নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার

অনুফিল

অনুফিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্যরকম এক ঈদ

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫১

অন্যরকম এক ঈদ

গ্লাস হাতে বসে আছি। লোকজন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকিয়ে আছি গ্লাসের দিকে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসের ভেতর দিয়ে জলের মৃদু কম্পন। তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে চোখের সামনেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে জলস্পন্দন। এক চুমুক নিলাম। অপূর্ব স্বাদ। লোভ সামলাতে পারছি না। ইচ্ছে করছে এক ঢোকে গিলে ফেলি যতটুকু জল। কিন্তু পারছি না কেন?

আমি স্তব্ধ সময় ধরে থমকে আছি। স্বচ্ছ জলের ঝিলিমিলি ছন্দে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পৃথিবীর কোন একটি দেশের মানচিত্র। যে দেশের অভাগা মানুষের ক্ষত-বিক্ষত দেহের হৃৎপিন্ডের স্পন্দন এভাবেই তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। কারা যেন সেদেশের এক টুকরো জমি গিলে উন্মাদ হয়ে গেছে, আর যেটুকু বাকি তা এক ঢোকে গিলে ফেলার লোভ। আমি ঠিক মনে করতে পারছি না -সে কোন দেশ!

এর আগেও একবার মনে করার চেষ্টা করেছিলাম ঈদের নামাজ শেষে, যখন আমরা প্রাণ খুলে হেসে হেসে কোলাকুলি করছি একে অপরের সাথে। আমরা মসজিদের প্রাঙ্গনে জড়ো হয়েছিলাম নানা রঙের জামা পড়ে। ছোট ছোট বাচ্চারা লাল টুকটুকে জামা পরে ধেই ধেই করে নাচছে আর কোলে কোলে উঠে হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে। রক্তরাঙা জামায় যেসব শিশু মায়ের কোলে, খালার কোলে, ফুফির কোলে উঠে চকচকে নতুন টাকার নোট টেনে টুনে দেখে হর্ষিত হচ্ছে, সেসব টাকার নোটেও আমি দেখেছি পৃথিবীর একটি ভুখন্ডের মানচিত্র; যেখানে তাদের অধিবাসীরা আমাদের মত এভাবে মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে পারে না। পারে না আমাদের মত প্রাণ খুলে হেসে হেসে এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে, এ শহর থেকে ও শহরে যেতে। যদিও তারা কোলাকুলি করে একে অপরের সাথে তবুও তা আমাদের মত নয় নয়। আমরা হাসি, তারা কাঁদে। আমাদের চোখে তারার ঝিলিক, তাদের চোখে জলের ঝিলিক। আমাদের জামার লাল ‘রঙ’টি আসে কারখানা থেকে, তাদের আসে শরীর থেকে। আমাদের রঙগুলো শুকনো, তাদেরগুলো ভেজা। আমাদের কোলের শিশুরা উচ্ছ্বল-আনন্দে থাকে, তাদের কোলের শিশুরা আর্তনাদ করে করে আকাশ বাতাস বিষিয়ে তোলে। ঈদের নামাজ শেষে আমরা কবর যেয়ারতে যাই, তারা নিজেদের কবরের কথা ভাবে- ‘‘আদৌ কি কবর পাব?’’

আমি এত বেশি ভাবতে পারি না। ঈদের দিন ভাবার দিন নয়, আনন্দ করার দিন। তাই ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে পরম তৃপ্তিতে নানান রকম খাবার গলাধঃকরন করছি। মুখরোচক গরম গরম খাবারের বাটি হতে হালকা ছাই রঙের ধোঁয়া ঘুরপাক খেতে খেতে অদৃশ্য বিচিত্র সব ছবি এঁকে এঁকে উড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। সে ধোঁয়ার বিভৎস অঙ্কনে একটি চিত্র আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি; যেখানে কিছুলোক ঘরে ঘরে বন্দী হয়ে আছে। তাদের উদ্দেশ্যে পাঠানো ঔষধ ও খাবারগুলো তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই এক পাল মনুষ্য-শকুন ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় বোমা ফেলে পুড়িয়ে দিচ্ছে শহর-নগর। ক্রমাগত হামলায় মাটিতে মিশে যাওয়া আর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া পোড়া ঘর-বাড়ি হতে নির্গত ঘনীভূত ধোঁয়ার সাথে বাতাসের মড়া-পোড়া গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া দায়। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, একটি সুস্থ নিঃশ্বাসের অভাবে তারা কাশতে কাশতে বুকে হাত দিচ্ছে। আর সে কাশি সংক্রামক হয়ে আমার বুকে এসে জমাট হয়ে আছে। বুকের কোনখানে যেন একটু চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছি। আমার নিঃশ্বাস নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে। ঝিম ধরে গেছে মাথায়।

জল পিপাসা মেটাতে এক গ্লাস পানি নিলাম। গ্লাস তুলতেই কেঁপে উঠল জল। সে জলের মায়াবি মৃদু ঢেউয়ের তালে তালে একটি প্রশ্ন ভাসে- ‘‘এতটুকু জলও কি ওরা পায় পিপাসা নিবারিতে?’’ এ প্রশ্নের উত্তর জলের প্রতিটি ঢেউয়ের উপরে-নিচে আমি উদ্ভ্রান্তের মত খুঁজেছি। আমাকে উত্তর না জানিয়ে ঢেউগুলো ধীরে ধীরে কেমন করে যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে! এভাবে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে কত লোকের কত প্রশ্নের উত্তরই না অদৃশ্য হয়ে যায়, অগোচরে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.