নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে

আমি অতি সাধারণ মানুষ। সাতে পাঁচে নাই...খাই দাই ঘুমাই। লিখতে চেষ্টা করি। লেখা আমাকে ধরা দেয় না

অনিচ্ছুক নাম প্রকাশে › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনানন্দ দাশ এই বাংলায় এসেছিলেন, আবার নিভৃতে চলেও গেছেন

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৯

জীবনানন্দ বাবু ট্রাম দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে শমভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। হাসপাতালে জীবন ও মরণের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল, কিন্তু কেউ কোনো ফয়সালায় আসছে না। শেষমেষ পরিস্থিতি সামাল দিতে মৃত্যুদেবতা এক নির্জন সন্ধ্যায় এলেন ‘বনলতা সেন’খ্যাত কবির শিয়রে। কবি তখন কোমায় ।
মৃত্যুদেবতা অনেকক্ষণ কবির শয্যাপাশে চুপচাপ বসে বসে কী যেন ভাবছেন। এরপর আবেগে আপ্লুত হয়ে ফিসফিস করে বললেন, ‘কবি, আমি তোমার ভীষণ ভক্ত। তুমি কবিতায় যেভাবে বাংলার অপরূপ প্রকৃতি, মানুষ, পাখ-পাখালি ও নদীর কথা বলেছো, আমি তোমার কবিতা পড়ে বাংলার প্রেমে পড়ে গেছি’! মৃত্যুদেবতা আস্তে আস্তে ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায়’ আবৃত্তি করতে লাগলেন।
একী ! মৃত্যুদেবতার চোখে জল! পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, কবির শঙ্খচিল শালিখের বেশে বাংলায় ফেরার ইচ্ছাটি পূরণে তিনি ঈশ্বরের কাছে সুপারিশ করবেন। আজকেই ঈশ্বরের দফতরে ফাইলটি পাঠাবেন স্বাক্ষরের জন্য। সেদিনই, ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর তারাদের দেশে চলে গেলেন তরুণ কবিদের কবি জীবনানন্দ দাশ।
লালফিতার দৌরাত্নে ঈশ্বরের দফতরে পাঠানো ফাইলটি আটকে ছিল ৬১ বছর। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর ঈশ্বর ফাইলটি সই করার কিছুক্ষণের মধ্যেই জীবনানন্দ বাবু শঙ্খচিল হয়ে গেলেন। একটি বিশেষ নভোযানে করে তাকে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় পৌঁছে দেয়া হল। জীবনানন্দ বাবু অর্থাত্ শঙ্খচিলকে দেবতারা সাবধান বাণী শোনালেন। বললেন, একটু সাবধানে থাকবেন, আপনার সেই বাংলা এখন অনেক বদলে গেছে।
জীবনানন্দ বরিশালের দিকে উড়তে শুরু করলেন। উড়তে উড়তে চলে আসেন বরিশালে। বড় একটা হোঁচট খেলেন শঙ্খচিল রূপী জীবনানন্দ। প্রথমে ভাবলেন ভুল কোথাও চলে এসেছেন। পরে কীর্তনখোলা দেখে তার ভুল ভাঙল। যদিও তার আর সেই পুরনো রূপ জৌলুস নেই। কোথাও সবুজের দেখা পেলেন না কবি। নদীগুলো সব কেমন যেন হয়ে গেছে। উঁচু উঁচু দালান দেখে জীবনানন্দের মাথা চক্কর দেয়া শুরু করল। দালান পুরো আকাশ দখল করে ফেলেছে। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। মিল কারখানার কালো ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। এক মুহুর্তও আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
পরে ভাবলেন, এতো সাধনার পর যখন পৃথিবীতে আসলেন একবার ধানসিড়ি নদীটা ঘুরে যাবেন। সময় হাতে থাকলে নাটোরে গিয়ে বনলতাকেও খুঁজবেন। কবির ধানসিড়ি নিয়ে একের পর এক পুরনো স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো।
তিনি একে ওকে ধানসিড়ির কথা জিজ্ঞেস করলেন। (মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় কবি পাখি থেকে তার পুরনো রুপে অর্থাত্ আসল জীবনানন্দ রুপে ফিরছেন)।আশ্চর্য কেউ নাকি এই নামে কোনো নদীর নাম শোনেনি। কী বলে ওরা! পাগল নাকি! জীবনানন্দর মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
জীবনানন্দ কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ভাবেন, আচ্ছা আমি তো অনেক দারুণ দারুণ কবিতা লিখেছিলাম। জীবতকালে অনেকেই তো আমার প্রশংসা করতো। তিনি বেশ কয়েকজনকে নিজের কথা জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তার সম্পর্কে ভালো করে কেউ কিছু বলতে পারল না।
ভীষণ আহত হন জীবনানন্দ। কী হলো ! এরা কেউ দেখি আমার সম্পর্কে কিছু জানে না।
জীবনানন্দ ফের হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাটতে ঝালকাঠিতে চলে এলেন। দেখেন এক বৃদ্ধ বন্ধ এক দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসে আছে। ক্লান্ত জীবনানন্দ তাকে প্রশ্ন করলেন, কাকা ! এখানে না একটা নদী ছিল ধানসিড়ি নাম?
চেনেন?
বৃদ্ধ অনেকক্ষণ তার মুখের দিকে দিকে তাকিয়ে রইলেন। স্মৃতি হাতড়ে বললেন হ, বাবাজী ছিল একখান নদী। তয় সেটা তো এখন আর নাই। মানে কী ? উত্তেজিত হয়ে ওঠে জীবনানন্দ। বাবাজী ওইটাতো মাইনসে খাইয়া ফেলছে। কী বলে এই লোক? জীবনানন্দ মাথা চুলকাতে থাকেন। মানুষ আবার নদী খায় ক্যামনে?? বৃদ্ধ তখন বলল, বাবা নদীর আশপাশে এখন এত বাড়িঘর দোকান হইছে, নদীর কোন নাম গন্ধ আর নেই।
জীবনানন্দ ভীষণ কষ্ট পেলেন যখন শুনলেন তার প্রিয় নদী আর নেই। নদীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে একরাশ ব্যথা নিয়ে তিনি ফের তারার দেশে চলে গেলেন।
বাংলাদেশের মানুষরাতো জানলই না এমনকি কবিরাও জানলোনা জীবনানন্দ দাশ ২২ অক্টোবর তার প্রিয় বাংলায় এসে একরাশ বেদনা নিয়ে নিভৃতে ফিরে গেছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.