নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনোয়ার ভাইয়ের কথার কথা

আনোয়ার ভাই

কিছু একটা করি

আনোয়ার ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয় না মাছি আমার ঘরে আরাম পাবি বসলে পরে

১১ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬







বাংলায় মাছিমারা কেরাণী নামে একটি বহুপ্রচলিত প্রবাদ আছে। প্রথমে শুনাই এর গল্পটা। এক দেশে ছিল এক কেরানি। যে কোন কিছু হুবহু নকল করাই ছিল তার কাজ। একদিন মোটা একটি খাতার লেখা নকল করে অন্য একটি খাতায় তুলছিল। হঠাৎ সে দেখল, খাতার মাঝে একটি পৃষ্ঠায় একটি মাছি মরে লেগে আছে। কেরাণী ভাবল, লেখার উপরে যেভাবে মাছিটা লেগে আছে, ঠিক একই রকমভাবে তাকেও লেখার উপরে একটি মরা মাছি লাগাতে হবে। এ চিন্তা থেকে সে মাছিমারার কাজে লেগে গেল। কিন্তু এ কাজ যে মোটেই সহজ নয় তা বুঝতে কেরাণীর সারা দিন লাগল। অনেক চেষ্টায় অনেক ঘাম ঝরিয়ে সে একটা মাছি মেরে তার খাতায় লাগাতে পেরেছিল অবশ্য। এ থেকেই হুবহু নকল করা বোকা লোকদের বলা হয় মাছিমারা কেরাণী।



পৃথিবীতে প্রায় লক্ষাধিক প্রজাতির মাছি আছে। মাছির জন্মাহারও বেশী। একটি স্ত্রী-মাছি একবারে প্রায় এক শ’ ডিম পাড়ে। মাটি, প্রাণীদেহ, গাছপালা, খাদ্যদ্রব্য বা মৃত প্রাণীসহ যে কোনো কিছুর উপরেই মাছি ডিম পাড়ার ক্ষমতা রাখে। ডিম পাড়ার ১২ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যেই তা পূর্ণবয়স্ক মাছিতে পরিণত হয়। প্রায় ত্রিশ দিনের আয়ু পায় একটি মাছি। আর এ সময়ের মধ্যেই সে কমপক্ষে এক হাজার ডিম পাড়ে।





বেশিরভাগ কীটপতঙ্গের পাখা থাকে চারটি থাকলেও মাছির পাখা দুটি। এরপরেও মাছি উড়তে পারে বেশ। সামনে-পিছে যাওয়া, উপরের দিকে হাটায় সে দক্ষ। মাছির চোখকে বলা হয় পুঞ্জাক্ষি। পুঞ্জাক্ষি মানে অনেকগুলো চোখ, যা একত্রে একটি চোখের আকার ধারণ করে। এতগুলো চোখ দিয়ে মাছি সবদিক একসঙ্গে দেখতে পায়। লোমশ ও আঠালো পা আছে বলে মাটি অথবা মসৃণ যে কোনো জায়গায় স্বচ্ছন্দে ভনভন করে হাঁটাচলা করতে পারে মাছি। বোধহয় এ জন্যই কবি সুকুমার রায় বলেছেন- মাছি ভনভন/থালা ঝন ঝন।



মাছি বেজায় রোগজীবানু ছড়ায়। বিজ্ঞানীদের মতে, একটি মাছি প্রায় ১৯ লাখ ৪০ হাজার ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। তাই বহুকাল ধরে মানুষ মাছি মারতে নানা উপায় আবিস্কার করছে। বিভিন্ন লেখায়ও তা এসেছে।

অনেকের মনে হতে পারে মাছি বোধহয় খামোখা সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও তা ঠিক নয়। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি কীটপতঙ্গ কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। মাছি নামক পতঙ্গটি সে থেকে ভিন্ন নয়। ময়লা আবর্জনা ও মৃত প্রাণী খেয়ে মাছি অনেক ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এমনকি ফুলের পরাগায়নেও তাদের অবদান রয়েছে।







মাছির স্বাদ-ইন্দ্রিয় রয়েছে তার পায়ের তলায়। কোনো কিছুর উপর বসলেই সে বুঝতে পারে কোন খাবারের কী স্বাদ! নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফরমালিনের অতিমাত্রা ব্যবহার করে পুরো জাতির ঘুম হারাম করে দিয়েছে। ফরমালিন মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। একইভাবে ফরমালিন মাছির জন্য ভাল নয়। তাই ফরমালিন মেশানো খাবারে মাছি বসে না। এক সময় মাছ, ফল বিক্রেতারা মাছি তাড়াতে ব্যস্ত থাকলেও এখন ডেকেও মাছি পাওয়া যায় না। তাই বোধহয় কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন- আমাকে চেনে,তাকেও চেনে/ সেই মাছিটি কই?/ নাকেও নেই, বুকেও নেই/ চোখের জলে ঐ।

ফরমালিনের কারনে মাছি এখন দেখা যায় না। ফলে মাছি নেই, মাছে মাছি নেই সর্বত্র মাছির আকাল। অবস্থা এখন এমন যে মাছির খোঁজে বোকা কেরাণী না হউক কোন এ্যালিট ফোর্স তৈরী করতে হবে। ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে মা আকাশপাণে চেয়ে সুর তোলে ‘ আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা’। আমার মনে হয় এখন বা অদূর ভবিষ্যতে তারা বলবে ‘ আয় আয় মাছি মামা- ঘ্রাণ শুকে যা’।





এক সময় দেখতাম, লাঠি ও কাগজের সাহায্যে দোকানদাররা মাছি তাড়াতো। তখনও ব্যবসা হত, তখনো মানুষ কামাই করত। এখন মাছ বিক্রেতা মাছে ফরমালিন দিচ্ছে তা কিনে খায় ফল বিক্রেতা। আবার ফল বিক্রেতা একই কাজ করছে যা কিনে খায় মাছ বিক্রেতা। এভাবে আমরা এখন ধীরে ধীরে ফরমালিন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। সরকারের নির্দেশে প্রশাসন তা ঠেকাতে চেষ্টা করছে ঠিকই তবে এতে কোন কাজ হচ্ছে না। এখানে আইনের প্রয়োগের চেয়ে নৈতিকতাই বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যা ক্রমশ আমাদের মধ্যে কমছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্ম অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

মাছির এ অভাব যে কোন শুভ লক্ষন নয় ইতিমধ্যে তা টের পেয়েছে জাতি। এ থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়ে হয় নানা আলোচনা। দেশে মাছি থাকতে হবে এ কথা সর্বত্র স্বীকৃত। সুকুমার রায়ের আরো একটি ছড়ায় মাকড়সার মাছি ধরার ফাঁদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মাকড়সা বলছে - সান্-বাঁধা মোর আঙিনাতে/ জাল বুনেছি কালকে রাতে,/ ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা । আয় না মাছি আমার ঘরে, / আরাম পাবি বসলে পরে,/ ফরাশ পাতা দেখবি কেমন খাসা ! জবাবে মাছি বলছে - থাক্ থাক্ থাক্ আর বলে না,/ আন্কথাতে মন গলে না-/ ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা ।/ ঢুকলে তোমার জালের ঘেরে/ কেউ কোনদিন আর কি ফেরে ?/ বাপরে ! সেথায় ঢুকতে মোদের মানা ।



মাকড়সা তার কুটজালে আটকে মাছিকে ভক্ষন করতে চায়। আর আমরা ভয়ানক ফরমালিন ও লোভী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাঁচতে মাছি কে নিমন্ত্রন জানাচ্ছি।





ধহধিৎযধংধহরঃা@মসধরষ.পড়স / ০১৯৩৭৪০১৮১৯ )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.