নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার

অনুফিল

অনুফিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঞ্চনার উপাখ্যান

০৫ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:১৭

হিজড়াগুলোর অতিমাত্রায় অত্যাচার সন্ত্রাসে রূপ নিয়েছে। বাধ্য হয়ে তাদের সমিতিতে অভিযোগ জানাতে গেলাম। নিউ মার্কেটের উত্তরে অপ্রশস্ত গলিটি ধরে হাটলে দুই বাঁক পেরিয়ে একটি দ্বিতল ভবন পাওয়া। এটিই ওদের সমিতির অফিস। অফিসে সমিতির সভাপতি আমাকে স্বাগতম জানালেন। আমি কোন ভূমিকা ছাড়াই তার কর্মীদের অত্যাচারের ফিরিস্তি দিলাম। তিনি পরম ধৈর্য্য সহকারে আমার কথা গুলো শুনলেন। তার কথা শুনার পদ্ধতি দেখে আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। ওদেরও ধৈর্য্য আছে তাহলে? তিনি হঠাৎ উদাস হয়ে বিড়বিড় করে স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে তার পঞ্চাশটি বসন্তের বহমানতার গল্প শুনাতে শুরু করলেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে শুনলাম তার জীবনের নিষ্ঠুর উপাখ্যান।

...... “জিবনের পঞ্চাশটি বসন্ত অতিক্রম করলাম। ঘর ছেড়েছি নাক মুছে মুছে। ভিক্ষা দিয়ে জীবিকা শুরু। এখনো ভিক্ষা আমার পেশা। ইচ্ছে করে গলায় ফাঁস দিই। শুধু সাহসের অভাবে ইচ্ছাটা বাস্তবতার মুখ দেখে না। জানের মায়া বড় মায়া। মৃত্যুকে বড় ঘৃণা করি। তাই শত লাঞ্ছনার মাঝেও ব্যক্তিত্বের পাছায় লাথি দিয়ে অপমানের থোকা ঝোলায় ভরি। ঝোলা আমার শুধু ভিক্ষা নয় -জগতের নানা ঘাত প্রতিঘাতে ভরা।

অপমান, অবজ্ঞা সংগ্রহ শুরু করেছি পরিবার থেকেই। তখনও আমি বুঝতে পারি নি, আমি পরিবারের বোঝা। কিন্তু আমিও যে বাঁচতে চাই। নিত্যকার বর্বর দৃশ্য আমি আর দেখতে চাই না। মায়ের উপর বাবার পৈশাচিক অত্যাচার আমার সহ্য হয় না। বাবা মনে করেন, আমি আমার মায়ের পাপের ফল! একদিন চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম। মায়ের উপর বাবার বর্বরতা কমেছে না বেড়েছে আর কিছুতেই কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু সমাজে তার মাথা নিচু করে চলার প্রয়োজন হবে না, এতটুকু বুঝতে পারি।

দার্শনিকদের ফাঁকা বুলি আমার পেটে হজম হয় না। এরিস্টটল বলেছেন, যে সমাজের বাইরে, সে হয় দেবতা নয় পশু। আমি কি? আমি মানুষ না পশু? যদি মানুষ হই, সমাজে আমার জায়গা নেই কেন? যদি পশু হই, মানুষের বীর্যে জন্ম কেন? সমাজই তো আমাকে অসামাজিক করে গড়ে তুলেছে!

সমাজে না হয় নাই রইলাম। বনে জঙ্গলেও কি থাকতে পারব না? বনের যারা বাসিন্দা তাদের তো কোন আপত্তি নেই, মানুষের কেন আপত্তি? কেন কেউ বুঝতে চায় না, আমি আসলে দেশের বোঝা নই, সম্পদ। অন্যান্যদের চেয়ে আমাদের কর্মক্ষমতা বেশী। শারিরীকভাবে আমরা অন্যদের তুলনায় কদাকার বটে, আমরা অধিক পরিশ্রমী। অন্যদের তুলনায় আমাদের অভাব কম। তাই অন্যরা যখন যৌবন জ্বালায় কাতর হয়, স্বপ্নে বিভোর থাকে, আকাশ কুসুম ভেবে ভেবে সময় কাটায়, দেহের চাহিদা মেটাতে কর্তব্যে অবহেলা করে, তখন আমরা দিব্যি আমাদের কর্তব্য সম্পাদনে সক্ষম। কিন্তু দেশের কর্ণাধার কেন তা চান না, আমার বোধগম্য নয়। তাদের সৌন্দর্য্য দরকার, নাকি উৎপাদন দরকার -আমি এখনো বুঝি না!

পৃথিবীতে অনেক মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে। আমি জানি, পৃথিবীর শান্তিসংঘ গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অশান্তি সৃষ্টির জন্যে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো কি মানবাধিকার লংঘনের জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? মানবাধিকার কর্মীরা কি জানে ‘মানব’ কী? তারা কি এখনো মানবের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পেরেছে? তারা মানবাধিকার কর্মি নাকি দানবাধিকার কর্মি, তা নিয়ে আমি মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হই।

কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে গেলে আবেদন ফরমের ‘লিঙ্গ’ শর্তে দু’টি বাছাই দেখতে পাওয়া যায় -পুরুষ ও নারী। কিন্তু মানব সমাজে পুরুষ ও নারী ছাড়া আরও একটি জাতি আছে। তারা অন্যদের মত পুরুষের বীর্যে নারীর গর্ভে জন্ম হয়। তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যে তাদের নিজেদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সবই প্রকৃতির নির্বাচন, ইশ্বরের লীলা।

আমি জানি সবাই জানে, কিন্তু জানি না কেন না-জানার ভান করে!”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

নতুন অভিনেতা বলেছেন: দার্শনিকদের ফাঁকা বুলি আমার পেটে হজম হয় না। এরিস্টটল বলেছেন, যে সমাজের বাইরে, সে হয় দেবতা নয় পশু। আমি কি? আমি মানুষ না পশু? যদি মানুষ হই, সমাজে আমার জায়গা নেই কেন? যদি পশু হই, মানুষের বীর্যে জন্ম কেন? সমাজই তো আমাকে অসামাজিক করে গড়ে তুলেছে!

অসাধারণ লাইন। দু'চোখে নিজের অজান্তে পানি চলে এলো । ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৪৯

বলেছেন: দারুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.