নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার

অনুফিল

অনুফিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্ধের দূরবীন

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

পর্ব-১

হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দ শুনে আঁতকে উঠলাম। স্বচ্ছ কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ পরিচ্ছন্ন দেখতে পাচ্ছি। তাহলে মসজিদের ভেতরে বজ্রপাত হল কী করে? বজ্র কী আকাশ ছেড়ে মসজিদে চলে এসেছিল? দুরু দুরু বুকে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম শত শত উৎকন্ঠিত মুখ দ্বিগুণ চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে সম্মুখে কুঁজো হয়ে দন্ডায়মান বজ্র উৎসের দিকে। যিনি বজ্র উৎস তিনি আর কেউ নন -নামের আগে পিছে হরেক রকম পদবী গাঁথানো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হযরতুল আল্লামা জনাব আলহাজ ক্বারী মৌলানা শাহ আবুল ফখর মোহাম্মদ জোরাইন উদ্দীন আহমদ খান সিদ্দিকী আল কাদেরী আল আলতাফি আল মুজাদ্দেদি।
আমি নিতান্ত মূর্খ মানুষ, স্বল্প জ্ঞানে ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না তিনি কুঁজো হয়ে আছেন নামের পদবীর ভারে নাকি বয়সের ভারে! সম্পর্কে তিনি আমার কেউ না হলেও বয়সে দাদা কিংবা নানা তো হবেন। তাই লৌকিকতার খাতিরে হলেও তার বিশিষ্ট্য মুখাবয়বের প্রতি মনোযোগী হলাম। কিন্তু ‘বেদাত’ বলে যেভাবে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, সে হুঙ্কারে তাকে মানুষের দাদা বলে মনে হয় নি, মনে হয়েছে অন্য কোন জীব-জন্তুর দাদা। আমি নিশ্চিত না হলেও এই আশংকা করতে পারি যে, যদি সামনে কোন দুর্বল হৃদরোগী থাকতো তাহলে হঠাৎ এরকম হুঙ্কার শুনে হার্টফেল করে কেলেঙ্কারি কান্ড ঘটিয়ে দিত।
তর্জন-গর্জন সত্বেও মৌলানা সাহেবকে নিতান্ত নিরীহ মনে হচ্ছে। সিংহীয় দাড়ি-গোঁফ তার শ্রী-বৃদ্ধি করলেও বীরত্ব বৃদ্ধি করে নি। তার দৈর্ঘ্যের চেয়ে প্রস্থে সমৃদ্ধ বরকতময় ভুড়িটা কিন্তু দেখার মত। একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝা যায় তিনি খুব যত্নের সাথে ভুড়িটাকে গোডাউন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। গোডাউনটা জুব্বার আড়াল হতে বের হয়ে যেতে চায় বলে প্রথম দেখায় গর্ভবতী মহিলার কথা মনে পড়তেও পারে। জ্ঞানী-বিজ্ঞানীরা বলে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি হল মাথার মগজের স্বাভাবিক ক্রিয়া। আমার মনে হয় আমাদের এই মৌলানার জ্ঞান-বুদ্ধি মাথার মগজে নয় বরং ভুড়ি নামক গোডাউনে। কারণ ভুড়ির অভ্যন্তরের যন্ত্রপাতির জন্য এত বড় গোডাউনের প্রয়োজন হয় না। কাঠি সদৃশ ভুড়ি নিয়েও মানুষ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। তার এই বরকতময় গোডাউন শারিরীক যন্ত্রপাতি ছাড়া বিপুল পরিমাণ জ্ঞান আর যুক্তিতে ভরপুর। না হলে বেঁটে-খাটো মানুষ হয়েও তিনি এত বুদ্ধি-যুক্তি রাখেন কোথায়? আমি তন্ময় হয়ে তার জ্ঞান গর্ভ কথাবার্তা শুনতে লাগলাম।
“বেদাত। এগুলো সব বেদাত, নাজায়েজ, হারাম। শয়তান আগুনের তৈরী। আগুন হল শয়তান। বিদ্যুত হল আগুন। অতএব, বিদ্যুত হল শয়তান। বিদ্যুত চালিত মাইকের আওয়াজ হল শয়তানের আওয়াজ। মাইকের আওয়াজে কুরান তেলাওয়াত, নামাজ, দ্বীনি কথাবার্তা শুনা মানে শয়তানের আওয়াজে শুনা। এসব পবিত্র বিষয় শয়তানের আওয়াজে শুনা কখনো জায়েজ হতে পারে না। বন্ধ করেন এসব শয়তানী মাইকের ব্যবহার। অন্যথায় কেয়ামতের দিন দোযখের আগুনের জ্বলবেন। আল্লাহ পাক মানুষকে মহব্বত করে তার কুদরতি শক্তি দিয়ে কত সুন্দর কন্ঠ দান করেছেন, আর সেই কন্ঠে সরাসরি না শুনে শয়তানী মাইকে নামাজ-তেলাওয়াত শুনছেন, আল্লাহ পাক কি সহ্য করবেন? হে অবুঝ মুসলমান ভাইয়েরা, জেনে রাখুন মাইকের ব্যবহার বেদআত, নাজায়েজ, হারাম।”
“হুজুর, কী বলতেছেন আমরা শুনতে পাচ্ছি না, দয়া করে মাইকে বলুন” -পেছনের দিক হতে এক ভদ্রলোক মাথা উঁচিয়ে অনেকটা উচ্চস্বরে কথাগুলো বললেন।
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:১১

সমুদ্র_বাংলা বলেছেন: চট্টগ্রামের দিকে এই রকম ধারনা খুব জোররকমের প্রচার আছে । কিছু কিছু কথা হাস্যকরও আছে যেমন পোল্ট্রি মুরগি খাওয়া নাকি বেদাত , হারাম ইত্যাদি ।

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২০

অনুফিল বলেছেন: ভাই (সমুদ্র বাংলা), আপনার অনুমান অসত্য নয়। চট্টগ্রামে আরও এমন কিছু ধারণা প্রচলিত আছে, যা কেবল হাস্যকর নয়, বিভ্রান্তিকর -যন্ত্রণাদায়কও বটে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.