নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন। বাংলাদেশী লেখক। দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলা ও কিশোর বাংলায় গল্প লিখি।

আনু মোল্লাহ

আন্‌ওয়ার এম হুসাইন এর ব্লগ

আনু মোল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশপ্রেম , বাংলালিঙ্ক, ক্রিকেট ও প্রাসঙ্গিক কিছু ভাবনা

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

বাংলা্লিঙ্ক বলছে দেশের জন্য শর্তহীন ভালবাসা প্রকাশের জন্য ০১৯৭১ এই সিরিজের মোবাইল নাম্বারটি নিতে হবে। সর্বোচ্চ দশ লক্ষ গ্রাহক এই সিরিজের নমবরটি নিতে পারবেন। বাকীরা পারবেন না। সতের আঠারো কোটি মানুষের দেশে মাত্র দশলক্ষ গ্রাহক শর্তহীন দেশপ্রেম দেখাতে পারবেন। অংকের হিসেবে মাত্র শূণ্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ( ০.৫%) নাগরিকের শর্তহীন দেশপ্রেম দেখানোর সুযোগ পাবেন আর বাকি ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ লোকের জন্য আফসোস করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!

আমাদের দেশপ্রেম এখন এই অবস্থায় এসে ঠেকেছে। দেশপ্রেম খুব সস্তা জিনিস। সেই ১৭৫৭ হতে ১৯৭১ পর্যন্ত পিঁপড়ের সারির মত মিছিল নিয়ে যারা হাসতে হাসতে দেশের জন্য নিজের মাথাটাই কোরবান করে দিয়েছে তারা কখনো দেশপ্রেমের এত অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করেনি। যদিও শর্তহীন দেশপ্রেমের মিছিলে তাদের নজির এখনও নজিরবিহীন। এখন ১৯৭১ নাম্বারটি নিলে, গালে লাল সবুজ রঙ মাখালে, পহেলা বৈশাখ কি ছাব্বিশে মার্চে একটু নাচানাচি করলে, এদিক ওদিক একটু ফষ্টিনষ্টি করলে দেশপ্রেমিক হওয়া যায়। হাল আমলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন ভাল খেলা শুরু করছে, ভাল ভাল টিম কেও মাঝে মাঝে তুলোধুনো করছে তখন বাংলাদেশ টিমকে সাপোর্ট করাও বড় দেশপ্রেমের পরিচয়। আচ্ছা, বাংলাদেশ টিমকে সমর্থন করি কেননা আমি বড় দেশপ্রেমিক। যখন আর্জেন্টীনা কি ব্রাজিলের জন্য মাথা ফাটাই তখন আমি কি? তখনও আমি দেশপ্রেমিক? আর্জেন্টীনা ব্রাজিলের খেলায় যে উন্মাদনা চোখে পড়ে তা থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমাদের উন্মাদনা কোন অর্থে আলাদা?

আমরা বাংলাদেশকে সাপোর্ট করি কারণ বাংলাদেশ টিম এখন ভাল খেলে। মাঝে মাঝে জিতার আনন্দ এনে দেয়। নতুবা এই দেশপ্রেম দেখা যেত না। আমরা আর্জেন্টিনা ব্রাজিল করে যেমন বন্ধু বন্ধুর মাথা ফাটাই, চাচা ভাতিজার কথা বন্ধ করি; ক্রিকেটে তেমনি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আমরা চরম ক্ষুব্ধ হই। রাগ, ঘৃণা, হতাশা দেখাই। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে আমাদের দেশপ্রেমের সীমা নাই। কিন্তু একটু ভাবুন তো ভারত যখন ফেলানিকে জুলিয়ে রাখে কাঁটা তারে তখন আমাদের দেশপ্রেম কোথায় থাকে, ফারাক্কায় পানির অভাবে, তিস্তার পানির অভাবে আমাদের দেশ যখন মরুভূমি তখন আমাদের দেশ প্রেম কোন পকেটে থাকে। টিপাই মুখে যখন বাঁধের পরিকল্পনা হয়, রামপালে সুন্দর বন ধ্বংসের পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত হয় আমরা তখন আমাদের শরীর ও মনের কোণা কানা হাতড়েও তখন দেশপ্রেম খুঁজে পাওয়া যায় না।

মনের খেয়ালে ০১৯৭১ এর একটা নাম্বার নিতে কোন সমস্যা নাই। ফেসবুকে ব্লগে মিডিয়াতে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের গোষ্ঠি উদ্ধারে আমাদের জুড়ি নাই। কিন্তু বলতে চাচ্ছি না বাংলাদেশ টিমকে সাপোর্ট করার মাঝে কোন দেশপ্রেম নাই। আমি বলতে চাইছি আমরা শুধু দেশপ্রেমের সস্তা গীত গাইতে ওস্তাদ। সত্যিকারের দেশপ্রেম তা থেকে অনেক আলাদা বস্তু। আমাদের এই সস্তা আবেগের সুযোগে যে সমস্ত কারবারি দৈত্য (Corporate giant ) প্রকারান্তরে আমাদের দেশ ও সংস্কৃতির বারোটা বাজায় তারাই আবার আমাদের দেশপ্রেমের সবক দেয়।

প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের জন্য কাজ করার লোকের এখন খুব অভাব। এখনকার পুঁজিবাদি সমাজে বন্ধুর মা যখন মৃত্যু শয্যায় আমরা তার জন্য দু পয়সা দান করার বিনিময়ে একটা সিনেমা দেখতে চাই। ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য দান করার জন্য আমাদের একটা লটারির টিকেট লাগে। আরো বুঝিয়ে বলতে হবে? এখন দেখবেন বিভিন্ন জান বাঁচানোর জন্য সিনেমার দেখানোর আয়োজন চলে। অর্থাৎ আপনি সিনেমা দেখবেন, সেই সিনেমার টিকেটের বিনিময়ে একজনের চিকিৎসা হবে। আপনার কাছে এমনি চাইতে গেলে দশটাকা দিবেন না। কিন্তু সিনেমা দেখার জন্য দেড়শ টাকা দিবেন। আর মনে মনে ভাববেন বেশ একটা কাজের কাজ করা হল। একজনের জান বাঁচানোর জন্য সাহায্য করা হল। একবারও মনে হবে না, একজন রোগিকে বাঁচানোর জন্য দান করতে গেলেও আপনি বিনিময় ছাড়া করেন না। সেখানেও আপনাকে একটু রঙ্গরসের ব্যবস্থা করে দিতে হয়। সেটা থেকে একটু মজা নিবেন তারপর দুটাকা দান করবেন। ক্যান্সার হাসপাতাল হবে? কেউ ফিরেও তাকাবে না। লটারির ব্যাবস্থা কর। আপনি অবলীলায় টিকেট কিনবেন। নিজের নামে বউ ছেলে মেয়ে চৌদ্দগোষ্ঠীর নামে। আর ভাববেন বেশ তো ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য কাজ করছি। কিন্তু একবারও ভাববেন না লটারির টাকা জেতার কথা না বললে আপনি দু পয়সাও দিতেন না। এই হল আমাদের দেশপ্রেমের অবস্থা। আমি আমাদের এই অবস্থাটা একটু বোঝানোর চেষ্টা করছি। ক্রিকেট খেলাতেও একই কথা। অনেকে হয়ত আমার সাথে একমত হবেন না। কিন্তু বাস্তবতা হল আমরা দেশপ্রেমের জন্য না, জয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছি বলেই অত চিল্লাচিল্লি করছি। আমাদের খুব ইচ্ছা ছিল কিছু লাফালাফি দাপাদাপি করতে পারব তা হল না। ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ ভাল খেলে আমাদের বেশ একটা অসুবিধাতেই ফেলে দিয়েছে। এখনো কাপ জেতার মত খেলে না। আবার একেবারে ফেলে দেয়াও যায় না। এই অবস্থায় অন্য দেশের জেতা নিয়ে যদি লাফালাফি করি বেশি বেমানান হয়ে যায় না! এই দিক থেকে ফুটবলের অবস্থা অনেক ভাল। বাংলাদেশের নামগন্ধও ওতে নাই। আমরাও যাকে খুশি তাকে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিকে নিয়ে মাতামাতি করতে পারি।

এই একই কারনেই প্রকৃত দেশপ্রেমের বিষয়গুলো আমাদের নাড়া দেয় না। সুন্দরবন ধ্বংস হোক আমার কি? পদ্মা, তিস্তা, সুরমা শুকিয়ে মরুভূমি হলে আমার কি? তাজরিন গার্মেন্টস আগুনে পুড়লে, রানা প্লাজা ধ্বসে গেলে আমার কি? ফেলানি কাঁটাতারে ঝুলে, ঝুলুক। কিন্তু সে আমার কে? আমার বোনও না, শালীও না। কিন্তু এই সব বিষয়ে ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয় জড়িত করে দিতে যদি কেউ পারে; রঙ্গরস-ভোগ-উপভোগের আয়োজন যদি করা যায় তাহলে সবাই এইসব নিয়েই সোচ্চার হয়ে উঠবে।

দেশপ্রেমকে আমি নিজের নাম্বারটিতে ১৯৭১ লাগানোর মত অত সস্তা মনে করিনা। ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিকেও জাতীয় ঐক্য, দেশপ্রেম মনে করতে পারি না। যারা আমাদের ক্রিকেটের এই সমস্ত মাতামাতির মধ্যে জাতীয় ঐক্য, দেশপ্রেম ইত্যাদি খুঁজে পাচ্ছেন তারা খুব শিঘ্রই হতাশ হবেন।

ফেসবুক লিঙ্কঃ facebook.com/anwardubd

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.