাব দেয়, কাল বিকালে হাটতে হাটতে গেছিলাম।অনেকক্ষণ বসেছিলাম, দেখি তুই আর আসিস না।
মুহসীন হলের মঞ্জুরের রুমের একটি চাবি স্বাগতর কাছে থাকে। পরীক্ষা এলে মাঝে মাঝে ওরা সবাই সেখানে গিয়ে একসঙ্গে পড়ে।
মঞ্জুর বলে,` ও আচ্ছা। ঠিক আছে রুমে গিয়ে দেখে নিব।'
কোনরকমে কথা শেষ করে শাহবাগের দিকে দেৌড় দেয় শামীম ও মঞ্জুর। পাবলিক লাইব্রেরির কাছে এসে ওরা দেখে চারদিকে প্রচন্ড ভিড়। অসংখ্য পুলিশ গিজগিজ করছে। এরই মধ্যে হঠাৎ শামীমকে হারিয়ে ফেল মঞ্জুর। আশপাশে তাকিয়ে দেথে সে নেই। এদিকে চারদিকে ছাত্ররা বিক্ষােভ মিছিল করেছ আর শ্লোগান দিচ্ছে । আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে শ্লোগানে। স্বৈরাচার নিপাত যাক. গণতন্ত্র মুক্তি পাক।
একটু পর হঠাৎ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ হল। ছাত্ররা এদিক সেদিক দেৌড়াতে শুরু করল। চারদিকে আত্ন চিৎকার। কি করবে কি করবে ভাবতে ভাবতে দোৌড়ে টিএসসি চলে আসে মঞ্জুর। হাফাতে হাফাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দেয়। সারা গা বেয়ে ঘাম ঝরছে।
কেমিস্ট্রর রফিক এসে খবর দিল শাহবাগে তিন ছাত্র মারা গেছ। এদের মধ্যে সায়েন্স ফ্যাকাল্টির একজন আছে। মাথা ঝিম ঝিম করে মঞ্জুরের। উত্তেজনায় জিজ্ঞেস করে রফিককে, নাম জানতে পেরেছিস। রফিক জবাব দেয় না।

একটু পর বাধন, হালিম আর আনোয়ারকে দেৌড়াতে দেৌড়াতে মেডিক্যালেরর দিক থেকে আসতে দেখা গেল। মঞ্জুরকে দেখে দেৌড়ানোর গতি বাড়িয়ে দল তারা। কাছে এসে কোন রকমে বলল, ভাই তাড়াতাড়ি পালান। শামীম ভাই আর নাই। পুলিশ বলছে আপনি নাকি শামীম ভাইকে গুলি করে হত্যা করছেন। শাগবাগে নাকি আজ ছাত্রদের দুই গ্রুপের মারামারি হইছে।
আন্দোলন টান্দোলন কিছু নাকি হয় নাই।
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মঞ্জুরের মাথায়। তার প্রিয় বন্ধু নেই। আর তার উপরই কীনা চাপানো হচ্ছে বন্ধু হত্যার অভিযোগ।

চট করে মঞ্জুরের মনে পড়ে ছাত্র সমাজের রাকীবের কথা, কয়েকদিন আগের রাতে মলচত্ত্বরে তাকে হুমকি দেয়ার ঘটনাটি। ঘটনাটি তখন আমল দেয়নি। কত হুমকি ধামকি পেয়েছে সে এই জীবনে। এগুলো পাত্তা দিলে চলে? রাকীব তাকে বলেছিল আন্দোলন থেকে সরে দাড়া নইলে জেলের ভাত খাবি।এমন অবস্থা করব সারা জীবন পস্তাবি।
এখন মনে হল রাকীবের হমকি নেহায়েৎ হুমকি ছিল না। কিছুই ভাবতে পারছে না মঞ্জুর। জিগাতলার কথা বলে তাড়াতাড়ি একটা রিকশা ঠিক করে সে। ওখানে তার খালােতা বোনের বাসা। কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আজকের মধ্যেই গা ঢাকা দিতে হবে। নীলক্ষেতে আসা মাত্রই সাদা পোশাধারী কয়েকজন পুলিশ ঘিরে ফেলে মঞ্জুরের রিকশা। টেনে নামিয়ে তাকে তোলা হল পুলিশের একটি জীপে।
থানায় না নিয়ে তাকে নেয়া হল অজ্ঞাত এক স্থা্নে। দেয়া হল দুটি শর্ত । হয় আন্দোলন সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে সরকারদলীয় রাজনীতি করেত হবে। নইলে শামীম হত্যার দায়ে তাকে জেলে পচতে হবে। মঞ্জুর যতই পুলিশকে বলে সে তার বন্ধুকে খুন করেনি। ততই পুলিশ দাবি করে তাদের কাছে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে।
পুলিশ দাবি করে আশপাশের ছাত্ররা সাক্ষী দিছে, তারা ওকে গুলি করতে দেখেছে। ভীষণ মুষড়ে পড়ে মঞ্জুর।
একদিকে বন্ধুকে হত্যার অভিয়োগ, তার উপর সবাই নাকি তাকে দেখেছে গুলি করতে। এসব থেকে রেহাই পাওয়া যাবে যদি ওদের কথামত সে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু মঞ্জুর ভাল করেই জানে আদর্শের সঙ্গে বেইমানি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এরচেয়ে মিথ্যা মামরায় তার ফাসি হলে হবে....


এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ে মঞ্জুরের বিচার হলো। ষোল বছর জেল হয় তার। জেলখানায় বসে মঞ্জুর শুনতে পেল খবরেরর কাগজে এনিয়ে ভীষণ রসালো রসালো সব সংবাদ হচ্ছে। কয়েকটি কাগজে নাকি লিখেছে প্রেমিকার জন্য নিজের বন্ধুকে খুন করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের বিখ্যাত ছাত্রনেতা মঞ্জুরুল ইসলাম। দিনের পর দিন সাংবািদকরা এসব নিয়ে রসাত্নক চাঞ্চল্যকর খবর পরিবেশন করে। দু একটি কাগজে যে সত্যি কথা লিখেনাই তা নয়। তবে ভুয়া মিথ্যা খবরেরর দাপটে পাঠকরা সেসব নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি।
মঞ্জুর কয়েকবার বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছিল স্বাগতার কাছে। কিন্তু সেই খবর পেৌছেছে কিনা জানে না মঞ্জুর।

স্বাগতার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম ভাঙ্গে মঞ্জুরের। এই ষোলটা বছর শুধু তার কথাই ভেবেছে সে।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে মঞ্জুর। খালাতো বোন রুমি ছাড়া তার আপন তেমন কেউ নেই। জেলে বসে ভেবেছে স্বাগতার সঙ্গে তার শেষ দেখা, শেষ কথা গুলো। কী একটা নাকি রেখে এসেছিল সে রুমে।
জেলে বসে আবেদন করেছে মুহসীন হল কতৃপক্ষকে তার রুমের জিনিসপত্রগুলা ফেরত দেয়ার জন্য। তারা জানিয়েছে ছাড়া পেলে দেখার করার জন্য। আল্লাহই জানে সেসব জিনিস আর আছে কিনা। একটা রিকশা নিয়ে মুহসীন হলে যায় মঞ্জুর। হলের পুরাতন দু একজন মামা চিনে ফেলে মঞ্জুরকে। তারা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়।
তাদের জানালো কেন সে এসেছে। হল অফিসের একজন কর্মকর্তাকে আবেদনটা দেখাতেই একজন পিয়নকে ডেকে পাঠালেন তিনি। বললেন উনাকে নিয়া স্টাের রুমের ছিয়াশি শাল লেখা্ লকারটা খুলবেন। ভেতরে একটা বস্তা আছে, এটা উনাকে দেবেন।
মঞ্জুর ধীর পায়ে পিয়নের পিছু নেয়। স্টােররুমে গিয়ে লকার্ খুলে দেখতে পায় বেশ কয়েকটা বস্তা। একটা বস্তার উপর লেখা মঞ্জুরুল ইসলাম। রুম নম্বর 2 12।
বস্তাটি পেয়েই খুলে ফেলে মঞ্জুর। তা র দুএকটি জামা, কয়কেটা বই বেশ কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেল বস্তায়। ময়লা পড়েছে সেগুলায়।
এরমধ্যে একটা ডায়েরি পাওয়া গেল। পাতা উল্টাতেই দেখা গেল জিনাতুন্নেছা স্বাগতা নাম লেখা। হৃৎকম্পন বেড়ে যায় মঞ্জুরের। এটা স্বাগতার ডায়েরি, তারই হাতের লেখা। কয়েকটা পাতা্ উল্টাতে গিয়ে রীতিমত উত্তেজনায় কাপতে থাকে মঞ্জুর। তাকে নিয়ে লেখা। তাদের আড্ডা ক্লাসেরন গল্প কত কী লিখা।
একটি চিঠিও পাওয়া্ গেল। ভেতরে মনে হয় ফুল ছিল, কালো দাগ পড়ে আাছে। চিঠিতে লেখা প্রিয় গাধা, শুধু গ্রুপ স্টাডি নয় তোর সঙ্গে সারাজীবন থাকতে চাই।


চিঠি পড়ে কাপতে থাতে মঞ্জুর। কি যেন একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তার চেহারায়। মনে মনে ভাবছে,তাকে খুজতে হবে, স্বাগতাকে খুঁজে বের করতে হবে। যেভাবেই হোক। এই চিঠির উত্তর স্বা্গতাকে দিতেই হবে।







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১১

লিংকন১১৫ বলেছেন: সুন্দর গল্প


চালিয়েজান , ভাললেগেছে

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। চেস্টা করতে পারি সেজন্য দোআ চাই।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪

অন্ধ বিন্দু বলেছেন: অসাধারন গল্প খুব ভালো লাগলো।।

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে বলেছেন: সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৩

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: অসাধারণ ছোটো গল্প। মনে হচ্ছে জীবন থেকে নেওয়া গল্পটা..

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে বলেছেন: ধন্যবাদ।..............

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.