নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে

আমি অতি সাধারণ মানুষ। সাতে পাঁচে নাই...খাই দাই ঘুমাই। লিখতে চেষ্টা করি। লেখা আমাকে ধরা দেয় না

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে › বিস্তারিত পোস্টঃ

পহেলা বৈশাখের আগে: এক ভদ্দর নোক বনাম দুজন মানুষ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০২

দোলনার কাছে গিয়ে থমকে যায় কাজল। চড়তে ইচ্ছে করে, আবার ভয়ও হয়। যদি পড়ে যায়। কাজলের দোলনাভীতির বিষয়টি জানে তার মা। তাই তিনি দোলনায় আস্তে আস্তে দুলুনি দেন। দোলনা এখন আর ভয় লাগছে না, বরং বেশ মজাই লাগছে কাজলের। দোলনা দুলছে আহ! কী মজা, কত আরাম। হঠাত্ হাত ফসকে দোলনা থেকে পড়ে যাচ্ছে কাজল। তার মা তাকে ধরার চেষ্টা করেও পারছে না। মা..মা... বলে চিত্কার দিয়ে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে ওঠে কাজল। সেই স্বপ্নটা আবার এসেছে। সারা শরীর তার ভিজে গেছে ঘামে।

কে যেন জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে। কাজলের বিমূঢ় ভাবটা তখনো কাটেনি। একটু অবাক হয় কাজল। ভাবে, এ অবেলায় আবার কে এলো? অবশ্য কাজলদের ঘরে যে কোন সময় যে কেউই চলে আসে। কাজল দরজা খুলে দেখে শিল্পী দাঁড়িয়ে।

‘কিরে, ঘুমাস নাকি?’

-‘হু’

‘কি হইছে?

-‘শইলডা ভালা না’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে কাজল।

কাজলের কথা শুনে শিল্পীর মনটা খারাপ হয়ে যায়।

গত কয়েকদিন ধরেই কাজলের শরীরটা খারাপ। রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। জ্বরের কারণে রাতে ঘুমাতে পারছে না। শেষরাতে চোখ দুটি যখন আর নিজেদের মেলে রাখতে পারে না, তখনই সে ঘুমিয়ে পড়ে। আর তখন সেই স্বপ্নটাই ফিরে আসে। এই স্বপ্নটা তাকে খু্ব কষ্ট দেয়। সেই দোলনা...তার মা, পড়ে যাওয়া তাকে খুব কষ্ট দেয়।

‘কামে যাবি না?’ জিজ্ঞেস করে শিল্পী।

-‘না, অন্যদিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় কাজল।

‘কামে না গেলে খাবি কি? ডাকতারের কাছে যাইবি?’ জানতে চায় শিল্পী।

-‘আর ডাকতার, হেরা আমার কি কইরব? মইরা গেলেই শান্তি’

‘কাইলকা ফয়লা বইশাখ, চল যাই, আইজাকে ইনকাম ভাল হইবো’ শিল্পীর চোখেমুখে একটা অন্যরকম আনন্দ।

-‘তুই যা, আমার এইসব ভালা লাগে না’ উত্তর দেয় কাজল।

‘আমারও ভালা লাগনো, তয় এডি না করলে আর কী করমু? খামু কি?’ বিষণ্নস্বরে উত্তর দেয় শিল্পী। সঙ্গে সঙ্গে সে বলে, ‘আইজকা মাইনসে দোকানে দোকানে যাইতাছে, কত কী কিনতাছে চল যাই, কিছু টাকা পয়সা পামু, খালারে ঘর ভাড়ার টেকাটা দিত হইব।’

-‘চল তাইলে,খারো আমি রেডি হইয়া আসি’ কী যেন ভেবে রাজী হয়ে যায় কাজল।

অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের এক কোনে গিয়ে শাড়ি ব্লাউজ পড়ে কাজল। পরচুলাটা ভালো করে ক্লিপ দিয়ে আটকে টেনেটুনে দেখে। তিব্বত পাউডারের কৌটাটা খালি।তারপরেও কয়েকবার ঝাঁকুনি দেয়। অল্প একটু পাউডার বের হয়। তা সারা মুখে, হাতে-গলায় মাখে কাজল। শিল্পীর কাছ থেকে তার লিপস্টিকটা চেয়ে নিয়ে ঠোটে মাখে। আয়নায় চোখ পড়তেই নিজের উপর ঘৃণা জাগে কাজলের। আয়না থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। এ চেহারা তার ভাল লাগে না।

মিরপুর থেকে বিকল্প পরিবহনের বাসে উঠার পরপরই ঘুম ঘুম লাগে কাইয়ুমের। কোনভাবেই চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। যদিও চোখ খোলা রাখাটা খুবই দরকার। অফিসের অনেকগুলো টাকা তার হ্যান্ড ব্যাগের পকেটে। মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সে। টাকাগুলো অফিসে জমা দিলেই তার আজ কাজ শেষ। এলিফ্যান্ট রোডে যেতে হবে।কাল পহেলা বৈশাখ, নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবি ও নীলার জন্য একটা গিফট কিনতে হবে। এসব ভাবছে সে। মাঝে মাঝে ব্যাগের পকেটে হাত রেখে দেখছে টাকাগুলো ঠিকমতো আছে কীনা। চৈত্র মাসের দুপুরে বাসের জানালা দিয়ে আসা হুহু বাতাস কাইয়ুমের কাছে বেহেশতি বাতাস বলে মনে হচ্ছে। ঝিমুনি এসে যায় তার।

‘এই ৫০ ট্যাকা দে না’ কে যেন কানের কাছে চিত্কার করছে।

কাইয়ুম চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে দুটি হিজড়া তার সিটের পাশে। সারামুখে সাদা পাউডার। ঠোটে লাল লিপস্টিক। একজনের পুরুষালি হাতের আঙুলে বেশ কয়েকটা আঙটি। সেই আঙুল দিয়ে তাকে গুতো মারছে। আর বলছে টাকা দে।

প্রথমে আতংক পরে তীব্র ঘৃণা জাগে কাইয়ুমের। সে হিজড়াদের দেখতেই পারে না। প্রচন্ড রাগ লাগে কাইয়ুমের। মনে মনে গালি দিচ্ছে সে তাদের। যদিও কাইয়ুমের পাশে বসা ছেলেটা হিজড়াদের এসব কর্মকান্ড খু্ব ইনজয় করছে। হিজড়া দুটি নানা অঙ্গভঙ্গি করে টাকা চাচ্ছে, আর ওই ছেলেটা এতে যেন খুব মজা পাচ্ছে।

কাইয়ুমকে আবার একজন হিজড়া বলে, ওই ভদ্দরলো্ক দে না টাকাটা দে না, তোকে দেখেই মনে হচ্ছে ভালই মালদার তুই’

কাইয়ুমের মন ঘৃণায় বিষিয়ে ওঠে। মনে মনে সে গালি দেয় মাগী....তোর......’। যদিও মুখে বলে, ‘না টাকা নাই, যা ভাগ। অন্যদিকে যা।’

হিজড়াটি কি মনে করলো কে জানে, সে কাইয়ুমের সিট থেকে এগুচ্ছে সামনের দিকে। ফার্মগেট চলে এসেছে। তারা বোধ হয় নেমে যাবে। ওরা সামনে এগুতেই স্বস্তি হয় কাইয়ুমের। আবার ব্যাগের পকেটে হাত দেয় কাইয়ুম, দেখে টাকার বান্ডেলগুলো নেই। পাশের ছেলেটাও নাই। ছেলেটা তড়িঘড়ি করে নামছে বাসের গেট দিয়ে।

কাইয়ুম যা বুঝার বুঝে নেয়। তার পকেটমার হয়েছে। পাশের ছেলেটা টাকাগুলো নিয়ে ভাগছে। হঠাত্ কাইয়ুম চেচাতে থাকে পকেটমার পকেটমার বলে। হিজড়া দুটি গেটের কাছে্ই ছিল। কাইয়ুমের চিত্কার শুনে পেছনে তাকায়। কাইয়ুম বলতে থাকে নিয়ে গেল ওইযে নিয়ে গেল আমার টাকা। একজন হিজড়া বলে ওঠে, শিল্পী ধর ওই হারামজাদারে, মনে হয় শালায় পকেট মারছে। বলেই কাজল আর শিল্পী দৌঁড়াতে থাকে পকেটমারের পেছনে পেছনে। দৌড়াদে দৌড়াতে আনন্দ সিনেমা হলের বিপরীত দিকের ওভারব্রিজের নিচে তারা ধরেও ফেলে পকেটমারটাকে। প্রচন্ড হাফাচ্ছে শিল্পী আর কাজল। আশপাশে প্রচুর লোক জমে গেছে। তারা হিজড়া দুটির কর্মকান্ড দেখছে। কেউ কেউ টিপ্পনিও কাটছে। কাজল হিজড়া টাকার বান্ডেলগুলো ফিরিয়ে দেয় কাইয়ুমের হাতে। কাইয়ুম লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। তাকালে দেখতে পেত কাজল হিজড়ার মুখে একটা অন্যরকম স্বর্গীয় হাসি।

















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.